‘পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ’
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ২৫ জুন, ২০১৩, ১২:২৭:৫৭ দুপুর
মৃত্যু মানুষের অনিবার্য পরিনতি । কেউ তা অতিক্রম করতে পারে না, চূড়ান্তভাবে মানুষের ব্যর্থতা এখানেই । প্রত্যেক মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হয়। কিন্তু, কিছু কিছু মৃত্যু মানুষের মাঝে ভাবনা জাগায়। আলোড়ন, শিহরণ ও চিন্তার উদ্রেক করে ।মানুষ নানা ভাবে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে। তবে একটি মৃত্যু একটি পরিবারের জন্য যে কতটা বেদনার, তা ভুক্তভূগী মাত্রই অনুভব করতে পারেন ।পরিবারের এ ক্ষতি কোন ভাবেই পরিপূরণ করা সম্ভব হয় না ।এ ক্ষতি ও বেদনা উপশমের উপায় সহজেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়, কারো পক্ষেই ভুক্তভূগীর চিত্তে শান্তির ফলগুধারা প্রবাহিত করা সম্ভব নয়। তবে, আমরা কেবল পারি শান্তি কামনা করতে । মহান আল্লাহর দরবারে ভুক্তভূগী এবং তার পরিবারের শোক সহ্য করার শক্তি ও মনে প্রশান্তি কামনা করতে পারি ।
সোমবার অন লাইন পত্রিকা গুলোতে একটি মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয় যা ছিল এরকম-‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর একমাত্র ছেলে আহমেদ আরিফ ইফতেখার আশীষ (৩৮) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজিউন)।
ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত আশীষকে রাজধানী ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য আনার পথে সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নাটোরে মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, মা-বাবা ও তিন বোনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকায় অবস্থানকারী গোলাম আরিফ টিপু বলেন, ‘ঢাকায় আসার পথে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নাটোরে তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। তারা এখন রাজশাহীর উদ্দেশে ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছেন।’
গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে আগামীকাল মঙ্গলবার ছেলের দাফন হবে বলেও জানান তিনি।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুন থেকে আশীষ ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত। প্রথম দু-একদিন শ্বশুর বাড়িতে (স্ত্রীর চাকরি সূত্রে সেখানে গিয়েছিলেন) চিকিৎসা নিলেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার থেকে আশীষের ডাইরিয়া শুরু হয়। এরপর অবস্থার আরো অবণতি হলে আজ সোমবার চিকিৎসরা তাকে ঢাকায় রেফার্ড করেন। সকালে রওনা হয়ে আশীষকে বহনকারী গাড়ি নাটোর পৌঁছলে তিনি টয়লেটে যেতে চান। এর পরপরই আশীষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
বর্তমানে আশীষের মরদেহ গোলাম আরিফ টিপুর রাজশাহীর উপশহরের বাড়িতে রয়েছে। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আত্মীয়-স্বজনের আহাজারিতে উপশহরের বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
গোলাম আরিফ টিপুর তিন মেয়ে ও একমাত্র ছেলে সন্তান আশীষ। বড় তিন মেয়ে ডালিয়া নাসরিন, ডায়না নাজনীন ও ডানা নাজনীন। আর পরিবারের সবার ছোট আশীষ।
প্রায় ৬ বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেয়ে ইলোরার সঙ্গে আশীষের বিয়ে হয়। ইলোরা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। এই দম্পতির কোনো ছেলে-মেয়ে নেই।
গোলাম আরিফ টিপুর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ হলেও তিনি বেশ আগে থেকে রাজশাহীর উপশহরের বাসিন্দা। তবে তিনি ঢাকাতে বসবাস করে আসছেন।
২০১০ সালের ২৫ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর এই ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী হিসেবে শুরু থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।’
এই সংবাদ প্রকশের পর, সচেতন সাধারণের মাঝে যেমন আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে, তেমনি ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ইতোমধ্যে একধরনের পোষ্ট শেয়ার করা শুরু হয়ে গেছে ।এগুলোর আসলে তেমন প্রমানিক ভিত্তি নেই। তবে, একশ্রেনির মানুষের মনের এ ধরনের ধারণাকে অবমূল্যায়নেরও অবকাশ কম। কারন, এটা মানুষের একধরণের সেন্টিমেন্ট, মানুষ হিসাবে মানুষের সেন্টিমেন্টকে সম্মান না করি কিন্তু অসম্মান করার যুক্তি খুঁজে পাইনা।
তবে, আমাদের সমাজে একটা কথা সর্বশ্রেনির মাঝে বোধকরি বেশ প্রচলিত আছে, আর তা হল, ‘পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বস্তু’ । সেই কঠিন ভারী বস্তুই বহন করতে হচ্ছে আমাদের গোলাম আরিফ টিপু সাহেবকে ।এর জন্যই মৃত্যুর খবরটা সর্বসাধারণের নিকট আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে । । অবশ্য এক বছর আগেও মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী কেও একই অবস্হার স্বাদ আস্বাদন করতে হয়েছিল। তার প্রেক্ষিত আর গোলাম আরিফ টিপু সাহেবের প্রেক্ষিত আলাদা বিধায় বিষয়টি আলোচনার মাত্রাকে ভিন্নতা দান করেছে। একজন আসামী, অন্যজন আসামীর দোষ প্রমানকারীদের দলনেতা।এই বিষয়টি কে কেন্দ্র করেই মূলত আলোচনা সমালোচনা বেশী মাত্রায় ঘুরপাক খাচ্ছে ।
তবে বিষয় যাই হোক, সমাজের কিছু ঘটনা দৃষ্টান্তমূলক এবং শিক্ষাপ্রদ, তা বোধ করি সচেতন ব্যক্তিবর্গের চেতনার অনুভুতিকে ডাক দিয়ে যায় ।
বিষয়: বিবিধ
১৫১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন