রমজানের সহজ শিক্ষা
লিখেছেন লিখেছেন বৃত্তের বাইরে ২৩ জুলাই, ২০১৩, ০২:৫২:১১ রাত
রমজান মাসে আমাদের সবারই কোন না কোন লক্ষ্য থাকে। রাত জেগে এবাদত বন্দেগী করা, তাহাজ্জুত পড়া, কোরআন খতম দেয়া ইত্যাদি নানারকম প্রস্তুতি চোখে পড়ে যা বছরের অন্য সময় মনে থাকেনা। যারা রমজানের পুরো মাস এই নিয়ম মেনে চলতে পারেন আলহামদুলিল্লাহ্ কিন্তু যারা চাকরির পাশাপাশি পড়াশুনা করে ১৮/১৯ ঘণ্টা রোজা রেখে ঘরের কাজ কর্মও সামলাতে হয় তাদের জন্য এই নিয়ম মেনে চলাটা অন্যদের চেয়ে কঠিন। তাই এবাদত হওয়া উচিত একটা সহনীয় মাত্রায় যা কোন রকম চাপ ছাড়া সহজে পালন করা যায় এবং সারা বছর ধরে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায়। আমরা অনেকেই বেশী পুণ্য হয়তো কামাতে পারছিনা কিন্তু পাপ যাতে কম হয় সেই ব্যাপারে সজাগ থাকতে পারি। অর্থাৎ নিজে অন্যায় করবোনা এবং অন্যকেও অন্যায় করা থেকে বিরত রাখবো। ধরা যাক, আমাদের মধ্যে কেউ হয়তো ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বা ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে অযথা সময় কাটাচ্ছে বা রোজায় স্কুল ছুটি তাই মায়েরা সারাদিন ঘরে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখে সময় নষ্ট করছে, তাদের সময়টা কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারি।
আমরা যে যে-ই পেশায় নিয়জিত আছি সেই পেশায় নিজে সৎ থেকে দায়িত্ব পালন করাটাও এক ধরনের এবাদত। সময়ানুবর্তীতার শিক্ষাটা আমরা রমজান থেকে নিতে পারি। রমজানে প্রতিটা কাজ সময়মত করার তাগিদ থাকে যেমন ঠিক সময়ে ইফতার করা, সেহেরী সময়মত করা, সময়মত নামাজ পড়া ইত্যাদি প্রতিটা কাজই একটা নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা। তাই আমরা যারা রুটিন লাইফে অভ্যস্ত নই তারা এই কাজগুলোকে রুটিনের মধ্যে এনে নিজের অগোছালো স্বভাবকে ঠিক করতে পারি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে সেহেরী, ইফতার খাওয়ার অভ্যাস করে পারিবারিক বন্ধন গড়ে তুলতে পারি। অর্থাৎ রোজা মানে শুধু উপবাস থাকা নয় আমাদের চোখ, মন, হাত, পা সব কিছুর রোজা; মন্দ বলা বা মন্দ শুনা থেকে নিজেকে দূরে রাখা, কোন অনৈতিক কাজ করা থেকে নিজে বিরত থাকা এবং অন্যকে বিরত রাখা। এক্ষেত্রে ক্ষমতা বানরা প্রতিহত করবেন হাত দিয়ে, আলেমগন কথা দিয়ে এবং বাদবাকীরা অন্তত মন দিয়ে ঘ্রীনা করে দায়িত্ব পালন করবেন।
রমজানে যে দুটি বিষয়ের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তার একটি হল ‘বিরত থাকা’ এবং অপরটি হল ‘রমজান হচ্ছে কোরআন নাজিলের মাস’। এক্ষেত্রে ‘বিরত থাকা’ বলতে নিজের নফসকে শয়তানের সমস্ত কুমন্ত্রনা থেকে বিরত রাখা। আর ‘রমজান হচ্ছে কোরআন নাজিলের মাস’ বলতে রমজান মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে বলে রমজানে কোরআন পড়ার গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। এ কারনেই মসজিদে এবং বাড়িতে কোরআন খতমের দিকে গুরুত্ব দেয়া হয়। এখন এই কোরআন পড়া মানে শুধু না বুঝে খতম দেয়া নয় বরং