ঈদ কড়চা
লিখেছেন লিখেছেন বৃত্তের বাইরে ১৩ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:৩২:৫০ রাত
ঈদ গিয়েছে সপ্তাহ হল। এর মাঝে ঈদের আমেজ কাটিয়ে উঠলেও এই সপ্তাহে টানা তিন দিনের বন্ধে আবার নতুন করে দাওয়াত দেয়া নেয়ার মধ্য দিয়ে এখানকার বাঙালিদের ঈদ শুরু হল। এবারের ঈদের দিনটি ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার। দেশের ঈদ মানে যেমন স্পেশাল কিছু এখানে তেমন নয়। কোরবানির জন্য দোকানে বা ফার্মে অর্ডার দিলে মাংস ঘরে আসে তাও ঈদের ৩/৪ দিন পর। কোরবানি দেয়া, মাংস কাটার পর্বগুলো নিজেরা করা হয়না বলে দেশের কোরবানি ঈদের মত মনে হয়না কখনো। তবে এবার ঈদ, পূজা একসাথে হওয়ায় এবং আমাদের এলাকাটি এশিয়ান ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় চারদিকে উৎসবের আমেজ ছিল।
দেশে থাকতে কোরবানির ঈদটা ছিল আমাদের জন্য স্পেশাল। সবসময় চাচা ফুপুরা সবাই মিলে করা হত দাদার বাড়িতে। সেই সাত সকালে দাদাজান কে দেখতাম নিজে গোসল করে, গরুকে গোসল করিয়ে নামাজে যাবার জন্য তৈরি হতেন। আমাদেরও সকালে গোসল সেরে তৈরি থাকতে হত। সালামীর পর্বটা ছিল খুবই আকর্ষণীয়। দুই টাকার নোটে দোয়েল পাখির ছবি ছিল বলে একে পাখি টাকা বলতাম। ঈদের দিন বড়দের সবার কাছে এই পাখি টাকা আদায় করে আমার পছন্দের আইসক্রিম খাওয়ার সুযোগটা সাধারনত হাতছাড়া করতাম না। দাদার বাড়িতে ঈদ করার সমস্যা ছিল একটাই টিভি দেখা হতনা। একবার বড় চাচার উদ্যোগে টিভি আনা হয়েছিল। কিন্তু দাদাজানের ভয়ে কেউ কোনদিন বাক্স থেকে খোলার সাহস পায়নি। অবশ্য গ্রামের বাড়িতে চাচাত-ফুপাত ভাইবোনদের সাথে ঈদের সারাটি দিন হৈ চৈ করে বেড়ানোর আনন্দে আমরাও টিভি দেখার কথা ভুলে যেতাম। ঈদ উপলক্ষে আমাদের গ্রামে ঐতিহ্যবাহী হাতে বানানো সেমাই আর সুন্দর নকশা করা পিঠা যাকে ফুল পিঠা বলে সব ঘরে থাকত। নামাজ থেকে এসে কোরবানির মাংস কাটাকুটির পর উঠোনে বড় হাঁড়িতে রান্না চড়ানো হত। আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে প্রথম খাবার খাওয়া হত আমাদের ঘরে। দাদার এই নিয়ম মা, চাচীদের থেকে এখন আমাদের সব ভাই বোনরা যে যেখানে আছে সবার মধ্যে চলছে।
দাদার বাড়ির সেই নিয়ম অনুযায়ী এবারে কানাডায় আমাদের ঈদের সকালটা ছিল প্রতিবেশী আর নানা বর্ণের বন্ধু-বান্ধব, অফিসের কলিগদের মিলন মেলা। কানাডিয়ান, এশিয়ান বান্ধবী এবং কলিগদের দিকে খেয়াল রেখে দেশী খাবারের সাথে অন্য মেন্যু রাখতে হয়েছে। রান্না-বান্না বিশেষ করে আমাদের দেশীয় রান্না আমার কাছে সবসময় অনেক ভেজালের মনে হয়। তবে এ বিষয়ে দেশে আমাদের বাড়ির জরিনার বক্তব্য হল ‘আফা রান্না করা কোন ব্যাফার না। একটা বাটিতে সব মসলা একসাথে নিয়ে পানিতে গুলে তরকারীতে ঢেলে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করলে দেখবেন রান্না হয়ে গেছে। এই পদ্ধতিতে কিছুদিন কাজ চালালেও একসময় নিজের রান্না নিজের কাছেই অখাদ্য মনে হল। আনাড়িদের হাতে যা অখাদ্য এক্সপার্ট রাঁধুনিদের হাতে পড়লে তা শিল্প হয়ে উঠে। মেন্যুতে বৈচিত্র্য আনতে টিভি দেখে আমরা দুই বোন মিলে একটা সৌদি খাবার রান্নার চেষ্টা করলাম যার নাম ‘ক্যাব সা’। রান্নার পর দেখা গেল কিছু মসলা এদিক সেদিক করলে যাহা ক্যাবসা তাহাই আমাদের দেশের মুরগী/খাসির বিরিয়ানি শুধু নামটা ভিন্ন। নামের ভিন্নতায় আমাদের দেশীয় রেস্টুরেন্টগুলোও পিছিয়ে নেই। বড় চাচার কাছে গল্প শুনেছিলাম দেশের কোন রেস্টুরেন্টে খেতে যেয়ে মেন্যুতে নাম দেখেছিলেন ‘সাদুল্লাবাহার’। উনিও আয়েশ করে খাবেন বলে অর্ডার দেয়ার পর দেখলেন বাহারী নামের আড়ালে তা একপ্রকার শুটকীর ভর্তা যা খাওয়া দূরে থাক গন্ধটাও ওনার খুবই অপছন্দের। যাই হোক নামের ভিন্নতায় ঝাল মিষ্টির সমন্বয়ে ঈদের দিনটি গেল অতিথি আপ্যায়নে এবং পরের দিন যথারীতি ঘুমিয়ে।
এই সপ্তাহে সরকারী ছুটিতে তিন দিন বন্ধ থাকায় গতকাল ছিল আমাদের ঈদ পুনর্মিলনী। সবাই মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম শহর থেকে দূরে এক গ্রামের মেলায়। Thanksgiving উপলক্ষে Pumpkin Festival এ। এমনিতে গত একমাস সব শপিং মলগুলোতে বিশাল সাইজের মিষ্টিকুমড়া বিক্রি হচ্ছে। বেশিরভাগ সাদাদের বাড়ির সামনে ডেকোরেশন পিস হিসেবেও শোভা পাচ্ছে মিষ্টিকুমড়া এবং তা পুরো অক্টোবর জুড়ে চলবে।
মেলার সব দিকে বিভিন্ন সাইজের মিষ্টিকুমড়া দিয়ে সাজানো আর দিগন্ত বিস্তৃত ভুট্টার ক্ষেতগুলোর কারনে চারদিকে ছিল শুধু হলুদ কমলার সমারোহ।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মধ্যে বড়দের জন্য ছিল Pumpkin pie খাওয়ার প্রতিযোগিতা আর বাচ্চাদের জন্য ছিল মেলার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে চকলেট সংগ্রহ করা। এর জন্য অবশ্য টিকেট কেটে বিভিন্ন রাইডে চড়তে হয়েছে।
রাইডগুলো ছিল শুকনো ভুট্টার খড় দিয়ে তৈরি।
মাঠের আরেকদিকে ছিল মিনি চিড়িয়াখানা। এদেশের বাচ্চারা গ্রামের পরিবেশ দেখে অভ্যস্ত নয় বলে ছাগল, ভেড়া যা দেখে তাতেই অবাক হয়।
পুরো এলাকা ঘুরে দেখার জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও ছিল। পরিশেষে, রাস্তার ধুলা বালি মিশ্রিত সম্পূর্ণ গ্রামীন পরিবেশে ঘর থেকে একেকজনের তৈরি করে নিয়ে যাওয়া খাবার খাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হল ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান।
বিষয়: বিবিধ
২৩৩৫ বার পঠিত, ৭৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কাবসা বোধহয় আমাদের বিরিয়ানির চেয়ে শুকনা হয়। শুটকির ভর্তার মত বেহেশতি খাদ্য যে পছন্দ করেনা তার প্রতি করুনা ছাড়া আর কি করব!!!
খাবারের ছবি দেখলেও আমার খিদে পায়-
আর যদি রসালো বর্ণনা সাথে থাকে তবে তো অবস্থা কেরোসিন
সুন্দর মর্ণনা থেকে অনেক কিছু জানলাম
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকিল্লাহ
অন্যদিকে..... বেচারা ভাইয়াটা নিজের প্রিয় সাথীটার হাতের রান্না খাওয়ার ইচ্ছেটা প্রকাশ না করলেও আপনার নিজেরতো ইচ্ছে করবে যে...... প্রিয় সঙ্গীটাকে নিজে একটু রান্না করে খাওয়াতে। যাতে উনি একটু খুশি হয়।....... তাইনা?
বেশি বলেফেল্লাম নাকি? @আফরাপ্পি
আফা, রান্না করা কোনো ব্যাফার না...'
হুম...ওয়ান-ডিস পার্টি...
আচ্ছা, থ্যাঙ্কস-গিভিং-এর সাথে পাম্পকিনের সম্পর্কটা কি?...
Thanksgiving harvest festival. মিষ্টিকুমড়া এর প্রতীক pumpkin pie এখানকার ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় dessert. ৩১শে অক্টোবর Halloween উপলক্ষে পুরো মাস জুড়ে মিষ্টিকুমড়ার এই বিক্রি। তবে এর সাথে এর সম্পর্ক নেই Halloween এর সাথে আছে।
সুন্দর রসাত্মক ঈদময় সময়ের উপস্হাপনার জন্যে আনন্দময় শুভেচ্ছা......
সাথে দু একজন ব্লগারকে দাওয়াত খেতে নিয়ে আসার দায়িত্ব আমার
দাদাকে স্যালুট টিভিকে নেগলেক্ট করার জন্য।
দোয়েল টাকায় হবেনা আমার আরো বড় যেখানে এক এর সাথে তিনটা বা চারটা শূন্য থাকে সেই টাকা সালামি নিবো আপুর কাছে
খুউব খুউব ভালো লাগ্লো আপু।
শুকরিয়া।
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : তুমিতো বুড়ো হয়েগেছো, ছোট্টদের কাছথেকে কেমনে স্যালামী নিবা, পাজ্জি? এত্তদিন পরে কোত্থেকে উদয় হয়েছো আগে সেটা বয়ান করো : :
আপুর পক্ষ থেকে আমি ইকটু দিলাম-
চলবে তো ভাই?: ওহ, বয়ান চলছে নাকি
ইশশশ এক নম্বর যে ছবিটা দিলেন আরতো তর সইছে না।
খাই দাই এর দাওয়াতটা না নিয়ে পারলাম না।
খাবো খাবো ।
শুকরিয়া আপু।- ছোট ভাইদের ঈদ বোনাস ঠিকঠাক জমা রেখেন।
সবাইকে ঈদ মোবারক।
অভিজ্ঞ ফটোগ্রাফার এতদিন পরে আপনার নিজের তোলা ছবি দেখে ভিীষণ মজা লাগলো আহ্ হা...... আমি যে কেন গেলাম না ওখানে..... আমিও কয়েকটা ভুট্টার ক্ষেতের ছবি তুলতে পারতাম
শেয়ার করার মাধ্যমে আমাদের কিছুটা হলেও মন ভাল করে দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ-
আমার কাছে রান্না করতে বেশ ভালো লাগে। নিজের হাতে রান্না করে সবাইকে খাওয়াতে আনন্দ লাগে আরো বেশী। কিন্তু রান্নার আগের প্রস্তুতিটা খুবি বিরক্তিকর।
Click this link
আমাদের নানাবাড়িতেও ফুলপিঠার বেশ প্রচলন! ‘ক্যাব সা’ রেসিপি দেখার ইচ্ছে করছে খুব!
সুন্দর সাবলীল বর্নায় ঈদের আনন্দ আমাদের কাছে এতো মনোরম করে তুলে ধরার জন্য আবারো শুকরিয়া
মন্তব্য করতে লগইন করুন