অধমদের উদ্দেশ্য পাঠানো এক নির্যাতিতা বোন ডঃ আফিয়া সিদ্দিকীর হৃদয় বিদারক চিটি যাকে নির্যাতন করে একটি কিডনি পর্যন্ত বের করে ফেলা হয়েছিলো

লিখেছেন লিখেছেন আবাবিল পাখি ০৪ আগস্ট, ২০১৩, ১২:৫৫:৩৩ দুপুর



(ডঃ আফিয়া সিদ্দিকী সম্পর্কে যারা জানেননা তারা এটা পড়ে কিছু জানতে পারবেন)

চিটিটি পড়ার আগে ডঃ আফিয়া সিদ্দিকী সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া যাক। ডঃ আফিয়া সিদ্দিকী, তিন সন্তানের জননী। অসাধারাণ বিদূষী, মেধা ও প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন। নিউরো সায়েন্সের মত অত্যন্ত কঠিন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন (বিএস) করেছেন Massachusetts Institute of Technology (USA) থেকে, পিএইচডি করেছেন Brandeis University, USA থেকে। তার সময়ে নিউরো সায়েন্সে পৃথিবীর একমাত্র পিএইচডি হোল্ডার ছিলেন। । তা ছাড়া একাধারে ছিলেন কুরআনে হাফেজা, আলিমা, দ্বীনের একনিষ্ট প্রচারক। তিনি প্রায় ১৪৪টি সার্টিফিকেট অর্জন করেছিলেন।

২০০৩ সালে আমেরিকান কুলাঙ্গার সেনা হত্যার মিথ্যা অভিযোগে বেজন্মা পারভেজ মোশাররফের মুরতাদ সেনাদের সহায়তায় FBI তার নিজ দেশ পাকিস্থান থেকে তাকে গ্রেফতার করে আফগানিস্তানের কুখ্যাত বাগরাম জেলে বন্দী করে। এই জেলে হায়েনারা আলাদা সেলে না রেখে তাকে পুরুষ বন্দীদের সাথে উলঙ্গ রাখতো, তার জন্য ছিলনা আলাদা বাথরুম এবং অন্যান্য সুবিধা। সেখানে তার উপর চলত অমানুষিক নির্যাতন। নরপশুরা দিনে তাকে চার-পাঁচবার ধর্ষণ করতো। তাকে বলা হতো যদি কুরআনের উপর দিয়ে হেটে যাও তবে পরনের কাপড় দেয়া হবে (নাউযুবিল্লাহ)। এতটাই নির্যাতন করা হয় যে তার একটি কিডনি বের হয়ে যায়। তার উপর নির্যাতনের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে পাশের সেলের বন্দীরা সহ্য করতে না পেরে নির্যাতন কমানোর জন্য অনশন করেছিলেন। এত নির্যাতনের পরও ২০১০ সালে আমেরিকান কুখ্যাত আদালত চরম একপেশেভাবে তাকে ৮৬ বছরের জেল দেয়।

বিচারের সময় জজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন

‘আপনি তাদের কে ক্ষমতা দিয়েছেন আমাকে রেপ করার, আমাকে উলঙ্গ করে সার্চ করার। আমি তো সেদিন ই মরে গিয়েছি যেদিন আমাকে প্রথম ধর্ষন করা হয়েছিলো এবং উলঙ্গ করে সার্চ করা হয়েছিলো। আমাকে ছেড়ে দিন আমাকে আমার দেশে যেতে দিন।’

জেল থেকে পাঠানো তার চিটি

“হে আমার ঘুমিয়ে থাকা মৃত জাতি”

আমি Massachusetts Institute of Technology (USA) থেকে উচ্চ শিক্ষা প্রাপ্ত তিন সন্তানের জননী ডঃ আফিয়া সিদ্দিকী এবং উদ্দেশ্য ছিলো আমার অর্জিত উচ্চ শিক্ষা দিয়ে আমার জাতিকে সাহায্য করবো।

আমি আমার মুসলিম নামধারী ভাইদের মাধ্যমে অপহৃত হয়েছিলাম এবং আমাকে আমেরিকার কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। এরপর তারা আমাকে বাগরাম ঘাটিতে নিয়ে ৬৫০ নম্বর কয়েদি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এবং সেখানে আমাকে বারবার অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হয়। মুসলিম দেশ আফগানিস্তানের কারাগারে আমার বন্দি জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত কাটে আমারই মুসলিম ভাই মুহাম্মদ বিন কাসিমের কথা স্মরণ করে।

আমি সারা বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ মুসলিম জাতিরই এক নির্যাতিতা বোন। আমি হচ্ছি সেই মুসলিম জাতিরই বোন যে জাতি ঐতিহাসিকভাবে তার জন্মের শুরু থেকেই তার ভাই-বোনদেরকে বিপদ থেকে বাঁচানো এবং শত্রুর কবল থেকে রক্ষার জন্য বিখ্যাত। বিশ্ব বিখ্যাত মুসলিম শাসক হযরত উমর (রাঃ) বলেছেন, “ ফোরাত নদীর তীরে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মরে, আমি উমর শেষ বিচারের দিন আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবো।”

জালিমের কারাগারে আমাকে এমন নির্যাতন করা হয়েছে যে, আমি এখন নিজে নিজে হাটতে পারিনা, আমার একটি কিডনি বের করে ফেলা হয়েছে, বুলেট দিয়ে আমার বুক ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে; এত কিছুর পরও তারা আমাকে কোনো চিকিৎসা করায়নি, দেয়নি কোনো ধরণের আইনি সাহায্য এবং এতটাই নির্যাতন করা হয়েছে আমি নিশ্চিত নই, আদৌ বাঁচবো কি বাঁচবোনা।

আমি যে তোমাদেরই এক বোন সে পরিচয় মুছে ফেলতে চাই। আমি একজন গর্বিত মুসলিম, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর একজন অনুসারী, হযরত আবু বকর (রাঃ),হযরত উমর (রাঃ),হযরত উসমান (রাঃ),হযরত আলী (রাঃ), তাদের সঙ্গী-সাথী এবং তাদেরকে অনুসরণকারী সত্যান্বেষীদের কন্যা। আমি তোমাদের বোন হতে চাইনা। সেই সত্যান্বেষীরাই আমাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে, আমি এক আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী তোমাদের মত মুসলিম নামধারী ভাইদের জন্য নয়।

যে পাকিস্থানের ৬লক্ষ মুসলিম নামধারী সেনাবাহিনী, এসএসজি নামক বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনী তারই মুসলিম নির্যাতিতা বোনকে বাঁচাতে ব্যর্থ, আমি সেখানে একজন পাকিস্তানী হিসেবে পরিচয় দিতে চাইনা, তারা আমাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো কিন্তু যখন সাহায্যের প্রয়োজন তখন এগিয়ে আসেনি। আমার তথাকথিত মুসলিম ভাইদের আছে লক্ষ লক্ষ সেনা, অজস্র গোলা-বারুদ, ট্যাংক, স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, যুদ্ব বিমান, ডুবোজাহাজ; আর এত কিছু থাকা সত্বেও তারা আমাকে হায়েনাদের নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ।

আমার সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারনি বলে চিন্তার কোনো কারণ নেই এজন্য যে, এর জন্য তোমাদেরকে কাল কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে কারণ তোমরা ইসলামে আমার ভাই হওয়ার মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছো। তুমি হতে পার আরবি, ইরানি, ফিলিস্তিনি, আফ্রিকান, মালয়েশিয়ান, ইন্দোনেশীয়ান, দক্ষিণ এশিয়ান কিন্তু তুমি মুসলিম নও।

আমার বলা কথা গুলোর কারণে যদি তোমরা আঘাত পেয়ে থাকো তবে আমি দুঃখিত কিন্তু তোমরা চিন্তাই করতে পারবেনা, আমি কি পরিমাণ আঘাতপ্রাপ্ত।

-এক নির্যাতিতা আফিয়া সিদ্দিকী।

আমারিকান প্রিজন সেলে ৮৬ বছরের সাজা ভোগের সময় তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং কারাগারে ধর্ষণের মাধ্যমে তাকে প্রেগন্যান্ট করা হয়। তার তিন সন্তানের মধ্যে ছোট দুই সন্তানকে মেরে ফেলা হয় এবং ১১ বছরের বড় ছেলেকে মুক্তি দেয়া হয় যাকে তার মায়ের সাথে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। বেশীর সূত্রে জানা গেছে তিনি পরলোকগমণ করেছেন। হে আল্লাহ তুমি বোন আফিয়াকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করো। হে বোন তুমি আমাদের মত অধমদের ক্ষমা করে দিয়ো।

বিষয়: বিবিধ

২৯৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File