হে সওয়াব প্রত্যাশীরা! আগে বাড়ো। হে মন্দের উদ্যোগীরা!! থামো ...
লিখেছেন লিখেছেন মুসলিম চ্যরিটি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১৩ জুলাই, ২০১৩, ০৫:২৫:০৩ বিকাল
হে সওয়াব প্রত্যাশীরা! আগে বাড়ো। হে মন্দের উদ্যোগীরা। থামো। একজন ফেরেশতা বিশ্ববাসীকে লক্ষ্য করে রমজানের প্রতি রাতে এ ঘোষণা দিয়ে থাকেন। এ মাসের প্রধান কর্মসূচি প্রতিদিন রোজা রাখা। এ রোজার কাঙ্ক্ষিত মান সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য মহানবী (সা.) বলেছেন, যদি অন্যায় ও পাপ কাজ করে রোজাকে ক্ষতবিক্ষত করা না হয় তাহলে ওই রোজা ঢাল হয়ে জাহান্নামকে প্রতিহত করবে।
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ওলামায়ে কেরামগন লেখেন, নিচের ৬টি আদব রক্ষা করে রোজা রাখলে এ রোজা ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে। যথা_ ১. চোখের হেফাজত, পরনারীকে না দেখা। ২. কানের হেফাজত, গান-বাজনা, অশ্লীল কথা, গিবত না শোনা। ৩. জিহ্বার হেফাজত, গান না গাওয়া, গালি না দেওয়া, কটুকথা, অশ্লীল কথা, পর দোষ না বলা, পরনারীর সঙ্গে রসাল কথা না বলা। ৪. অন্যান্য অঙ্গকে কোনো পাপে লিপ্ত না করা। ৫. ইফতারিতে অতি ভোজন না করা। ৬. সারাদিন এ ভয়ে ভীত থাকা যে, আমার রোজা কবুল হচ্ছে কি-না।
কষ্টকর সাধনা রোজার লক্ষ্য পবিত্র কোরআনে স্থির করে দেওয়া হয়েছে : সব অন্যায় ও পাপ ছেড়ে দেওয়ায় অভ্যস্ত হওয়া অর্থাৎ রমজান মাসের আগমন শুধু পাপ মোচনের জন্য নয়, বরং অতীতের পাপ মোচনের পাশাপাশি ভবিষ্যতের পাপ থেকে দূরে থাকার মানসিকতা ও অভ্যাস সৃষ্টির জন্য রমজানের শুভ আগমন।
একজন রোজাদার কারও সঙ্গে ঝগড়া বাধাবে না। কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া বাধালেও সে নিজেকে তাতে জড়াবে না। পরিষ্কার বলে দেবে, আমি রোজা রেখেছি। তাই ঝগড়া করতে পারব না। মহানবী (সা.) এভাবেই বলতে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, এমন অনেক রোজাদার আছে, যারা রোজার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ছাড়া আর কিছুই পায় না। মুহাদ্দেসীনে কেরামগণ ব্যাখ্যায় বলেছেন, এ হাদিসে ৩ ধরনের রোজাদার সম্পর্কে বলা হয়েছে। যথা_ ১. যে রোজা রেখে অবৈধ সম্পদ দ্বারা ইফতার করে। ২. যে রোজা রেখে অপরের দোষ চর্চা করে ৩. যে রোজা রেখে পাপ কাজে লিপ্ত হয়।
আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, রমজান মাসে একটি নফল ইবাদত আদায় করা অন্য সময়ের একটি ফরজের সমতুল্য। এ মাসে একটি ফরজ আদায় করা অন্য সময়ের সত্তরটি ফরজের সমতুল্য। তাঁর এ ইরশাদে উৎসাহিত হয়ে সব যুগের প্রতিটি মুসলমান এ মাসে নিজের ইবাদতের পরিধি ও পরিমাণ বৃদ্ধি করে থাকে। বিশ্বনবী (সা.) ফরমান পালনার্থে আমরা এ মাসে ওঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে যখনই সুযোগ পাব তখনই বলতে থাকব; এমনকি হাত-পায়ের যে কোনো কাজের মধ্যেও মুখে অনবরত জপতে থাকব : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ আল্লাহ! আমাকে মাফ কর, আল্লাহ!, আমাকে জান্নাত দাও, আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।’
রমজানের সঙ্গে কোরআনের সম্পর্ক সুনিবিড়। হজরত জিবরাঈল (আ.) প্রতি রমজানে রাসূল (সা.)কে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন। রাসূল (সা.)ও তাকে শোনাতেন। তারাবিতে খতমে কোরআনের ব্যবস্থা কোরআন শোনার একটা অংশ। খতমে তারাবি ছাড়াও রমজানে অতিরিক্ত কোরআন তিলাওয়াত ও খতম মুসলমানদের ঐতিহ্য। সেই নববী যুগ থেকে ঘরে ঘরে এর চর্চা হয়ে আসছে। কেউ যদি নিজে পড়তে না জানি তাহলে নিয়মিত অন্যের কোরআন পড়া পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারি। কোরআন নিজে পড়া বা শোনা উভয়টি সমান ছওয়াবের কাজ। রমজান মাসকে মহানবী (সা.) ধৈর্য ও সহানুভূতির মাস আখ্যা দিয়েছেন। তাই ক্ষুধা, পিপাসা, গরম, তারাবিতে দাঁড়িয়ে থাকা, শেষ রাতে সজাগ হওয়া ইত্যাদি কষ্টের বিষয়কে নিজের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব। এ কষ্টগুলো বলাবলি করে, হা-হুতাশ করে অধৈর্যের প্রকাশ ঘটাব না। নিজের সব অধীনের প্রতি সহানুভূতি দেখাব। কাজের চাপ হ্রাস করে তার রোজায় সহযোগিতা করব। তাদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করব না। দরিদ্রদের সাধ্যমতো ইফতারি সরবরাহ করে সহানুভূতি দেখাব।
এই লেখাটি এখানে আছে
বিষয়: বিবিধ
১৬১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন