নারীদের চাকরী ও আমাদের সমাজ চিত্র
লিখেছেন লিখেছেন ডাঃ হাবিবুর রহমান ২৬ মে, ২০১৩, ১০:৪৬:২৮ সকাল
আমি এখন গলাবাজী করবো আমাদের সমাজে নারীদের চাকরী করার জন্য আমাদের সামাজিক দুর্ভোগ নিয়ে। এ প্রসঙ্গে হয়তো আমাদের সমাজের সুবিধাভোগীরা আমার সাথে একমত হবেননা, তবে যারা ভুক্তভোগী তারা নিশ্চয় একমত হবেন।
আমাদের দেশে আমরা কি দেখছি, চারিদিকে লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক। বেকারত্ব তাদেরকে আষ্ঠে-পৃষ্ঠে আটকে ধরেছে। এ থেকে যারা মুক্তি পেয়েছে তারা মোটামুটি ভালো আছে আর যারা মুক্তি পায়নি তারা হতাশায় নিমজ্জিত। কেউ কেউ আবার চলে যাচ্ছেন বিপথে। যার কারনে আমাদের সমাজে বেড়ে গিয়েছে ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, চাদাবাজী, চোরাচালান, মাদকাশক্তি ও নানা ধরনের অপরাধ প্রবণতা।
যে কথা বলার জন্য আজকের এই গলাবাজী তা হলো নারীদের চাকরী কি আমাদের সামাজের জন্য সত্যি সত্যি সুফল বয়ে আনছে না কি দুর্ভোগ? আসুন ছোট্ট পরিসরে একটা পর্যালোচন করি।
একজন চাকরীজিবী নারীর ভুমিকা কি আমাদের সমাজে?
প্রথমত, একজন চাকরীজিবী নারী বিয়ে করে আর একজন চাকরীজিবী পুরুষকে। সে কখনোই কোন বেকার যুবককে বিয়ে করেনা। আমি কখনো দেখিনি আপনারা হয়তো দেখে থাকবেন। দেখলেও হয়তো তার পরিমান ১% হবেনা। এবং সেক্ষেত্রে দেখা যায় সে স্বামী বেচারাকে ক্রমাগত প্রেসার করেছে চাকরী বা কোন কাজ জোগার করার জন্য। এক্ষেত্রে যদি এমন হতো প্রতিটি চাকরীজিবী নারী সবাই বেকার যুবককে বিয়ে করে ঘরে রেখে খাওয়াচ্ছেন, তারা ঘরের কাজ ছাড়া আর কোন চাকরী করতে হচ্ছেনা, তাহলে আমার কোন আপত্তি থাকতোনা।
দ্বিতীয়ত, একজন চাকরীজিবী নারী সাধারনত দেখা যায় কোন সংসারের একক দায়ীত্ব নেয়না। সে হয়তো কোন সংসারে পার্টিসিপেট করে তার আয় দিয়ে। এক্ষত্রে ভিন্নতা থাকতে পারে, তবে সে সংখ্যা খুবই কম, হয়তো ৫% হতে পারে।
তৃতীয়ত, একজন চাকরীজিবী নারীর আয় দিয়ে কি হয়? কেনা হয় সংসারের বিলাস দ্রব্য, তার নিজের জন্য ডজন ডজন পেশাক, গহনা, কসমেটিক। আর হয় সন্তানের আবেগ, আবদার পূরণ, ভালো খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
চতুর্থত, একজন চাকরীজিবী নারীর কাছ থেকে বঞ্চিত হয় (অনেকখানি) তার স্বামী-সন্তান, শশুর-শাশুরী, আত্বীয়-স্বজন তাদের ন্যয্য প্রাপ্য থেকে। কারন হিসাবে বলা যায় যে, অফিসের / কাজের কারনে সে এদের সবাইকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারেনা। অফিস শেষে থাকে ক্লান্ত সেটা একটা সমস্যা। সন্তান পায়না আদর-যতœ, ২ বছরের নীচে যারা তাদের অতি প্রয়োজনীয় ও সর্বশ্রেষ্ট খাবার মায়ের ”বুকের দুধ”, প্রয়োজনীয় শিক্ষা (প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বাদে)। মা হচ্ছেন সন্তানের জন্য সর্বশ্রেষ্ট কেয়ারটেকার ও প্রশিক্ষক। এর কোন বিকল্প হতে পারেনা।
পক্ষান্তরে একজন চাকরীজিবী পুরুষের ভুমিকা কি আমাদের সমাজে?
প্রথমত, একজন চাকরীজিবী পুরুষ বিয়ে করে আর একজন বেকার নারীকে। সে অধিকাংশ সময় বিয়ে করে বেকার নারীকে। পুরুষ সবসময় কাধে নেয় একটা বারডেন। এবং সেক্ষেত্রে দেখা যায় সে স্বামী, স্ত্রীকে কখনোই প্রেসার করেনা চাকরী বা কাজ জোগার করার জন্য।
দ্বিতীয়ত, একজন চাকরীজিবী পুরুষ সাধারনত দেখা যায় কোন সংসারের একক দায়ীত্ব নেয়। সেই সাথে নেয় তার বাবা-মা, ভাই-বোনের দায়ীত্ব। সে হয়তো কখনো কখনো স্ত্রীর সহায়তা নেয় তবে সে সংখ্যা খুবই কম, হয়তো ২-৩% হতে পারে।
তৃতীয়ত, একজন চাকরীজিবী পুরুষের আয় দিয়ে কি হয়? কেনা হয় সংসারের অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য (মৌলিক চাহিদা) এবং এগুলোর পরে কেনা হয় বিলাস দ্রব্য।
চতুর্থত, একজন চাকরীজিবী পুরুষের কাছ থেকে বঞ্চিত হয়না (অনেকখানি) তার স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা, বাই-বোন, শশুর-শাশুরী, আত্বীয়-স্বজন তাদের ন্যয্য প্রাপ্য থেকে। কারন হিসাবে বলা যায় যে, অফিসের / কাজর বাইরেও সে এদের সবাইকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারে (স্বদিচ্ছা থাকলে)।
সার্বিক পর্যালোচনাঃ
সর্বপরি আমরা কি দেখতে পাই, যে সংসারে স্মামী-স্ত্রী উভয়ে চাকরী করে সেখানে অশান্তি, ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে)।
পার্সোনালিটি বোধ উভয়কে কুড়ে কুড়ে খায়। একটুতেই হয় মতের অমিল, ভেঙ্গে যায় সংসার নামক মহা প্রতিষ্ঠান। কারন কেউ কারো উপর ডিপেন্ডেন্ট নয়।
চাকরী শেষে রাতে ফেরা দুজনের উভয়েই ক্লান্ত কেউ ভাবেনা কাউকে নিয়ে, নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত সবাই। এরপর যদি হয় একজনের অফিস দিনে এবং অপর জনের রাত্রে তাহলে তো আর কথায় নেই, যা হবার তাই হয়। দেখা নেই কারো সাথে কারো হলেও ক্ষনিক, সপ্তাহ শেষে একদিন, নেই কোন সখ্যতা, কমে যায় বিশ্বাস-ভালাবাসা বাড়ে শুধুই সন্দেহ আর দুরত্ব, ভাঙ্গে সংসার।
উভয়ের ক্ষেত্রেই পরোকীয়া প্রেমে পড়ার সম্ভাবনাতো আছেই। আছে আরো ভয়াবহ কিছু ঘটার। যেমন - গভীর হতাশা, মাদকাশক্তি, বিপদগামীতা, ধর্মীয়-সামাজিক অশ্লিলতা ইত্যাদি ইত্যাদি।
অনেকে হয়তো আমার এ পোষ্টটি পড়ে প্রথমে ভাববেন আমি নারী বিদ্বেশী, গোড়া, সনাতন পন্থি, সেকেলে ধ্যাণ-ধারণার লোক। অনেকে হয়তো বলবেন গার্মেন্টসের লাখ লাখ নারী শ্রমিকের কথা। সেক্ষেত্রেও প্রায় একই অবস্থা বিরাজ করছে কিছু ভিন্নতা ছাড়া। আমি কোন এক সময় গার্মেন্টস এর সাথে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত ছিলাম খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি, তাই অনেক কিছুই দেখেছি জেনেছি। এখানে একজন মহিলা শ্রমিক বিয়ে করে আর একজন চাকরিজিবীকে বা কাজের সাথে সম্পৃক্ত (অর্থাৎ রোজগেরে) এমন ব্যক্তিকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আর একজন শ্রমিককে বিয়ে করে। সে কখনোই কোন বেকার যুবককে বিয়ে করেনা। পক্ষান্তরে দেখা যায় যেসব পুরুষ শ্রমিক আছে তারা অধিকাংশই বিয়ে করে গ্রামের বেকার কোন যুবতীকে।
হ্যা যে কথাটি না বললেই নই সেটা হলো কিছু নারী আছে যাদের কোন উপায় নাই, সংসারে কোন উপার্জনক্ষম পুরুষ নাই, তাতের জন্য চাকরি বা কাজ অত্যন্ত প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে আমার ভাষ্য হলো এদেরকে চাকরি বা কাজ দেযা উচিৎ বিনা শর্তে অগ্রাধিাকার ভিত্তিতে নয় বাধ্যতামূলকভাবে । কিন্তু‘ যেসব নারীদের স্বামী বা গার্ডিয়ান চাকরি করে বা উপার্জনক্ষম তাদের চাকরি করার ক্ষেত্রে আমার কথা আছে। এদেরকে তখনই চাকরি দেওয়া উচিৎ যখন এদেশে কোন বেকার যুবক থাকবেনা অথবা এই শর্তে দেয়া যেতে পারে যে, সে একজন বেকার যুবককে বিয়ে করে তার সমস্ত ভরন-পোষনের দায়িত্ব নিবে। এবং তাকে উপার্জনের জন্য কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করবেনা, করলে তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হবে।
লেখক ঃ ডাঃ হাবিবুর রহমা
০১৭৭৭৬৪১৫৫৮
লাইফ লাইন হোমিও হল
ক ১৯১/১/এ, ঘাটপার রোড
কুড়িল চৌরাস্তা, ভাটারা, ঢাকা - ১২২৯।
বিষয়: বিবিধ
৩০৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন