মডেল বিদ্যালয় প্রকল্পর প্রাপ্ত অধিকার হরণঃ একটি ঐতিহ্যের স্বারক ও শিক্ষার মান ধ্বংসের ষড়যন্ত্র
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ২৬ মে, ২০১৩, ০১:৩৩:২৯ দুপুর
সত্য, প্রেম, পবিত্রতা, চরিত্রই অমূল্য সম্পদ এ মহান ব্রতকে ধারণ করে বৃটিশ শাসনের এক ক্রান্তিলগ্নে ১৯৪০ সালে পদযাত্রা শুরু করে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় ।
শত বছরের পরাধীনতার গ্লানি, অজ্ঞতার নিকশ কালো অন্ধকারে সমগ্র শরিয়তপুর তথা দক্ষিণ বাংলায় রুদ্রদীপ্ত হয়ে উন্মেষ ঘটে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় নামের একটি জ্যোতিষ্ক। কালক্রমে এ বিদ্যাপীঠ হয়ে উঠে সমগ্র শরিয়তপুরের শিক্ষা বিস্তারের এক শ্রেষ্ঠ বিদ্যায়তনে । ব্রিটিশ বেনিয়াদের কাছ থেকে এদেশের মুক্তি, বাঙালীর ভাষা আন্দোলন, মহাণ স্বাধীনতা সংগ্রাম,বিভিন্ন শিক্ষাআন্দোলনে সংগ্রামী সারথী আমাদের প্রিয় ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়।
সুদীর্ঘ ৭৩ বছরের কালের যাত্রার সাক্ষী ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় সৃষ্টি করেছে অনেক ইতিহাসের । অর্জনের অধ্যায় তার হিরন্ময় জ্যোতিতে ভাস্বর । চেনা বামুনের যেমন পৈতার দরকার হয় না, ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়কে ও নতুন করে চেনানো নিষ্প্রয়োজন । এর সাফল্যের প্রতিটি পরতে পদধুলি পড়েছে এমন সব গূনীজনের যারা সকলেই কিংবদন্তী তুল্য । যাদের জ্ঞানের তুলনা কেবল তারাই । জ্ঞানের আলো বিতরণ মিছিলের অগ্রসেনানীদের মাঝে শ্রদ্ধেয় প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক জনাব মো. আব্দুল হামিদ, আ. কা. মো.আব্দুল গণি, আক্কেল আলী মাস্টার, জনাব আইনউদ্দীন স্যার, মো. আলী স্যার, মো. আব্দুল জব্বার মাওলানা, সিরাজুল হক স্যার, সন্তোষ স্যার, প্রিয় আলী স্যার, মোয়াজ্জেম স্যার, গিয়াসউদ্দীন স্যার, অতি চেনা পি. কে. স্যার, টেকনিক্যাল স্যার প্রমূখের নাম আমাদের মত বিন্দু সম জ্ঞান পিয়াসীদের হৃদয় কোটরে আমৃত্যু প্রেরণার বাতিঘর । শ্রদ্ধা আর সম্মানের বাস্তব প্রতিক হয়ে আজও সকলের নিকট শ্রদ্ধেয় হেড স্যার নূরুল ইসলাম আমাদের হৃদয় নদে বহমান ঢেউ ।
সময় ও যোগ্যতার মানদণ্ডে আমাদের প্রিয় ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় পাইলট প্রকল্পের আওতাভূক্ত হয়, যা এ অঞ্চলের প্রথম পাইলট বিদ্যালয় । এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে ৫ জানুয়ারী কোন তদবির ছাড়াই আপন যোগ্যতায় মডেল প্রকল্পনীতিমালার সকল যোগ্যতা পরিপূরণ সাপেক্ষে সরকারী প্রজ্ঞাপনে(স্মারক নং-শিমপ/সিঃসঃপঃ৩/উপজেলা মডেল বিদ্যালয়/১৮২/২০০৮অংশ১/১১)বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত ২৪৩টি মডেল বিদ্যালয়ের সাথে ডামুড্যা উপজেলার মডেল বিদ্যালয় হিসাবে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় নি্র্বাচিত হয়।
বস্তুত ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় নির্বাচিত হওয়ায় তার মডেল মর্যাদা হরণ করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেন অনেকে। তথ্য অনুসন্ধানে রীতিমত ভয়াবহ সিরিজ ষড়যন্ত্রের তথ্য বেড়িয়ে আসে ।ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের মূল বিষয় ছিল, কি ভাবে মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের মডেল মর্যাদা হরণ করা যায় ।পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন কা্র্যক্রম চলে, যা এ অঞ্চলের শিক্ষার সামগ্রিক মানকে ক্ষুন্ন করে কেবলমাত্র বিশেষ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি নগ্ন আনুকূল্য চলতে থাকে ।তবে এ ধরনের আনুকূল্যের চেয়েও অধিক ঘৃণিত বিষয় হচ্ছে ঐতিহ্যের স্বারক মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্জিত সুনামকে ধ্বংসের সমগ্র আয়োজন সম্পন্ন করা ।অন্য দিকে ২০০৮ সালের সরকারী প্রজ্ঞাপনের গ্যাজেট প্রকাশকে ঠেকিয়ে রেখে অন্য বিদ্যালয়টিকে মডেল মর্যাদায় ভূষিত করতে প্রশাসনিক কাজ অত্যন্ত গোপনে চালিয়ে যাওয়া হয় ।অবশেষে এ ষড়যন্ত্রের প্রকাশ্য রুপ পায় ২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল পাল্টা আরেকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে, এতে দেখা যায় শর্ত সাপেক্ষে ২০০৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিদ্যালয়টিকে মডেল করার কথা বলা হয় । শর্ত প্রদান করা হয় প্রয়োজনীয় অখন্ড ১ একর জমি । অথচ তাদের রয়েছে অর্ধেক মাত্র (৫০শতক)এই শর্ত পরিপূরণের সময়কাল ১৫ কর্মদিবসও অতিক্রান্ত হয়েছে, ঐ বিদ্যালয়টি শর্তও প্রতিপালন করতে পারেনি এবং স্বাভাবিকভাবে কখনও পারবে বলে মনে করারও কোন কারণ নেই, অথচ কেন তারা
মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের যৌক্তক প্রাপ্যটুকু হরণে নেমেছে ??? এটা আজ প্রতিটি বিবেকবান ডামুড্যাবাসীর জিজ্ঞাসা ।
আমরা যদি এ অন্যায়ের প্রতিবাদ না করি তবে কি এমন যায় আসে ! এ ধরনের চিন্তা অনেকের মাঝে কাজ করতে পারে । এর সবচেয়ে সুচিন্তিত উত্তর এটাই যে,
প্রথমতঃ এ অঞ্চলের শিক্ষার মান ধ্বংস হয়ে যাবে, যার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরুও হয়েছে; দীর্ঘদিন যাবৎ ডামুড্যার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো ভারপ্রাপ্ত প্রধানদের দ্বারা পরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে, অভিযোগ রয়েছে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগে নানা ভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, যারা ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারাও নিজ প্রতিষ্ঠানের সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ করছেন যা বিভিন্ন রহস্যের জন্ম দিচ্ছে । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদগুলোও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কাজ করছে না। অবস্থার নাজুকতা সবকিছুই বিশেষ উদ্দেশ্যে একটি কারনে , একই ব্যক্তিবর্গ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে ।
দ্বিতীয়তঃ এ অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক সমস্যা দেখা দিবে যার ফলে ভবিসৎ শিক্ষার্থীরা প্রচন্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । (এ বিষয় বিস্তারিত গবেষণার সুযোগ রয়েছে)
তৃতীয়তঃ শিক্ষার সামাজিক সুযোগ সংকুচিত হয়ে বানিজ্যিক রূপ পরিগ্রহ করতে পারে , ফলে অভিবাবকদের উপর আর্থিক চাপ বেড়ে যেতে পারে ।
চতুর্থতঃ শিক্ষারসুযোগ গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ারে পরিনত হতে পারে ।
পঞ্চমতঃ সামাজিক অস্থিরতার সাথে রাজনৈতিক উপাদান যুক্ত হয়ে জটিলতা ভিন্ন রূপ ধারণ করতে পারে ।
ষষ্ঠতঃ ভবিৎসতের প্রয়োজনে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রয়োজন হলে , উদ্যোগ এবং উদ্যোগতার অভাব পারলক্ষিত হবে । কেউ আগ্রহী হবার ইচ্ছে থাকলেও উপায় থাকবে না ।
সপ্তমতঃ ডামুড্যার একমাত্র ডিগ্রী কলেজটি অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যেতে পারে ।
অষ্টমতঃ শিক্ষার সূন্দর্য আন্তঃ প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতিতে দেশের অন্যান্ন অঞ্চলের সাথে মেধায় এ এলাকার শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে ।
নবমতঃ মেধাহীনতার কারনে উচ্চশিক্ষার দ্বার রুদ্ধ হয়ে পড়বে ।
দশমতঃ আর্থ-সামাজিক ভাবে এ অঞ্চল পিছিয়ে পড়বে ।
বিষয়: বিবিধ
১১১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন