ঘুম থেকে ভোরে উঠবেন কেন?
লিখেছেন লিখেছেন ডাঃ হাবিবুর রহমান ২৮ মে, ২০১৩, ০১:৪৯:৩৯ দুপুর
আপনি কি জীবনে অভাবনীয় সাফল্য পেতে চান? আপনি কি প্রতিযোগীতায় অন্যকে ছাড়িয়ে যেতে চান? আপনি কি সারাদিন কর্মদ্দিপনা নিয়ে থাকতে চান? আপনি কি আপনার কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতা বাড়াতে চান?
এইসব প্রশ্নের উত্তর যদি ‘হ্যা’ হয় এবং আপনি যদি চিন্তা করেন কিভাবে এগুলো অর্জন করবেন আপনার জীবনে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠতে হবে। ভোর ৪ টা হল ঘুম থেকে উঠার আদর্শ সময়। ভোরে ঘুম থেকে উঠার অনেক সুবিধা আছে। এটা শুধু আপনার শারীরিক উপকারই নয় মানসিক প্রফল্লতা আনায়ন করে। এই একটি ভাল অভ্যাসই আপনার জীবনকে উন্নত ও আনন্দময় করে তুলতে পারে। সবটুকু পড়ন আর খুজে বের করুন আপনার জীবন।
আমি নিশ্চিত যে, আপনি চেষ্টা করবেন আপনার এলার্ম ঘড়ি বা মোবাইলে এলার্ম দিয়ে ঘুম থেকে উঠার জন্য। কিন্তু দেখা যাবে আপনি তন্দ্রার মধ্যে এলার্ম বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন। অথবা উঠলেও আপনার ঘুম ঘুম ভাব যাচ্ছেনা। কারন আপনি আপনার ঘুমাতে যাবার আগেন নিয়ম বদলাননি একটুও। আপনি হয়তো অধিক রাত্রে ঘুমাতে গিয়েছেন। একটা প্রবাদ আছে “তাড়াতাড়ি বিছানায় যাওয়া তাড়াতাড়ি ঘুম থেকো উঠা, একজন মানুষকে স্বাস্থ্যবান, সুখি ও সম্পদশালী করে। অর্থাৎ আপনাকে রাত ১০ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পরতে হবে।
ফজরে ঘুম থেকে উঠার সুবিধা সমূহঃ
১। আপনি ফজরের নামাজ জামাতের সহিত পড়তে পারবেন ।
উপকারিতাঃ
আপনার একটি ফরজ আদায় হয়ে যাবে।
মস্তবড় গোনাহ থেকে বেচে যাবেন।
অনেক নেকি পাবেন। জান্নাতের পথ সুগম হবে।
সারাদিন আল্লাহর জিম্মায় থাকবেন।
মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। ঈমানের ঝান্ডা হাতে থাকবে।
শরীর ও মন ভাল থাকবে।
মহল্লার অনেকের সাথে দেখা হবে, কুশল বিনিময় হবে, সামাজিক সম্পর্ক ভালো থাকবে।
মহল্লায় আপনার সম্পর্কে লোকজনের পজিটিভ ধারণা তৈরী হবে।
২। ব্যায়াম করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবেন।
৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা ব্যায়াম করুন আপনার প্রয়োজন মতো। যে কোনভাবে আপনি ব্যায়াম করতে পারেন - খালি হাতে, ইনষ্ট্রুমেন্ট দিয়ে, জিমে গিয়ে বা জগিং করে।
উপকারিতাঃ
প্রতিদিনের ব্যায়াম আপনাকে দেবে বাড়তি শক্তি ও উদ্যম।
আপনার শরীর ও মন ফ্রেশ থাকবে।
আপনার ফিগার হবে আকর্ষনীয় সুন্দর।
বাড়বে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফলে আপনি থাকবেন নিরোগ ও সুস্থ্য।
হৃদ-রোগের ঝুকি থাকবে না।
ডায়াবেটিসের ঝুকি হ্রাস পাবে।
৩। সারাদিনের কর্ম-পরিকল্পনা করে নিতে পারবেন।
প্রত্যুষ্যে ঘুম থেকে উঠার কারণে আপনি, আপনার সারাদিনের কর্ম-পরিকল্পনা করে নেবার পর্যাপ্ত সময় পাবেন। আর পরিকল্পিত জীবন হয় সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দময়। আর জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা এক অপরিহার্য বিষয়। সারাদিনের কর্ম তালিকা একটা কাগজে লিখে নিলে খুবই ভাল হয়।
উপকারিতাঃ
লক্ষ্যে স্থির থেকে লক্ষ্যে পৌছানো সহজ হয়।
জীবনে শৃঙ্খলা আশে।
সব কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায়।
সময় ও অর্থের সাশ্রয় হয়।
বাড়তি সময় প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করা যায়।
৪। আত্ম-সম্মোহন - মনে মনে চিন্তা করুন যে আপনি পারবেন।
