মাছ ও মানুষ
লিখেছেন লিখেছেন ডাঃ হাবিবুর রহমান ২৫ আগস্ট, ২০১৩, ০১:২৬:০৪ দুপুর
পানির তলদেশে বসবাস করে অনেক ধরনের মাছ । সেসব মাছের মধ্যে একটা বড় বুদ্ধিসম্পন্ন মাছ ছিল। যে সমস্ত মাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সঠিক জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন ছিল। এবং সে কখনো মিথ্যা কথা বলতোনা, কখনো কারো উপকার ছাড়া অপকার করতোনা। সে নিজের জন্য যা ভালো মনে করতো অপরের জন্যও তা পছন্দ করতো। সেই মাছটি দেখতে পেলো পানির বহির্দেশ থেকে লোভনীয় কিছু খাবার আসে যা দেখতে সুন্দর, স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। দেখলেই জিভে জল আসে (তেতুলের মত)। কিন্তু ঐ জ্ঞানী মাছটি প্রত্যক্ষ করলো এই লোভনীয় খাবারটি যারাই খায় তারাই হারিয়ে যায়, ধ্বংস হয়ে যায়। জ্ঞানী মাছটি আরো প্রত্যক্ষ করলো ঐ লোভনীয় খাবারের ভিতরে আছে কাটা যা মাছের মুখ ও পেটের অভ্যন্তরে আটকে যায় ও মুহুর্তের মধ্যেই ঐ মাছটি আমাদের জগৎ থেকে হারিয়ে যায়। জ্ঞানী মাছটি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লো তার স্ব-জাতীদের এমন বিলীন হয়ে যাওয়া দেখে। এবং সে এটাও বুঝতে পারলো এভাবে চলতে থাকলে কোন এক সময় তার স্ব-জাতীর সকলেই বিলীন হয়ে যাবে এই লোভের বশে। এ বিষয়টি তাকে ভাবিয়ে তুললো ভিষণভাবে।
.
কিন্তু জ্ঞানী মাছটি জানতো, এটা কেন হয়? কিভাবে হয়? হারিয়ে যাওয়া মাছগুলি কোথায় যায়? সেখানে গিয়ে তাদের শেষ পরিনতি কি হয়? এই বিশেষ জ্ঞান আল্লাহপাক তাকে দান করেছিলেন। জ্ঞানী মাছটি তার স্ব-জাতীকে রক্ষার জন্য এক এক এলাকায় গিয়ে সে এলাকার মাছগুলিকে ডেকে এই ঘটনাগুলো বর্ণনা করে সতর্ক করতে থাকে।
.
তার সতর্কবাণী গুলি নিম্নরুপ ছিলঃ
হে আমার প্রিয় স্ব-জাতী মাছেরা তোমরা লোভে পড়না। লোভের বশবতী হয়ে আমাদের বহির্দেশ থেকে আগত ঐ লোভনীয় খাবারগুলি খেয়োনা। ওগুলো খেলে তোমরা মারা যাবে। তখন সবাই প্রশ্ন করলো কেন? তখন জ্ঞানী মাছটি বললো দেখো এটা প্রকৃতপক্ষে কোন খাবার নয়, এটা লোভনীয় খাবারের আড়ালে আমাদের মৃত্যু-ফাদ। মাছগুলি ভাবলো এটা ঐ বড় ও বুদ্ধিসম্পন্ন মাছের একটা ফন্দি। আমাদেরকে ঐ সু-স্বাদু খাবার থেকে বিরত রেখে নিজে সব গ্রাস করার কৌশল। তখন তারা অবিশ্বাস করলো ও বললো এটা আমরা বিশ্বাস করিনা। এটা তোমার একা খাওয়ার ষঢ়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু না। আমাদেরকে তুমি ধোকা দিতে পারবেনা। জ্ঞানী মাছটি আরো বেশী চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো স্ব-জাতীর পরিত্রানের ভাবনায়। তখন সে বললো আমি তোমাদের ব্যাপরটি খুলে বলছি তাহলে তোমরা নিশ্চয় বুঝবে।
.
বললো শোন তোমরা যে খাবার দেখছো সেটা একটা ফাদ। আমাদের বহির্দেশ থেকে এক যুবক লোভনীয় খাবারের মোড়কে এফাদ পেতেছে আমাদেরকে ধরার জন্য। তোমরা যদি ঐফাদে ধরা দাও অর্থাৎ ঐখাবার গিলে ফেলো তাহলে ঐ যুবক তার বড়ষি টান দেবে আর তোমরা ধরা পড়ে যাবে তার ফাদে। তখন সে তোমাদেরকে আমাদের এই জগতের বাইরে অন্য এক জগতে নিয়ে যাবে। যেখানে আছে প্রখড় সূর্যের আলো ও তাপ, বিষাক্ত বাতাস, ধুলা-বালি আরো কত কি, যা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। এবং সেখানে আমরা বেশীক্ষণ বাচতে পারিনা। অল্পসময়ের মধ্যেই আমাদের মৃত্যু হয়ে যায়। সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরো ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক কষ্ট।
.
যেমন ঐজগতে যাবার পর যুবক আমাদেরকে নিয়ে যাবে তাদের বাড়িতে সেখানে আছে তার স্ত্রী/মা। তারা ছাই ও ধারালো বটি নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে আমাদেরকে কাটাকাটি করার জন্য। প্রথমে তারা আমাদের সর্ব শরীরে ছাই মাখাবে যা বেশ যন্ত্রনাদায়ক। এই ছাই যখন আমাদের শরীরে মাখানো হয় তখন আমাদের শরীরের তৈলাক্ত/পিচ্ছিলতা আর থাকেনা। এরপর তারা চেছে চেছে আমাদের শরীরের চামড়া তুলে ফেলে, কি ভয়ংকর একবার ভেবে দেখুন। শুধু তাই নয় তারপর তারা আমাদের শরীরকে ইচ্ছামত কেটে টুকরা টুকরা করে। এখানেই শেষ নয়, তারপর আবার আমাদের রাজ্যের পনির মধ্যে দিয়ে আমাদেরকে ইচ্ছামত হাত দ্বারা মর্দন করতে থাকে। এরপর আমাদের শরীরে মিশায় লবন, ঝাল আরো বিভিন্ন ধরনের উপকরন যা আমাদের জন্য সত্যিই এক মহা যন্ত্রণাদায়ক। এখানেই শেষ নয়, এরপর সেখানে আছে চুলা ভর্তি আগুন, তার উপর আমাদেরকে একটা পাত্রে ফুটন্ত তেলের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হবে, তখন আমাদের শরীরের উপরিভাগ পুড়ে বিভিন্ন রং ধারন করবে এবং হাড়-মাংস ঝলসে যাবে। এরপর আমাদের রাজ্যের পানি ও অন্যান্য উপকরন মিশিয়ে আরো ফুটাতে থাকবে, একসময় আমাদের হাড়-মাংস গলে নরম হয়ে যাবে, তখন আমাদেরকে চুলা থেকে নামানো হবে। যা কিনা মহা মারাত্বক যন্ত্রণাদায়ক কষ্ঠ। ভাবলেই আমার গা শিউরে উঠে। এখানেই শেষ নয়, এরপার ঐমানুষগুলো আমাদেরকে তাদের হাত দ্বারা ছিন্ন-ভিন্ন করে তাদের লোহার মত শক্ত দাত দিয়ে চিবিয়ে পিষে গিলে খেয়ে ফেলবে। খেয়ে ফেলার পর যেখানে পাঠাবে সেখানে এক অন্ধকার জগত, সেখানে আছে উত্তাপ ও নানা ধরনের এসিড যা আমাদের অস্তিত্বকে অন্যান্য পদার্থের সাথে মিলিয়ে একাকার করে ফেলবে এবং যেটা হবে অত্যন্ত দুর্গন্ধময়। যা দেখলে ঐমানুষগুলিই ঘৃণা করে। তাহলে এবার আপনারাই ভেবে দেখুন আপনারা কি করবেন?
.
জ্ঞানী মাছটির বর্ণনা শুনে অনেকে প্রতিজ্ঞা করলো ঐখাবার যত লোভনীয় হোক তা খাবনা। আবার কিছু বোকা মাছ তা বিশ্বাস করলোনা। তারা ভাবলো একবার খেয়েই দেখি কি হয়। এবং তারা কেউ কেউ সেই ফাদে পা-বাড়ালো এবং জ্ঞানী মাছটির বর্ণনা মোতাবেক সবই ঘটতে থাকলো তাদের জীবনে। কিন্তু তখন আর তাদের শুধরাবার সময় নেই।
.
ঠিক একই ভাবে মানুষের মাঝেও আল্লাহপাক সতর্ককারী রুপে নবী-রসুল পাঠিয়েছেন, মানুষদেরকে সতর্ক করার জন্য। যেসব মানুষ নবী-রসুলদের বর্ণিত সতর্কবাণীতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সে-মোতাবেক জীবন পরিচালনা করেছে তারা নিরাপদ হয়ে গেছে। শান্তিতে আছে। আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে নাই তারা ঠিকই ঐসব বোকা মাছের মত জীবন পেয়েছে, হয়ে গেছে অনিরাপদ আর তাদের জন্য রয়েছে মহা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। কিন্তু তখন আর তাদের ফেরার কোন পথই খোলা নাই।
[তাই সময় থাকেতেই আমাদের সংশোধন হতে হবে। রসুলের (সাঃ) দেখানো পথে জীবনকে পরিচালনা করতে হবে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।]
বিষয়: বিবিধ
৩৫১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন