৫২র ভাষা আন্দোলন ও ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ০১ জুন, ২০১৩, ০৫:১২:৪৭ বিকাল

মাদারীপুর মহকুমার পূর্বাঞ্চল যা পূর্বমাদারীপুর নামেই সমধিক পরিচিত ছিল । বর্তমান শরিয়তপুর জেলা, ছয়টি থানা নিয়ে গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে । এর মধ্যে ডামুড্যা থানাটি তার আপন ভূমিকার কারণে অনেক পূর্ব থেকেই অপেক্ষাকৃত অগ্রসরমান ছিল ।আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসও তার বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ।মাদারীপুর মহকুমার আঞ্চলিক ইতিহাসের পূর্ব অংশের ধারকই আজকের শরিয়তপুর, যার অনেকাংশই ডামুড্যার অবদানে অভিষিক্ত ।আর এর প্রধান সূতিকাগার হচ্ছে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় ।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে ছাত্র হত্যার খবর সদর থানা পালং পৌঁছায় ২৩ ফেব্রুয়ারী । এর একদিন পর, ২৪ ফেব্রুয়ারী ঢাকার ছাত্র হত্যার খবর ডামুড্যায় পৌঁছায় ।ডামুড্যা তখন ছিল গোসাইরহাট থানার অন্তরভূক্ত ।ফলে বলা যায় পুরো ডামুড্যা-গোসাইরহাট-এমনকি ভেদরগঞ্জ অঞ্চলের ভাষাআন্দোলনের নেতৃত্বদেন ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা এর সাথে যুক্ত হয় দারুল আমান উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা । পালং থানার আন্দোলনের বিবরণ পাওয়া গেলেও নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জের বিষয় তেমন জোড়ালো বর্ননা নেই ।

ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের নেতৃস্হানীয় ছাত্ররা ২৫ ফেব্রুয়ারী ধর্মঘট ও প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা করেন ।তবে ২৪ ফেব্রুয়ারীই ডামু্ড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা ক্লাস বর্জন, কালো ব্যাজ ধারণ ও প্রতিবাদ মিছিল করেন । একই কর্মসূচী পালন করেন দারুল আমান উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা । তাঁরা তখনকার গোসাইরহাট থানা সদর পট্টি স্টীমার ঘাটে গিয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং ঐ দিন বিকাল ৩ টায় ডামুড্যা হামিদিয়া সিনিয়ার মাদ্রাসার ঈদগাহ ময়দানে এক প্রতিবাদ সভা করেন । এতে সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন স্হানীয় মুসলিম লীগ সেক্রেটারী মহিউদ্দিন খাঁ । সভায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দান, ঢাকার মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণ সম্পর্কে নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্হা, মন্ত্রিসভার পদত্যাগ ও শহীদ পরিবারবর্গকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দানের দাবী করা হয় ।বস্তুত এ অঞ্চলের ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় আর ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্বে ছিলেন মরহুম মহিবুল্লাহ আব্বাস (সর্বশেষ আমেরিকা প্রবাসী ছিলেন), আমিনুল ইসলাম, মরহুম সিকদার এম আজিজুল হক (প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও অধ্যাপক, নড়িয়া সরকারী কলেজ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও সিলেট সরকারী মহিলা কলেজ), আব্দুল জব্বার, নুরুল ইসলাম (প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়) ও মরহুম আব্দুর রাজ্জাক (প্রাক্তন মন্ত্রি ও সংসদ সদস্য শরিয়তপুর-৩)।ছাত্রনেতা আমিনুল ইসলামকে পুলিশ ১২ঘন্টা আটক করে রাখে, মুক্তি লাভের পর তাঁকে ফুলের মালা পরিয়ে সংবর্ধনা প্রদান করা হয় ।

তৎকালীন পূর্বমাদারীপুর তথা আজকের শরিয়তপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভাষা আন্দোলন সংঘবদ্ধ রূপলাভ করতে না পারলেও আমাদের এ অঞ্চলের মানু্ষের মাঝে একুশের চেতনা প্রসারে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূমিকাই প্রধান, ফলে নিচের শ্রেনির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুখেও উচ্চকিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের শ্লোগান ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘ছাত্র হত্যার বিচার চাই’,‘নুরুল আমিনের কল্লা চাই’ । তবে সমাজের কতিপয় নেতৃস্হানীয় ব্যক্তিবর্গ প্রকাশ্যে এবং বাম ধারার কতিপয় রাজনৈতিক গোপনে সহায়কের ভূমিকা পালন করেন ।

( এই বিরল ঐতিহাসিক লেখাকে সমৃদ্ধ করার জন্য আমিনুল ইসলাম, আব্দুল জব্বার সম্পর্কে করো তথ্য জানা থাকলে এ প্রেরণে অনুরোধ করা যাচ্ছে)

বিষয়: বিবিধ

১৩৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File