সোনামনিদের গল্পের আসর
লিখেছেন লিখেছেন বৃত্তের বাইরে ০৩ জুলাই, ২০১৪, ১০:৩১:৪০ রাত
১
ইরিনা তোমার খালামনিকে বলো, ‘ফ্রিজে খাবার আছে, সে যেন সেহেরিতে উঠে নিজে গরম করে খেয়ে নেয়। আমি ডাকতে পারবোনা।
ইরিনা তোমার আম্মুকে বলো, ‘আমি আমার নিজেরটা নিয়ে খাবো। আমায় নিয়ে ভাবতে হবেনা.
উফ, আর পারিনা। আবার বুঝি শুরু হল এই ডাকপিয়নের চাকরি। ওরা কথা বন্ধ রাখে আর ডাকপিয়নের মত এ ঘর থেকে ও ঘরে কথা চালাচালি করতে হয় আমাকে! তবে খালামনি বলেছে, ‘মিসেস রায়হানের পিচ্চি উত্তরাধিকারিণী! রোজা রমজানের দিনে তোকে বেশী জ্বালাবোনা বুঝলি! মুসলমানদের তিন দিনের বেশী কথা না বলে থাকাটা ঠিকনা। তিনদিন পূর্ণ হওয়ার আগে ঠিক ১১ টা ৫৯ মিনিটে কথা বলা শুরু করবো।
নাহ, এর একটা বিহিত করতেই হবে। স্কুলে সে টিচারের কাছে ভীষণ রাগী একটা ছেলের গল্প শুনেছিল। আম্মু আর খালামনিকে সেই গল্পটা শোনালে কেমন হয়!
এক ভীষণ রাগী ছেলে যে কিনা অল্পতেই রেগে যায় একদিন তার বাবা তাকে বললো, এরপর থেকে যখনই তোমার রাগ উঠবে, ঐ কাঠের দেয়ালে একটা পেরেক ঠুকবে। ছেলেটি তাই করলো। এভাবে পরদিন যখনই রাগ উঠে দেয়ালে একটা করে পেরেক ঠুকলে দেয়ালটিতে মোট সতেরটি পেরেক পাওয়া গেল। কিন্তু অবাক ব্যাপার হল, আস্তে আস্তে দিন অনুযায়ী পেরেকের সংখ্যা কমতে থাকলো এবং একদিন ছেলেটি আবিষ্কার করল আজ সারাদিন সে দেয়ালে একটিও পেরেক ঠুকেনি। আনন্দের সাথে সে তার বাবাকে জানালো ‘বাবা দেখো আজ সারাদিন আমি একটুও রাগ করিনি। দেয়ালে একটাও নতুন পেরেক নেই। খুশি হয়ে বাবা বললেন, ‘এবার তুমি একটা করে পেরেক দেয়াল থেকে তুলে ফেলো। সব পেরেক তোলা শেষ হলে ছেলেকে কাঠের দেয়ালটি দেখিয়ে বাবা বললেন, ‘তুমি রাগ নিয়ন্ত্রন করেছো কিন্তু রাগের সময় যে ক্ষত তৈরি করেছো সেটা কি কখনো ঠিক হবে?’ এভাবেই আমরা রাগের মুহূর্তের আচরণটি দিয়ে ক্ষত তৈরি করি যেটা হয়ত আর কখনোই সারানো যায়না। রাসুল(সাঃ)এর কাছে এক ব্যক্তি সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনার জন্য কিছু উপদেশ চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘রাগ নিয়ন্ত্রন করো’। লোকটি আরও উপদেশ চাইলে তিনি আবারও এই উপদেশ দিলেন। এভাবে লোকটি পুনরায় উপদেশ চাইলে তিনি আবারো বললেন ‘রাগ নিয়ন্ত্রন করো। তাই আমাদের ও উচিত রাগ নিয়ন্ত্রণ করা
বড়দের মত রাগ করে ইরিনা আয়না দিয়ে দেখেছে রাগলে তার চেহারা খুবই পঁচা দেখা যায়। টিচার বলেছেন, ‘রাগ হলে আউজুবিল্লাহিমিনাশশায়তনীর রাজীম পড়বে তাহলে আর রাগ থাকবেনা। সে রমজান মাস থেকেই এই প্র্যাকটিসটা শুরু করবে বলে ঠিক করেছে।
২
ইশ অল্পের জন্য বেঁচে গেছে রিহাম। যদি রাতুলটা তার হুমওয়ার্ক করে না দিত তাহলে আজ আবারো টিচারের কাছে বকা খেতে হত। টিচার বলেন,‘রিহাম তুমি কেন পড়ায় ফাঁকি দেয়ার জন্য সবসময় এক্সকিউজ খোঁজ? ‘যদি’ রাতুল না থাকতো আমি হুমওয়ার্ক করতে পারতাম না। যদি’ সানা আজ স্কুলে না আসতো আমি মরে যেতাম—এই কথাগুলো নেগেটিভ কথা এতে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। আর এমন কথা আল্লাহ্ পছন্দ করেননা যেখানে আল্লাহর সাথে অন্য কারো শরীক করা বুঝায়। হুমওয়ার্ক কমপ্লিট করতে তোমাকে যেমন বেশী বেশী প্র্যাকটিস করতে হবে তেমনি কাউকে বাঁচাবার, বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করার মালিক একমাত্র আল্লাহ্। তাই নিজের দুর্বলতা প্রকাশ পায় এমন ক্ষেত্রে ‘যদি’ বলাটা ঠিক নয়। বরং যে কোন প্রশংসনীয় উদ্যোগে ‘যদি’ বলতে পারো যেমন--যদি রাতুলের মত প্র্যাকটিস করতাম তাহলে আমিও ভাল রেজাল্ট করতাম! যদি টিচার আরেকটু লেকচার দিতেন তাহলে আমি আরও বেশি জানতে পারতাম ইত্যাদি।
আল্লাহ্তাআলা এরশাদ করেছেন,'যারা ঘরে বসে থেকে তাদের যোদ্ধা ভাইদেরকে বলে, আমাদের কথামত যদি তারা চলতো তবে তারা নিহত হতোনা'(আল-ইমরান: ১৬৮). সহীহ বুখরীতে আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত রাসুল (স বলেছেন, 'যে জিনিস তোমার উপকার সাধন করবে, তার ব্যাপারে আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও, আর কখনো অক্ষমতা প্রকাশ করোনা। যদি তোমার উপর কোন বিপদ এসে পড়ে, তবে এ কথা বলো না , 'যদি আমি এমন করতাম, তাহলে অবশ্যই এমন হতো. বরং তুমি এ কথা বলো, ''আল্লাহ যা তাকদীরে রেখেছেন এবং যা ইচ্ছা করেছেন তাই হয়েছে. কেননা, ' যদি'' কথাটি শয়তানের জন্য কুমন্ত্রণার পথ খুলে দেয়'.
৩.
প্রতি বছর জানুয়ারী এলে রাফসানের বন্ধুরা তাকে জিজ্ঞেস করে ‘রাফসান তোমার New Year's resolution কি? রাফসান মনে করে এটা জানুয়ারী না হয়ে রমজান মাস থেকে শুরু হলে কেমন হয়? রমজান যেহেতু আত্মশুদ্ধির মাস তাই প্রতি রমজানে যে কোন ভাল কাজের নিয়ত করে সেই অনুযায়ী সারাবছর মেনে চলা। আর যে কোন ভাল কাজে ইনশাল্লাহ বলতে হয় এটা সে শিখেছে গল্পের মাধ্যমে।
এক লোক হাঁটে গরু কিনতে যাচ্ছে। পথে তার বন্ধুর সাথে দেখা হলো। বন্ধুটি জিজ্ঞাসা করলো কোথায় যাও? লোকটি বলল, গরু কিনতে কিন্তু ইনশাল্লাহ বলতে ভুলে গেল. তার বন্ধুটি বলল, যে কোনো ভালো কাজ করতে ইনশাল্লাহ বলতে হয়. লোকটি উত্তর দিল,'আমার চলাফেরার মত শক্তি আছে,পকেটে টাকা আছে, ইনশাল্লাহ বলার প্রয়োজন নেই যেহেতু আমি নিশ্চিত আমি গরু কিনছি। অবশেষে, পুরো মার্কেট ঘুরে, দরদাম ঠিক করে যখন সে পছন্দমত গরু কিনতে যাবে, পকেটে হাত দিয়ে দেখে টাকাটা চুরি হয়ে গেছে। সে মন খারাপ করে ফিরে এসে বন্ধুকে সব খুলে বললো, ইনশাল্লাহ আমি গরুটা কিনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ইনশা আল্লাহ আমার টাকা চুরি হয়ে গেছে, ইনশা আল্লাহ আমি পরের সপ্তাহে কিনবো। তার বন্ধু হেসে ব্যাপারটা তাকে বুঝিয়ে দিল, 'যে কাজ অলরেডী হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে ইনশা আল্লাহ বলার প্রয়োজন নেই বরং যা ভবিষ্যতে ঘটতে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে ইনশা আল্লাহ বলতে হয়।
রাফসান শিখেছে কিভাবে যে কোনো কাজ পজিটিভলি নিতে হয় এবং ভালো কাজের ক্ষেত্রে ইনশা আল্লাহ বলতে হয়। তাই সে আর তার বন্ধুরা মিলে ঠিক করেছে রমজানে ভালো কাজের একটা লিস্ট তৈরী করে সেভাবেই সারা বছর কাজ করবে ইনশা আল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
৩২১৮ বার পঠিত, ৩৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রামাদান মুবারক সবাইকে
রমজানুল মুবারক আপু ।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
শুকরিয়া আপুনি
অনেক ধন্যবাদ।
আপনার জ্ঞান দেখে ইর্ষা হয়। বৈধ ইর্ষা
ছোট বোনকে ঈর্ষা! কোথায় আপনি শায়েখ গুগল! আর আমি জ্ঞানের সাগরে হাতড়ে বেড়ানো সাঁতার না জানা সাঁতারু
আমার শায়খ কিতাব
জ্ঞানের সাগড়ে সাতার কাটলে কেউ ডুবে না.... যেমন আপনি কাটছেন।
আমি ভালো গল্প লিখতে পারিনা। এটা আমার একটা দুর্বলতা যা আপনাদের থেকে শিখছি হাটি হাটি পা পা করে....
(সাঃ)এর কাছে এক
ব্যক্তি সুন্দরভাবে জীবন
পরিচালনার জন্য
কিছু উপদেশ
চাইলে তিনি বলেছিলেন,
‘রাগ নিয়ন্ত্রন করো’।
লোকটি আরও উপদেশ
চাইলে তিনি আবারও
এই উপদেশ দিলেন।
এভাবে লোকটি পুনরায়
উপদেশ
চাইলে তিনি আবারো বললেন
‘রাগ নিয়ন্ত্রন করো।
তাই আমাদের ও উচিত
রাগ নিয়ন্ত্রণ কর
হরিনের মাংস খেতে ইচ্ছে করছে...কোথায় যে পাই !!! সুন্দরবনে গিয়ে শুনেছিলাম,যারা হরিনের মাংসের প্রতি লোভ রেখে এদিক থেকে মাংস কিনেছে,তাদের প্রায় সকলেই কুকুরের মাংস খেয়েছে.....ভেজাল চারিদিকে.....তবে আপনার লেখাটা খাটি..
পরিবারের কল্যাণের জন্য আগাম দোয়া করায় কিছু ধনেপাতা ইফতারীতে কাজে লাগাইয়েন
কারন আইসক্রিম খেলে রাগ চলে যায়। মুহাহাহাহা।
খুউব ভালো লাগ্লো পুচ্চিদের নিয়ে লিখনীতা।
আমার প্রিয় মিসবাহ হুজুরও পুচ্চিদেরকে নিয়ে আক্বিদা সিরিজ, রিসালাত , সিরাত সিরিজ এর বই লিখেছেন আলহামদুলিল্লাহ।
রোজাপু লিখেছেন পুচ্চিদের মা বাবাকে নিয়ে করনীয় সম্পর্কে।
আপু আপনাকে -রোজাপুর লিখা বইটি আমি হাদিয়া স্বরূপ দেবো ইনশাআল্লাহ।
লিখে রেখেন রোজনামচার পাতায়।
ধন্যবাদ আপু।
অনেক শুকরিয়া এবং শুভকামনা রইলো আপুজ্বী।
মন্তব্য করতে লগইন করুন