আত্মশুদ্ধি কেন প্রয়োজন
লিখেছেন লিখেছেন বৃত্তের বাইরে ১৮ জুলাই, ২০১৩, ১১:৩৭:৫১ সকাল
ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সমাজে হরেক রকম মানুষের বাস। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সুশীল-কুশীল, সবল-দুর্বল সবাইকে নিয়েই সমাজ। জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও শালীনতার মাপকাঠিতে আমরা আজ কোন জায়গায় আছি তা ভেবে দেখবার ফুরসত যদি নাও থাকে, আমাদের পাশের লোকটি শুধুই আমাদের ব্যবহার, কথাবার্তা শুনে আমরা কোন জাতীয় প্রানী তা অনায়াসে মেপে ফেলবে। অন্যসব প্রানীর চেয়ে আমরা অধিক শিষ্ট ও প্রাজ্ঞ বিধায় আমরা মানুষ। পশু পশুরূপে জন্ম নেয়, মারাও যায় পশুরূপে। এদের জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি কোনরূপ চারিত্রিক উৎকর্ষ নেই তাই পশুদের সমাজ গড়ে উঠে না সভ্যতাও নির্মিত হয়না। কিন্তু মানুষকে পশু থেকে ভিন্নতর ও উন্নততর হতে হয়। নইলে মানুষরূপে জন্ম নিয়েও সে মারা যেতে পারে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে। মানুষ হিসাবে আমাদের স্রষ্টার প্রতিনিধিত্ব করার কথা। কিন্তু পৃথিবীতে বহু নামধারী মানুষ আছে যারা বেঁচে থেকে শুনে যায় তারা যে কোন জন্তু নামধারী গালি। কারন সে জানেনা শিষ্ট মানে আদব-কায়দা, নম্র-ভদ্র, সুশীল, সুরুচি, নীতি, নৈতিকতা, বিনয় ইত্যাদি বুঝায়। আর সৌজন্য হচ্ছে এসব গুনের ব্যবহার। মনুষ্য সমাজে যেখানে মিথ্যা বলা, অপবাদ দেয়া, পরনিন্দা করা, মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা ছিল সম্পূর্ণ বর্জনীয় কাজ আজ এগুলোই হয়েছে পালনীয় কাজ। আজ কে কার চেয়ে বড় হব, কাকে আঘাত করতে পারলে মানসিক শান্তি পাব; সেই চিন্তায় আমরা বিভোর। এরই লক্ষ্যে সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে আমরা প্রতিনিয়ত একে অপরকে দোষারোপ করছি, কুৎসা রটনা করছি। এসব অভিযোগ বাস্তবসম্মত কিনা বা কতটুকু সত্য সেটা তলিয়ে না দেখে বরং অন্যকে দমিয়ে রাখতে পারাটাই যেন আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। এমন আচরন অন্য ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে হতে পারে কিন্তু একজন মুসলিমের কাছে কি এই আচরন প্রত্যাশা করা উচিত? যেখানে প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের জন্য কড়ায়–গণ্ডায় হিসাব দিতে হবে সেখানে যে কোন মানুষকে দোষারোপ করার আগে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই করা, কেউ কোন অভিযোগ করলে তাতে কান না দিয়ে বিষয়টি কততুকু সত্যি তা তলিয়ে দেখাই তো মুমিনের কাজ।
যে কোন বিষয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বিতর্ক অথবা মতানৈক্য থাকবে। যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিক মেধা ও সততা বিদ্যমান সেখানে মতভেদ খুবই অপরিহার্য। কারন, মতভেদ থাকলেই প্রশ্ন উঠবে এবং সে বিষয়ে জানার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের যখন কোন বিষয়ের উপর অ্যাসাইনম্যান্ট দেয়া হয় তখন একেকজন একেক ভাবে সেটা উপস্থাপন করে। এটা নির্ভর করে কে কিভাবে বিষয়টা বিচার করছে তার উপর। এক্ষেত্রে মতের ভিন্নতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একজন আদর্শ শিক্ষকের কাজ হল তার প্রদত্ত অ্যাসাইনম্যান্ট সম্পর্কে ক্লাসের প্রত্যেকটা ছাত্রকে একটা স্পষ্ট ধারনা দেয়া যাতে তারা তাদের কাজটা কিভাবে করতে হবে তা বুঝতে পারে। তেমনি ধর্মীয় ব্যাপারে মতভেদ সৃষ্টি হলে প্রত্যেকের মতামতকেই গুরুত্ব সহকারে এবং শ্রদ্ধার সাথে দেখতে হবে। যারা এ ব্যাপারে ভাল জানেন তারা কোরআন-হাদিসের আলোকে যুক্তি দিয়ে অন্যকে বুঝাতে পারেন। এক্ষেত্রে একজন আরেকজনকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো মত পার্থক্যের ব্যাপারে আমরা এতটাই বাড়াবাড়ি করি যেন ভিন্ন মতাব্লম্বীরা ইসলামের শ্ত্রু। যারা নিজেদের ইসলাম পন্থী মনে করেন এবং ইসলাম পালন করেন তারা এই সব ছোটখাট বিষয়কে গুরুত্ব দিতে যেয়ে বাড়াবাড়ি করে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করছে। এতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয়গুলো এবং ফরজ কাজগুলো উপেক্ষিত হচ্ছে সেটা হয়তো বুঝতেই পারছেনা। অথচ সবার মধ্যে ঐক্য এবং সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব থাকলে ইসলাম ধর্ম মুসলিম উম্মার জন্য অপ্রতিহত শক্তি হতে পারতো কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তা না হয়ে আজ ধর্মই অন্তরকলহের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একজন মুসলমান হিসাবে উন্নত রুচি,পরিছন্ন মনোভাব, পরিমার্জিত চিন্তাধারা, মনোমুগ্ধকর ব্যবহার, সহনশীলতা, নীতি-নৈতিকতার প্রকাশটা যদি সৌজন্য হয় তাহলে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত আমরা মুসলমান হিসাবে অপরের সাথে সেই সৌজন্যগুলো প্রকাশ করছি কিনা। এ সতর্কতা বা শিক্ষা কেউ মাতৃগর্ভ থেকে নিয়ে আসেনা। বিদ্যা,বুদ্ধির মতো কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার দ্বারা অর্জন করে নিতে হয়। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদেরকে বড় করে জাহির করতে যেয়ে শিষ্টাচার এবং সৌজন্যবোধ ভুলে যাই। নৈতিক শিক্ষা এবং জ্ঞানবোধের অভাবের কারনে আমাদের ব্যবহার দ্বারা অন্যের বিরক্তির কারন হই। সুস্থ থাকার জন্য যেমন শরীরের প্রতিটা অংশের যত্নের প্রয়োজন হয় তেমনি আমাদের বিবেকেরও পরিচর্যার প্রয়োজন। সহানুভুতি, সহমর্মিতা, সুশিক্ষার দ্বারা আমরা সভ্য– অসভ্যের পার্থক্য বুঝবো, দেয়া-নেয়ার এই পৃথিবীতে আরও ভদ্র ও বিনয়ী হব এবং নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে বিবেককে জাগ্রত করার ব্যাপারে আরও সচেতন হব, তবেই মানুষ হিসাবে আমাদের জন্ম সার্থক হবে।
বিষয়: বিবিধ
২১৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন