ইসলামের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল

লিখেছেন লিখেছেন ওদানো মুড়ি ২৩ মে, ২০১৩, ০৬:৪০:৫৫ সকাল

এক যুবক শহর থেকে গ্রামের বাড়ি গেল বেড়াতে । যখনি গ্রামে যায় তাকে সেখানকার সবাই খুব সম্মান করে, বড়রা স্নেহ করে , ছোটরা তার পাশে ঘিরতে শুরু করে গল্প শুনবার জন্য শুধু অমুক ভাইয়া আসছে শুনলেই হল। তার নানু –মামারা তাকে খুব পছন্দ করে কারন সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি ছেলে, সুললিত কণ্ঠে ,আবেগ দিয়ে সকাল বেলা কোরআন পড়ে , হাদিস ,তাফসির বুঝে পড়ার চেষ্টা করে নিয়মিত। অন্যকে বুঝানোর চেষ্টা করে । বাড়িতে থাকলে সবাই তার কোরআন বা হাদিসের দারস একবার হলেও শুনবেই এমন অবস্থা। সেও খুশি। কিন্তু হটাৎ করেই তার মামা তাকে বাঁকা চোখে দেখা শুরু করল।পরের বার যখন সে বাড়িতে গেল ইতোমদ্ধে মামার তাকে সেই বাকাচোখে দেখার ঢেউ পাশের কয়েকটা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ল ।ছোটদের আর আগের মত তার পাশে ঘেষতে দেন না তাদের মা-বাবারা। ছোটদের ও আর শোনা হয়না খাব্বাব ,খুবাইব , আলি ,উসমান দের কাহিনী। আগের মত তার দারস শুনলেও প্রায় সবাই কেমন জানি একটু নাক সিটকায় ।যুবক কারন বুঝল । মামা একদিন তাকে ডেকে বলল ,দেখ ভাগিনা এদেশের কোন রাজনীতিই ভালনা এদেশের সকল রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করে শুধুমাত্র গদির লোভে ।সে তার কথা শুনল মন দিয়ে ।তারপর সে মামাকে বুঝালো ইসলামের পরিপূর্ণতা নিয়ে।ইসলামী রাজনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে অনেক কিছুই বলল।তার কিছুটা নিচে তুলে ধরা হল।

ইসলামের সাথে রাজনীতির সম্পর্কঃ

এক শ্রেণীর ইসলামপ্রিয় মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন, কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলামকে টেনে আনতে চান না। তাদের ধারনা ইসলাম শুধুমাত্র একটি ধর্ম এবং ধর্ম হিসেবে এর পরিধি নামাজ,রোজা,হজ্জ,যাকাত,দান – খয়রাত, জিকর – আযকার, ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ । তারা মনে করেন ধর্ম পবিত্র । আর রাজনীতি হল অপবিত্র , কারন রাজনীতিতে কিছুটা হলেও মিথ্যা ও ধোঁকাবাজির আশ্রয় নিতে হয় । তাই ইসলামকে রাজনীতির ময়দানে টেনে আনলে এর পবিত্রতা নষ্ট হবে । উপরোক্ত ধারনার কারনে কিছু আধুনিক মুসলমান , কিছু আলেম - ওলামা এবং তাবলীগপন্থীরা দুনিয়া তথা ধর্ম ও রাষ্ট্রকে পৃথক করতে চান । তাদের মতে ধর্মীয় বিধিবিধানের সাথে পার্থিব জীবনের কোন সম্পর্ক নেই । কিন্তু আমরা জানি ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা এটা শুধুমাত্র একটি ধর্ম নয় । এতে পরিবার ,সমাজ ,রাষ্ট্র ,অর্থনীতি , শিক্ষানীতিসহ জীবনের সকল দিকের নির্দেশনা দেয়া আছে । এর পরেও কেন কিছু মুসলমান ইসলামকে রাজনীতি বিবর্জিত ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করতে চান ?

আবারো প্রশ্ন হল , ইসলাম কি রাজনীতি তথা রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ধর্মকে পৃথক পৃথক বিষয় না একই বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে ? আর আল্লাহ রাসুল প্রেরনের উদ্দেশ্য বলতে যেয়ে সূরা হাদিদের ২৫ নং আয়াতে বলেছেনঃ

আমি আমার রাসূলগনকে সুস্পষ্ট নিদর্শন দিয়ে পাঠিয়েছি এবং তাদের উপর কিতাব ও মীযান নাযিল করেছি যাতে তারা ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।“



এথেকে আমরা বুঝতে পারি যে রাসুল প্রেরনের উদ্দেশ্যই ছিল তারা মানব জাতিকে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে ন্যায়বিচারের ওপর প্রতিস্ঠিত করবেন । একদিকে মানুষ আল্লাহর অধিকার , নিজের অধিকার ও অন্য মানুষের অধিকার জেনে তা আদায় করবে এবং পরবর্তীতে সমাজের বিধিবিধান এমনভাবে নির্মাণ করবে যেন সমাজ ও রাস্ট্রে কোন জুলুম , অন্যায় অবিচার না থাকে । এই আয়াতের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও রাসুলের কর্মনীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে , একটি রাষ্ট্রশক্তি ছাড়া সমাজের সকল অংশে সমানভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা । এইজন্য রাসুল(সঃ) সহ সকল নবী রাসুল ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন । এই চেষ্টাকে বলা হয় রাজনীতি । চেষ্টা ছাড়া যেমন ভাতের লোকমাটা পর্যন্ত মুখে দেয়া যায়না তেমনি চেষ্টা প্রচেষ্টা ছাড়া ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়া সম্ভবনা । ওয়াজ – নসিহত দ্বারা , তবলীগের দ্বারা মানুষকে ইসলাম কবুল করানো যায় , দীনদার বানানো যায় , আল্লাহভীতি বাড়ানো যায় , মানুষের মনোভাবের আমূল পরিবর্তন ঘটানো যায় কিন্তু সেই অঞ্চলে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারেনা ।

তবলীগের মাধ্যমে যারা রাসুল (সঃ) এর দলভুক্ত হয়েছিলেন তাদের নিয়েই রাসুল(সঃ) একটা নির্দিষ্ট সময় পর ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন । ওই আয়াতের পরবর্তী অংশে বলা হয়েছেঃ

এটা এজন্য যে আল্লাহ জেনে নিতে চান কে তাকে না দেখেও তাকে ও তার রাসুলকে সাহায্য করে ।”



অর্থাৎ যারা তার দলভুক্ত হয়েছিলেন তাদেরও কর্তব্য হবে নবীর সাথে চেষ্টা সংগ্রামে অংশগ্রহন করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা । আর এ কাজ করতে গিয়ে যা কিছু করা প্রয়োজন তাই রাজনীতি । মুসলমান যদি নামাজ , রোজা , হজ্জ , যাকাত আদায় করে সন্তুষ্ট থাকে আর যদি রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করার কাজে অংশগ্রহন না করে তাদের বক্তব্য হবে মূসা(আঃ) এর উম্মতের মত যারা নবীকে বলেছিলঃ

তুমি ও তোমার আল্লাহ গিয়ে কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর,আমরা এখানে বসে পড়লাম ”



এর জন্য আল্লাহ তাদের কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন ।

এতক্ষন আলোচনা থেকে আমরা বুঝলাম যে , রাষ্ট্রশক্তি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ামক। একমাত্র যার মাধ্যমেই সামাজিক বিপর্যয় , ধ্বংসাত্মক কার্যাবলী , সমস্ত রকম পাপাচার এক কথায় রাষ্ট্রীয় ভাঙ্গন রোধ সম্ভব ।সুতরাং প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য হল ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য দলবদ্ধভাবে চেষ্টা সংগ্রামে অংশগ্রহন করা । আর একেই বলা যায় ইসলামী আন্দোলন বা ইসলামী রাজনীতি ।

ইসলাম দ্বীন ও দুনিয়া সব কিছুকে কোরআনের ভিত্তিতে গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছে । সূরা হজ্জ এর ৪১ নং আয়াতে বলা হয়েছে।

যদি আমরা তাদেরকে পৃথিবীতে ক্ষমতা দান করি , তবে তারা নামাজ কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে , যাবতীয় ভাল কাজের হুকুম করবে ও অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে ”



উপরোক্ত আয়াত অনুসারে জোরালোভাবে প্রমান হয় যে , আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থা তার নাগরিকদের নামাজ কায়েমের ব্যবস্থা গ্রহন করবে , যাকাত রাষ্ট্রয়ভাবে আদায় ও বণ্টনের ব্যবস্থা করবে , সকল ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে ও সকল অন্যায় বন্ধ করবে । এই আয়াত অনুযায়ী একটি দ্বীনভিত্তিক ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা মুসলমানদের কর্তব্য হয়ে দাড়িয়েছে । এইজন্য গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ইসলামের আদর্শের আলোকে গড়ে তোলা ছাড়া একাজ কিছুতেই সম্ভব হতে পারেনা । অন্যদিকে ইসলামী আদর্শ ব্যতীত অন্য কোন আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করার রাজনীতিকে ইসলাম কোনভাবেই সমর্থন করেনা । পুঁজিবাদ , সেকুলারিসম , সমাজতন্ত্র ইত্যাদি মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার রাজনীতিকে ইসলাম কখনই সমর্থন করেনা । এতে কোন মুসলমান কখনই অংশ নিতে পারেনা ।

মুসলমানরা কিভাবে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে আসেঃ

ইউরোপে বহুআগে ধর্ম, রাজনীতি থেকে আলাদা হয়েছে । এর আগে পোপ ছিল ক্রিশ্চিয়ানদের সর্বপ্রধান নেতা । পোপের অনুমোদন ছাড়া তারা কিছুই করতনা। এরপর ইউরোপে রেনেসাঁ আন্দোলনের শুরুতে ক্রিশ্চিয়ান ধর্মযাজকদের সাথে বৈজ্ঞানিক আন্দোলনকারীদের তীব্র বিরোধ দেখা দেয়। ধর্মযাজকরা মনে করল স্বাধীন চিন্তা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা দিন দিন ধর্মের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিবে । এই ভুল ধারনার জন্য তারা বৈজ্ঞানিক আন্দোলনের সরাসরি বিরোধিতা করল । অপরদিকে বৈজ্ঞানিক আন্দোলনকারীরা ভুল ধারনা করল যে মুক্ত চিন্তার ক্ষেত্রে ধর্ম বিরাট বাধা । এই দর্শন গ্রহন করে পাশ্চাত্য জগত ধর্মকে জীবন ও প্রকৃতি থেকে আলাদা করে দিল । আর পরবর্তী যুগের শিক্ষিত মুসলমানরা পাশ্চাত্যের এই নীতিকে গ্রহন করল । তারা মনে করল পাশ্চাত্য যেই নীতি গ্রহন করে দুনিয়ায় উন্নতি করছে আমাদের ও সেই নীতি গ্রহন করা উচিত । তারা পাশ্চাত্য সভ্যতার কাছে নতি স্বীকার করল অথচ তারা একবার ও চিন্তা করে দেখলনা তাদের পূর্বসূরিরা একটি পুরনাঙ্গ , স্থায়ী , সতন্ত্র সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। যার মধ্যে সকল সমস্যার বাস্তবভিত্তিক সমাধান ছিল।

রাসূল (সঃ) , সাহাবারা কি রাজনীতি করেছেন ?

যারা বলেন মুসলমানদের কখনই রাজনীতিতেই আসা উচিত না । তাদের কাছে প্রশ্ন রাসূল(সঃ) কি কখনও রাজনীতি করেছেন ?

উত্তরটা দিয়ে দেই । রাসূল (সঃ) হিজরতের পর মদিনায় গিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । রাসূল (সঃ) মদিনা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন । দশ বছর ধরে তিনি রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন । প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন , সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধ করেছেন , বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী পাঠিয়েছেন , কখনও কাফির – মুশরিকদের সাথে সন্ধি করেছেন । এগুলো কি তিনি আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া করেছেন ? অথচ আল্লাহ বলেনঃ

তিনি নিজের ইচ্ছায় কিছুই বলেন না ” – সূরা নাজমঃ ৩



এ থেকে স্পষ্ট প্রমানিত হয় রাসূল (সঃ) সক্রিয় রাজনীতি করেছেন । যা তিনি করেছেন একমাত্র আল্লাহর নির্দেশে নিজের ইচ্ছায় নয় । আর তার দেখানো পথই আমাদের চলার জন্য একমাত্র অনুকরণীয় আদর্শ । আর তাই রাসুল(সঃ) যেভাবে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করে সমাজনীতি , রাজনীতি ,অর্থনীতি ,শিক্ষাব্যবস্থা ,বিচারব্যবস্থার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমাদের ও তার দেখানো পথেই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের প্রতি দৃঢ় পদে অগ্রসর হতে হবে ।

আমরা যদি আরেকটু গভীরভাবে দেখি তাহলে দেখব , রাসূল(সঃ) যে সমাজে জন্মগ্রহন করেন সেই সমাজে আগে থেকেই একটি জীবনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। যেটা জাহেলি জীবন ব্যবস্থা বলে আমরা সকলেই জানি । রাসূল (সঃ) কে আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেয়া হল প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থাকে উৎখাত করে আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীনকে সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করার মত গুরু দায়িত্ব । তখন কি তিনি তার অনুসারীদের বলেছিলেন যে শুধু নামাজ পড়, রোজা রাখ , যাকাত দাও আর বৃহত্তর সমাজে যে যাই করুক চুরি , ডাকাতি , রাহাজানি , জুলুম – অবিচার , শোষণ , অসৎ লোকেরা দেশ শাসন করুক এতে তোমাদের চিন্তা করার কোন দরকার নেই । আর এইভাবে যদি চলতো ও তাহলে কি সেই সময় আল - কোরানের হেরার সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হত ?

রাসূল(সঃ) প্রথম সুদীর্ঘ ১৩ বছর যা করলেন তা ছিল তাবলীগে দ্বীনের কাজ । এরপর যারা এতে সাড়া দিল তাদের নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে সমাজ সংস্কার শুরু করলেন । মূর্তি পূজা বন্ধ করতে বললেন । রাষ্ট্রীয় সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করলেন । তিনি বললেন , তোমরা এক আল্লাহর প্রভুত্ব মেনে নাও । অবিচার করোনা , মিথ্যা বলোনা , অঙ্গীকার ভঙ্গ করোনা । এতে বাধ সেধে বসল সমাজে নেতৃত্বস্থানীয়রা । তারা চিন্তা ভাবনা করে দেখল যদি রাসূলের কথা মেনে এক আল্লাহর প্রভুত্ব মেনে নেয় তাহলে তাদের অন্যায়ভাবে আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাবে , তারা নেতৃত্ব হারাবে । তাই তারা নেতৃত্ব হারাবার ভয়ে সত্য যেনেও রাসূলের আদর্শকে গ্রহন করলনা । তাই সমাজের অন্যায় অবিচার কোনভাবেই উৎখাত করা সম্ভব হচ্ছিলনা কারন সমাজের শাসক শ্রেণীর এক বিরাট অংশ সমাজের ভাঙ্গনে লিপ্ত ছিল । তখন রাসূল(সঃ) অনুভব করলেন শুধুমাত্র দাওয়াত ও তাবলীগ করে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় । এই জন্য তিনি আল্লাহর নিকট রাজনৈতিক শক্তি কামনা করলেন ।

বল , হে আমার রব , আমাকে যেখানে নিয়ে যাও সত্যতা সহকারে নিয়ে যাও এবং যেখান থেকে আমাকে বের কর সত্যতা সহকারে বের কর এবং তোমার নিকট থেকে রাষ্ট্রশক্তি আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও ” – বনী ইসরাইলঃ ৮০



শুধু চেয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি । মদিনায় ৭৩ জনের প্রতিনিধি দল এক গোপন বৈঠকে রাসূলের হাতে হাত রেখে বাইয়াত গ্রহন করলেন । বাইয়াত এর বিষয় ছিল তারা বিপদে – আপদে সর্বাবস্থায় তাকে সাহায্য করবে ,তার অনুসরন করবে। ভাল কাজের আদেশ দিবে । অন্যায় হতে লোকদের বিরত রাখবে । অন্যায়ের বিরুদ্ধচারন করতে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাবেনা । প্রতিনিধি দল সকলেই উপরোক্ত শর্ত মেনেই বাইয়াত করল।

এই যে উপরোক্ত বিষয়গুলো একে রাজনীতি ছাড়া কি বিশেষ ধর্মনীতি বলা যায় ? যার সিপাহসালার ছিলেন রাসূল(সঃ) । এর পরে মদিনায় ইহুদি ও মুশরিকদের সাথে সুনির্দিষ্ট শর্তে হয় মদিনার সনদ । যা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত রাষ্ট্রীয় সংবিধান। রাসূল(সঃ) এর এসকল কার্যাবলী বিশ্লেষণ করলে স্বীকার করে নিতেই হয় যে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক ইসলামী জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি রাজনীতি করেছেন । সাহাবারা ও তাকে একাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন । তাই প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য হল যে সমাজে আল্লাহর দ্বীন কায়েম নেই সেই সমাজে তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আন্দোলন করা অন্যকথায় রাজনীতি করা । তবে এ কথা সত্য যে আল্লাহর জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে রাজনীতি করা মুসলমানের জন্য জায়েজ হতে পারেনা । নিছক রাজত্ব করার জন্য বা মানব রচিত বিধান প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মুসলমান বা কোন ঈমানদার রাজনীতি করতে পারেনা ।তবে একথা সত্য যে ইসলামী রাজনীতিতে ধোঁকা , প্রতারনা ,সন্ত্রাস বা নৈতিকতা বিরোধী অসৎ পন্থার কোন স্থান নেই। তাই আজকের দুনিয়ায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে নবীর অনুসৃত পদ্ধতির বিকল্প নেই ।

আলহামদুলিল্লাহ্‌ । ভাগিনার কথা শুনে মামা অনেক বেশি চিন্তার খোরাক পেলেন । তিনি অনেক কিছুই চিন্তা করলেন । তাকে ভাবালো ভাগিনার বলা কাফির – মুশরিকদের ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথা ।তিনি প্রচণ্ড রকম আগ্রহী হলেন ইসলামের হাজার –বছরের সোনালি ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য । তিনি অনেক পড়াশুনা করলেন এই নিয়ে।আল্লাহর আদেশ নির্দেশ তিনি আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করলেন। তার নিজ থেকেই নিজ জন্মভূমিতে কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করার প্রচণ্ড ইচ্ছার জন্ম হল। হয়ে গেলেন ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গকৃত একজন বীর মুজাহিদ ।পরের বার থেকে বাড়িতে গেলে এক তার মামার জন্যই ছোট বাচ্চাগুলো আবার সেই যুবকের কাছে ছুটে আসা শুরু করল ইসলামের বীর মুজাহিদদের গল্প ,ইসলামের জন্য প্রান উৎসর্গকৃত শহীদদের গল্প , ইসলামের সোনালি ইতিহাস শোনার জন্য । বাড়ির মোটামুটি সবাই তার থেকে উপকৃত হল। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের সোনালি ইতিহাস এবং আমাদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার তৌফিক দিন ।আল্লাহ আমাদের এক একজন কে ইসলামের জন্য প্রান উৎসর্গকৃত বীর মুজাহিদ বানিয়ে দিন ।

বিষয়: রাজনীতি

১০১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File