দিনের কর্ম-পরিকল্পনা শেষে চোখ বন্ধ করুন ও মনে মনে ভাবুন আজকে যে দিনের শুরু হচ্ছে সেটা, আমার জীবনের সেরা দিন। আরো চিন্তা করুন আপনি, আপনার কাজগুলো একর পর এক সফলভাবে সম্পন্ন করছেন। এটা আপনার মনকে করবে শক্তিশালী, বাড়বে আপনার কর্ম উদ্দিপনা ও আত্ম-বিশ্বাস।
৫। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য অবলোকন।
আপনি ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায়ের পর দেখবেন চারিদিকে এক øিগ্ধ নিরবতা, তার মাঝে পাখির সুরেলা মুর্ছনা, প্রকৃতির মাঝে বিভিন্ন ফুল ফুটে আছে অপার সৌন্দর্য নিয়ে। যা আপনাকে বিমোহিত করবে। আপনাকে আবেগ আপ্লুত করবে। আপনি পাবেন এক অনাবিল শান্তির অনুভুতি।
৬। আপনি সকালের নাস্তা খাবার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবেন।
আপনি যখন ঘুম থেকে দেরি করে উঠেন তখন ব্যাস্ততার কারনে অনেক সময় নাস্তা না খেয়েই অফিসে চলে যান। আর রাস্তার হোটেল বা ফাস্ট ফুডের দোকান থেকে কিনে খান কোন অস্বাস্থ্যকর (জাংক) ফুড, যা আপনার শরীরের জন্য মোটেও ভাল না। কিন্তু আপনি যদি ভোরে ঘুম থেকে উঠেন, তাহলে আপনি পাচ্ছেন পর্যাপ্ত সময় নাস্তা করার, আর বাসার তৈরী খাবার মানেই স্বাস্থ্যকর খাবার। অর্থও বাচে স্বাস্থ্যও ভাল থাকে।
৭। কর্মক্ষেত্রে যাবার প্রস্তুতিতে তাড়াহুড়া থাকবেনা।
আপনি ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায়ের পর প্রাত্যহিক অন্যান্য কাজ সেরেও পর্যাপ্ত সময় পাবেন কর্মক্ষেত্রে যাবার প্রস্তুতি নিতে। যার কারনে কোন কিছু ভুলে ফেলে যাবার সম্ভাবনা খুবই কম।
৮। প্রতিদিন পর্যাপ্ত অবসর সময় পাবেন।
আপনি আগে ঘুম থেকে উঠার কারনে সকালেই অনেকগুলো কাজ সেড়ে ফেলেছেন ইতিমধ্যে। আপনি কর্মক্ষেত্রে পৌছাতে পারবেন সময়মত, আপনাকে পরতে হবেনা ট্রাফিক জ্যামে। আপনার কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন হয়ে যাবে অন্যদিনের চেয়ে আগে, কারন আপনার দিনটি শুরু হয়েছে সুন্দরভাবে তাই নেই কোন বাড়তি চাপ। যার কারনে আপনি পাবের বাড়তি অনেক সময় যা আপনার পার্সোনাল কাজে ব্যায় করতে পারবেন, পারবেন আগে আগে বাসায় ফিরতে, তারাতারি ঘুমাতে।
৯। তৈরী হবে আপনার পজিটিভ মনোভাব।
আপনি যখন আপনার সব কাজ সুন্দর ভাবে, সাফল্যের সহিত সম্পন্ন করতে থাকবেন, তখন আপনার মধ্যে তৈরী হবে পজিটিভ মনোভাব। আপনি মানসিকভাবে হবেন উজ্জিবীত তখন আপনার লক্ষ্যে পৌছানো আর অসম্ভব মনে হবেনা।
১০। পাবেন একটি সুখ শান্তিতে ভরপুর পারিবারিক জীবন।
আপনি ঘুম থেকে আগে উঠার কারনে পরিবারের সবার সাথে নাস্তা করতে পারবেন, সবার খোজখবর নিতে পারবেন। স্ত্রীকে সময় দিতে পারবেন। ইচ্ছা করলে তার কাজে কর্মে সাহায্য করতে পারবেন আর তাতে পারস্পারিক সম্পর্ক হবে মধুর।
আপনার হয়তো প্রথম কিছুদিন ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হবে। সারাদিন খারাপ লাগতে পারে এটা খুবই সাময়িক, কারন আপনি একটি অভ্যস্ত বিষয়ের পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন। তবে এটা কিছুদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে, আর এটি আপনার দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিনত হয়ে যাবে। এরপরই আপনি পাবেন এক সুন্দর জীবন। যা আপনাকে সত্যিকার অর্থে সুখী করবে।
লেখক ঃ ডাঃ হাবিবুর রহমান
০১৭৭৭৬৪১৫৫৮
লাইফ লাইন হোমিও হল
ক ১৯১/১/এ, ঘাটপার রোড
কুড়িল চৌরাস্তা, ভাটারা, ঢাকা-১২২৯।
বিষয়: বিবিধ
২০৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন