"জাতীয়তাবাদের University Version"-
লিখেছেন লিখেছেন ফারাবী সোহান ০২ জুন, ২০১৪, ১০:৫৭:০৬ সকাল
একটা ইউনিভার্সিটি সাধারণত গঠিত হয় কয়েকটা Faculty নিয়ে।আবার এক একটা Faculty গঠিত হয় কয়েকটা Department নিয়ে।আবার একটা Department গঠিত হয় কয়েকটা Batch নিয়ে।আবার কিছু কিছু অত্যাধিক ছাত্র-ছাত্রী সম্পন্ন Batch গঠিত হয় কয়েকটা Section নিয়ে।সাধারণত একটা ইউনিভার্সিটির গঠনটা এইরকম ই হয়।আবার অনেক ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসভিত্তিক ভিন্নতাও থেকে থাকে
এর মধ্যে প্রথমে একজন ছাত্রের সাধারণত তার ব্যাচের ছেলেদের সাথেই ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে।তারপর আস্তে আস্তে এক ডিপার্টমেন্টের ছোট-বড় ভাইদের সাথে তারপর আস্তে আস্তে অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের ছেলেদের সাথে এবং সব শেষে অন্যান্য ফ্যাকাল্টির ছেলেদের সাথে।কারো কারো ক্ষেত্রে অবশ্য পু্র্ব পরিচিত কেউ থাকলে ভিন্ন কথা অথবা কারো কারো ক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটাই Exceptional হয়ে ওঠে।
তো যাই হোক এই পিরামিডীয় গঠন প্রণালীর একেবারে শী্র্ষবিন্দু থেকেই কথাটা শুরু করি।ধরা যাক একটা বড় ব্যাচে কয়েকটা সেকশান আছে।তার মধ্যে যে কোনো ২টি সেকশানের মাঝে ঝামেলা হলো।হয়তোবা একজনের সাথে আরেকজনের অথবা একাধিকের সাথে একাধিকের ঝামেলা হলো।ধরা যাক সেকশান ২টো X,Y। তখন দেখা যায় যে যারা X সেকশানের তারা সবাই অটোমেটিক X সেকশানের ছেলেটির পক্ষ টানছে এবং Y সেকশানের সবাই Y সেকশানের ছেলেটির পক্ষ টানছে।অথচ খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে এদের অধিকাংশই আসলে জানেনা দোষটা আদৌ কার কিংবা দোষ দুজনের থাকলেও কার দিকে দোষের পাল্লাটা ভারী অথবা ঘটনার মূল সুত্রপাত।এর কারণ হলো অন্ধ জাতীয়তাবাদ যেটা মানুষকে কখনো কর্মের পরিচয়ে বিভক্তি কিংবা এক করেনা,কোনো একটা জাতী,গোষ্ঠী,কিংবা গোত্র কিংবা দলের উপর ভিত্তি করে বিভক্তি বা এক করে।দেখা গেলো উপরের ঘটনাটিতে যদি পুরো দোষটি Y সেকশানের কারো হয় তাহলেও Y সেকশানের সবাই ই Y সেকশানের পক্ষ থেকে X সেকশানের বিপক্ষে যাবে কারণ ভুল করা ওই ছেলেটাই তো আবার তাদের নাকি ভাই-ব্রাদার।অথচ নির্দোষীতার বিচারে সবাইকে বাছ-বিচার করে কাহিনীর সত্যতয়া জেনে X সেকশানের ছেলেটার পক্ষেই যাওয়া উচিৎ ছিলো।কিন্তু সেকশানপ্রীতির কারণে নিজের বিবেককে বিসর্জন দিয়ে হলেও সেকশানের পক্ষেই থাকা লাগবে।কিন্তু সে জানেনা তার এই নীতিই কোনো একদিন তার জন্য কাল হয়ে দারাতে পারে।
এবার ধরি উপরোক্ত আলোচিত ব্যাচটি কোনো ডিপার্টমেন্টের Nth ব্যাচ। (N±2)th ব্যাচটির এক বা একাধিকের সাথে Nth ব্যাচটির এক বা একাধিকের কারো ঝামেলা হলো।তখন কিন্তু সেই অদ্ভুত জাতীয়তাবাদের ভুতুড়ে ছোয়ায় Nth ব্যাচটির সব সেকশান মিলে এক হয়ে গিয়ে (N±2)th ব্যাচের বিরুদ্ধে চলে গেলো।অথচ কার ভুল কি ভুল বা কে সঠিক অধিকাংশই তা বাছ-বিচার করলনা কিংবা যারা বাছ-বিছার সামহাও করতে পেরেছে তারাও এবার সেকশানবাদ থেকে বের হয়ে এসে ব্যাচবাদী হয়ে উঠলো!কারণ শত হলেওতো এবার তো পুরো ব্যাচটা তাদের সকলেরই তাই না !অথচ উপরের কাহিনীটাতেই যদি গোটা ব্যচটা এক হয়ে যেতো তাহলে কি আর অনর্থক কলহ কিংবা ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি হতো।উলটো দোষী ছেলেটি ই তার প্রাপ্য বিচারটি পেতো।
একইভাবে যদি উপরের উল্লেখিতো গোটা ডিপার্টমেন্টের সাথে অন্য কোনো ডিপার্টমেন্টের কারো ঝামেলা হয় তখন Nth & (N±2)th ব্যাচটি তাদের বিভেদ ভুলে গিয়ে অপর ডিপার্টমেন্টের বিপক্ষেই অবস্থান নেবে যদিও দোষটা তার নিজের ডিপার্টমেন্টেরই কারো হয়ে থাকে।একইভাবে ফ্যাকাল্টির ক্ষেত্রেও এই উদাহরণ হতে পারে কিংবা একই ইউনিভার্সিটির এক ক্যাম্পাস টু আরেক ক্যাম্পাস কিংবা ভিন্ন ২টি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের মধ্যে।অথচ যখন এক সেকশানের সাথে অন্য সেকশান ঝামেলা করে তখন মনে থাকেনা যে আমরা তো এক ব্যাচেরই ছাত্র কিংবা এক ই ডিপার্টমেন্টের ছাত্র কিংবা একই ফ্যকাল্টির ছাত্র।একইভাবে যখন দুই ডিপার্টমেন্টের মধ্যে ঝামেলা হয় তখন মনে থাকেনা একই ইউনিভার্সিটির ছাত্র! ইহাই হলো ফ্রড জাতীয়তাবাদের ঝুলানো মুলা!
আসলে জাতীয়তাবাদটাই এইরকম একটা ফ্রড নিতী যা আমাদেরকে দিনে দিনে ইসলামবিমুখ করে ফেলে বাছ-বিচারের জ্ঞানের হ্রাসের মাধ্যমে।আজকে যার বিপক্ষে, কাল স্বার্থ হাসিলের জন্য তার পক্ষে কিংবা জাতীয়তাবাদ ফলো করতে গিয়ে কোনোকোনো সময় দোষীর সমর্থন যোগাতে হয় যা টোটালি ইসলাম বিরুদ্ধ প্রথা।আসলে মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য কোনোদিনও কোনো গোত্রভিত্তিক হতে পারেনা বরং মুসলিমদের মাঝে ঐক্য হতে লাগবে ইসলামের উপর ভিত্তি এবং কাউকে ভাই ব্রাদার ভাবলে আল্লাহ সুবহানওয়া তা’আলার জন্যই ভাবতে হবে কিংবা ঘৃণা করতে হলে আল্লাহ সুবহানওয়া তা’আলার জন্যই করতে হবে।সেকশান,ব্যাচ,ডিপার্টমেন্ট,ফ্যাকাল্টি এসব ভিত্তি করে কখনো এক হওয়া যাবেনা। এক হওয়ার ভিত্তি হতে হবে আল্লাহ সুবহানওয়া তা’আলার উপর ভালোবাসা এবং রাসুল(সাঃ) এর নির্দেশ।
পরিশেষে কোরআনের একটি আয়াত দিয়ে শেষ করতে চাই………
আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমুহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার।
[সূরা আল-ইমরানঃ১০৩]
আল্লাহ সুবহানওয়া তা’আলা আমাদের সকলকে বুঝবার তৌফিক দান করুক।
বিষয়: বিবিধ
১২৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন