নারীর ঘরের বাইরে যাবার ইসলামী বিধান
লিখেছেন লিখেছেন ডাঃ হাবিবুর রহমান ২৫ মে, ২০১৩, ০৪:৪১:৫২ বিকাল
ঘর হল নারীদের বিচরণ ক্ষেত্র। তাকে ঘরে থাকতে নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُوْلَى ‘তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান কর। প্রাচীন জাহেলী যুগের নারীদের ন্যায় নিজেদেরকে প্রকাশ করো না’ (সূরা আহযাব ৩৩)।
এর অর্থ এই নয় যে, নারীরা ঘর থেকেবের হ’তে পারবে না, পুরুষকেই তার যাবতীয় প্রয়োজন সেরে দিতে হবে।হিজাবের বিধান নাযিল হওয়ার পর ওমর (রাঃ) সাওদা (রাঃ)-কে বাইরে দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বিষয়টি সাওদা (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে জানান। অতঃপর কিছুদিন পরঅহী নাযিল হয়।
রাসূল (ছাঃ) সাওদা (রাঃ)-কে ডেকে বলেন, إِنَّهُ قَدْ أُذِنَ لَكُنَّ أَنْ تَخْرُجْنَ لِحَاجَتِكُنَّ ‘প্রয়োজনে তোমাদেরকে বাড়ির বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে অনুমতি দেয়া হয়েছে’। [ বুখারী হা/৪৭৯৫ ]
উম্মে আতিইয়াহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সাতটি যুদ্ধেঅংশগ্রহণ করেছি। আমি পুরুষদের পিছনে থাকতাম এবং তাদের জন্য খাদ্য প্রস্ত্তত করতাম। রোগী ও আহতদের সেবা করতাম। [ মুসলিম, হা/১৪৮৩ ‘জিহাদ ও ভ্রমণ’ অধ্যায়]
অন্য হাদীছে এসেছে, জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘আমার খালাম্মা তালাকপ্রাপ্তা হ’লে (ইদ্দতের সময়সীমার মধ্যে) তিনি গাছ থেকে খেজুর কেটে আনতে চাইলেন। কিন্তু জনৈক ব্যক্তি তাকে বাড়ি থেকে বের হ’তে নিষেধ করলেন। তিনি (খালা) রাসূল (ছাঃ)-এরনিকট আসলেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, অবশ্যই তুমি খেজুর কাটতে পার। আর তুমি তো এগুলো দান করবে এবং কল্যাণকর কাজে ব্যবহার করবে।[ মুসলিম, মিশকাত হা/৩৩২৭ ]
উল্লেখিত হাদীছগুলো প্রমাণ করে যে, কোন উপার্জনকারী না থাকলে নারী জীবিকার জন্যও বাইরে যেতে পারে। সুতরাং খুব বেশী প্রয়োজনেও বাহিরে বের না হওয়া এবং সামান্য কিছুতেই ঘন ঘন বাহিরে যাওয়া এই দু’টির মাঝের অবস্থাটি ইসলাম অনুমোদন করে।
ইসলাম নারীকে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন ও প্রচারের কাজে বাইরে বের হ’তে বাধা দেয় না। সে নিরাপদ স্থানে থেকে নারীদের মাঝে দাওয়াত দেবে। তার কাছে অন্য মহিলারা প্রশিক্ষণ নেবে, পরামর্শনেবে এতে কোন বাধা নেই। যেমন মা আয়েশা ও অন্যান্য উম্মাহাতুল মুমিনীনের কাছে নারীরা যাতায়াত করতেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ‘প্রত্যেক মুসলমানের (নর-নারী) জন্য বিদ্যা অর্জন করা ফরয’। [ ইবনে মাজাহ, হা/২২৪ ] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা (রাঃ) বলেন, আনছারী মহিলারা কতই না উত্তম! দ্বীনী জ্ঞান অর্জনে লজ্জা তাদেরকে আটকেরাখতে পারেনি। [ বুখারী, ‘ইলম শিক্ষা করতে লজ্জাবোধ করা’ অধ্যায়, অধ্যায় নং ৫০ ]
তবে নারী যখন বের হবে তখন সে নিজেকে হিজাব দ্বারা আবৃত করে নিবে। আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيْبِهِنَ ّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلاَ يُؤْذَيْنَ- ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনা নারীদেরকে বলুন, তারা যেন নিজেদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদেরউপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না’ (আহযাব ৫৯)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, إِنِِ اتَّقَيْتُنَّ فَلاَ تَخْضَعْنَبِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِيْ فِيْ قَلْبِهِ مَرَضٌ ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে কোমল কণ্ঠে কথা বলো না। নতুবা যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা লোভ করে বসবে’ (আহযাব ৩২)।
বিষয়: বিবিধ
২৩৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন