জিএসপি বিতর্ক
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ০৩ জুলাই, ২০১৩, ০১:৫০:০২ দুপুর
জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্সস বা সংক্ষেপে জিএসপি বেশ কয়েক মাস যাবত আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ।২৭ জুন বৃহস্পতিবার রাত থেকে তা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে, কারণটা অনেকেরই জানা ।আর তা হল, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা স্থগিতের সিদ্ধান্ত । মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশের শিল্প কারখানায় শ্রমিক অধিকার প্রশ্নে এবং কাজের পরিবেশ নিয়ে নানান অভিযোগ তুলেছিল ২০০৭ সালে। সেই অভিযোগের সাথেই জিএসপি সুবিধা স্থগিত করারও আবেদন ছিল।জিএসপি’র আওতায় বাংলাদেশ পাঁচ হাজার ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করতে পারত, যদিও এর মধ্যে দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক নেই।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জিএসপি সুবিধা দিয়ে থাকে। উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের মত দেশগুলো এই সুবিধা গ্রহণ করে বাণিজ্যিক সক্ষমতা অর্জন করবে ।অনুন্নত দেশের তালিকায় অবস্হান থাকা সত্যেও বেশকিছু দেশকে যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত কারণে জিএসপি সুবিধার বাইরে রাখে। যেমন, যে সকল দেশের সরকার তথা অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে মার্কিন অর্থনৈতিক ব্যবস্হার মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান, যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে এবং যে সব দেশ মার্কিন বুদ্ধিবৃত্তিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন ।১৯৭৪ সালের আমেরিকার এক আইনের আওতায় বাংলাদেশ ১৯৭৬ সাল থেকে এই সুবিধা ভোগ করে আসছিল ।
সাম্প্রতিক সময়ে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যার প্রতিকার না হওয়া এবং রানা প্লাজা ধসে ১২ শ’র বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে কারখানার কর্ম পরিবেশের উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।উক্ত কারণ ছাড়াও গ্রামীণ ব্যাংক ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গ ও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপ উপেক্ষাও যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পশ্চাতে সক্রিয় ভূমিকা রেখে থাকতেও পারে বলে বিশ্লেষক মহলে ধারণা করা হয় । বস্তুত ২০০৭ সালে উত্থাপিত অভিযোগ ও জিএসপি সুবিধা বাতিলের আবেদনের পর, গত কয়েক মাসের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল ফ্রোম্যান এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্সস (জিএসপি) সুবিধা যুক্তরাষ্ট্রে স্থগিত হওয়ায় পর খুব মনোযোগ সহকারে বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছিলাম । এদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, এফবিসিসিআই, রাজনীতিবিদ, বিজিএমইএ, ইপিবি, বিকেএমইএ, এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,সরকারী দলের নেতা,বেশ কয়েকজন মন্ত্রি, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সহ একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়া পেলাম । পেলাম না কেবল অর্থমন্ত্রি মহোদয়ের ।
বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে মনে করে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা । দেশের বাজারের ভাবমূর্তির ওপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব,কানাডা ও ইইউর সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব,বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ইমেজ-সংকট, দেশের অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ইত্যাদি বিষয় তাদের উদ্বিগ্ন হবার কারণ । তাদের উদ্বিগ্ন হবার যৌক্তিকতা ক্রমশই বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠছে ।
যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে বাংলাদেশ ককাসের চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান জোসেফ ক্রাউলি নিজেই বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। কারণ, সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ভীষণ উদ্বিগ্নতার মধ্যে ছিলেন বলে খবরে প্রকাশ পেয়েছে । অথচ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক স্বার্থে লবি করাই এই ককাস এর প্রধাণ কাজ ।অতীতেও আমরা ককাসে’র এই ভূমিকা দেখেছি, বিশেষ করে আওয়ামীলীগের সাথে কংগ্রেসম্যান জোসেফ ক্রাউলির এক ধরণের ভাল বোঝাপড়া ছিল ।দূশ্যতঃ এখন সে সম্পর্কও বোধকরি আওয়ামীলীগ নষ্ট করে ফেলেছে. যা তার বক্তব্যর মধ্যে ফুটে উঠেছে, প্রেসিডেন্ট ওবামার এই সিদ্ধান্ত কে তিনি ‘অনিবার্য্য ছিল’ বলে উল্লেখ করে বলেন, এই সিদ্ধান্ত সকল শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকারকে বাধ্য করবে। উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রে ১১৬ টির বেশী দেশ এই সুবিধা পেয়ে থাকে ।
নিউইয়র্ক টাইমস্ও ইতোমধ্যে ফলাও করে সম্পাদকীয় ছাপিয়েছে ।যাতে সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা সহ বিভিন্ন বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং সরকারের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং তার প্রশাসনের চরম বিরক্তি প্রকাশ পেয়েছে ।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা বলেছেন, শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ইইউ'র কাম্য নয়। তবে এ সুবিধা সবসময় অব্যাহত থাকবে না বলেও সতর্ক করেন রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশের পোশাকে বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি দামের পোশাক কেনে, যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানীর প্রায় ৬০ শতাংশ। সুতরাং তাদের কোন ধরনের নেতিবাচক সিদ্ধান্তের কারণে দেশের রফতানি বাণিজ্য অনেকটাই সংকটের মধ্যে পড়বে। ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে বৈদেশিক লেনদেন। অবশ্য,আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জিএসপি সুবিধা বাতিল বা স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে নতুন নিয়ম চালু করার কথা রয়েছে।এই বিষয় ইইউ ৩১ অক্টোবর ২০১২ সালেই একটি আইন অনুমোদন করেছে । তাতে তারা জানিয়ে দিয়েছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারী থেকে জিএসপি সুবিধায় অন্তর্ভূক্তির জন্য কি করণীয় রয়েছে সে সম্পর্কে, সেই লক্ষমাত্রা অর্জন করা না গেলে অবশ্যম্ভাবী ভাবে তৈরি পোষাকের ইউরোপীয় বাজার হারাতে হবে । উক্ত আইনে সুবিধাভোগী দেশের সরকার গুলোকে আন্তর্জাতিক নিয়মাবলী মেনে চলা সহ সুশাসনে বিষয় তাগাদা দিয়েছে, তার সাথে শ্রম অধিকার ও কর্মপরিবেশের বিষয়টি তো রয়েছেই । অথচ এ বিষয় বর্তমান সরকারের তরফ থেকে কার্যকর কোন তড়িৎ পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর হয়নি, সময়ও এ ক্ষেত্রে বেশি বাকি নেই। এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা অব্যাহত রাখা নিয়ে আগামী ৮ জুলাই জেনেভায় বৈঠক বসার কথা রয়েছে ।এই বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) স্থগিতের কথা উঠতেই পারে। অথচ ইইউ বাজারে জিএসপি রক্ষা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নিতে সরকার ইতোমধ্যে আট মাস ব্যয় করে ফেলেছে । অথচ কে না জানে, ইইউ’র বাজারে জিএসপি সুবিধা বাতিল হলে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য ভয়ঙ্কর বার্তা বয়ে আনবে।
কানাডাও একই পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।কানাডার প্রভাবশালী দৈনিক টরোন্টো স্টার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। টরোন্টো স্টারে ‘উইল কানাডা ফলো দ্য ইউএস ট্রেডিং স্লাপ অ্যাগেইনস্ট বাংলাদেশ (কানাডাও কি যুক্তরাষ্ট্রের মত বাংলাদেশের গালে বাণিজ্যিক চড় দেবে)’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডার বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্বের স্বল্পোন্নত ৪৯টি দেশের বেশিরভাগ পণ্যকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে থাকে কানাডা, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। কানাডায় পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২০০৩ সাল থেকে জিএসপি সুবিধা পেয়ে আসছে । কানাডায় জিএসপির আওতায় পণ্য রফতানির পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে প্রায় ৮৫ কোটি ডলারই পোশাক শিল্প থেকে আসে। তাই এদেশগুলোতে শুল্ক ও কোটামুক্ত জিএসপি’র ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে বাংলাদেশ রফতানির ওপর বিপর্যয় নেমে আসা খুবই স্বাভাবিক । গত ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর থেকে পোশাক কারখানার কাজের পরিবেশের জন্য বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য কানাডা সরকারের ওপর চাপ দিয়ে আসছে দেশটির শ্রমিক নেতারা।
জিএসপি সুবিধা স্হগিতের পর আনুষ্ঠানিক এক প্রতিক্রিয়ায় এফবিসিসিআই মনে করে, জিএসপি বাতিলের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যকেই শুধু বিপন্ন করবে না, এর ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সামাজিক পরিকল্পনা। এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তৈরি পোশাক খাতের ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক-কর্মচারী, যার সিংহভাগই নারী । এ অবস্থায় দেশের শিল্প-কারখানার শ্রম পরিবেশ উন্নয়নে সরকারের গৃহীত কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং শ্রমিকদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে জিএসপি স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানায় এফবিসিসিআই। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রত্যক্ষভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে এফবিসিসিআই তরফ থেকে আহবান জানানো হয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে না বলেই মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি। তার বক্তব্য আর পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বক্তব্যে এক ও অভিন্ন সুর ধ্বনীত হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এবং বিজিএমইএ এর শব্দ চয়ন, বিস্ময়, হতাশা এবং আশাবাদ একই রকমের । কেউ যদি ভেবে নেয় দু’টি বক্তবই একজনের লেখা সেটাও ভুল হবেনা । সরকার যে শ্রমিক স্বার্থ না দেখে কেবল মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করে আসছিল, অভিন্ন ভাষায় প্রতিক্রিয়া প্রকাশের মধ্যদিয়ে সে বিষয়টিই প্রমানিত হয়েছে । আর এ জন্যই কারখানার কর্ম পরিবেশ ও শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়নে বর্তমান ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগ সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে আমেরিকা জিএসপি সুবিধা স্হগিত করে । নিউইয়র্ক টাইমস্ও ওবামা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে জোড়ালো সমর্থন জানিয়েছেন তাদের সম্পাদকীয়তে।
বিজিএমইএ সভাপতির বিপরীত প্রতিক্রিয়ার প্রমান পাওয়া যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খানের কথায়, তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র্রের জিএসপি স্থগিতের ফলে আন্তর্জাতিক ইমেজ-সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে জিএসপি পাওয়া অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জিএসপি স্থগিত হওয়া দেশের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সাময়িকভাবে এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে না পড়লেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব অবশ্যই পড়বে।
এ অবস্থার উত্তোরণের উপায় সম্পর্কে ড. আকবর আলি খানের মতামতও প্রণিধানযোগ্য । তার মতে, ইইউ ও কানাডার মতো দেশগুলোতে জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখতে হলে অবশ্যই আমাদের কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করতে হবে। সরকারকে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে, এ ধরনের দুর্ঘটনা আর ঘটবে না ।
কোন কোন মহল থেকে বলা হচ্ছে, যেসব বাংলাদেশি পণ্য এতোদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পেয়ে আসছিল, সেগুলোর সিংহভাগই ইপিজেড থেকে রপ্তানি হয়। আর এসব পণ্যের রপ্তানিকারক বিদেশি বিনিয়োগকারিরা। ইপিজেডের বাইরে দেশের রপ্তানিকারকরা সামান্য কিছু পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেন। আসলে আর যাই হোক, এ ধরণের বক্তব্য কে কোন সুস্হ বিবেচনা প্রসূত বলার যে অবকাশ নেই ,তা বুঝতে অর্থনীতির ডিগ্রীধারী হবার প্রয়োজন নেই ।
জিএসপি সুবিধা স্থগিতের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে একটি পত্রিকার সাক্ষাৎকারে বলেছেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু। ভাবতে অবাক লাগে, তারা এ ধরনের কথা বলেন কোন যুক্তিতে? যেখানে তাদেরেই পরিসংখ্যান বলে ভিন্ন কথা, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোরই হিসাবে, ২০১১-১২ অর্থবছরের বাংলাদেশ মোট রপ্তানি করেছে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে মোট রপ্তানির ২১ শতাংশ (৫০০ কোটি ডলার)। তাদের বক্তব্যে বৈপরিত্যের দু’রকমের কারণ থাকতে পারে, হয় তারা সত্য গোপন করছে, নয় তারা সরকারী সুযোগ সুবিধা ভোগ করে দায়িত্ব পালনে অবহেলার করছে আর এ কারণে সঠিক তথ্য পাচ্ছেনা এবং আমাদের মত সাধারণ মানুষকে ভুল বার্তা দিচ্ছে । ফলশ্রুততে আমরা প্রকৃত চিত্র জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি । অথচ যারা ব্যবসা বাণিজ্য করেণ তারা বলছেন ভিন্ন কথা। যেমন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের শঙ্কা হচ্ছে, ইউরোপ ও কানাডার মতো বাজার নিয়ে । তার ভয় , আমেরিকার বর্তমান সিদ্ধান্তের প্রভাব ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডাসহ অন্যান্য প্রধান বাজারে পড়া নিয়ে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা যদি যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে, তাহলে আমাদের রপ্তানি মহা সঙ্কটে পড়বে বলে কাজী আকরামের আশংকা। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো পোষাক শিল্পের মালিকরা দীর্ঘ দিন যাবৎ টাকা পয়সা খরচ করে লবিস্টি ফার্ম নিয়োগ করে আশায় ছিলেন আমেরিকার বাজারে তৈরি পোশাকে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার । কিন্তু মাত্র ১ ভাগ রপ্তানী পণ্য থেকে যেখানে জিএসপি সুবিধা স্হগিত করে দিল, সেখানে ৯৯ ভাগের বিষয় একই সুবিধা পাওয়ার আশা করাটা যে চরম বোকামী, তা ব্যবসায়ী মহল হাড়ে হাড্ডিতে উপলবদ্ধি করছেন । একটি পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টা সহজবোধ্য হয়, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা গতবছর জিএসপির আওতায় তিন কোটি ৪৭ লাখ ডলারের তামাক, ক্রীড়া সরঞ্জাম, চিনামাটির তৈজসপত্র ও প্লাস্টিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করেছেন, যাতে তারা শুল্ক ছাড় পেয়েছেন ২০ লাখ ডলারের মতো। আর ৪৯০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে শুল্ক বাবদে দিয়েছেন ৭৩ কোটি ডলার। আর ব্যবসায়ীদের ২০ লক্ষ ডলারে সাথে ৭৩ কোটি ডলার কর মাফের সকল চেষ্টা আপাত ব্যর্থ বলেই প্রতিভাত হচ্ছে ।
নিট পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মো. হাতেম জিএসপি স্হগিতের পর ব্যবসায়ী সুলভ প্রতিক্রিয়া না দিয়ে বিশাল রাজনীতিবিদের মত প্রতিক্রিয়া জানান, তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র যে সময়ে এসে যেভাবে জিএসপি স্থগিত করল- তা ‘অন্যায়’। তার ন্যায়বোধের বক্তব্য সুনে অনেকের নিশ্চই প্রশ্ন থাকতে পারে, যখন শ্রমিক নেতা আমিনুলকে হত্যা করা হলো,এমন কি এ হত্যার বিচারের জন্য বার বার আমেরিকার তরফ থেকে বলা হচ্ছিল, তখন তার ন্যায়বোধ এবং সরকারের দায়িত্ববোধ কোথায় ছিল? জিএসপি সুবিধা বাতিলের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতেও এ প্রসঙ্গটি এসেছে । অথচ সরকার একটি নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার করলনা কার স্বার্থে?
আর সকল দূর্ঘটনার কথা না হয় বাদই দিলাম। কেন আমেরিকাসহ আমদানীকারকদের কাছ থেকে তাগাদা আগেই কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের জীবন মানের বিষয় মালিকরা নীতিবোধ দ্বারা পরিচালিত হলেন না? হাতেম আরো বলেন, আমেরিকা নাকি কর্মপরিবেশ ও শ্রমমান নিয়ে যে কথা বলছে তাও নাকি ঠিক না। তারা আইএলওকে সঙ্গে নিয়ে কর্মপরিবেশ ও শ্রমমান উন্নয়নে কাজ করছেন। হাতেমের বক্তব্যের অসারতার প্রমান তিনি নিজেই তুলে ধরেছেন, যদি তাদের (আমেকিার) কর্মপরিবেশ ও শ্রমমানের কথা ঠিক না হয় তবে কেন আপনারা আইএলওকে সঙ্গে নিয়ে কর্মপরিবেশ ও শ্রমমান উন্নয়নে কাজ করছেন? কেন অভিযোগ দায়েরের পরও শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরী বোর্ড গঠন, শ্রম আইন সংশোধন এবং সব কারখানার কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি সাত বছর ধরে ঝুলে থাকল?একই প্রশ্ন সরকারের প্রতিও ।
বিকেএমইএর সহ-সভাপতি প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণের শুরুতে বলেছিলাম, তার বক্তব্য ব্যবসায়ী সুলভ নয়, রাজনীতিবিদ সুলভ। তার বড় প্রমান তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেও মন্তব্য করেন । তার ভাষায়, বাংলাদেশকেন্দ্রীক কিছু রাজনৈতিক এজেন্ডা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চাপে ফেলতে ওবামা প্রশাসন জিএসপি স্থগিত করেছে। এ সব কথা আবার দেশের প্রথম সারির অন লাইন পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে, তার মত একটা অবস্হান থেকে এ ধরণের প্রতিক্রিয়া দেশের রপ্তানী কূটনীতির জন্য হুমকি হিসাবেই বিবেচিত হতে পারে ।
শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে সরকারকে চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করলেও তা শ্রমিকদের কাজে আসবে না বলেও এক ধরনের ধারণা করা হচ্ছে।এ ধারণা মূলত শ্রমিক সংগঠনগুলোর । তবে,কারখানার কর্ম পরিবেশ ও শ্রমিক অধিকার বাস্তবায়নে সন্তোষজনক অগ্রগতি দেখাতে পারলে বাংলাদেশ আবার এই সুবিধা ফিরে পেতে পারে বলেও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। অবশ্য এটাও বিবেচনার বিষয় যে,কারখানার কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক মানে মজুরি দেয়া কিংবা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও মালিকপক্ষকে চাপ দেয়া এটাই আমদানীকারকদের সর্বশেষ অস্ত্র। আর স্বাভাবিকভাবে একটা পর্যায়ে তারা এ অস্ত্র ব্যবহার করবেনও। তবে বিবেচনার বিষয়, তা তারা পর্যাপ্ত সময় সুযোগ দিয়ে করছেন কিনা? আমাদের জন্য এ ক্ষেত্রে সাত বছর সময় কমও নয় অথচ সরকার পহেলা জুলাই সোমবার মন্ত্রিসভায় জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে শ্রম আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে, এ লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, যা কিছু সুবিধা আদায় করার তা সরকারকেই করতে হবে। সম্প্রতি টিকফা চুক্তির খসড়া সরকার অনুমোদন করেছে। তাই আলোচনার দ্বার এখনও খোলা আছে বলে অনেকে মনে করছেন। সরকারের এখনই আলোচনার উদ্যোগ নেয়া উচিৎ, অথচ সে উদ্যোগ এখনও দৃশ্যমান হচেছনা। উল্টো খোদ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে শুরু করে, এক একদিন এক একজন মন্ত্রি যে সমস্ত বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন তাতে আর যাই হোক দেশের স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছেনা । এই পরিসরে সে সমস্ত বক্তব্য নিয়ে আলোচনাও পন্ডশ্রম বিবেচনা করে বাদ দিলাম । কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বিবৃতির একটা অংশ বিবেচক ব্যক্তি মাত্রকে বিব্রত না করে পারেনা, বিবৃতির এক অংশে বলা হয় যে, দেশের ভিতরে এবং যুক্তরাষ্ট্রে কিছু লোক আগে থেকেই ওই সুবিধা বাতিলের দাবিতে চেষ্টায় ছিল। এর ব্যাখ্যা কি তা স্পষ্ট করা হয়নি, তবে এ ধরনের বিবৃতির বিপরীতে, দেশের সাধারণ মানুষের মুখে মুখে একটা প্রতিউত্তর ধ্বনীত হচ্ছে, আর তা হল, সব যদি দেশের ভেতর ও বাইরের লোক করতে পারে, তবে সরকার ক্ষমতায় থেকে কি করে? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতেই জানা যায়, সাভারের রানা প্লাজা ধসের সময় গত ৩০ এপ্রিল উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারের কাছে চিঠি পাঠায় ইইউ।চিঠিতে বলা হয়, বারবার এ ধরনের দুর্ঘটনা বাংলাদেশকে দেয়া জিএসপির বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে বাধাগ্রস্ত করবে। এছাড়া কানাডাও সাভারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে একাধিকবার। এ বিষয় গুলোর সাথে দেশের ভিতর ও বাইরের লোকদের দ্বারা জিএসপি সুবিধা বাদ বা স্হগিত হবার কোন সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা যায় ? নাকি এগুলো আমাদের মালিকপক্ষের অব্যবস্হাপনা, সরকারি তদারকির গাফিলতি, রাজনৈতিক দূবৃত্তায়নের অনির্বায পরিণতি ?
সব কিছুর মূলে যে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে, তা ঢাকবার জন্যই এ ধরণের কথা বলা হয়ে থাকতে পারে বলেও একটা শক্ত ধারণা আছে । সরকারের ব্যর্থতার বহরে এটিও অনেক বড় ব্যর্থতা বলেই বিশ্লেষক মহলের অভিমত । এ ধরণের মত ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদেরও। তার ভাষায় ,‘মূলত কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণেই এই পরিণতি হয়েছে।’ অবশ্য, খোদ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভীওবিবিসি বাংলাকে তা অস্বীকার করতে পারেননি । তিনি বলেন, “যখন জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হলো ,তখন নিশ্চয়ই আমি বলবো, আমাদের কিছু ব্যর্থতা ছিল। কেননা আমরা কেন এটা হতে দিলাম। কিন্তু এটাও দেখতে হবে যে আইন পরিবর্তনে সময় লাগে। তবে হ্যাঁ, আমি স্বীকার করলাম, এটা আমরা আরও আগে করতে পারতাম।”
“আমি ঠিক কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলবো না। এটা বড় জটিল বিষয়। যখন একটা আইন পরিবর্তন করা হয়, সেখানে অনেক চাপ থাকে। অনেক ধরণের মতামত থাকে। সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে এগুতে হয়। যাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ রাজি থাকে। এটা করতে সময় লেগেছে। নিশ্চয় কিছুটা হতাশার বিষয় ।” এ ধরণে স্বীকারোক্তির পর জিএসপি ইস্যূ নিয়ে বিতর্ক থাকার কথা নয়, তাই আমার আলোচনার ইতি টানছি কিন্তু তার পরও বিতর্ক হচ্ছে হবে কেবলই সরকারের ব্যর্থতাকে ঢাকবার জন্য ।
সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এ বিষয়টি সমাধান আমাদের সরকারের উদ্যোগে ও নেতৃত্বে আরো আগেই বাস্তবায়ন করা উচিত ছিল। শ্রম অধিকার ও কর্মপরিবেশেরে ওপর এই মুহুর্তে আমাদের নজর দেওয়া উচিত, কেবল মুখের বুলি নয় বা আগামীতে ক্ষমতায় আসা না আসার হীনমন্নতায় ডুবে নয়, সকল কূপমুন্ডুকতার উর্দ্ধে উঠে ৩৬ লক্ষ নিরন্ন শ্রমজীবী মানুষ সহ এক কোটি নির্ভরশীল আদম সন্তানের দিকে তাকিয়ে সরকার ঈমানদারীর সাথে তার কাজ করে গেলে সমস্যা সমাধানের আশা করা যায় । সরকার ও মালিক পক্ষ যদি এই মুহূর্তে শ্রম অধিকার ও কর্মপরিবেশের ওপর নজর না দেয়, তাহলে এদেশের অর্থনীতি আরো বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এর দায়ভার একা সরকারের কাঁধেই বর্তাবে। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। সিঙ্গেল কান্ট্রি হিসেবে সেখানে আমরা ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করি। এ রকম পার্টনার কান্ট্রি থেকে আর কোন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত আমাদেরকে যেন চাপে না ফেলে তা সরকারের কথা ও কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দিতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৮৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন