রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করনি
লিখেছেন লিখেছেন বৃত্তের বাইরে ২৯ মে, ২০১৪, ১০:০৪:০৪ রাত
এ বছরের শুরুর দিকে ঘটনা। নির্বাচন উপলক্ষ্যে খুন, লুটপাট,গুম,পেট্রোল বোমা সব মিলিয়ে ঢাকা তখন ত্রাসের নগরী। শহরের প্রতিটা ঘরে সকালে কাজের উদ্দেশ্যে ঘর বের হলে রাতে না ফেরা পর্যন্ত অভিভাবকদের স্বস্তি নেই। এমনি এক দিনে দেশ থেকে ফোন পেলাম কে বা কারা শাহবাগে বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়েছে। বাসযাত্রীদের দু’জন মারা গেছে বাকিরা তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে আহত হয়েছে। সেদিন জানে বেঁচে যাওয়া ভাগ্যবানদের সাথে নিজের ভাই থাকাতে হয়তো খবরটা শুনে অন্য দিনের চেয়ে বেশী বিচলিত হয়েছিলাম। বেঁচে আছে-এই নিশ্চিত খবরটা না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটা মুহূর্ত কি যে উৎকণ্ঠায় কেটেছে! অথচ এমন খবর তো প্রতিদিন কত শুনি, পেপারে দেখি, কই এমন করে ভাবিনি তো! যারা ভাবার তারাও তো কেউ ভাবছেনা। চারদিকে ক্ষমতার লড়াই, গদি নিয়ে কামড়া-কামড়ি। সাধারন মানুষ এর মাঝেই ভয়ে আতঙ্কে কোনরকম দাঁত কামড়ে পড়ে থাকে। স্বাধীন দেশের মানুষ একদিনই স্বাধীন আর সেটা ভোটের দিনে-এখন তো সেই অধিকারও নেই। ইচ্ছে না হলেও ভোট দিতে হয়। কি করবে! চোর-বাটপার, খুনী, সন্ত্রাসী ছাড়া যোগ্য লোক নেই যে! গতকালও যে ছিল ‘গাড়ী ভাঙ্গা ডাকাত দলের সর্দার’ আজ সে নেতা। তারা সব বসন্তের কোকিল-বসন্ত ঋতু ছাড়া তাদের টিকির নাগাল পাওয়া যায়না। ভোট শেষ, সম্পর্কও শেষ। রাজনীতিবিদরা যেমনই হোক না কেন জনগনের ভোটের এমনই শক্তি যে গুন্ডা,পাণ্ডা, চোর, ডাকাত, খুনীও যদি নির্বাচিত হয় তাহলে ওরাও দেশের জন্য আইন বানাতে পারে! এরাই আইন বানায়, নিরীহ মানুষের উপর প্রয়োগ করে। কথায় বলে সাপের বাচ্চা সাপই হয়। ছোট আর বড়! আমেরিকা একমাত্র পরাশক্তি বলে সারা বিশ্বে খবরদারি করে। বাংলাদেশ তো আর আমেরিকার মত বড় নয় কিন্তু তাতে কি! গনতন্ত্রের তকমা লাগিয়ে নিজের দেশে গুম, হত্যা, লুটপাট করে খবরদারি করতে অসুবিধা কোথায়!
জনগনের আরেক সেবক পুলিশ। বোকাসোকারা বলে জনগনের রক্ষক। শাহবাগের মোড় পর্যন্ত এসে রিকশা আর গলির ভিতরে যায়না। ওই এলাকার বাসিন্দারা প্রতিদিন রিকশা থেকে নেমে মোড় থেকে বাসার গলি পর্যন্ত হেঁটে যান। তবে যেসব রিকশাওয়ালারা বুদ্ধিমান তারা দুই-চার,পাঁচ টাকা যার যেমন সামর্থ্যে কুলায় জনগনের সেবকদের ভিক্ষা দেয়। তারাও এই দান আত্মতৃপ্তির সাথে গ্রহন করে। কি করবে! তাদেরও তো জনগনের এই দয়ায় খেয়ে পড়ে বাঁচতে হয়! তারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মাঝে মাঝে না বুঝেই এদিক সেদিক গুলি করে। আর দাঁড়ি, টুপি থাকলে তো কথাই নেই। চোখ বন্ধ করেই কে সন্ত্রাসী বলে দেয়া যায়। আসলে ইচ্ছে করে গুলি করে তা কিন্তু না। সমাজের উঁচু তলার নির্দেশে ভয় পেয়ে কোন দিকে না কোন দিকে গুলি করে বুঝতে পারেনা, জনরোষের ভয়ে নিজেদের জান বাঁচাতে করে—ইত্যাদি অনেক কথা! মাথা নুইয়ে উপর তলার নির্দেশ মতোই কাজ করতে হয়। জনগনের সুবিধা-অসুবিধা, জান-মালের নিরাপত্তার ধার কে ধারছে! সাধারন মানুষকে জ্যামে তিন চার ঘণ্টা আটকে রেখে নেতার হুকুম পালন শিরোধার্য। উন্নত দেশে পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন শুনলে সবাই সতর্ক হয়ে যায়। যে যেভাবে ড্রাইভ করছে ডানদিকে সরে এসব গাড়ী না যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে হোক সে মন্ত্রী বা সাধারন কেউ। আর দেশে! কে এসব তোয়াক্কা করছে! নিয়ম নীতির বালাই নেই। যেমন মালিক, তেমনি তার বেতনভুক্ত কর্মচারী। জানজটে ২/৪ জন মরলে সমস্যা তো নেই। স্কুলের বইতেই তো পড়ানো হয়-‘ডাক্তার আসার পূর্বে রোগী মারা গেল’। কাজেই, জনগনের সেবকরা এই নীতিতে চলবে এটাই স্বাভাবিক।
বৈশাখের দাবদাহের চেয়ে এখন খুন, গুম,অপহরণের আতঙ্ক ভয়াবহ। এসব যেন আজকাল ডালভাত। টিভির পর্দায় হোক আর খবরের কাগজে হোক, চোখ পড়লেই অপহরণ, খুন, গুমের সচিত্র ঘটনা ভেসে উঠে। অফিসে সিনিয়ার অনেকে আছে বাংলাদেশ নামে যে কোন দেশ আছে জানেনা। কষ্ট লাগে শুনতে। এই সেদিন বাংলাদেশকে কেউ কেউ চিনেছে রানা প্লাজা ধ্বংসের সচিত্র প্রতিবেদন টিভিতে দেখে, প্রজেক্ট ম্যানেজার চিনেছে পদ্মা সেতুর দুর্নীতিতে কানাডার বিখ্যাত অয়েল এন্ড গ্যাস কোম্পানি এস এন সি লাভালাইনে ইঞ্জিনিয়ারদের দুর্নীতির খবর শেয়ার করতে যেয়ে। কি অভাগা জাতি আমরা! বেয়াল্লিশ বছর আগে পাওয়া স্বাধীনতা ছাড়া দেশের এমন কোন ভাল খবর নেই যা কারো কাছে গর্ব করে বলা যায়। সেই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসও জানেনা নতুন প্রজন্ম। বেয়াল্লিশ বছর ধরে আমরা সত্য মিথ্যার এক মহা গোলক ধাঁধাঁয় পড়ে আছি, বেরুতে পারছিনা তার থেকে। মাঝে মাঝে কোথাও থেকে একটু আলোর রেখা দেখা গেলেও কারা যেন টেনে সেই দ্বার টা রুদ্ধ করে দেয়। স্বাধীনতার ঘোষণা, শহীদের সংখ্যা, মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে এখনও কত দ্বন্দ্ব! কোন মুক্তিযোদ্ধা কি কখনও বলেছে যে তারা ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করেছে! কিন্তু তারপরেও স্বাধীন দেশে অনাহারে, বিনা চিকিৎসায় তাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা স্বপ্নেই থেকে যায়। দেশের পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের ভিতর এত মানুষ! সত্যিকারের মানুষ যেন কোথাও নেই। যে যেদিকে পারছে খাবলে খাচ্ছে। দোয়া করি, মহান রাব্বুল আলামীন যেন আমাদের সবার মনের কালিমা দূর করে দেন, সবার প্রতি সদয় হন। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সব ধরনের বিপদ থেকে সব ধর্মের, সব শ্রেণীর জনগণকে রক্ষা করেন, সবার মনে সাহস যোগান। ঠিক যেমন রক্ষা করেছিলেন, শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়। ঠিক সেই প্রত্যয় নিয়ে যেন আমরা শুধু বাঙ্গালি হয়ে বেঁচে না থেকে মানুষ হতে পারি।
বিষয়: বিবিধ
২৫৯১ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে
@আলোকিতোপু আমি কিন্তু আপনাকে ধরেছি।
তবে এই নামে নয় "ফাতিমা" নিক নিয়ে...
ব্লগ বাড়ি চেন্জ করার আইডিয়াটা পেলাম রোজারু আপিদের কাছ থেকে... এখন থেকে আমরা দুইজন একই ব্লগ বাড়িতে...
ও হা কিছু কিছু বাঙালি বোধ হয় এখনো মানুষ হিসেবেই বেছে আছে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার নতুন কোনো লেখা নেই কেন! আগের মত নিয়মিত লিখবেন রমজানের অগ্রিম শুভেচ্ছা রইলো
মন্তব্য করতে লগইন করুন