অর্থসহ বুঝে পড়া। ভাল নাম্বার পাওয়ার জন্য পরিক্ষার কোন প্রশ্নও কিন্তু আমরা না বুঝে উত্তর দেইনা তাহলে আমাকে আমার গাইডলাইন হিসেবে যে কোরআন দেয়া হয়েছে তা না বুঝে পড়ে যাব, নামাজের সুরাগুলোর অর্থ না বুঝে তোতা পাখির বুলির মত আউড়ে যাব সে জন্য কিন্তু কোরআনকে আমাদের হাতে দেয়া হয়নি। কোরআনের সাথে যেহেতু নামাজের সম্পর্ক রয়েছে তাই আমরা প্রতিদিন যে সূরাগুলো নামাজে পড়ি প্রথমে সেই ছোট ছোট সূরাগুলোর অর্থ জানার চেষ্টা করতে পারি। এভাবে শুরু করলে ধীরে ধীরে জানার আগ্রহ সৃষ্টি হবে এবং পরবর্তীতে তা চালু রাখা সম্ভব হবে।
জন্মের পর থেকে আমরা কোরআনকে দেখছি বলে হয়তোবা আমাদের মধ্যে কোরআনকে জানার আগ্রহ কম তাই সারাবছর ভাল করে কাপড় দিয়ে মুড়ে আলমারির তাকে তুলে রাখি, রমজান এলে বছরে একবার খুলে দেখি। কিন্তু আমাদের চারপাশে তাকালে দেখবো আজ যেসব নন মুসলিম ইসলাম গ্রহন করছে তারা কিন্তু সবাই ২৫-৩০ বছরের বা তার উর্দ্ধে। তারা কোরআনকে জেনে বুঝে পরেই ইসলাম গ্রহন করছে। তার মানে তাদের জানার আগ্রহ এত বেশী যে আমরা মুসলমান হয়েও যা পারিনি তা একজন কনভারটেড মুসলমান করে দেখাচ্ছে।
ধর্ম পালন করার চেয়ে মেনে চলা কঠিন। সঠিক ভাবে মেনে চলতে হলে আগে নিজেকে সংশোধন করা প্রয়োজন। আর সে জন্য প্রয়োজন নিজের বিবেককে জাগ্রত করা। আমাদের কারো যদি দুটি সন্তান থাকে এবং দুজনের দিকে যদি সমানভাবে মনোযোগ না দেই তাহলে যাকে বেশী যত্ন করবো সে ভালভাবে গড়ে উঠবে আর অন্যজন আমাদের অবহেলার কারনে নষ্ট হয়ে যাবে। তেমনি আমাদের দেহে বাহ্যিক এবং মানসিক যে দুটি সত্ত্বার অস্তিত্ব রয়েছে সেই দুটোরই যত্নের প্রয়োজন। স্রষ্টা ভাল করেই জানেন আমাদের শারীরিক পরিচর্যার প্রয়োজন হবে বেশী তাই ১২ মাসের মধ্যে ১১ মাসই রেখে দিয়েছেন শারীরিক পরিচর্যার জন্য আর মাত্র একটা মাস রেখেছেন আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য। শরীরের সাথে সাথে আমাদের রুহের জন্যও খাবারের প্রয়োজন হয়। নিয়মিত পরিচর্যার অভাবে আমাদের আত্মা দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। পরে হয়ত আর কোন প্রতিক্রিয়াও হবেনা, তাই সময় থাকতে যত্নের প্রয়োজন।
সমাজে আজ মুসলমান নামধারী মানুষের সংখ্যা অনেক কিন্তু ইসলামের জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগকারী মানুষের সংখ্যা খুব কম। ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মৌলিক কথা হচ্ছে জানার সাথে সাথে মানতে হবে। শুধু জানার নাম ইসলাম নয়, জানা এবং মানা-উভয়ের সম্মিলনের নাম ইসলাম। আমাদের সাধ্যাতীত এমন কোন বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়নি । আমরা সবাই যেন রমজানের শিক্ষাকে কঠিন মনে না করে সঠিকভাবে আমল করতে পারি। সর্বোপরি স্রষ্টাকে ভয় করে সদা সর্বদা তাকওয়া অনুযায়ী চলার এই প্রস্তুতিটা আমরা রমজান মাসে যেন নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারি এবং সেই অনুযায়ী সারা বছর চলার চেষ্টা করতে পারি।
বিষয়: বিবিধ
২৩৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন