তারার মেলায় কিছুক্ষণ...
লিখেছেন লিখেছেন বৃত্তের বাইরে ০১ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:১৭:৪১ রাত
অনেকদিন পর লম্বা ছুটি পেয়ে সবার সাথে হৈ-চৈ করে কাটাবে বলে মহাকাশ থেকে বেড়াতে এসেছিল লিলিয়ানা। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে পৃথিবী নামক সবুজ গ্রহের মানুষগুলোর কর্মকান্ডে খুবই বিরক্ত সে। চারদিকে শুধু চিত্কার, কান্নাকাটি, জ্বালাও -পোড়াও আর বিকট সব শব্দ। শান্তি নেই কোথাও। আর এই গ্রহের মানুষ গুলোও কেমন যেন স্বার্থপর। হঠাৎ এক কোন থেকে কিচিরমিচির শব্দ শুনে এগিয়ে দেখে সেখানে ঝিকিমিকি তারাদের মেলা বসেছে। সেখানে ফুলেরা হাসছে, প্রজাপতিরা আপনমনে ডানামেলে উড়ে বেড়াচ্ছে...নানা রংয়ের ফুল, পাখি আর প্রজাপতির মেলায় এ যেন নতুন এক বসন্ত! পৃথিবীতে এত সুন্দর একটা জায়গা আছে জানতনা লিলিয়ানা। আচ্ছা একটু এগিয়ে গিয়ে দেখাই যাক না কি হচ্ছে সেখানে!
বার্ষিক পরিক্ষা শেষ কিন্তু মজা করতে পারছেনা উনাইসাহ। সে একটা ডায়েরি কিনে রেখেছিল পরীক্ষা শেষ হলে ডায়েরীর পাতা ভরে গল্প লিখবে বলে। কিন্তু নাহ পরীক্ষার দিনগুলো যেন আর শেষ হতে চায়না। মামনির কথামত পরীক্ষায় ফার্স্ট হতে হবে এই শর্তে সে কত কষ্ট করে সারা বছর ধরে স্কুলে যেয়ে, টিভিতে কার্টুন দেখা বন্ধ করে পড়াগুলো মনে রেখেছে। আর এখন বড়রা অবরোধ করে পরীক্ষার তারিখগুলো শুধু পিছিয়ে দিচ্ছে। আচ্ছা এত বার পরিক্ষা পেছালে ভাল লাগে কারো! সে এতদিন মনে রাখবে কি করে এতগুলো পড়া! স্কুলে যাওয়ার পথে বড়দের রাস্তায় মারামারি করা দেখে খুব ভয় পায় উনাইসাহ। মামনি তাকে যেভাবে জড়িয়ে ধরে স্কুলে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যায় ভয়ে সব ভুলে যায় সে। সে ভাবে তার মত ছোট্ট জারিফা, উমামা ওরাও তো স্কুলে যাবে একদিন। কিভাবে যাবে এত ভয় পেলে! এজন্যই তো উমামা তার বাবা কে গোটা গোটা হাতে চিঠি লিখে যেন তাড়াতাড়ি দেশে চলে আসে তা না হলে ভেঙ্গে ফেলবে বাবার মুণ্ডু মাথা! মাঝে মাঝে ম্যাজিক সুইচটা টিপ দিয়ে সব দুষ্ট আঙ্কেলগুলোকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করে উনাইসার। কিন্তু মামনি বলে ছোটদের এভাবে বলতে হয়না। উনাইসাহ অনেক লক্ষ্মী তাই সবসময় শোনে মামনির কথা। আচ্ছা বড়রা কেন শুনতে চায়না! এত খারাপ হয় কেন বড়রা!
উনাইসাহ’র বড় আপু কাউকে নাম বলতে চায়না কিন্তু অনেক সুন্দর করে কবিতা লিখতে পারে সে। তার ডায়রিতে সে প্রিয় বাংলাদেশকে নিয়ে একটা কবিতা লিখেছে। তার কাছে মনে হয় বাংলাদেশটা একটা স্বপ্ন পুরী যেখানে লাল পরী, নীল পরীরা কেউ মিথ্যে কথা বলেনা, অসৎ পথে চলেনা...সবাই মিলেমিশে একসাথে থাকে। সে সুন্দর বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক গর্বিত। আচ্ছা, বড়রা কেন পারেনা তার মত ভাবতে!
আজ মনটা ভাল নেই আসফিনের। না বলে বাইরে গিয়েছে বলে বকা দিয়েছে আম্মুতা। সে তো তার এক বন্ধুকে হেল্প করবে বলেই অল্প একটু বের হয়েছিল ঘর থেকে। নাহ কিচ্ছু বুঝেনা আম্মুতা! এভাবে সারাক্ষন ঘরে বসে ভিডিও গেম খেলতে আর টিভিতে কার্টুন দেখতে ভাল লাগেনা আসফিনের। সে তার বন্ধুদের সাথে বাইরে বল খেলতে চায়, প্লেন উড়াতে চায়। কিন্তু তার বন্ধু ইলিয়াস বলেছে ছোটরা এখন আর ঘরের বাইরে নিরাপদ নয়। বড়রা পেট্রোল বোমা দিয়ে সবাইকে মেরে ফেলে। এইতো সেদিন তাদের বয়সী নাম না জানা একটা ছেলেকে বড়রা মেরে ফেলেছে। সেই ছেলেটা অনেক গরীব ঠিকমত খেতে পারেনা, স্কুলে যেতে পারেনা। আসফিন, ইলিয়াস আর তার সব বন্ধুরা মিলে স্কুলের টিফিনের পয়সা জমিয়ে ওই ছেলেটার পরিবারকে সাহায্য করেছে। আসফিনের বন্ধু আখদান বলেছে সে যে কোন জিনিস লুকাতে পারে। সে আর তার বন্ধুরা মিলে সবগুলো বোমা এমন জায়গায় লুকিয়ে রাখবে আর খুঁজে পাবেনা বড়রা! এসব শুনে আসফিনের মনে হয়, খুব ছোটবেলায় নানুভাইয়ের কাছে একটা কবিতা শিখেছিল আসফিন। ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি। এই কবিতাটা সবসময় মনে রাখে আর সেভাবেই সারাদিন সব মেনে চলে আসফিন। আচ্ছা বড়রা কোন কিছু মেনে চলেনা কেন? ছোটদের উপদেশ দিয়ে তারা কিভাবে সব ভুলে যায়! বড় হলে কি সব কিছু ভুলে যায় ! এই জন্যইতো বড় হতে চায়না আসফিন।
চারদিকে এত মারামারি দেখে অভিমান করে সত্যি সত্যি উপগ্রহ হয়ে গ্যালাক্সীল্যান্ডে চলে যেতে ইচ্ছে করে সল্টি বেবী নুহেরির। কিন্তু পাপা, মামনি, খালামনি, নানুমনি, নানুভাই এর মত ফ্যামিলি ট্রিতে এত্তগুলো প্রিয় মুখ দেখে মান-অভিমান সব কিছু ভুলে যায় নুহেরী। সব ফ্যামিলিতেই তো এমন প্রিয় মুখ থাকে। সেদিন রাস্তার দুষ্ট লোকগুলো সবাই মিলে একটা অ্যান্টিকে যেভাবে লাঠি দিয়ে মারছিল টিভিতে দেখে খুব কষ্ট পেয়েছিল নুহেরী। অ্যান্টিটার ঘরেও নিশ্চয়ই তার মত উপগ্রহ আছে, সল্টিবেবি আছে...তাদের কি হবে! উফ অসম্ভব! পাপা, মামনিকে ছাড়া এক মুহূর্তও চলার কথা ভাবতে পারেনা নুহেরী। নুহেরীর প্রিয় প্রিয় সল্টি মামারা কি পারবে এই শত্রুদের হাত থেকে আমাদের সবার প্রিয় বাংলাদেশ কে রক্ষা করতে! নুহেরীর কথা শুনে কম্পিউটারে নিকিতার আঁকা কার্টুনের স্কেচটা হঠাৎ করে জলজ্যান্ত নায়ক হয়ে উঠে। খুশীতে জ্বলজ্বল করে উঠে নিকিতার চোখ। এভাবেই হয়তো একদিন সব সল্টি মামারা একসাথে হয়ে ‘মিস্টার ইন্ডিয়ার’ মত গায়েব করে ফেলতে পারবে সব শত্রুদের। চিরদিনের মত শত্রুমুক্ত করতে পারবে সবার প্রিয় বাংলাদেশকে।
এক ফাঁকে টিক টিক শব্দে বেজে উঠলো ক্ষুদে বিজ্ঞানী নাহিবের তৈরি করা ঘড়িটা। গম্ভীর শব্দে বলে উঠলো “তোমার জীবন থেকে আরো একটি বছর হারিয়ে গেলো চিরকালের মত। কিছু কি পাথেয় সঞ্চয় করতে পেরেছো আগামী বছরের জন্য? তারাদের মেলায় এসে কিছুক্ষনের জন্য তাদের জগতে হারিয়ে গিয়েছিল লিলিয়ানা। নাহিবের ঘড়িটা বেজে উঠতে মনে হল তাকেও ফিরে যেতে হবে। কি নির্মল আর নিস্পাপ ছোটদের চাওয়াগুলো! বড়রা কেন ভাবতে পারেনা এভাবে! ছোটোদের এই সাধারন চাওয়া-পাওয়া গুলোকে টুডে ব্লগের ফ্রেমে বন্দী করে রাখার জন্য সম্পাদক সাহেবকে বলে একটা ‘ঝিলিমিলি’ বিভাগ খুলে দিলে কেমন হয়! থাকনা ফুল, পাখি আর তারাদের সহজ-সরল মনের কথাগুলো আজীবন বন্দী হয়ে!
বিষয়: বিবিধ
৪৭২৩ বার পঠিত, ৫১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হে আল্লাহ কবুল করে নাও তুমি আমাদের স্বপ্ন। কবুল করে নাও আমাদের সন্তানদেরকে। ওরা যেন হয় নব জাগরণের এক একজন বীরশ্রেষ্ঠ। আমীন।
বাকী শব্দগুলো বুঝে নিলাম নতুন বছরের শুভেচ্ছাসহ শুভকামনা রইলো
একটি গান গাইতে ইচ্ছে করছে....
'শিশুর জন্য ভালবাসা,
করো কি তোমরা অনুভব?
চাই বাধা-বন্ধন মুক্ত
আনন্দময় শৈশব।
আমরা ভালবাসা দিয়ে
পৃথিবী সাজাবো
সকল শিশুর জন্য,
একটি শিশুরও জীবন
হতে দেবোনা বিপন্ন......'
চমৎকার স্বপ্নময় পোস্টের জন্য ধন্যবাদ
সকল শিশুর শৈশব হোক নিরাপদ,আনন্দময়। কবিতার ছন্দে পোস্টটিকে সমৃদ্ধ করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। নতুন বছরের শুভেচ্ছাসহ শুভকামনা রইলো
ভালো থাকুন আপুনি
গন্ধসুধা লিখেছেন : কিযে ভালো লাগলো আপু! আমি শব্দ দিয়ে প্রকাশ করতে পারবনা!কিন্তু মিস্টার ইন্ডিয়ায় এসে একটা ধাক্কা খেলাম..ওটাতো হবে মিস্টার বাংলাদেশ Crying
বইয়ের পাতায় রোদের আলো লিখেছেন : খুব বেশি ভালো লেগেছে। Happy
জোছনার আলো লিখেছেন : ছোট্ট সোনা মনিদের তারার মেলা ভিষন ভালো লাগলো। Love Struck
রাবেয়া রোশনি লিখেছেন : চমৎকার লিখেছেন আপু মাশাআল্লাহ । আমিও মাঝে মাঝে ভাবি অন্তুত আমাদের এই ছোট্ট সোনামণি দের একটা সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি । যেখানে থাকবে এই সব হানাহানি রাহাজানি , হিংসা লোভ ঘৃণা ।
ভালো থাকুন আপুনি Love Struck Praying
সকাল সন্ধ্যা লিখেছেন : আপনার তারার মেলায় কিছুক্ষন সময় কাটানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাকে --
আপনারা এত সুন্দর করে কিভাবে গুছিয়ে লেখেন???
সত্যি মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন