শেখ মুজিবের শাসন ৭২-৭৫

লিখেছেন লিখেছেন অবুঝ চিন্তাশীল ২৫ জুলাই, ২০১৭, ০৬:৪৮:১৩ সন্ধ্যা

আহমদ ছফা (জুন ৩০, ১৯৪৩ - জুলাই ২৮, ২০০১) একজন বাংলাদেশী লেখক, কবি ও সমাজবিজ্ঞানী। তাঁর লেখায় বাংলাদেশী জাতিসত্তার পরিচয় নির্ধারণ প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি ২০০২ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে মরণোত্তর "একুশে পদক" লাভ করেন।জীবদ্দশায় আহমদ ছফা তাঁর প্রথাবিরোধী, নিমোর্হ, অকপট দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য বুদ্ধিজীবি মহলে বিশেষ আলোচিত ছিলেন। তাঁর রচিত ‘মুজিবের শাসন ও একজন লেখকের অনুভব ‘ গ্রন্থসমুহ থেকে সংগ্রহীত ও পরিমার্জিত নিচের লেখাটিঃ

পত্রিকায় প্রকাশিত তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের শাসনামলঃ

বিস্তারিত উল্লেখ না করে শুধু শিরোনামগুলি দিলাম

দৈনিক ইত্তেফাকের কিছু খবরের শিরোনাম ছিলঃ

“ঝিনাইদহে এক সপ্তাহে আটটি গুপ্তহত্যা”(০১/০৭/৭৩);

“ঢাকা-আরিচা সড়কঃ সূর্য ডুবিলেই ডাকাতের ভয়” (০২/০৭/৭৩)

“বরিশালে থানা অস্ত্রশালা লুটঃ ৪ ব্যক্তি নিহত” (৪/০৭/৭৩);

“পুলিশ ফাঁড়ি আক্রান্তঃ সমুদয় অস্ত্রশস্ত্র লুট” (১২/০৭/৭৩);

“লৌহজং থানা ও ব্যাঙ্ক লুট”(২৮/০৭/৭৩);

“দুর্বৃত্তের ফ্রি স্টাইল” (০১/০৮/৭৩);

“পুলিশ ফাঁড়ি ও বাজার লুটঃ লঞ্চ ও ট্রেনে ডাকাতি”(৩/০৮/৭৩);

“এবার পাইকারীহারে ছিনতাইঃ সন্ধা হইলেই শ্মশান”(১১/০৮/৭৩);

“চট্টগ্রামে ব্যাংক ডাকাতি,লালদীঘিতে গ্রেনেড চার্জে ১৮ জন আহত, পাথরঘাটায় রেঞ্জার অফিসের অস্ত্র লুট” (১৫/০৮/৭৩);

“খুন ডাকাতি রাহাজানিঃ নোয়াখালীর নিত্যকার ঘটনা,জনমনে ভীতি” (১৬/০৮/৭৩);

“২০ মাসে জামালপুরে ১৬১৮টি ডাকাতি ও হত্যাকান্ড” (১৭/১১/৭৩);

“আরও একটি পুলিশক্যাম্প লুটঃ সুবেদরসহ ৩ জন পুলিশ অপহৃত” (১৩/০৭/৭৩);

“যশোরে বাজার লুটঃ দুর্বৃত্তের গুলীতে ২০ জন আহত” (১৮/০৪/৭৪);

“রাজশাহীতে ব্যাংক লুট” (২১/৪/৭৪)

মুজিব আমলের পত্রিকাগুলো পড়লে চোখে পড়বে এরূপ হাজার হাজার ঘটনা ও বহু হাজার বিয়োগান্ত খবর।

দুর্বত্তদের হাতে তখন বহু থানা লুট হয়েছিল। বহু পুলিশ অপহৃত এবং নিহতও হয়েছিল। মুজিবের নিজের দলীয় কর্মীদের সাথে তার নিজের পুত্রও নেমেছিল দুর্বৃত্তিতে।

সে সময় দৈনিক পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছিলঃ “স্পেশাল পুলিশের সাথে গুলী বিনিময়ঃ প্রধানমন্ত্রীর তনয়সহ ৫ জন আহত”। মূল খবরটির ছাপা হয়েছিল এভাবেঃ “গত শনিবার রাত সাড়ে এগারোটায় ঢাকার কমলাপুর স্পেশাল পুলিশের সাথে এক সশস্ত্র সংঘর্ষে প্রধানমন্ত্রী তনয় শেখ কামাল,তার ৫ জন সাঙ্গপাঙ্গ ও একজন পুলিশ সার্জেন্ট গুলীবিদ্ধ হয়েছে। শেখ কামাল ও তার সঙ্গীদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নয়,দশ ও তেত্রিশনম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে। আহত পুলিশ সার্জেন্ট জনাব শামীম কিবরিয়াকে ভর্তি করা হয় রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে।”-(গণকন্ঠ ১৯/১২/৭৩) ।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ বা মন্বন্তর এসেছে তিনবার। এর মধ্যে দুই বার এসেছে ব্রিটিশ আমলে। এবং তা ১৭৬১ সালে এবং ১৯৪৩ সালে। তৃতীয়বার এসেছে মুজিব আমলে। অথচ কেবল পাকিস্তান আমলটিকেই আওয়ামী-বাকশালী বুদ্ধিজীবী ও নেতা-কর্মীগণ চিত্রিত পশ্চিম পাকিস্তানীদের উপনিবেশিক শোষনের আমল রূপে। অথচ ১৯৪৭-এ পাকিস্তান আমলের শুরুটি হয়েছিল অনেকটা শূন্য থেকে। তখন অফিস আদালত ছিল না,কলকারখানা ছিল না। সহযোগী প্রতিবেশীও ছিল না। বরং ছিল ভারত থেকে তাড়া খাওয়া লক্ষ লক্ষ ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের ভিড়। মুজিবামলের ন্যায় সেসময় বিদেশ বিদেশ থেকে শত শত কোটি টাকার সাহায্যও আসেনি। কিন্তু সে দিন কোন দুর্ভিক্ষ আসেনি। অথচ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশী সাহায্য সত্ত্বেও দুর্ভিক্ষ এসেছিল মুজিবামলে। দুর্ভিক্ষ এসেছিল শেখ মুজিবের দূর্নীতি পরায়ন প্রশাসন এবং দলীয় ও ভারতীয় লুটপাটের কারণে। সে সময়ে ঢাকার পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু খবরের দিকে নজর দেওয়া যাক। বাংদেশের ৭০ জন বিশিষ্ঠ সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী এক যুক্ত বিবৃতিতে দেশের পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেনঃ বাংলাদেশের বর্তমান খাদ্যাভাব ও অর্থনৈতিক সঙ্কট অতীতের সর্বাপেক্ষা জরুরী সঙ্কটকেও দ্রুতগতিতে ছাড়াইয়া যাইতেছে এবং ১৯৪৩ সনের সর্বগ্রাসী মন্বন্তর পর্যায়ে পৌঁছাইয়া গিয়াছে।তাঁহারা সরকারের লঙ্গরখানার পরিবেশকে নির্যাতন কেন্দ্রের পরিবেশের শামিল বলিয়া অভিহিত করিয়া বলেনঃ “দুর্ভিক্ষ মানুষ দ্বারা সৃষ্ট এবং একটি বিশেষ শ্রেণীর অবাধ লুন্ঠন ও সম্পদ-পাচারের পরিণতি”। তাঁরা বলেনঃ “খাদ্য ঘাটতি কখনও দুর্ভিক্ষের মূল কারণ হইতে পারে না। সামান্যতম খাদ্য ঘাটতির ক্ষেত্রেও শুধু বন্টন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা যায়। যদি দেশের উৎপাদন ও বন্টন-ব্যবস্থা নিম্নতম ন্যায়নীতি উপর প্রতিষ্ঠিত থাকিত,দেশের প্রশাসন,ব্যবসা-বাণিজ্য শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সুবিচারকে নিশ্চিত করার সামান্যতম আন্তরিক চেষ্টাও থাকিত তাহা হইলে যুদ্ধের তিন বছর পর এবং দুই হাজার কোটি টাকারও বেশী বৈদেশিক সাহায্যের পর ১৯৭৪ সনের শেষার্ধে আজ বাংলাদেশে অন্ততঃ অনাহারে মৃত্যুর পরিস্থিতি সৃষ্টি হইত না।” (ইত্তেফাক,অক্টোবর ১,১৯৭৪)

সে সময়ের পত্রিকার কিছু শিরোনাম ছিলঃ “চালের অভাবঃ পেটের জ্বালায় ছেলেমেয়ে বিক্রি”-(গণকন্ঠ আগষ্ট ২৩,১৯৭২) “লাইসেন্স-পারমিটের জমজমাট ব্যবসা; যাঁতাকলে পড়ে মানুষ খাবি খাচ্ছে; সিরাজগঞ্জ, ফেণী, ভৈরব, ইশ্বরগঞ্জ ও নাচোলে তীব্র খাদ্যাভাব,অনাহারী মানুষের আহাজারীঃ শুধু একটি কথা, খাবার দাও”- (গণকণ্ঠ আগস্ট ২৯,১৯৭২) “গরীব মানুষ খাদ্য পায় নাঃ টাউটরা মজা লুটছে; গুণবতীতে চাল আটা নিয়ে হরিলুটের কারবার”-( গণকন্ঠ সেপ্টেম্বর ১৯,১৯৭২) “একদিকে মানুষ অনাহারে দিন যাপন করিতেছেঃ অপরদিকে সরকারি গুদামের গম কালোবাজারে বিক্রয় হইতেছে”-(ইত্তেফাক এপ্রিল ৭,১৯৭৩); “এখানে ওখানে ডোবায় পুকুরে লাশ।”(সোনার বাংলা এপ্রিল ১৫,১৯৭৩); “চালের অভাবঃ পেটের জ্বালায় ছেলেমেয়ে বিক্রি; হবিগঞ্জে হাহাকারঃ অনাহারে এ পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু”-(গণকন্ঠ মে ৩,১৯৭৩); “কোন এলাকায় মানুষ আটা গুলিয়া ও শাক-পাতা সিদ্ধ করিয়া জঠর জ্বালা নিবারণ করিতেছে”-(ইত্তেফাক মে ৩,১৯৭৩); “অনাহারে দশজনের মৃত্যুঃ বিভিন্নস্থানে আর্ত মানবতার হাহাকার; শুধু একটি ধ্বনিঃ ভাত দাও”-(গণকন্ঠ মে ১০,১৯৭৩); “লতাপতা, গাছের শিকড়, বাঁশ ও বেতের কচি ডগা, শামুক, ব্যাঙার ছাতা, কচু-ঘেচু পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের প্রধান খাদ্যে পরিণতঃ গ্রামাঞ্চলে লেংটা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি”-(ইত্তফাক মে ১০,১৯৭৩); “পটুয়াখালীর চিঠিঃ অনাহারে একজনের মৃত্যু;সংসার চালাতে না পেরে আত্মহত্যা”-(গণকন্ঠ মে ১০, ১৯৭৩); “ওরা খাদ্যভাবে জর্জরিতঃ বস্ত্রাভাবে বাহির হইতে পারে না”-(ইত্তেফাক মে ৩০,১৯৭৩) “আত্মহত্যা ও ইজ্জত বিক্রির করুণ কাহিনী”-(গণকন্ঠ জুন ১,১৯৭৩) “স্বাধীন বাংলার আরেক রূপঃ জামাই বেড়াতে এলে অর্ধ-উলঙ্গ শ্বাশুরী দরজা বন্ধ করে দেয়”- (সোনার বাংলা জুলাই ১৫,১৯৭৩) “গ্রামবাংলায় হাহাকার, কচু-ঘেচুই বর্তমানে প্রধান খাদ্য”-(ইত্তেফাক এপ্রিল,১৯৭৪); “দুঃখিনী বাংলাকে বাঁচাও”-(ইত্তেফাক আগষ্ট ৪,১৯৭৪); “জামালপুরে অনাহারে ১৫০ জনের মৃত্যুর খবর”-(ইত্তেফাক আগষ্ট ১৩,১৯৭৪) “১০দিনে জামালপুর ও ঈশ্বরদীতে অনাহার ও অখাদ্য-কুখাদ্য খেয়ে ৭১ জনের মৃত্যু”-(গণকন্ঠ আগস্ট ২৭, ১৯৭৪)

১৯৭২ সনের ২১ অক্টোবর তারিখে দৈনিক গণকন্ঠে একটি খবর ছিলঃ “পেটের দায়ে কন্যা বিক্রি”। ভিতরে সংবাদটি ছিল এরকমঃ “কিছুদিন পূর্বে কুড়িগ্রাম পৌরসভার সন্নিকটস্থ মন্ডলের হাটনিবাসী রোস্তম উল্লাহর স্ত্রী রাবেয়া খাতুন তার আদরের দুলালী ফাতেমা খাতুনকে (৭ বছর) পৌরসভার জনৈক পিয়ন জমির উদ্দীনের কাছে মাত্র ছয় টাকায় বিক্রি করে দেয়”।

সে সময়ে প্রকাশিত বহু খবরের মধ্যে এ খবরগুলিও ছাপা হয়ঃ ঈশ্বরদীতে ৬ কোটি টাকার তামার তার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। দু'চার জন যারা ধরা পড়েছে, এবং তারা সবাই মুজিব বাহিনীর লোক। তারা পুলিশ থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ( পূর্বদেশ: ১১ মে, ১৯৭২) পটুয়াখালী থানার বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতির হিড়িক পড়ে গেছে। কোন গ্রাম-বন্দরে দিনের বেলা ডাকাতি হয়। পুলিশকে খবর দিলে শেষ করে দেব বলে ভয় দেখায়। ফলে থানায় খবু কমই এজাহার হয়। ডাকাতদের দু'একজন এলএমজি হাতে থানার গেটে মোতায়েন থাকে যাতে দারগা-পুলিশ ডাকাতদের জারিক্রিত কারফিউ লংঘন করতে না পারে। -(পূর্বদেশ : ৩১ মে '১৯৭২) সম্প্রতি পাবনার সুজানগর থানাধীন ছয়টি গ্রামের ১১৮টি বাড়িতে ডাকাতি সংঘটিত হয়। পাবনার পল্লীর লোকগুলো বাড়ি-ঘর ছেড়ে জঙ্গলে রাত কাটায়। (দৈনিক বাংলা : ৩০ আগষ্ট ১৯৭২) দিনমজুর ছাবেদ আলীর স্ত্রী মাত্র ৫ টাকা দামে পেটের দায়ে তার সন্তান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। (সাপ্তাহিক বিচিত্রা: ২০ জুলাই '১৯৭৩) শেষ পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলের হেদায়েত উল্লাহকে কাফন ছাড়াই কলাপাতার কাফনে কবরখানায় যেতে হল (বঙ্গবার্তা: ৪ অক্টোবর ১৯৭৩) দেশের ঘরে ঘরে যখন বুভুক্ষু মানুষের হাহাকার তখন বৈদেশিক মুদ্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের তাস আমদানি করা হয়েছে। (বঙ্গবার্তা: ১২ ডিসেম্বর, ১৯৭৩) স্বাধীনতা লাভের কয়েক মাসের মধ্যেই ১৪ হাজার কোটি টাকার সম্পদ ভারতে পাচার হয়ে গেছে। -(জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের বক্তৃতা: ২৭ জানুয়ারি '১৯৭৪) কয়েকদনি আগে জয়পুরহাটের মাংলীপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের কবর থেকে কাফন চুরি হয়ে গেছে। -(সাপ্তাহিক অভিমত : ২৭ মে ১৯৭৪) আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের সচিব বলেছেন, ১৯৭৩ সালের জুন থেকে ১৯৭৪ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে ঢাকা শহরে তারা ১৪০০ বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছে। আর ১৯৭৪ এর জুলাই হতে১৯৭৫ এর জুলাই পর্যন্ত দাফন করেছে ৬২৮১টি বেওয়ারিশ লাশ। -(ইত্তেফাক: ২১ অক্টোবর ১৯৭৫) সারা দেশে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। প্রতি ৪৮ ঘন্টায় একজনের আত্মহ্ত্যা। -(হক কথা : ১৯ মে ১৯৭৪) গাইবা্ন্ধায় ওয়াগন ভর্তি ৬শ' মণ চাল লুট। রংপুরে ভুখা মিছিল।-(আমাদের কথা : ১৯ এপ্রিল ১৯৭৪) ক্ষুধার্ত মানুষের ঢলে ঢাকার রাজপথ নরকতুল্য। -(হলিডে: ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪)

১৯৭৪ সালে ৮ই সেপ্টম্বর সোনার বাংলা আরেকটি ভয়ানক খবর ছাপে। খবরের শিরোনাম ছিলঃ“রেকর্ড সৃষ্টিকারী খবরঃ “জঠর জ্বালায় বমি ভক্ষণ”। খবরে বলা হয়,একজন অসুস্থ্য ব্যক্তি গাইবান্ধার রেলওয়ে প্রচুর পরিমাণে বমি করে। বমির মধ্যে ছিল ভাত ও গোশত। দু’জন ক্ষুধার্থ মানুষ জঠর জ্বালা সংবরণ করতে না পেয়ে সেগুলো গোগ্রাসে খেয়ে ফেলেছে। ১৯৭৪ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর তারিখে ইত্তেফাকের একটি খবরের শিরোনাম ছিলঃ “রাজধানীর পথে পথে জীবিত কংকাল।” উক্ত শিরোনামে ভিতরের বর্ননা ছিলঃ “শীর্নকায় কঙ্কালসার আদম সন্তান। মৃত না জীবিত বুঝিয়া ওঠা দুস্কর। পড়িয়া আছে রাজধানী ঢাকা নগরীর গলি হইতে রাজপথের এখানে সেখানে। হাড় জিরজিরে বক্ষে হাত রাখিয়াই কেবল অনুভব করা যায় ইহারা জীবিত না মৃত।”১৯৭৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইত্তেফাক খবরের শিরোনাম দেয়,“ক্ষুধার্ত মানুষের আর্তচীৎকারে ঘুম ভাংগে”।খবরটি ছিল,“নিরন্ন, অভুক্ত,অর্ধভুক্ত,অর্ধনগ্ন ও কঙ্কালসার অসহায় মানুষের আহাজারি ও ক্ষুধার্ত শিশুর আর্তচীৎকারে এখন রাজধানীর সমস্যা পীড়িত মানুষের ঘুম ভাঙ্গে। অতি প্রত্যুষে হইতে গভীর রাত্রি পর্যন্ত দ্বারে দ্বারে করুণ আর্তিঃ “আম্মা! একখানা রুটি দ্যান। গৃহিনীর কখনো বিরক্ত হন,আবার কখনও আদম সন্তানের এহেন দুর্দশা দেখিয়া অশ্রুসজল হইয়া ওঠেন”।

স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ছাত্র,জনতা ও সাংবাদিকদের রক্তপাত ঃ ১লা জানুয়ারি ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ছাত্র, জনতা এবং সাংবাদিকের রক্তে রঞ্জিত হয় ঢাকার রাজপথ। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের বছরকাল পার না হতেই বিরোধী দমনে শুরু হয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। এদিন শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর পুলিশ বেপরোয়া ও নৃশংসভাবে গুলি চালিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষ অনার্সের ছাত্র মতিউল ইসলাম এবং ঢাকা কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র মির্জা কাদেরকে হত্যা করে। এ সময় গুরুতর আহত হন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, দৈনিক বাংলার বাণীর ফটোসাংবাদিক রফিকুর রহমানসহ ৬ জন। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন আহূত দেশব্যাপী ‘ভিয়েতনাম দিবস’-এর কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকায় সংগ্রামী ছাত্রসমাজ ভিয়েতনামের মার্কিনীদের বর্বর বোমাবর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ বেলা সোয়া ১২টায় মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের সামনে ছাত্রদের ওপর বিনা প্ররোচনায়

গুলি চালায়। গুলির আগে পুলিশ কোনো রকম হুশিয়ারি দেয়নি। লাঠিচার্জ বা ফাঁকা গুলিও করেনি। ছাত্রহত্যার খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো রাজধানীর দোকানপাট স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। অফিস আদালতের লোকজন রাস্তায় নেমে আসে। চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তারা সোচ্চার কণ্ঠে হত্যার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। বিক্ষোভ মিছিলে উচ্চারিত স্লোগানগুলো হচ্ছে—‘নিক্সন-মুজিব ভাই ভাই,— এক রশিতে ফাঁসি চাই,’ ‘শহীদ মতিউল-কাদেরের রক্ত— বৃথা যেতে দেব না,’ ‘খুনি মান্নানের— ফাঁসি চাই,’ ‘খুনিশাহী মুজিবশাহী ধ্বংস হোক,’ নিক্সনের দালালি করা চলবে না,’ ‘বাংলার মীরজাফর শেখ মুজিব। ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে পরদিন অর্থাত্ ২ জানুয়ারি (১৯৭৩) স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়। আর এদিন পল্টন ময়দানে আয়োজিত এক সমাবেশে ডাকসুর পক্ষ থেকে তত্কালীন সহ-সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাস সেলিম আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে দেয়া জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রত্যাহার করে নেন এবং ‘ডাকসু’র আজীবন সদস্য পদ বাতিল করেন। এসব ঘটনা ওই সময়ের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। ঘটনার পরদিন দৈনিক গণকণ্ঠ প্রথম পৃষ্ঠায় ‘অশ্বমেধের লালঘোড়া’ শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এ সম্পাদকীয়টিসহ দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো— অশ্বমেধের ‘লালঘোড়া’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশেপ্রেমিক ছাত্র-যুবকের বুকের তাজা রক্তপাতের মধ্যে দিয়ে তাদের নববর্ষের যাত্রা শুরু করেছে। বিশ্বের প্রতিবাদী মানুষ যখন ভিয়েতনামে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন দস্যুদের নির্বিচার হত্যালীলায় ঘৃণায় ক্ষোভে চিত্কার করতে করতে পৃথিবীর প্রতিটি শহর বন্দরের রাজপথে বিক্ষোভ মিছিলে নেমে এসেছে, তখন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল ঢাকা শহরের রাজপথে তেমনি একটি মিছিলের ওপর মানবতার বক্ষস্থলকে নিশানায় এনে তাদের পূর্বে কথিত ‘লালঘোড়ার’ অশ্বমেধ যজ্ঞ শুরু করেছে। বিশ্ব মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়ে ভিয়েতনামে মার্কিন হত্যালীলার প্রতিবাদে বাংলাদেশের ছাত্র-যুবারা যখন একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে তোপখানা রোড ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনি অতর্কিত এই গুলিবর্ষণ। এই গুলিবর্ষণের ফলে ঘটনাস্থলেই দু’জন ছাত্রযুবা শহীদ হয়েছেন এবং ৬ জন মারাত্মকভাবে জখম হয়ে হাসপাতালে স্থানান্তরিত হয়েছেন। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন শহর বিক্ষোভ ও ধিক্কার ধ্বনিতে ফেটে পড়ে। শহরের রাজপথ বিক্ষুব্ধ মানুষের মিছিলে প্রকম্পিত হতে থাকে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সত্যিকারের স্বরূপ উপলব্ধি করে ঢাকায় জনসাধারণ যেত হতচকিত হয়ে। তাহলে কি আওয়ামী লীগের অশ্বমেধের লালঘোড়া নিরীহ ছাত্র-যুবাদের ওপর দিয়ে এভাবেই চলতে শুরু করল? এত তাড়াতাড়ি? কিন্তু বোকা শাসকরা কি জানে না যে, সদ্য উত্থিত এই জাতি রক্তের লালপথ ধরে আজ এতদূর উঠে এসেছে। রক্তের বন্যায় তারা সর্বধরনের অন্যায়কে ভাসিয়ে দিতে দিতে এগিয়ে চলেছে। তাদের পেছনে পড়ে আছে নূরুল আমীন-আইয়ুব-ইয়াহিয়া-মোনেমের বন্দুক কামানের মুহুর্মুহু গর্জন আর রাজপথ ভরা চাপ চাপ রক্তের দাগ। এ চলা থামবে না। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের রাইফেলের গর্জন যত বাড়বে, ততই এ চলা দুর্দম হয়ে উঠবে। আর ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে আজকের ক্ষমতাদর্পী গুলিবর্ষণকারীরা। কোনো সাম্রাজ্যবাদই তাদের পুতুলদের দাঁড় করিয়ে রাখতে পারবে না। (দৈনিক গণকণ্ঠ : ০২ জানুয়ারি ১৯৭৩) পল্টনের ঘোষণা (নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)গতকাল মঙ্গলবার পল্টন ময়দানের জনসমাবেশে শহীদ মতিউল ইসলাম ও শহীদ মির্জা কাদিরুল ইসলামের লাশকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম নিম্নোক্ত ঘোষণা পাঠ করেন। এই সমাবেশের সামনে ডাকসুর পক্ষ থেকে আমরা ঘোষণা করছি যে, বিগত ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানকে ডাকসু’র পক্ষ থেকে আমরা যে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়েছিলাম ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে আজ সেই বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রত্যাহার করে নিলাম। আমরা দেশের আপামর জনসাধারণ, সংবাদপত্র, রেডিও ও টেলিভিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে আজ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে তার বঙ্গবন্ধু বিশেষণ ব্যবহার করবেন না। একদিন ডাকসুর পক্ষ থেকে আমরা শেখ মুজিবকে জাতির পিতা আখ্যা দিয়েছিলাম। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে আবার ছাত্রের রক্তে তার হাত কলঙ্কিত করায় আমরা ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে ঘোষণা করছি, আজ থেকে কেউ আর জাতির পিতা বলবেন না। শেখ মুজিবুর রহমানকে একদিন ডাকসু’র আজীবন সদস্যপদ দেয়া হয়েছিল। আজকের এই সমাবেশ থেকে ডাকসু’র পক্ষ থেকে আমরা ঘোষণা করছি, আজ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকসু’র আজীবন সদস্যপদ বাতিল করে দেয়া হলো। ( দৈনিক সংবাদ : ০৩ জানুয়ারি ১৯৭৩) পুলিশের গুলিবর্ষণ ও ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র হরতাল, বিক্ষোভ, মিছিল, সমাবেশ খুনিদের ফাঁসি চাই : পল্টনের দাবি নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : শহীদ মতিউল ও শহীদ কাদিরুলের পবিত্র লাশ সামনে রেখে এদেশে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের নতুন ইতিহাস সৃষ্টিকারী বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও ডাকসুর নেতারা গতকাল (মঙ্গলবার) পল্টনের বিরাট সমাবেশে ছাত্রহত্যার জন্য দায়ী খুনিদের ফাঁসি দাবি করছেন— সেই খুনি প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু যে কোনো মন্ত্রী বা আমলাই হোক না কেন। বিকাল ৩টায় ‘ডাকসু’ সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই শোক বিধুর অথচ বিক্ষুব্ধ সমাবেশে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নূহউল আলম লেনিন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম মুকুল, সহ-সম্পাদক কামরুল আহসান ও ডাকসু সম্পাদক মাহবুব জামান। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : ডাকসুর সহ-সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আজ যেন শোকের দিন। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন যে, পাকিস্তান আমলেও পাঁচ বছর পর ছাত্রদের ওপর গুলি ছোড়া হয়েছিল। আর মুজিব এক বছরও যেতে দিলেন না। শেখ মুজিব আজ নুরুল আমিনের পদাঙ্ক অনুস্মরণ করে তারই সমপর্যায়ে চলে গেছেন। ১৯৫৪ সালে যেমন ছাত্র হত্যাকারী নুরুল আমীন ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে তেমনি আগামী নির্বাচনে মুজিবও নিক্ষিপ্ত হবে। কুলাঙ্গার তোফায়েল : ১ জানুয়ারি ঘটনা উল্লেখ করে সেলিম বলেন যে, লজ্জার বিষয় যখন মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের সামনে ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছিল তখন একদা ছাত্রনেতা জনাব তোফায়েল আহমদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মান্নান ও পুলিশের আইজির সঙ্গে সেক্রেটারিয়েটে বসে ছাত্র হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন। আজ থেকে আমরা তাকে ‘ছাত্র সমাজের কুলাঙ্গার’ হিসেবে অভিহিত করতে চাই। লাশের ওপর ঢিল : সেলিম বলেন, শেখ মুজিবের চেলাচামুণ্ডাদের ঔদ্ধত্য সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আজ আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহীদ কাদিরের লাশ নিয়ে আসছিলাম তখন মুজিববাদী ছাত্রলীগ লাশের ওপর ঢিল ছুড়ে, মিছিলের ওপর হামলা চালায়। তিনি বলেন যে আজ থেকে ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত ‘মুজিববাদ’ ছাত্র সমাজ থেকে পরিত্যক্ত হলো। লাল ঘোড়া : ডাকসুর সহ-সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর লালঘোড়া দাবড়ানোর কথা উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি ছাত্র সমাজের ওপর দিয়েই তা চালু করলেন। তিনি বর্তমান সরকারকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ছাত্রসমাজ শুধু গড়তেই জানে না ভাংতেও জানে। কী করে খুনি জালেম সরকারকে উত্খাত করে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দিতে হয় ছাত্র সমাজ তা জানে। আগামী দিনে ছাত্র জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে এবং তা শুধু হরতাল মিছিলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। আবদুল কাইয়ুম মুকুল : ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম মুকুল সরকারী প্রেসনোট টুকরো টুকরো ছিড়ে ফেলে বলেন যে, এমন মিথ্যা ভাওতা জনগণ ঔপনিবেশিক আমলেই ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন যে খুনির দুঃখ প্রকাশের কোনো অধিকার নেই। (দৈনিক সংবাদ : ৩ জানুয়ারি ১৯৭৩) শহীদদের লাশ নিয়ে মিছিল বটতলার প্রতিবাদ সভায় ধিক্কার নিজস্ব বার্তা পরিবেশক গতকাল বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় পুলিশের বর্বর গুলি ও ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এতে সভাপতিত্ব করেন। সভাশেষে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের নির্মম গুলির শিকার শহীদ মতিউল ইসলাম ও মির্জা কাদেরের লাশ নিয়ে এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন শ্লোগান সহকারে শহরের প্রধান রাজপথগুলো প্রদক্ষিণ করে বায়তুল মোকাররমে এসে সমাপ্ত হয়। বায়তুল মোকাররমে এক বিক্ষোভ সভায় বক্তৃতা করেন ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও ডাকসুর সহ সভাপতি জনাব মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রছাত্রী ছাড়াও শ্রমিক জনতা যোগদান করে। তারা সোচ্চার কণ্ঠে হত্যার বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। বিক্ষোভ মিছিলে উচ্চারিত শ্লোগানগুলো হচ্ছে—‘নিক্সন-মুজিব ভাই ভাই,—এক রশিতে ফাঁসি চাই,’ ‘সাম্রাজ্যবাদের মরণ ফাঁদ—১৯৭৩ সাল,’ ‘শহীদ মতিউল-কাদেরের রক্ত বৃথা যেতে দেব না,’ ‘খুনি মান্নানের— ফাঁসি চাই,’ ‘ভিয়েতনামের বদলা নেব, বাংলাদেশের মাটিতে, ‘আগামীকাল হরতাল, গাড়ির চাকা ঘুরবে না, খুিনশাহী মুজিবশাহী ধ্বংস হোক, ‘নিক্সনের দালালি করা চলবে না,’ ‘সমাজতন্ত্রের নামে ভাওতা দেয়া চলবে না,’ ‘বাংলার মীরজাফর শেখ মুজিব।’ (দৈনিক সংবাদ : ২ জানুয়ারি ১৯৭৩)

অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরীর প্রতিবাদ ঃ ১৯৭৩ সালের জানুয়ারিতে ভিয়েতনাম সংহতি মিছিলে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট চক্র গুলি চালালে সারাদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। সে সময় আওয়ামী ক্যাডাররা প্রেসক্লাবের পেছনে ন্যাপের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি জ্বালিয়ে দেয়। ন্যাপের তৎকালীন নেত্রী মতিয়া চৌধুরী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রতিবাদ সভায় শেখ মুজিবের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি আর বঙ্গবন্ধু নও। আজ থেকে তুমি বঙ্গশত্রু। সেই সময় শাহরিয়ার কবির গলাবাড়িয়ে আরও একধাপ উচ্চস্বরে লিখে বসলো, “ মুজিব আর বঙ্গবন্ধু নয়, এখন থেকে মুজিব জনশত্রু।”

বিষয়: বিবিধ

২৩৫৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383634
২৫ জুলাই ২০১৭ রাত ০৮:৫৭
হতভাগা লিখেছেন : মতিয়া চৌধুরী আর শাহরিয়ার কবির এখন আওয়ামী লীগের অনেক কাছের + আপন লোক বনে গেছেন। এরাই আসলে বাংলাদেশের সফলতম ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File