রম্য প্রতিবেদনঃ বিদ্যুৎ বিভ্রাট

লিখেছেন লিখেছেন বৃত্তের বাইরে ২৪ জুন, ২০১৩, ১১:১১:৫৬ সকাল

সন: ২০০১

স্থান: আবুধাবি

ঘটনা: বৈদুতিক গোলযোগের কারণে পুরো শহর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। শপিং মলগুলোতে ক্রেতাদের লম্বা লাইন, কম্পিউটার বন্ধ থাকায় জিনিসপত্রের দামের সাথে মিলিয়ে কাগজে কলমে হিসাব কষতে গিয়ে কর্তব্যরত ক্যাশিয়ারদের গলদঘর্ম অবস্থা। ক্রেতাদের অনেকেরই দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে থেকে অধৈর্য হয়ে জিনিসপত্র ফেলে মল থেকে প্রস্থান। রাস্তায় সিগনাল লাইট গুলো অকেজো হয়ে পড়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে এই প্রথম ট্রাফিক পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা। সুউচ্চ ভবনগুলোতে খাবার পানি, বিদ্যুৎ না থাকায় খাবারের দোকান, রেস্টুরেন্ট গুলোতে শহরবাসীর ভীর।

ঘটনাস্থলে বসবাসকারী বাঙ্গালীদের মন্তব্য: এক দিনেই এই অবস্থা! আমরা তো দেশে সারাবছরই লোডশেডিং এর কারনে ভোগান্তি পোহাই। আমাদের দেশে রাস্তায় সিগনাল থাকলেও কেউ ট্রাফিক আইন মানেনা তাই ট্রাফিক পুলিশকে সারাবছরই দায়িত্ব পালন করতে হয়।

সন: ২০০৪

স্থান: বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট

ঘটনা: এইমাত্র প্লেন ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিমান বন্দরের অভ্যন্তরে মোমবাতি জ্বালিয়ে অফিসারদের দায়িত্ব পালন। ভ্যাপসা গরম, মশার কামড়ে মহিলাদের সাথে থাকা বাচ্চাদের চিত্কার, চেঁচামেচি। অন্ধকার, অসহ্য গরমে ৩/৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বাইরে থেকে আগত যাত্রীরা চরম বিরক্ত। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে লাগেজ সংগ্রহ করতে না পারায় দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনায় অফিসারদের সাথে যাত্রীদের তুমুল বাক-বিতন্ডা, হৈ-চৈ।

ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত অফিসারদের মন্তব্য: বিদেশে থাকেন বলে আপনারা তো আর বিদেশী না। গরম, লোডশেডিং, মশার কামড় এগুলো এদেশের সাধারন ঘটনা। কয়েকদিন থাকেন দেখবেন আপনাদের সাথে সাথে আপনাদের বাচ্চারাও এসব অনিয়মে অভ্যস্থ হয়ে গেছে।

সন: ২০০৯

স্থান: আয়কর ভবন( ১৫ তলা)

ঘটনা: বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারণে ফায়ার এলার্ম বেজে উঠায় সাথে সাথে ইলেকট্রিসিটি চলে যায়। সবাই কে যার যার কম্পিউটার বন্ধ করে অফিস থেকে বের হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। লিফট এর পরিবর্তে সিড়ি ব্যবহার করতে বলা হয়। ১৫ তলা থেকে হুড়মুর করে নামার পর সবাইকে নিয়ে একঘন্টা পার্কে অবস্থানের পর আবার সিড়ি বেয়ে ১৫ তলায় প্রবেশ। সিড়ি দিয়ে উঠানামার ধকল সামলানোর পর জানা যায় এটা ছিল একটা ফলস এলার্ম। সত্যি সত্যি ফায়ার এলার্ম বাজলে কিভাবে বিল্ডিং থেকে বের হতে হবে এটা ছিল তারই একটা পরীক্ষামূলক প্রস্তুতি। এ কথা শোনার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরক্তি টের পেয়ে অতি সৌজন্য প্রকাশ করার জন্য বিল্ডিং কর্তৃপক্ষের দাঁত বের করা হাসি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাংলাদেশীদের মন্তব্য: যত্তসব উটকো ঝামেলা! আগুন লাগলে ১৫ তলা থেকে কিভাবে বের হতে হবে এটা জানার জন্য আবার ট্রেনিং দিতে হয় নাকি?আমাদের দেশে তো গার্মেন্টস কর্মীরা ট্রেনিং না নিয়েই জানে আগুন লাগলে বা ভবন ধসে পড়লে কিভাবে ভবন থেকে বের হতে হয়। দুর্ঘটনার সম্ভবনা দেখলে মালিকরা আরো গেট বন্ধ করে দেয়। জান বাঁচানোর জন্য সবাই জানালা দিয়ে, ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে, কিংবা পায়ের তলায় চাপা পড়ে হলেও ঝুঁকি নিয়ে ঠিকই বের হয়ে আসে।

সন: ২০১৩

স্থান: আলবার্টা

ঘটনা: প্রবল ভারী বর্ষণে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চল বন্যা প্লাবিত। কয়েক লাখ লোককে তাদের বাড়ীঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। শহরের ডাউনটাউনে পানি ঢুকে পড়ায় পাওয়ার সাপ্লাই দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে ওই এলাকার সব হেড অফিস,স্কুল,শপিং মল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। খাবার পানির তীব্র সংকট। তবে খাবার পানির বিকল্প হিসেবে জুস,কফি,বিয়ার দিয়ে অনেকে কাজ চালাচ্ছে,আর বাথরুমের কাজ সারার জন্য পানির বিকল্প হিসেবে টয়লেট পেপার থাকায় এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা বিদ্যুৎ। শহর থেকে পানি বের না করা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। কিভাবে দ্রুত এর সমাধান করা যায় সবাই তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ভুক্তভুগীদের মাঝে বিভিন্ন দেশের ইমিগ্রান্টরা আছেন তার মধ্যে বেশ কিছু বাংলাদেশীও রয়েছেন। বাংলাদেশীরা যেহেতু বিদ্যুৎ নিয়ে সবচেয়ে বেশী ভোগান্তির শিকার তাই জাতির এই দুর্দিনে বাংলাদেশীদের তাদের মূল্যবান পরামর্শ দেয়ার জন্য আহবান জানানো হয়েছে। দেখা যাক, তারা কিভাবে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে পারে।

পরামর্শ: মত প্রকাশের জন্য সবার মধ্য থেকে মোটা মতো এক ভদ্রলোক সাহস করে এগিয়ে এলেন। তাকে উৎসাহ দেয়ার জন্য তার সামনে কেক দিয়ে আপ্যায়ন করা হল। স্যার, কেকটা বারো টুকরা করব, নাকি ছয় টুকরা? ভদ্রলোক জবাব দিলেন,'ছয় টুকরায় কর। আমি আবার ডায়েট কন্ট্রোল করছি কিনা,বারো টুকরা খাওয়া যাবেনা। শুনতে কৌতুক মনে হলেও আসলে এটাই ছিল সমস্যার সমাধান। কিভাবে? চলুন, বিস্তারিত তার মুখ থেকেই শোনা যাক:

পত্রিকায় খবর বের হলো, এখন থেকে ঢাকায় দিনে চার থেকে সাতবার লোডশেডিং হবে। যেই কথা সেই কাজ। দিনে রাতে সাত আটবার পর্যন্ত লোডশেডিং শুরু হলো। চারদিক থেকে অভিযোগ আসা শুরু হলো। তাই বদনাম ও অভিযোগ ঘুচাতে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিল, টানা ৭/৮ ঘণ্টার পরিবর্তে দুই ঘন্টা পরপর তিন থেকে চারবার লোডশেডিং করবে। অর্থাৎ ৪ ×২ =৮ ঘন্টা,২৪ ঘন্টায় করে লোডশেডিং শুরু হল। কর্তৃপক্ষ এই বুদ্ধি বের করতে পেরে খুব খুশি। যাই হোক, তাদের তো আর শুনতে হচ্ছিল না যে ৭/৮ বার লোডশেডিং হয়, বরং তারা বলতে পারলো, টানা ২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ তো থাকে! কিন্তু জনগণকে বোকা বানাতে ব্যর্থ হয়ে এবং জনরোষ টের পেয়ে আবার তারা আগের নিয়মে ফিরে গেল। সহজ কথা হলো, কেক যত টুকরাই করা হোক না কেন যোগ করলে পরিমান্ তো সেটাই থাকবে। লোডশেডিং এর ব্যপারটাও তাই।

ঘটনাস্থলে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের মন্তব্য: ইনি নিশ্চয়ই দেশে থাকতে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। What a genius man! We're really proud of you!

বিষয়: বিবিধ

১৭৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File