মনের জানালা-২
লিখেছেন লিখেছেন বৃত্তের বাইরে ০৫ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:৪৯:১৫ রাত
‘আরে ভাই আর বলবেন না, এ পাড়ায় মানসম্মান নিয়ে চলা মুশকিল। আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়েটা পাড়ার এক বখাটে ছেলের সাথে সারাদিন ঘুরে বেড়ায়। কেমন বাবা-মা বুঝিনা, মেয়েকে শাসনও করেনা। গতকাল শুনলাম মেয়েটা বাড়ি থেকে পালিয়ে...... এমন পরচর্চাজনিত অনেক কথা প্রায়ই আমরা একে অন্যের সাথে বলে থাকি যাকে আপাত অর্থে গসিপ বলে। গালগল্প ও অন্যের সমালোচনা করা প্রায় প্রতিটি মানুষের এক সহজাত কুপ্রবৃত্তি। এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, বিবর্তনপ্রক্রিয়ার ফলেই মানুষ একে অন্যের সঙ্গে গালগল্প করে, একে অন্যের খুঁত বের করে এবং এতে মানব মনে কোনো দুঃখবোধও জাগে না। ফলে আমরা একে অপরের সমালোচনায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আঠার মতো লেগে থাকতে পারি এবং এ আচরণগুলো সবাই জন্মের পর কোনো না কোনোভাবে অন্যের কাছে শেখে। মিথ্যা বলা, অন্যের সম্পর্কে ধারনা করা প্রসঙ্গে এক গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ কথা বলার সময় প্রতি ১০ মিনিটে অন্তত একটি মিথ্যা কথা বলে এবং এর মূল কারণ হিসেবে মানসিক সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিটি মানুষ কমবেশি ভালো চিন্তা করে, আবার সচেতন বা অবচেতনভাবে খারাপ চিন্তাও করে।নেগেটিভ চিন্তা যেমন মানুষকে নেগেটিভ পথে নিয়ে যায় তেমনি পজিটিভ চিন্তা মানুষকে পজিটিভ দিকে পরিচালিত করে। এই পজিটিভ এনার্জি আমাদের সবার মাঝেই আছে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে এগিয়ে নিতে, আশপাশের সবকিছুর ওপর একটি পজিটিভ চিন্তা-ভাবনা করতে সাহায্য করে। একবার আমরা কয়েকজন মিলে একটা ওয়ার্কশপ করেছিলাম। সেখানে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী কিভাবে মানুষের কর্মকাণ্ডের উপর প্রভাব ফেলে তার উপর একটা কেস স্ট্যাডি করতে দেয়া হয়েছিল। ক্লাসে বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ ছিল। কিছুদিন একসাথে ক্লাস করার পর টিচার শেষ দিন সবাইকে এক লাইনে দাঁড় করালেন। প্রত্যেকে একে অপরের পিঠে হাত রেখে তার কানে কানে তার ভাল দিকগুলো বলতে হবে যেন অন্যরা শুনতে না পায়। পিঠে হাত রাখার কথা বলা হয়েছিল কারন এতে অন্যকে অনেক আপন মনে হয়। দেখা গেল কিছু ছাত্র ছাত্রী তাদের নিজেদের গুনের প্রশংসা অন্যের মুখে শুনে এমন ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে... দেখে মনে হয়েছিল তারা তাদের পরিবার/আপন জনের কাছ থেকে কখনও কোন প্রশংসা আগে শোনেনি। ফলাফলে দেখা গেল যে কোনো ঘটনা সম্পর্কে মানুষ নেতিবাচক ধারণা করে প্রথমত গসিপ করার উদ্দেশ্যে। এছাড়া মস্তিষ্কে থাকা তথ্যের ধরন বা Quality of Information: অর্থাৎ তার মাথায় যদি তথ্য ঢুকিয়ে দেয়া হয় ব্যাঙ্কে চাকরি করলে সুদ খেতে হবে সে ধরে নিবে যারা চাকরি করে তারা সবাই সুদখোর। অতীত অভিজ্ঞতা বা Past Experience: সে যদি মুসলিম কারো দ্বারা অতীতে খারাপ ব্যবহার পেয়ে থাকে সে সব মুসলমান সম্পর্কে একই ধারণা পোষণ করবে এবং দৃষ্টিভঙ্গি বা Belief System: কেউ যদি ছোটবেলায় বাবা-মায়ের অধিক শাসনে বড় হয়ে থাকে পরবর্তিতে সে তার নিজের ছেলেমেয়ের ব্যাপারেও একইরকম শাসন করার মানসিকতা বজায় রাখবে। এভাবে কেউ যদি ক্রমাগত কোনো নেগেটিভ ধারনায় সময় নষ্ট করে তাহলে ব্যক্তির মাঝে আস্তে আস্তে একটা নেগেটিভ ভাবই তৈরি হয়, যা মনঃসংযোগ নষ্ট করে ধীরে ধীরে তার মধ্যে একটা অস্থিরতা তৈরি করে। কিন্তু মানুষ যখন ভালো কথা বার বার বলে, তখন ভালো জিনিস তার কাছে আসতে থাকে; ফলে জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন হতে থাকে।
এখন দেখা যাক এ ব্যাপারে ইসলাম আমাদের কি শিক্ষা দেয়।এক হাদিস থেকে বর্ণিত, দু ব্যাক্তি একসাথে সফরে গেল। পথে নামাজের সময় উপস্থিত হওয়ায় তাদের কাছে অজু করার মত পানি ছিলনা। উভয়ে মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করলো। এরপর কিছুদূর যাবার পর পানি পেল। তখন একজন অজু করে পুনরায় নামাজ আদায় করলো, অন্যজন পুনরায় নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকলো। এরপর উভয়ে রাসুল সা: এর কাছে এসে ঘটনার বিবরণ দিল। যে নামাজ পুনরায় আদায় করলনা রাসুল সা: তাকে বললেন,'তুমি সুন্নত মত কাজ করেছ, তোমার নামাজ আদায় হয়েছে। আর যে পুনরায় নামাজ আদায় করেছে তাকে তিনি বললেন, 'তোমার জন্য আছে দ্বিগুন পুরস্কার। সুতরাং দেখা যাচ্ছে রাসুল সা: উভয়ের ব্যাপারে কিভাবে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দিলেন। অথচ দুজনেই ছিলেন পরস্পর বিরোধী অবস্থানে। এমন সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে বললে আমরা হয়ত যে কোনো একটিকে বেছে নিতাম। কিন্তু তিনি উভয় টিকেই স্বী কৃতি দিলেন এবং সঠিক কোনটি তার প্রতি ইঙ্গিতও করলেন।
তাই যে কোনো ঘটনা সম্পর্কে মতামত দেয়ার আগে ভেবে দেখা উচিত। কেউ বিপদে পড়লে বা কারো খারাপ কিছু দেখলে তাকে সেই পথ থেকে ফিরিয়ে আনা মানুষ হিসেবে, একজন প্রকৃত মুমিন হিসেবে আমাদের সবার কর্তব্য। কারো ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করলে তার মধ্যে সৎকাজের আগ্রহ তৈরি হয়,ব্যক্তিসত্তা ও মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। তাকে বিশ্বাস করতে শেখায় যে সেও সমাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনেক সময় মানুষ নিজের ভালো দিকটির সন্ধান পায়না। অন্যরা তার সমালোচনা না করে যদি তার ভাল একটি গুনের প্রশংসা করে তবে সে তার জীবন সম্পর্কে আশাবাদী হয়ে উঠে। আমরা সবাই যদি এভাবে অন্যের ভাল দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করার অভ্যাস করতে পারি তাহলে পরনিন্দা, গীবত, অপবাদ,গালিগালাজ ইত্যাদি খারাপ আচরনগুলো আমাদের মধ্য থেকে দূর হয়ে যাবে। তাই আসুন আমরা শধু অন্যের সমালোচনা না করে ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করি।
বিষয়: বিবিধ
১৭৪৩ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চমৎকার এবং শিক্ষণীয় লেখাটির জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
*********************************
সঠিক...প্রজাপতির পাখা জন্মায় উড়িবার তরে
মা্ইডা ঘর ছাইরা পালা্ইছে বাপ মায়ের ডরে,
দ্বীন নাই মান নাই দুনিয়া নিয়াই ব্যাস্ত
তাইতো মাইয়া গিল্লা খাইলো মান সম্মান আস্ত,
পড়ে মন্তব্য করায় অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
আমাদের মানসিকতার উন্নয়নে আপনার এই প্রশংসনীয় প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই আপু
আমি এই সবকিছুর কারণ হিসেবে দেখি অজ্ঞতাকে। আর সমাধান দেখি জ্ঞানার্জনের মধ্যে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই সকল মানসিক অজ্ঞতা থেকে হেফাজত করুন। আমরা যাতে নিজ নিজ মনোজগতকে সঠিক জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে পারি সেই পথ সুগম করে দিন, আমীন।
জাঝাকিল্লাহু খাইর।
আচ্ছা বৃত্ত আমি কিন্তু রাম ধোলাই খেয়েছি আমার মায়ের হাতে। বদ এর হাড্ডি ছিলাম। এখনও মা চান্স পেলেই আমাকে পেটান আমার কি হবে???
আমিও কি আমার বাবুদেরকে????
আমার একজন ভাই বয়স ৪৫ হবে প্রায় সে এখনও বাবার হাতের মাইর খায়। বাবা একসাইড প্যারালাইসড তারপরো ৪৫বয়সকে উড়ে উড়ে মারে।
মায়ের হাতের মাইর বগুড়ার দইয়ের থেকে মিস্টি।
মায়ের নাকে কান্না দেখার মজাই আলাদা। যুক্তিতে না পরলে কেঁদে জয় অর্জন করে। আসলে জয়টা নির্ধারিত তাদের।
মাকে মনে হয় অনেক জ্বালানো হয় নিয়মিত বেতের উপর রাখলে ঠিক হয়ে যাবে
নতুন আলোয় কাটুক আঁধার। পুরনো সব দুঃখ,মান-অভিমান ভুলে নতুন করে পথ চলার আহবান রইলো। শুভ নববর্ষ
নিশি অবসান প্রায়, ঐ পুরাতন বর্ষ হয় গত. . . .
আমি আজি ধূলিতলে জীর্ণ জীবন করিলাম নত।
বন্ধু হও শত্রু হও, যেখানে যে রও
ক্ষমা করো আজিকার মত
পুরাতন বর্ষের সাথে পুরাতন অপরাধ যত. . . . .
মন্তব্য করতে লগইন করুন