৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আগে পূর্ব পাকিস্থানের পত্রিকাগুলো সরকার সেন্সর করেই প্রকাশ করতে দিত। সেন্সর করা রিপোর্ট কিভাবে প্রধান ডকুমেন্ট হয়?
লিখেছেন লিখেছেন Deshe ১৬ জুলাই, ২০১৩, ১১:৪৬:২৪ সকাল
গোলাম আযমের যে রায় আমরা গত কাল দেখলাম যে প্রমান গুলো উপর ভিত্তি করে রায়টি দেওয়া হয়েছে তার অন্যতম /একমাত্র ডকুমন্টে হল তৎকালীন অর্থ্যৎ ১৬ ডিসেম্বর ৭১ সালের পূর্বে প্রকাশিত বিভিন্ন বক্তৃতা এবং বিবৃতির কাটিং। অথচ তখন পত্রিকার লেখা গুলো সেন্সর করে প্রকাশিত হত। তৎকালীন পাকিস্থান সরকার সেন্সর করে ঐ লেখাগুলো প্রকাশ করার পর প্রতিবাদ লিপি পাঠালে সেগুলো প্রকাশিত হত না। সেন্সর করা বিষয়টি আরও ভাল করে বললে বলা যায় যে,
তৎকালীন পাকিস্থান সরকার বা পূর্ব পাকিস্থান থেকে প্রকাশিত পত্রিকা গুলোতে প্রকাশিত বিভিন্ন বক্তৃতা- বিবৃতিকে কেউ তিল না বললেও তাল বানিয়ে লিখতে বাধ্য করত । এই ক্ষেত্রে গোলাম আযম সাহেবের ক্ষেত্রেও একই দশা হয়েছে। ওনি যা বলেননি তা লিখতে সংগ্রাম পত্রিকাকে বাধ্য করা হয়েছে। পরবর্তীতে ওনাদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ লিপি পাঠানো হলেও তা প্রকাশ করা হত না। তৎকালীন পাকিস্থান সরকার বা পূর্ব পাকিস্থান সরকারের সেন্সরশীপ জারির কারনে ঐ সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারও সরাসরি কোন শ্লোগান কিংবা পোষ্টার ছাপাতে পারত না।
এই ক্ষেত্রে একটি উদাহরন দিতে পারি তা হল,ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় আমরা যে পোষ্টার দখেতে পাই তার ভাষাটি ঠিক হল ---এই জানোয়ারদেও হত্যা করতে হবে। ঐ পোষ্টারে ইয়াহিয়া খানের ছবি উল্লেখ করা হয় নি,ব্যবহার করা হয়েছে একটি কার্টুন ছবি। আমার প্রশ্ন হল যদি সেন্সর শীপ না থাকত তাহলে কেন ইয়াহিয় খানের ছবি পোষ্টারে দেওয়া হল না। কেন ইয়াহিয়া খানের নাম উল্লেখ করল না বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। উপরে উল্লেখিত পোষ্টারটি দেখুন কতই না সর্তকতা মূলক।
যাতে পাকিস্থানিরা বাংলা এই পোষ্টারের ভাষা বুঝতে পারে। বিজয়ের দ্বার প্রান্তে এসেও পূর্ব-পাকিস্থানিরা (বাংলাদেশীরা) রাষ্ট্র দ্রোহীতার ভয়ে কতই না সেন্সর করে পোষ্টারটি প্রচার করেছে।
যদিও সেন্সর করা হত তারপরও গোলাম আযম সাহেবের এমন একটি বক্তব্য পাওয়া যাবে না যাতে ওনি বলেছেন যে,অমুক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হোক।
সুতারং গোলাম আযম সাহেব এর মত একজন ভাষা সৈনিককে সেন্সর করা পত্রিকা কাটিং এর উপর ভিত্তি করে যে রায়টি দেওয়া হয়েছে তা মোটেও গ্রহন যোগ্য নয়। আর ৫০০ টাকা দিলেই কোর্টে কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বাক্ষী দেওয়ার জন্য কোর্টের বারান্দায় অনেক ভাড়াটিয়া লোক পাওয়া যায়। সেই অবস্থায় ২০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দকৃত এই ক্রাইম ট্রাইব্রনালে এই ধরনের স্বাক্ষী দেওয়ার জন্য লোকের অভাব হবে কিনা? এই প্রশ্নের উত্তর আমি পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম। তাছাড়া এই স্বাক্ষীদের কেউ বলেনি যে, সে নিজেই দেখেছে যে, গোলাম আযম সাহেব কাউকে হত্যা করেছেন বা হত্যায় প্ররোচিত করেছেন। সব ছিলা শুনা স্বাক্ষী। বাংলাদেশে প্রচলিত ফৌজদারী মামলার জন্য প্রযোজ্য স্বাক্ষ্য আইন ১৮৭২ অনুযায়ী এই ধরনের শুনা স্বাক্ষীর কোন আইনগত মূল্য নাই বা এর উপর ভিত্তি করে কাউকে কোন শাস্তিও দেওয়া যায় না।
অন্যদিকে পেপার কাটিং কে আমলে নেওয়া ক্রাইম ট্রাইব্রনালে আইনে নতুন ভাবে সংযোজন করা হয়েছে। স্বাক্ষ্য আইন ১৮৭২ অনুযায়ী এই ধরনের পেপার কাটিং এর তেমন কোন মূল্য না থাবলেও গোলাম আযম সাহেব এর ক্ষেত্রে প্রকৃত পেপার কাটিং কে আমলে নিলেও হত। নেওয়া হয়েছে সেন্সর করা পেপার কাটিং। এই ডকুমেন্টকে প্রাইমারি এভিডেন্স হিসেবে নিলেও আপত্তি থাকত না। নেওয়া হয়েছে সেকেন্ডারী এভিডেন্স হিসেবে। তাও আবার ফাঁসি দেওয়া না দেওয়ার অন্যতম ডকুমেন্ট হিসেবে। অথচ স্বাক্ষ্য আইন ১৮৭২ অনুযায়ী এই ধরনের ডকুমেন্ট এর ভিত্তি করে ন্যুনতম ১/২ বছরের জেল দিতেও জর্জ সাহেবদের অনেক কষ্ট হয়। সেই জায়গায় ফাসি তো অসম্ভব।
অন্যদিকে ধরলাম যে, কারো কথার উপর ভিত্তি করে ফাঁসি দিতে হবে। তা যদি সত্যি হয় তাহলে তো প্রথমেই ফাঁসি হওয়ার কথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কারন তিনি চট্টগ্রামে এক জনসভায় ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের উদ্ধেশে বলেছিলেন যে, একটির বদলে দশটি লাশ ফেলানোর কথা। তার কথার পর দশটি কেন হাজারেরও বেশি লাশ পড়েছে। যার প্রত্যেক্ষ্যদর্শী বাংলাদেশের মানুষ।
বর্তমানে যুদ্ধাপরাধীর কোন বিচার হচ্ছে না। হচ্ছে মানবতাবিরোধীর বিচার । সেই অনুযায়ী বর্তামানে সংঘঠিত অপরাধ গুলো কি মানবতা বিরোধী অপরাধ নয়? বর্তমানে অনুষ্ঠিত বিচারের এই ইতিহাস কাউকেও তো ছাড়বে না বা তা গোপন করা যাবে না।
বিষয়: বিবিধ
১৭৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন