প্রণয় থেকে পরিণয়
লিখেছেন লিখেছেন বৃত্তের বাইরে ০৮ মে, ২০১৪, ১০:৪৯:৩৬ রাত
গত সপ্তাহে একসাথে দুটো বিয়ের দাওয়াত পেলাম। একটা আমাদের অফিসের এক সহকর্মীর, আরেকটা আমার এক ক্লাসমেটের। উভয় বিয়েতে আমাদের কয়েকজনকে কনের সখি হিসেবে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। দেশে থাকতে ভিন্ন ধর্মে প্রেম, বিয়ের কথা অনেক শুনেছি কখনও যাওয়া হয়নি। এবারে দু'পক্ষই পরিচিত হওয়ায় এড়াতে পারিনি। উৎসাহের আরেকটা কারন ছিল বাংলাদেশীদের সাথে অন্য কালচারের বিয়ে দেখা।
শুভবিবাহ-১
ছেলে বাংলাদেশী, মেয়ে পাকিস্তানী। দুজনেই মুসলমান হওয়ায় দুপক্ষ মিলে বিয়ের অনুষ্ঠান মসজিদে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শহরের কোলাহল থেকে বেশ খানিকটা দূরে বিশাল জায়গা জুড়ে বড় এক মসজিদ। আগে কখনও যাওয়া হয়নি দেখে সবাই মিলে ভিতরে এবং বাইরে চারপাশটা ভাল করে ঘুরে দেখলাম। এতদিন জানতাম মসজিদ মানে শুধু উপাসনালয় কিন্তু সব ঘুরে মনে হল একে মসজিদ বললে ভুল বলা হবে। মসজিদ নয় বরং বিশাল কোন কমিউনিটি সেন্টার যার ভিতরে সুইমিংপুল, ব্যায়ামাগার, লাইব্রেরী, বাচ্চাদের খেলার জায়গা সহ বিনোদনের সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। ভিতরে একদিকে বিয়ের অনুষ্ঠান করার জন্য বিশাল হলরুম মাঝে পার্টিশন দেয়া। ছেলে এবং মেয়েদের বসার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ আলাদা। আলাদা বসার ব্যবস্থা করায় বিয়েতে ছেলে-মেয়ে উভয় পক্ষের যৌথ উদ্যোগে সাধারণত যে ধরনের মজা করা হয় তা চোখে পড়েনি। আমরা মেয়েদের রুমে বসা ছিলাম বলে বর কে দেখার সুযোগ হয়নি, ছেলেদেরও তেমনি মেয়েদের হলরুমে প্রবেশ নিষেধ ছিল। খাবার buffet সিস্টেমে হওয়াতে যার যা পছন্দ নিয়ে খাওয়ার স্বাধীনতা ছিল। সব কিছু সুশৃঙ্খলভাবে এবং সময়ানুযায়ী হওয়ায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা নিয়ে খুব বেশী অপেক্ষা করতে হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ে কনের গাড়ি এসে গেটে থামে। কনে সহ সাথের সবাই ছিলেন বোরখা পরিহিতা। স্টেজে বসানোর পর বোরখা খোলায় মুখ দেখার সৌভাগ্য হল। তবে মেয়ের আত্মীয় স্বজন ছাড়া কারো ক্যামেরায় বা মোবাইলে ছবি তোলার অনুমতি ছিলনা। এরপর বিয়ে পড়ানো, খাওয়া-দাওয়া সহ সবই ছিল পর্দার ভিতরে এবং কোন রকম গান বাজনা ছাড়া খুবই সাধারন অনুষ্ঠান। বিদেশের মাটিতে কোন রকম হৈ-চৈ ছাড়া সকল ধরনের মুসলিম রীতি নীতি মেনে এমন সাদামাটা বিয়ে যা আমাদের দেশেও এখন দেখা যায়না তা দেখে সবাই বেশ অবাক হলাম। তবে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত যে খবরটা আমাদের অজানা ছিল তা হল বর বাংলাদেশের ক্বাদিয়ানী এবং কনে পাকিস্তানের আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের এবং মসজিদটিও শুধু এই সম্প্রদায়ের লোকদের নামাজ পড়ার জন্য। এখানে অন্যরা কেউ নামাজ পড়তে যায়না বলে এর আগে মসজিদটা দেখা হয়নি এবং আমাদের কারো জানাও ছিলনা। দেশে স্কুল- কলেজে, ভর্তি পরীক্ষার ফরমে শিয়া-সুন্নি নামক বক্সটা আমার মনে সবসময় প্রশ্নের উদ্রেক করতো। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বক্সটা রাখার কোন যৌক্তিকতা আছে কিনা বা এই বক্সটা পুরন করা কেন দরকার...ইত্যাদি। এই বিয়েতে উপস্থিত না থাকলে হয়তো ধারনা পেতাম না বাংলাদেশের এত লোক এই সম্প্রদায়ের এবং ধর্মের রীতি-নীতি পালনেও তারা অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে যা সুন্নীদের মাঝেও আজকাল দেখা যায়না।
শুভবিবাহ-২
এই বিয়েতে দেশী কন্যা, পাঞ্জাবী মুন্ডা। মেয়ে মুসলমান বাংলাদেশের, ছেলে হিন্দু পাঞ্জাবের। লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, বিয়েতে আগত তরুন প্রজন্মের বেশীরভাগ বাংলাদেশী জুটির পার্টনার ছিল শ্রীলঙ্কান, চাইনিজ, ভিয়েতনামী এবং আরও অন্য দেশের যা কিনা রক্ষনশীল মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠা আমার মত অনেককে অবাক করেছে বেশী। মেয়ের মা দেশে এবং বিদেশে অনেক ছেলে দেখেছেন। প্রবাসীদের পাত্র/পাত্রী খোঁজার ব্যাপারে সাধারনত অভিভাবকদের যে সমস্যাটা হয় তা হল, তৃতীয় প্রজন্মের যারা দেশের বাইরে বড় হচ্ছে তারা দেশে বিয়ে করতে চায়না। কারন তারা ভাবে দেশের কেউ এসে এখানে এডজাস্ট করতে পারবেনা, মন-মানসিকতায় মিলবেনা যেহেতু দুজন ভিন্ন পরিবেশে বড় হচ্ছে। এছাড়া কাগজপত্র প্রসেসিং এ ও অনেক সময় লেগে যায়। এই প্রক্রিয়া এখন আরও দীর্ঘায়িত হওয়ায় অনেকের ক্ষেত্রে সঙ্গী/ সঙ্গিনী আনার আগেই বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাও ঘটছে। আবার অনেকে ভাবেন এত কিছুর পর যারা দেশ থেকে আসতে চাইবে তারা সিটিজেনশিপের লোভে আসবে। অন্যদিকে বিশেষ করে ছেলের অভিভাবকরা মনে করেন প্রবাসে বেড়ে উঠা মেয়েরা সংসারী হয়না, এর চেয়ে দেশের মেয়ে হলে ভাল হয়। এমন নানা দ্বন্দ্ব এর কারনে পাত্র/পাত্রীরা অভিভাবকদের মতামতের চেয়ে নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দেয় বেশী। এই বিয়ের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মেয়ের মা নানা জায়গায় পাত্র খুঁজে শেষ পর্যন্ত মেয়ের পছন্দকেই মেনে নিতে হয়। সমস্যা ছিল ধর্মের, যেহেতু ইসলাম ধর্মমতে একজন মুসলমান কোন অমুসলিমকে বিয়ে করতে পারবেনা। আর যদি করতে হয়, তাহলে তার পছন্দের মানুষটিকে ইসলামের পথে আসতে হবে। এখানে লোক দেখানো বা বিয়ে করার জন্য মুসলমান হলে হবেনা, অবশ্যই মন থেকে ইসলামকে মেনে নিতে হবে নতুবা এই বিয়ে হারাম বলে গন্য হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কেউ কারো ধর্ম ত্যাগ করেনি, বিয়ে হয়েছে যার যার ধর্মমতে। বিয়েতে নাচ-গান, হৈ –চৈ, বাদ্য বাজনার কোন কমতি ছিলনা। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় দেশীয় এবং ভারতীয় স্টাইল দুটোই ছিল। বেশীরভাগ পাঞ্জাবীরা নিরামিষভোজী হওয়ায় খাবারে হালাল হারাম নিয়ে বেগ পেতে হয়নি। তবে সমস্যা ছিল একটাই, হলরুমে লাউড স্পিকারে ‘তু-রু-ত্তু-রু-ত্তু-তা-না-না’ টাইপের পাঞ্জাবী ফোক গানের কান ফাটা শব্দে বাধ্য হয়ে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগে বের হয়ে আসতে হয়।
এভাবে নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস অটুট রেখে সংসার করছেন অনেকে। পৃথিবীর উন্নত প্রায় প্রত্যেক দেশে ধর্মীয় পরিচয় ছাড়াই বিয়ের ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশে যেমন জীবন যাপনে ধর্মীয় পরিচয় দিতে হয়, নানা ফরম পূরণ করতে গিয়ে ধর্ম লিখতে হয় তা অনেক দেশেই নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আইনগত কোন সমস্যা ছাড়া দুই ধর্মের দুইজন বিয়ে করতে পারে। এছাড়া ইউরোপ আমেরিকাতেও একই অবস্থা। সেখানে শুধু বিয়ে নয়, কোন কাজেই ধর্মীয় পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন হয়না। কিন্তু তারপরও এসব দেশে ধর্ম কোন বিষয় না হলেও দুই ভিন্ন ধর্মের মানুষের বিয়ে হলে প্রথম বাঁধা আসে পরিবার থেকে, এছাড়া সামাজিক চাপ তো আছেই। পরিবারের ছোটখাটো নানা সমস্যা যেমনঃ একজনের প্রিয় খাবার গরুর মাংস, আরেকজনের এটা নিষিদ্ধ খাবার। এছাড়া তাদের ঘরে ছেলেমেয়েরা কোন ধর্মের অনুসারী হয়ে গড়ে উঠবে এটাও একটা সমস্যা। এরপরও আমেরিকায়,কানাডায় অনেকে এভাবে দুজন ই দুজনের পরিবারের সাথে মিশে গিয়ে সংসার করছেন। দেশের বাইরে আছেন বলেই হয়ত ওদের এতটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছেনা, দেশে থাকলে হয়ত ওদের অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হত। ধর্ম পরিবর্তন না করে এভাবে দিন দিন দু’টি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে বিয়ের ঘটনা বাড়ছে। যে যার মত ধর্মীয় বিশ্বাস ঠিক রেখে বিয়ে করছেন, সংসার করছেন,আচার-অনুষ্ঠান সবই পালন করছেন। বেড়ে উঠছে নতুন একটি প্রজন্ম, যাদের উত্তরাধিকার সূত্রে ধর্মীয় কোন পরিচয় নেই। আধুনিক সমাজে সেটার প্রয়োজনও মনে করছেন না অনেকে।
**প্রিয় পাঠক, উপরে বর্ণিত এই দুই ধরনের বিয়েতে যাওয়া/না যাওয়া, মেনে নেয়া/না নেয়ার ক্ষেত্রে আইনী/বেআইনী/ ধর্মীয় আদেশ, নিষেধ,প্যাঁচপরামর্শ জানিয়ে আপনাদের মূল্যবান অভিমত ব্যক্ত করার জন্য আহবান জানানো হল। ধন্যবাদ সবাইকে
বিষয়: বিবিধ
৩১৭৭ বার পঠিত, ৬৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খাবার ইন্ডিয়ান,পাকিস্তানী রেস্টুরেন্ট থেকে আনা—যা যা পাওয়া যায় সবই ছিল। তবে যাই বলেন আমাদের বাঙ্গালী খাবার বেস্ট। বাঙালী খাবার ছিলনা
আপনি আমাকে চিনবেন কি করে!! আপনি যেভাবে আপুদের ব্লগে হাতুড়ি মার্কা একের পরে এক কমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকেন-- আমাকে না চিনারই কথা---
এইতো কিছুদিন আগে ঢাকার গুলশানে বাটন রোজে গিয়ে বুফে খেয়েছিলাম।
প্রায় ৫৫ আইটেম এর মত্ত আমি খেয়েছিলাম
তারপড় আসার সময় নড়তেও কষ্ট হচ্ছিলো।
আসলে মাঝে মাঝে প্রচুর খাইদাইতো।
আমার সাথে আমার খাওয়াতো ভাই দ্যা স্লেভ কে দাওয়াত দিতে ভুলবেননা।
আসলে এরকম বিয়ের কথা শুনলে কষ্ট লাগে।
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বিয়ের দাওয়াত এড়াতে চাই।
আপাতত আর কমেন্টস করলাম না এখানে কমেন্টস করতে হলে আরো পড়াশোনা করতে হবে এ বিষয়ে। আর আমার এরকম অভিজ্ঞতা নাই।
ধন্যবাদ বৃত্তমণি।
আমারও দেখে কষ্ট লেগেছে, তাই শেয়ার করলাম
আসলেই তাই। খারাপ লেগেছে দেখে
০ মানে বাহির থেকে দেখলে এটাকে মসজিদই মনে হবে ।
মসজিদের ভেতর কমিউনিটি সেন্টার , সুইমিংপুল, ব্যায়ামাগার, লাইব্রেরী, বাচ্চাদের খেলার জায়গা - এসব থাকলে মসজিদের কি পবিত্রতা বজায় থাকে ?
''তবে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত যে খবরটা আমাদের অজানা ছিল তা হল বর বাংলাদেশের ক্বাদিয়ানী এবং কনে পাকিস্তানের আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের .....''
০ আপনি তো সখি হয়ে বিয়েতে গিয়েছিলেন আপনার কলিগ/ক্লাসমেটের ? আপনি জানতেন না যে সে আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের ?
''সব কিছু সুশৃঙ্খলভাবে এবং সময়ানুযায়ী হওয়ায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা নিয়ে খুব বেশী অপেক্ষা করতে হয়নি। ''
০ বাঙ্গালী নিজের দেশে যত লেট হোক না কেন বাইরের দেশে একেবারে টাইট হয়ে যায় । এরকম যদি তারা দেশে করতো তাহলে বিদেশে যাওয়ার দরকার হত না ।
''তবে মেয়ের আত্মীয় স্বজন ছাড়া কারো ক্যামেরায় বা মোবাইলে ছবি তোলার অনুমতি ছিলনা। ''
০ তাহলে কেন বাইরের লোকদের দাওয়াত দিয়ে এত বড় মসজিদে লোক জড় করে আয়োজন করা হল ? নিজেদের লোকেরাই যদি ছবি তোলার অনুমতি পায় তাহলে কেবল নিজেদের লোকদেরই নিয়ে স্বল্প পরিসরে করতে পারতো । আপনাদের ছুটির দিনের সময়টা না খেলেই পারতো ? আপনারা তো খাওয়ার জন্যই সেখানে যান নি । এরকম খাবার তো নিজেরাই আপনারা এমনিই কিনে খেতে পারতেন । ছবিই যদি বর কনের সাথে তুলতে না পারেন তাহলে কিভাবে কলিগ/ক্লাসমেটের বিয়েতে এসেছেন তা প্রমান হবে ?
বাইরে বড় করে বিয়ের আয়োজন করলো , অনেককে দাওয়াত দিল , আবার বাইরের কলিগ/ক্লাসমেটদের ছবিও তুলতে দিল না - এ যেন নাচতে নেমে ঘোমটা টানার মত ব্যাপার ।
বিয়ের পর যখন কলিগ/ক্লাসমেটের সাথে দেখা হল তখন তাকে চার্জ করেন নি এরকম করার জন্য ? বলেলনি ফেস বুকের এই যুগে তার আত্মীয়রাও এসব ছবি ছড়িয়ে দিতে পারে , তাহলে বাইরের আহুত লোকদের নিয়ে কেন এই কাহিনী তারা করলো ?
''বিদেশের মাটিতে কোন রকম হৈ-চৈ ছাড়া সকল ধরনের মুসলিম রীতি নীতি মেনে এমন সাদামাটা বিয়ে যা আমাদের দেশেও এখন দেখা যায়না তা দেখে সবাই বেশ অবাক হলাম। ''
০ কাদিয়ানী ও আহমেদিয়ারা যদি সকল ধরনের মুসলিম রীতিই পালন করে তাহলে আমরা তাদেরকে নিয়ে এত কাহিনী কেনই বা করি ?
****************************************************************
'' লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, বিয়েতে আগত তরুন প্রজন্মের বেশীরভাগ বাংলাদেশী জুটির পার্টনার ছিল শ্রীলঙ্কান, চাইনিজ, ভিয়েতনামী এবং....''
০ এটাই ভাল , এভাবে সারা দুনিয়ার সাথে বাংলাদেশের আত্মীয়তার বন্ধনের সৃষ্টি হবে ।
''প্রবাসীদের পাত্র/পাত্রী খোঁজার ব্যাপারে সাধারনত অভিভাবকদের যে সমস্যাটা হয় তা হল, তৃতীয় প্রজন্মের যারা দেশের বাইরে বড় হচ্ছে তারা দেশে বিয়ে করতে চায়না। ''
০ দেশের বাইরে বড় হওয়া ৩য় প্রজন্মের জন্য সেখানেই বেড়ে ওঠা কোন বাংলাদেশী বংশদ্ভূতকে বেছে নিলেই তো পারে । শুধু শুধু দেশ থেকে বর/কনে সাফারিংস করানোর কোন মানে হয় না । যদি তারা ঐ সব বর/কনেকে আনবে শুধু নাগরিকত্ব পাইয়ে দেবার কারনে তাহলে বিজনেজ হিসেবে সেটা তারা করতেই পারে ।
****************************************************************
বাংলাদেশের ৯০% মানুষ নামে মুসলমান হলেও কাজে না । তাই এদেশের বেশীর ভাগ লোককে ঈদের মত পূঁজাতেও বেশ ফূর্তি করতে দেখা যায় । অথচ একজন প্রকৃত মুসলমান এসব থেকে বিরত থাকারই কথা ।
রক্ষনশীল মুসলিম ফ্যামিলির একজন হয়ে থাকলে এই ছবিটা বোধ হয় আপনার কিছুটা বোধদয় জাগাবে ।
যেখানে শার্টের (ইসলামের ইতিহাসের ছাত্রদের) এই অবস্থা সেখানে মুখের ( সারা দেশের মুসলমানদের) কি অবস্থা তা আর বলার অপেক্ষা লাগে না ।
যারা বাংলাদেশের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্বকে লাথি মেরে সে দেশের নাগরিকত্বকে বুকে জড়িয়ে নেয় তারা বাংলাদেশে থাকার সময়ও ধর্ম খুব একটা পালন করতো না । বাইরের চাকচিক্যময় পরিবেশ তাকে আগে যাও এক আধটু করতো তা থেকে সরিয়ে আনে ।
আর এদেরই প্রজন্মরা যে ধর্মের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন হবে তা খুব স্বাভাবিক । এরা নামেই শুধু মুসলমান । তাই এদের জীবন সঙ্গী কোন ধর্মের তা বিবেচনাতেই আনবে না । এবং এটা যে একজন মুসলমান হিসেবে ঠিক না তা তারা মানতেও চাইবে না ।
তাই এরা স্বামী-স্ত্রী হলেও নিজের ধর্ম নিজেরা পালন করে । বাংলাদেশেও সেলিব্রেটি লেভেলে এরকম কিছু উদাহরন আছে ।
এদের বিয়ে হয় আবার , খুব তাড়াতাড়ি ভাঙ্গেও । আবার বিয়ে করে বা লিভ টুগেদার করে । এভাবেই সে ভাল আছে । এবং সে মনে করে না যে এটা একজন মুসলমানের জন্য খারাপ।
*****************************************************************
অ্যারেন্জড ম্যারেজ প্রেম করে বিয়ে করার চেয়ে কম টেকে ।
আর ছেলে বা মেয়ে যদি একটা টেকসই প্রেম না বাগাতে পারে তাহলে তাদের পিতা মাতার জন্য পাত্রী/পাত্র খোঁজা দুনিয়ার কঠিনতম কাজ হয়ে পড়ে । এটা মিলে তো ওটা মিলে না । এরকম করতে করতে অনেক সময় পার হয়ে যায় এবং বিয়েও যে এর ফলে টিকবে তার কোন সম্ভাবনা নেই ।
প্রেম করার ফলে সে তার বাবা মায়ের এই পাত্র/পাত্রী খোঁজার পেরেশানী থেকে বাঁচাতে পারে । আর কোন কারণে যদি মন মালিন্য হয়ই তাতেও বাবা মায়ের টেনশন কম থাকে এরেন্জড ম্যানেজের তুলনায় ।
( যদিও এই ধরনের প্রেম ইসলাম সমর্থন করে না )
দুঃখিত এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারবনা।
http://forum.skyscraperpage.com/archive/index.php/t-153863.html
দ্বিতীয় বিয়ের পরিবারকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। এ বছর ছেলে,মেয়ে,বাবা,মা সবাই হজ্জ করে এসেছে। মেয়ের মা মানে খালাম্মা আমাদের সাপ্তাহিক হালাকাতে নিয়মিত আসতেন। এখন ছেলেমেয়ের কারনে মনের কষ্টে আসেন না। ছেলে বিয়ে করেছে শ্রীলঙ্কান মেয়েকে(মেয়ে মুসলিম হয়নি), মেয়ে হিন্দু পাঞ্জাবী ছেলেকে। লজ্জায় উনি দেশের আত্মীয়দের সাথেও যোগাযোগ বন্ধ রেখেছেন। এই বিয়েতে গিয়ে আমি আহত হয়েছি অনেক বেশী। খালাম্মার বক্তব্য ছেলে-মেয়েরা কথা শোনে না। কিন্তু ওরা কি সম্পূর্ণ দায়ী! বাবা-মা সেভাবে ছোটবেলা থেকে ইসলামী পরিবেশে গড়ে তোলেননি। গোঁড়ায় যেখানে গলদ সেখানে এখন চেষ্টা করে তো লাভ নেই।
দুইটা বিয়ের আলোচনা করে বুঝাতে চেয়েছি আমরা কিভাবে গাফেল থাকার কারনে দিন দিন ইসলাম থেকে সরে আসছি। অন্যদিকে কানাডায় ইসমাইলি,আহমেদিয়ারা অনেক শক্তিশালী হচ্ছে কারন তাদের বন্ধন অনেক মজবুত। তারা নিজেদের মধ্যে বিয়ে করছে, চাকরী ক্ষেত্রে একজন আরেকজনকে রেফারেন্স দিয়ে নিয়ে আসে এবং তাদের মধ্যে আমাদের মত ব্যক্তিগত কোন কলহ নেই। সময় পেলে পরে এ বিষয়ে আলাদা পোস্ট দিব। দেশেও কিন্তু একটা শ্রেণী ধর্ম পালনের ধার ধারেনা। আর বাকীদের মধ্যে নানা ধরনের মতবাদ,পীর পূজা, মাজার পূজা, এগুলো নিয়ে হাজারো মতভেদ। আমার মনে হয় এসব মতভেদ এড়াতে আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। যারা বিশেষ করে বিভিন্ন সংগঠন/ ইসলামী আন্দোলনের জড়িত তাদের। ১ম মন্তব্যে শ্রদ্ধেয় ভাইদের নাম উল্লেখ করেছি। এছাড়া লোকমান বিন ইউসুপ, সাফওয়ান, প্যারিস থেকে আমি, সালাম আজাদী, শেখের পোলা, মাটির লাঠি, মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম সহ আরও যারা ব্লগে নিয়মিত লিখেন, ইসলাম নিয়ে ভাবেন/কাজ করেন। বোনদের নাম আলাদা করে উল্লেখ করলাম না কারন, ব্লগের সব বোনরা ইসলামের বেসিক নিয়ে লিখেন। সবাই পড়াশুনা, চাকরী, সংসার সামলে যেটুকু সময় দিচ্ছেন সেটাই প্রশংসার দাবীদার। ধন্যবাদ যারা মন্তব্য করেছেন। ইনশাল্লাহ, প্রত্যেকের মন্তব্যের উত্তর পরে আলাদা করে দিব।
দ্বিতীয় বিয়ের ব্যাপারটা খুবই সহজ। একজন মানুষ যদি জীবনের কোন পর্যায়ে ইসলামের অনুশাসন মেনে না চলে তাহলে শুধু তাঁর নাম 'রোকসানা' বা 'ফাতিমা' হবার কারণে কিংবা তাঁর দাদী হয়ত নামাজ পড়েন বলে আমরা তাঁর কাছে ইসলামী আচরণ আশা করতে পারিনা। আর যে জীবনের সর্বস্তরে ইসলাম মেনে চলে সে তো প্রতি মূহূর্তে এই প্রতিশ্রুতির ওপরেই দন্ডায়মান থাকে, 'নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার ত্যাগ, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য'। যার হৃদয় আল্লাহর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ সে হৃদয়ে আল্লাহর শত্রুর বসবাস কি সম্ভব? যে ব্যাক্তি আল্লাহর পথে চলার উদ্দেশ্যে বিয়ে করে সে একজন স্বল্প যোগ্যতাসম্পন্ন মুসলিমকে একজন অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন বিধর্মীর ওপর প্রাধান্য দেবে। আর যে আল্লাহকে প্রাধান্য দেয়না সে কাকে বিয়ে করল তাতে কি আসে যায়?
আর পরের বিয়েটা নিয়ে কথা হলো , বিয়ে হচ্ছে দুটি মানসিকতা ও দুটি অন্তরের বন্ধন। কিন্তু দুটি ভিন্নধর্মী আকিদা বিশ্বাসীদের মাঝে মানসিক ঐক্য কিছুতেই হতে পারেনা। যদি তারা নিজ নিজ ধর্মে অতি সামান্য তম ও বিশ্বাসী হয়ে থাকে।আর এই ধরনের বিয়ে শুধু আপনার ওখানেই নয় আমি যেখানে আছি এখানে ও অহরহ হচ্ছে। তবে সেটি খির্স্টান এবং মুসলিম দের মাঝে হচ্ছে। অনেকে আবার খ্রিস্টান দের কে আহলে কিতাব এর অনুসারী বলে বিয়েতে অগ্রসর হয়। এদের মাঝে অনেকে ইউরোপিয়ান পেপার এর জন্য সাময়িক এই কাজ টি করতেছে।
সবশেষ কথা হলো , মুসলমানরা যেখানে আল্লাহর সাথে সম্পর্কের বন্ধন সৃষ্টি করতে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে , সেখানে দুনিয়াবী বিয়ের বন্ধনে জায়েজ না জায়েজে কি যায় আসে।
খুব করে ধন্যবাদ আপনাকে।
আহলে হাদিসদের বিয়ে করা যাবে এটা যে কনসেপ্ট এর ভিত্তি করে বলা হয়েছে তা এখনও সেভাবে মেনে করা হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে আপনি ঠিকই বলেছেন,মুসলমানরা যেভাবে আল্লাহর সাথে সম্পর্কের বন্ধন সৃষ্টি করতে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে এতে তাদের কিছু এসে যায়না। তবে আমাদের দেশে পাশ্চাত্যের খারাপ দিকগুলো ফলো করার যে প্রবনতা রয়েছে তাতে এমন কিছুর বিস্তার না ঘটলেই হয়। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সময় করে পড়ার জন্য
বিয়ে একটা দারুন ইবাদত! ২ জন মানুষ আল্লাহ কে সাক্ষী রেখে একটা হালাল সম্পর্কের শুরু করে. এই শুরুতাই যদি হয় রবের অসন্তুষ্টি দিয়ে তাহলে কিভাবে সেই সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমত ও বরকত আসবে ? তাই না আপু? কি বলেন?
সুচিন্তিত মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু
সবার মন্তব্য দেখার পর নিজের মন্তব্য উপস্থাপন করার মধ্যে কিন্তু মুন্সীয়ানা প্রদর্শনের একটা সুযোগ থাকে ! আমার ক্ষেত্রে সেটা বিচারের ভার রইলো আপনার ওপর ।
আপনি যে দুটো কেস স্টাডি উপহার দিয়েছেন সেগুলো যুগপৎ ইন্টার-রিলিজিয়াস এবং ইন্টার-কালচারাল ।
শুভবিবাহ-১ ব্যাপারে আমার বক্তব্যঃ
বিদেশে চাইলে-ই যে কেউ যেখানে সেখানে উপাসনালয় বানাতে পারে না । নানা কারণে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে অনেক সময় উপাসনালায়গুলোকে “কালচারাল সেন্টার” নাম দিয়ে স্থাপন করা হয় । সেসবের আলোচনা অন্যত্র অন্য সময় করা যেতে পারে ।
যে ব্যাপারটা আমার কাছে প্রায়শ কৌতুকোদ্দীপক মনে হয় তা হচ্ছে -- হলের ভেতরে ছেলে-মেয়েরা পৃথক থাকলে-ও বাইরে এসে (যেমন, গাড়ী পার্কের জায়গায়) পুরুষ ও মহিলাদের অনেকে-ই পরস্পরের সাথে দেদারসে কথা-বার্তা, হাসি-তামাশা ও গাল-গল্প শুরু করে দেন । তাহলে হলঘরের ভেতরে সাধু সাজার কি দরকার ছিলো ? আমি এসব ন্যাকামীর কোনো সুরাহা করতে পারিনি অদ্যাবধি । অবশ্য বাচ্চা-কাচ্চাদের কথা আলাদা । ওরা ভেতরে-বাইরে সর্বত্র বাধা-বন্ধনহীনভাবে মজা লুটে নেয় !
আপনি যদি কোনোভাবে পূর্বাহ্নে-ই অবগত হোতেন যে, বিয়েটি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের তাহলে কি অনুষ্ঠানে যোগদান করতেন না ? আমার মনে হয় যোগদান করাটা-ই বুদ্ধিমানের কাজ হোতো বিশেষত যেখানে হালাল খাবারাদি ও পর্দা রক্ষা করা হয়। এখন আপনি বুদ্ধিমত্তার সাথে কনে'র সাথে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আক্বীদা-বিশ্বাস নিয়ে কথা-বার্তা বলতে পারেন দাওয়াহ কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে । এতে যদি শেষে কিছু দূরত্ব সৃষ্টি হয় তবে হোক । তা না হলে ভবিষ্যতে বিয়ে বার্ষিকীর আমন্ত্রণ আসবে ! তখন কি করবেন ?
বিভিন্ন ফর্মে শিয়া-সুন্নী বিভাজনী বক্স কারা চালু করেছে জানতে পারলে বাধিত হতাম । এসব ফিতনাবাজ-রা ভবিষ্যতে দেশটাকে যে কোন ভয়াবহ দিকে নিয়ে যাবে (বক্সের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে - যেমন, কাদিয়ানী, আহমদিয়া, আগাখানী, দেওবন্দী, ওয়াহহাবী, সালাফী, আহলে-হাদীস, আস্তিক, নাস্তিক, মাজার-পূজারী, ইত্যাদি) তা চিন্তা করতে-ই গা শিউরে উঠছে । ব্যাপারটি আপনার মনে যে চিন্তার উদ্রেক করেছে তা জেনে আশ্বস্ত হলাম ।
শুভবিবাহ-২ ব্যাপারে আমার বক্তব্যঃ
এটি ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে হারাম (ব্যভিচারের শামিল) তা আপনি নিজে-ই বলে দিয়েছেন -- তবে এ যুগের আহলে-কিতাবীদের সাথে বিয়ের ব্যাপারটি-ও কিন্তু বিতর্কিত । আপনি বুদ্ধি করে বিয়েতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পারতেন। আপনার অনুষ্ঠানে যোগদান এ ধরণের আরো বিয়েকে উৎসাহিত করতে পারে । নিতান্ত অপারগ হলে খাবারের পর দ্রুত প্রস্থান করা বাঞ্ছনীয় যেখানে আপনার কথা অনুযায়ী “বিয়েতে নাচ-গান, হৈ –চৈ, বাদ্য বাজনার কোন কমতি ছিল না।”
আপনার এখন কাজ হবে যতদূর সম্ভব দেশী মুসলমান কণ্যাটিকে বুদ্ধিমত্তার সাথে ধীরে ধীরে বোঝানোর (নসিহত) চেষ্টা করা । এতে সম্পর্কে একটু চিড় ধরলে-ও ধরতে দিন -- এভাবে তাকে পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দিন যে, আপনি এ ধরণের বিয়ে অত্যন্ত গর্হিত মনে করেন এবং সম্পর্ক বজায়/গভীর করতে অনাগ্রহী যদি না সে পাত্র-কে মুসলমান বানিয়ে নতুন করে বিয়ে করে । সমস্যার শুরু কোথায় তা তো আপনি লেখায় তুলে-ই ধরেছেন । আমার এ ক্ষেত্রে বলার বিশেষ কিছু নেই ।
নিরামিষী খাবার-দাবার হলে-ই যে হালাল-হারামের ব্যাপার থাকে না সেটি কিন্তু পুরোপুরি ঠিক না । মিষ্টি, দই, ব্রেড, মশলা, ইত্যাদিতে অনেক হারাম উপাদান থাকতে পারে । বিস্তারিত জানতে চাইলে আমার এই ব্লগ থেকে ঘুরে আসতে পারেন ।
সাধারণ কিছু বক্তব্যঃ
পোষ্টের শিরোনাম বিষয়ে তেমন বিষদ আলোচনা দেখলাম না । তাই আমি-ও বিষয়টি এড়িয়ে গেলাম এখানে যদিও এই প্রাক-বৈবাহিক প্রণয়ের ব্যাপারটি ইদানীং মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে এবং রক্ষণশীল মুসলিম দেশগুলোতে-ও বিবাহ-বিচ্ছেদের হার তুঙ্গে উঠছে । আমার মন্তব্যের কলেবর এমনিতে-ই তো ঢাউস আকারের হয়ে গেছে । তাই আপাতত ছাড় দিলাম এখানে ।
বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে পাড়ি জমায় সবাই দেশে থাকতে ধর্মবিমুখ ছিলো এমন বলা যায় না । বরং যারা দেশে থাকতে ধর্ম নিয়ে তেমন গা করতো না, তাদের অনেক-কে অহরহ দেখছি বিদেশে এসে ধর্মানুরাগী হয়ে যেতে -> ছেলেরা দাঁড়ি রাখছে - মেয়েরা হিজাব ধরছে; হালাল-হারাম বেছে খাচ্ছে, ইত্যাদি । এজন্য অনেক সময় বলা হয় - "আলেমের ঘরে জালেম আর জালেমের ঘরে আলেম তৈরী হয় ।”
এমনিতে-ই ইসলাম ব্যতীত অন্যান্য ধর্মে নানান বিধি-নিষেধের শৃঙ্খল বেশ শিথিল; তারপর পাশ্চাত্যে এসে ধর্মীয় ব্যাপারে সবাই কম-বেশী উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী লালন করে । এতে অসুবিধার চেয়ে ইহজাগতিক সুবিধার পাল্লাটা ভারী থাকে - বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যে ঘৃণা-বহির্ভূত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব হয় । পাশ্চাত্যে বেশীর ভাগ মানুষের জীবনে ধর্ম বিষয়টার ভূমিকা অত্যন্ত গৌণ । তদুপরি উদারপন্থী হওয়ায় ভিন ধর্মের বা নাস্তিকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াতে তারা গর্হিত কিছু খুঁজে পায় না । তাদের কাছে মূল কথা হলো - সুখী জীবন যাপন করতে পারা -- পাত্র-পাত্রীর ধর্ম, বংশ, পেশা যাই হোক না কেনো । এ ব্যাপারে আমার অবস্থান এই না যে, আমি মুসলমানদের ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার জন্য সমর্থন জানাচ্ছি ।
মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী গঠনে সঙ্গ ও পরিবেশের একটা বিরাট প্রভাব আছে । আজকের দুনিয়ায় এসব বিষয় ভার্চুয়াল জগতে পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে । সুতরাং মুসলিম বা অমুসলিম দেশে বাসায় ইসলামী পরিবেশ রাখলে-ই যে সন্তানরা ধর্মের সঠিক ও দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই । তারা যদি বাস্তবে মুসলিম উম্মাহ-র মধ্যে ধর্মীয় হানাহানি, অন্তর্দ্বন্ধ, বিভেদের নানারূপ, সশস্ত্র জিঘাংসার বীভৎসতা দেখে ইসলাম ধর্মের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে এবং ইসলাম-কে জীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধানের আধার মনে না করে, তবে সেজন্য কি তাদের বিশেষ দোষ দেয়া যাবে ? অন্যদের কথা বাদ দিন - আমি নিজে-ই তো "কাফির” লকবপ্রাপ্ত হয়েছি এই ব্লগে ! পারলে আমাকে শূলে চড়ায় আর কি ? ভাগ্যিস, আপনি আর কানিজ ফাতেমাপু ছিলেন বলে এ যাত্রায় ইহজগতে খুব সম্ভবত রক্ষা পেয়েছি ?!
আপনি বলেছেন, “আর বাকীদের মধ্যে নানা ধরনের মতবাদ, পীর পূজা, মাজার পূজা, এগুলো নিয়ে হাজারো মতভেদ। আমার মনে হয় এসব মতভেদ এড়াতে আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।” ঐক্যের প্লাটফর্মে দাঁড়াতে এসব মতভেদ কিভাবে দূর করা যাবে তা নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করুন এবং ময়দানে নেমে প্রমাণ করে দিন । এ যাবৎ সবাই তো ফেল্টুস মেরে বসে আছেন এই ডিপার্টমেন্টে !
কমিক রিলিফঃ
বেশ তো একের পর এক বিয়ে "খেয়ে” চলেছেন ; এবার নিজেরটা নিয়ে কিছু ভাবুন । নাকি আইবুড়ী হয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন ? মনে রাখবেন, বাঙালী মেয়েরা কিন্তু কুড়িতে-ই বুড়ী হয়ে যায় !
এই দেখুন ইবলিশ শয়তানের পাল্লায় পড়ে আপনার কল্পনার রাজ্যে কিভাবে রঙীন ফানুস ওড়াতে হবে তার ইংগিত দিতে আপনার-ই প্রো-পিক ব্যবহার করে ফিক করে একটা কল্প-কথাচিত্র অংকন করে ফেললাম ।
কি, কেমন হলো? এটা আমার এক ব্লগ পোষ্টে হিমশীতল বিয়ারের ছবি দেয়ার তীব্র মধুর প্রতি(শোধ/বাদ/দান) ।
এবার আমার প্রো-পিক (অপ)ব্যবহার করে ভূত-পেত্নী জাতীয় কিছু তৈরী করলে ভালো হবে না কিন্তু আগে-ই বলে দিচ্ছি !
ভালো থাকুন । শুভ নববর্ষ (বিদ'আত ?) ।
শুভবিবাহ-১: এ দেয়া আপনার মন্তব্যের সাথে একমত। অনেকে বলে আহমেদিয়াদের সাথে মেলামেশা ঠিকনা। কিন্তু আমরা হালাল খাবার কিনতে গেলে এদের থেকেই কিনছি। হলের ভিতরের এই নিয়ম মানে পুরুষদের সামনে না যাওয়ার ব্যাপারটা আমাদের বাঙ্গালীদের মধ্যেও দেখি ইদানিং। এখানে বিভিন্ন গ্রুপের ইসলামিক প্রোগ্রাম হয়। অনেকে দেখি মেয়েদের কন্ঠ শোনা ঠিক না এই কারণ দেখিয়ে মহিলাদের আলাদা বসানোর আয়োজন করে। যেখানে চাকরির কারণে প্রতিদিন রাস্তায় মহিলাদের সাথে দেখা হচ্ছে সেখানে শুধুমাত্র হালাকাতে পুরুষ-মহিলা আলাদা করার ব্যাপারটা আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়।
বিভিন্ন বক্সে শিয়া-সুন্নি বিভাজন করা কবে চালু করেছে বলতে পারছিনা। দেশে স্কুল-কলেজে ভর্তি ফর্মে এমন বক্স আছে দেখেছি। এখনো আছে কিনা জানিনা
শুভবিবাহ- ২: আসলে এই অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে সবাই জানত বিয়েটা মুসলিম মতে হবে। যাওয়ার পর দেখা গেল ছেলে ধর্মান্তরিত হবেনা বলে কোনো মসজিদের ইমাম এই বিয়ে পড়াতে রাজী হয়নি। শেষে ছেলে পক্ষের এক উকিল এর মাধ্যমে রেজিস্টার ম্যারেজ হয়েছে।এই ঘটনায় সেখানে উপস্থিত অনেকেই বিরক্ত হয়েছে। আপনি ঠিকই বলেছেন এ ধরনের বিয়েতে উপস্থিতি অন্যকে উত্সাহিত করতে পারে তাই এড়িয়ে চলা উচিত। আগে জানলে আমার মত অনেকেই তাই করত। তবে বিয়ে পরবর্তী যে পরামর্শ দিয়েছেন তা মেয়ের মা নিজেই চেস্টা করছেন।
মূল্যবান মন্তব্য দিয়ে পোস্টকে সমৃদ্ধ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমি আপনার পোস্টে মন্তব্য করেছি সেই কবে! প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এতদিন মনে রেখেছেন বুঝতেই পারছেন কে বেশি হিংসুটে! ঠিক আছে, হিংসা-হিংসি গত বছরেই শোধ বোধ হয়ে গেল। এগিয়ে চলার আহবান রইলো। শুভেচ্ছা নতুন বছরের
মন্তব্য করতে লগইন করুন