বিধ্বংসী ট্যাংক
লিখেছেন লিখেছেন শুকনা মরিচ ১৯ জুন, ২০১৩, ১১:১৭:০৩ সকাল
লিউপ্যার্ড টু-এ-সেভেন [জার্মানি]
নিত্যনতুন প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ছোঁয়ায় পরিবর্তিত হয়ে আসছে দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। জার্মানির যে কয়েকটি ট্যাংক আলোচনায় রয়েছে সেগুলোর মধ্যে লিউপ্যার্ড টু-এ-সেভেন অন্যতম। এটি সর্ব প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০১০ সালে। এই ট্যাংকটি লিউপ্যার্ড-টু এসিঙ্-এর উন্নত সংস্করণ। এটাকে প্রধানত তৈরি করা হয়েছিলurban warefare I conventional military operation এর জন্য। ১২০ smoothbore Main gun সংযুক্ত এই ট্যাংকের ওজন ৬৭.৫ টন ton যেখানে চারজন ক্রু অনায়াসে বসতে পারে। সঙ্গে রয়েছে আরও দুটি Machine gun যেগুলো হলো ১২.৭ টন ও ৭.৬২ টন। এর ইঞ্জিন পাওয়ার ১৫০০ hp, এর oil ট্যাংকি ভরে দিলে একটানা ৪৫০ km পর্যন্ত যেতে পারে ৭২ শস/য স্পিডে। এই ট্যাংকের সামনে একটা WGhi ব্লেড আছে যেটা দিয়ে সামনে পথের সব বাধা সরিয়ে এগোতে পারে। ২০১১ সালে সৌদি আরব জার্মানির কাছ থেকে ২০০ Leopard2A7 কিনে নেয়। এই ট্যাংকটির যে দিকটি সবার কাছে আকর্ষণীয় তা হলো অন্যান্য ট্যাংকের তুলনায় এটি অনায়াসে ছোটখাটো গলিতে প্রবেশ করতে পারে। ক্ষমতা দেখাতে পারে যে কোনো আঁকাবাঁকা পথে।
ব্ল্যাক প্যানথার (দ. কোরিয়া)
ব্ল্যাক প্যানথার। না, ব্ল্যাক প্যানথার (দ. কোরিয়া)
এটি কোনো সাপ বা অজগর নয়। এটি
দ. কোরিয়ার অন্যতম বিধ্বংসী একটি ট্যাংক। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নর্থ কোরিয়াকে প্রতিহত করতেই এই ট্যাংক তৈরি করে দ. কোরিয়া। কারণ ১৯৯৫ সালে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা
যখন চরমে ঠিক ওই সময়টাতেই ব্ল্যাক প্যানথারের আবির্ভাব।
দেশটির বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফসল তৃতীয় প্রজন্মের
এই K2 Black Panther। চীন বা উত্তর কোরিয়ার যে কোনো ট্যাংকের চেয়ে প্যানথার অনেক উন্নত। শুধু উন্নত নয় মানের দিক
দিয়েও এর বৈচিত্র্যতা লক্ষ্য করা যায়। নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থায় এতে রয়েছে Explosive Reactive Armor (ERA) যা আমেরিকান M1A2 Abrams এর সঙ্গে তুলনীয়। ২টি machine gun-সহ আরও আছে latest german 120 mm Main gunযা দিয়ে সর্বোচ্চ 4 km পর্যন্ত ফায়ারিং করা যায়। এই কারণে অন্যান্য যে কোনো ট্যাংক থেকে আলাদা এটি। Advance Fire Controllerএর সাহায্যে এই ট্যাংক নিজ থেকেই কাছাকাছি দূরত্বের যে কোনো যানবাহন ও তুলনামূলক নিচ দিয়ে উড়ে যাওয়া হেলিকপ্টারকে ফেলে দিতে সক্ষম। অনায়াসেই আঘাত হানতে পারে কাছের লক্ষ্যবস্তুতে।
পাহাড়ি পথেও এটি খুব পারদর্শী। যদিও এই ট্যাংক এখনো মিলিটারি সার্ভিসে অফিসিয়ালি রিলিজ হয়নি, তবুও আশা করা যায়, ২০১৪ সালে এই ট্যাংকের রেগুলার দেখা পাওয়া যাবে। অন্যদিকে এই ট্যাংকের টেকনোলজি ব্যবহার করে তুরস্ক সেনাবাহিনীতে তৈরি হচ্ছে A1tay MBT। তুরস্ক ছাড়াও এশিয়া ও ইউরোপের আরও বেশ কয়েকটি দেশ এই টেকনোলজিকে ধারণ করে তৈরি করছে আরও কিছু বিধ্বংসী ট্যাংক।
টি-৯০ এম এস টাগিল [রাশিয়া]
একটা সময় মারণাস্ত্র ও প্রযুক্তির কথা উঠলে সবার আগে উচ্চারিত হতো রাশিয়ার নাম। সময়ের পরিক্রমায় সেই ধারা হয়তো বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু এরপরও রাশিয়ার অস্ত্রশস্ত্র ও ট্যাংকের চাহিদা এখনো সর্বজনীন। এ রকমই একটি ট্যাংক হলো টি৯০ এমএস টাগিল। বিশ্ববাজারে সবচেয়ে মানসম্মত ট্যাংক হিসেবে পরিচিত রয়েছে। তবে বাণিজ্যিকভাবেই এর গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। যদিও এটা পশ্চিমা দেশের ট্যাংকগুলোর মতো এত উন্নত নয়, তারপরও এতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রযুক্তি লক্ষ্য করা যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ট্যাংকটির খরচ সব দিক দিয়ে খুবই কম। লং রেঞ্জ টার্গেটে তেমন একটা কার্যক্ষম না হলেও স্বল্পদূরত্বের ক্ষেত্রে এক নম্বর। এককথায় ছোটখাটো অপারেশনের রাজা এটি। এই কারণে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। একটি করে মেইনগান ও মেশিনগান থাকার পরও এর আছে একটা ATGW (anti tank guided missiles weapon) যার সাহায্যে ৪-৫ কি.মি.-এর মধ্যে যে কোনো যানবাহন এমনকি নিচ দিয়ে উড়ে যাওয়া হেলিকপ্টার অনায়াসেই ধ্বংস করতে পারে। অন্যদিকে এটি পানির ভেতর দিয়ে পাঁচ মিটার গভীরতায় খুব সহজে চলাফেরা করতে পারে। যা অন্যান্য ট্যাংক খুব পারে না। বর্তমানে এই ট্যাংকগুলো আছে রাশিয়া, ভারত , আলজেরিয়া, আজারবাইন, তুর্কিমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত ট্যাংক যোগ হচ্ছে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে। তারপরও রাশিয়ার এই ট্যাংকটির গ্রহণযোগ্যতা এখনো ফুরিয়ে যায়নি। মান ও আস্থার দিক দিয়ে অনেক দেশেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে টি৯০ এমএস টাগিল।
এম-১ এ-২ অ্যাব্রামস [ইউএসএ]
এমওয়ানএ টু অ্যাব্রামস। পৃথিবীর অন্যতম সেরা ট্যাংক এটি।এম-১ এ-২ অ্যাব্রামস [ইউএসএ]
ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে রাতারাতি একটি শহরকে মাটির সঙ্গে মিশে ফেলতে পারে এ ট্যাংক। পাল্টে দিতে পারে যে কোনো যুদ্ধক্ষেত্রের হিসাব- নিকাশ। ১৯৮৮ সাল থেকে তৈরি হওয়া এই ট্যাংকের নামকরণ করা হয়েছিল জেনারেল রেজিস্ট্রেশন অ্যাব্রামস থেকে। এ ট্যাংক বর্তমানে মোতায়েন রয়েছে ইউএসএ, কুয়েত ও সৌদি আরবে। এমওয়ানএটু সুরক্ষা ব্যবস্থায় ইউরেনিয়াম মেশ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এটি অন্যান্য ট্যাংক থেকে যথেষ্ট নিরাপদ ও সুরক্ষিত। কিন্তু যেসব এমওয়ানএটু কুয়েত ও সৌদিতে মোতায়েন রয়েছে সেগুলোতে এই ইউরেনিয়াম মেশ দেওয়া হয়নি। হান্টার কিলার সিরিজের এই ট্যাংকটিতে রয়েছে একটি ১২০ এমএম স্মোথবোর মেইনগান ও তিনটি মেইনগান এবং তিনটি মেশিনগান। ১৫০০ এইচপি মাল্টি ফুয়েল গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিনের এই ট্যাংকটির ওজন ৬২.৫ টন। ৪ জন ক্রু
নিয়ে সর্বোচ্চ ৬৭ কিলোমিটার স্পিডে একটানা ৪২৫ কি.মি পর্যন্ত যেতে পারে। কিছু কিছু এমওয়ানএটুতে লেজার গাইডেড মিসাইলগুলোকে শনাক্ত ও তাদের নেটওয়ার্ককে জ্যাম করার ব্যবস্থা থাকে। এই ট্যাংককে থার্ড জেনারেশন এমবিটি বা মেইন ব্যাটেল ট্যাংক বলে।
অপলট-এম [ইউক্রেন]
Oplpt-M হলো Oplot সিরিজের T-84 এর আধুনিক সংস্করণ যেটা ২০০৯ সালে সীমিত আকারে উৎপাদন শুরু হয়।অপলট-এম [ইউক্রেন]
সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরই ইউক্রেইন এর গবেষণা শুরু করে। যদিও ২-৩টি বাদ দিলে পুরো ট্যাংকটিকে রাশিয়ান T-90 MS Tagil এর কার্বন কপি বলা যায়। ট্যাংকটিতে Nozh-2 আর্মার লাগানো রয়েছে যাtandem warhead থেকে একে রক্ষা করে থাকে। একটি ১২৫ mm মেইনগান, দুটি মেশিনগান ছাড়াও এর আছে শক্তিশালী Atg সিস্টেম। এখনো এই সিরিজের মাত্র ১০টি ট্যাংক আছে ওই দেশের সেনাবাহিনীতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর পরই নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে শুরু করে ইউক্রেন। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে হরহামেশা গৃহযুদ্ধ থেকে রক্ষা পেতে ১৯৯২ সালের পরে Oplot সিরিজের ট্যাংক বানাতে শুরু করে তারা। আর ২০০৯ সালে নতুন করে তৈরি করে Oplpt-M। হালকা ও ছোটখাটো গড়নের কারণেই খুব সহজেই নড়াচড়া করতে সক্ষম এটি। রাতের অাঁধারেও অনায়াসে পাহাড়ি পথ বেয়ে চলাচল করতে সক্ষম। আধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে এতে। এ ছাড়া একসঙ্গে চারজন বসতে পারে এই ট্যাংকটিতে। এর
বাইরের অংশ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যা দেখতে অনেকটা খেলনার মতো। প্লাস্টিকের খেলনা ট্যাংকের আদলে বানানো হয়েছে এটি। সবচেয়ে মজার কথা, সাম্প্রতিককালের ভিডিও গেমসগুলোতে যেসব ট্যাংক দেখানো হয় তা সবই এই ss. এই কারণে হালের শিশুরা সবচেয়ে বেশি পরিচিতি এই ট্যাংকটির সঙ্গে।
বিষয়: বিবিধ
১০৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন