আরব বসন্ত ও মিশরে পালাবদলের নেপথ্যে

লিখেছেন লিখেছেন যাযাবর চিল ৩১ আগস্ট, ২০১৩, ০৭:৪৩:৪৭ সন্ধ্যা



একটি মামুলি দুপুর।তাপমাএা ৩৫ ডিগ্রির কাছাকাছি।তিনেস এর শহরতলীরএকটি ছোট্র বাজার।সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত।হঠাৎ কেউ একজন চিৎকার করে উঠলো।ঠিক বোঝা গেল না।কেউ তেমন পাওাও দিলোনা শুধু দু-একটি কৌতুহলী চোখ তার দিকে গেল।যারা তাকালো তারা হাতাশই হলো।একেবারেই সাধারন চেহারা।৫ফিট ১০ ইন্চি।খোচা খোচা দাঁড়ি।হাড্ডিসার দেহ ।নাম বো আজিজি ।ফল বিক্রেতা।"আমিও মানুষ।আমার বেচেঁ থাকার অধিকার আছে" বলে আবর চিৎকার করে উঠলো সে।গায়ে ধরিয়ে দিল আগুন!! তার গায়ের আগুন দাবানলের মত জ্বলে উঠলো লক্ষ-কোটি আরবের মনে।তার চিৎকারে ভেঙ্গে গেল হাজার বছর ধরে ঘুমিয়ে থাকা আরবি ঘোড়া হুলো।আরব বসন্ত ।শরু হল ঝড়।কিছু বুঝে উঠার আগেই সেই ঝড়ে ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেল বেনআলী, গাদ্দাফি আর মোবারকের বহু বছর ধরে গড়ে তোলা সধের বাগান।টালমাটাল অব্যস্থা সৌদিআরব, কুয়েত, কাতার, জদ্রান, আরবআমিরাত, ইয়েমেন, সিরিয়াররা জপ্রসাদগুলোর বড় বড় ইমারতের।কেপেঁ উঠলো হোয়াইট হাউস, ক্রেমেলিন, ডাইনিং স্টিট, তেলআবিব।তলব করা হল FBI, CIA, Black Water, মোসাদ, সিনবেথকে।তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়ে পোষা হয়।কি করে তারা??!! CIA চিফের সরল স্বীকারক্তি।হাজারটা CIA ও একজন ফল বিক্রেতার মনের খবর দিতে পারবে না।



আরব বসন্ত এর পর

লৌহ মানব গাদ্দাফির পতনে পশ্চিমা বিশ্ব খুশি হলেও বেনআলী ও মোবারকের পতনে তারা ছিলো শঙ্কিত।তাদের এই শঙ্কা রিতীমত আতঙ্কে রুপ নেয় যখনএই দুই দেশর নিব্রচলে পশ্চিমা বিরোধীরা জয় লাভ করে।আর সিরিয়া নিয়ে পশ্চিমাবিশ্ব তো বটেই এমনকি সারা বিশ্বের মানবতবাদী, গনতণ্একামী মানুষ দ্বিধান্বিত।সিরিয়া নিয়ে একতি পূণ্রগ্র প্রতিবেদন আমরাপরবত্রী সংখায় লেখার চেস্টা করবো।

মিশর

মিশরের সরকার, ইতিহাস, সামরিক বাহীনি, আন্তযাতিক রাজনীতি সম্পক্রে একটি ধারনা না থাকলে মিশরের অব্যস্থা আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারবো না।মোবারকের পতনের পর ক্ষমতা গ্রহন করে মিশরের সামরিক বাহীনি।এই সামরিক বাহীনি একসময় ইসলামপন্থী ছিল।কিন্তু নাসের সরকার এর পর থেকে এই সামরিক বাহীনিকে পশ্চিমা অনুগত করা হয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে।প্রতিবছর শুধুমাএ আমেরিকাই সামরিকবাহীনিকে ১.৩ বিলিয়ন ডলার দেয় এবং তা সরাসরি সামরিক বাহীনিকে পাঠায়।আরব বিশ্বে মোবারকই ছিলো পশ্চিমাবিশ্বের পাশর প্রধান গুটি।মোবারকের পতনে প্রথমে হতভম্ব হলেও দ্রুতই তারা তা সামলে নেয়।মোবারকের সাবেক প্রধানমন্তী আহমেদ শফিকে প্রেসিডেন্ট বানানোর চেস্টা করে।এজন্য তারা সামরিক সরকারকে দিয়ে মিশরের সবচেয়ে বড় দল মুসলিম ব্রাদারহুডের সব নেতাদের নানা ভাবে হয়রানি করে।তাদের প্রসিডেন্ট প্রথীর প্রথীতা বাতিল করে।তবে ষড়যন্ত এবারও ব্যাথ্র।ব্রাদারহুড ব্যাপারটি আগে থেকেই বুঝতে পরে বিকল্পপ্রথী দিয়ে রেখেছিল।নিব্রাচনে ব্রাদারহুড এর বিকল্প প্রথী মুহাম্মাদ মুরসি জয় লাভ করে।কিন্তু সামরিক সরকার ফলাফল ঘোষনা নিয়ে টালবাহানা শুরু করে।আবার জ্বলে উঠি তাহরীর স্কায়ার।সামরিক সরকার ফল ঘোষনা করতে ব্যাধ্র হয়।ড. মুহাম্মাদ মুরসি হন মিশরের ইতিহাসের প্রথম নিব্রাচিত প্রসিডেন্ট ।পদ্রার অন্তরালে শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত

ব্রাদারহুড যুগ

ব্রাদারহুড ও মুরসি এর ক্ষমতা লাভের কারনে শঙ্কিত হয় পশ্চিমা বিশ্ব তাদের তৈরি বিষফোঁড়া ইসরাইলের নিরাপওা শঙ্কার।শঙ্কিত হয় সামরিক বাহীনি পশ্চিমাদের সাহায্যো বন্ধের আশংকায়।এজল্য তারা ইসরাইলের সামরিক বাহীনির মাধ্যমে হোয়াইট হাউস এর সাথে যোগাযোগ করে।এবং হোয়াইট হাউস এর পাশে থাকার আশ্বাস দেয়।আরব বিশ্বে জেঁকে বসা প্রতিটি রাজপ্ররিবার তাদের রাজত্ব হারানোর শঙ্কায়।অথাৎ ক্ষমতা গ্রহের পূবেই ব্রাদারহুড ও মুরসি দেশিয়, আন্চলিক ও আন্তযাতিক নেতাদের রোশনলে পড়ে।দ্বায়িত্ব গ্রহের পড়ে তারা আরো বেকায়দয় পড়ে।কারন বিচারবিভাগ, সামরিক বাহীনি, প্রশাসন এর ছোট-বড় সব পদেই মোবারকের আত্নীয়-স্বজন আর চরম অনুগতরা বসে আছেন।তারা মুরসিকে বেকায়দায় ফেলার চেস্টা করে।মুরসি প্রশাসনে কিছু পরিব্রতন আনেন।অসামান্য দক্ষতায় সামরিক বাহীনিকে ব্যারাকে ফেরত পাঠান।একটা যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ সামলে নেন।ষড়যন্ত থেমে থাকেনা ।আমেরিকা, ইসরাইল, সৌদিআরব, সিরিয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা শুরু করে মুরসির বিরুদ্ধে সাধারন মানুষকে ক্ষেপয়ে তুলতে।নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বর সমস্যা কে বড় করে দেখিয়ে তারা তাদের অনুগত লোকদের রাস্তায় নামায়।সুরু হয় সহিংস বিক্ষোভ ।বিক্ষোভকারীরা ব্রাদারহুড কায্রালয়ে হামলা করে।সেখনে নিহত হয় ব্রাদারহুড এর বেশ কয়েকজন কম্রী।এরপরও মুরসি শান্ত থাকেন।বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কঠোর ব্যাবস্থা নেন না।দেশের মানুষকে শান্ত থাকার নিদ্রেশ দেন।তার পক্ষে বিরোধীতাকারীর চেয়ে কয়েক গুন মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।পশ্চিমাদের সবুজ সংকেত পেয়ে সামরিক বাহীনি মুরসিকে অবৈধভাবে গ্রফতার করেন।সংবিধান রহিত করেন।বন্ধ করে দেয় টিভি স্টেসন ও সংবাদপএ।পৃথিবীর ইতিহাসের এই জঘন্য কু কে পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের জাতি সংঘ কু ই বলেনা উল্টো অভিন্দন জানায় সামরিক সরকারকে ।সবার প্রথমে জানায় সৌদিআরব।শুধু মাএ ইরান ও তুরস্ক এর প্রতিবাদ জানায়।আফ্রিকান ইউনিয়ন মিশরের সদস্য পদ স্থগিত করে।



প্রতিবাদ

এ ঘটনার প্রতিবাদে ফেঁটে পড়ে সাধারন মিশরীয়।লক্ষ লক্ষ সাধারন মিশরীয় কায়রো, আলেকজেন্দ্রিয়ার রাস্তায় নেমে পড়ে।টানা দেড় মাস কায়রো ররাবিয়া স্কায়ার ও নাসের সিটিতে বিক্ষোভ করে।তাদের দাবি একটাই।গনন্তিক প্রেসিডেন্ট এর মুক্তি।



রাবিয়া স্কায়ার ট্রজেডি

সেদিনের সকালটা ছিলো একটু অন্যরকম।ফজরের নামাজ শেষে সবার মধ্যে চাপা উওেজনা।সামরিক বাহীনির ক্রাকডাউনের খবর শুনা যাচ্ছে।কিছুক্ষনের মধ্যে তার সত্যতা মিললো।রাবিয়া স্কায়ার চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে সামরিকবাহীনির ট্যাংক আর সাঁজোয়া যান। ভবনের ছাদে বন্দুকধারী।শুরু হয়ইতিহাসের অন্যতম বব্রর ক্রাকডাউন।প্রথমে রাবিয়া স্কায়ার এরপর নাসের সিটি।সরকারই স্বীকরার করে ৮০০ নিহত ও ৩০০০ আহত।তবে বেসরকারি সূএগুলো বলছে নিহত মোট ৪০০০ আহত ১০০০০ এরও অধিক।পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে লাশ।সামরিক বাহীনি ৩-৪ দিন ধরে এ হত্যা যঞ চালায়।ব্রাদারহুড প্রধানের ছেলে, ব্রাদারহুড তৃতীয় নেতার মেয়ে সহ ব্রাদারহুডের সব ছোট-বড় নেতার পরিবারের সদস্য মারা যায় এ অভিযানে।গ্রেফতার করা হয় ব্রাদারহুড প্রধান মুহাম্মাদ বদি সহ প্রায় সব বড় ও মাঝারি সারির নেতা।এ ছাড়া সরকার ২২ জন সেনাহত্যা ও কিছু গিজ্রায় হামলা হয়েছে বলে দবি করে।এমন বব্রর গনহত্যার পরও পশ্চিমাবিশ্ব এর তেমন নিন্দা জানায় না।সৌদি আরব উল্টো সমথ্রন জানায় সামরিক সরকারকে। শুধু তুরস্ক এ গনহত্যার জন্য সামরিক সরকারের বিচার দাবি করে।

জনগনের চাপের মুখে ওবামা প্রসাশন মিশরের সামরিক বাহীনিকে সহায়তা কমানোর ঘোষনা দেয়।তবে সৌদিআরব তা পূরন করে দেওয়ার ঘোষনা দেয়।এতকিছুর পড়ও ব্রাদারহুড এর ভারপ্রপ্ত প্রধান মোহাম্মদ ইজ্জত গাড্রিয়ানকে একসাক্ষাৎকারে বলেন পরিনতিযাই হোক আমরা কখনোই সহিংস আন্দোলোনে যাবো না।সেনা হত্যা ও কিছু গিজ্রায় হামলার ব্যাপারে তিনি বলেন সরকার আমাদের উপর হামলা যায়েজ করতে নিজেরাই এটা করেছে।তারা আমাদের সংশ্লস্টতার কোন প্রমান দিতে পারবে না।সরকার গুলো যাই করুক সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ ব্রাদারহুড এর পক্ষে।ব্রাদারহুড এর আহবানে সাড়া দিয়ে সারা বিশ্বে ৮৫ মিলিয়ন ফেসবুক ব্যাবহারকারী রাবিয়া (চার আঙ্গুলের প্রতীক) তাদের প্রোফাইল পিকচার করেছে সামরিক সরকারকে ঘৃণা প্রদ্রশন করে।



ব্রাদারহুড এর ব্যাথ্রতার কারন এবং ভবিষৎ

মুরসির পতনের পর থেকেই এটা নিয়ে সমালোচক ও বিশ্লেশকরা।আরও ভালো ভাবে বললে পশ্চিমা সমালোচক ও বিশ্লেশকরা দিস্তা দিস্তা কাগজ খরচ করছেন।তারা মুরসির পতনের প্রধান চারটি কারনের কথা বলেছেন

১ বেকারত্ব

২ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যর মূল্য বৃদ্ধি।

৩ প্রশাসনে ব্রাদারহুড সমথ্রকদের নিয়োগ।

৪ প্রেসিডেন্ট এর ক্ষমতা বৃদ্ধি।

কথা গুলো সঠিক এবং কোনটিই মুরসির পতনের কারন নয়।বিপ্লবের জন্য স্বাভাবিক ভাবেই মিশরের অথ্রনীতির অব্যস্হা খারাপ ছিল।মুরসি যথেস্ট সময় পাননি অব্যস্হা মোকাবেলা করার।অপর দিকে প্রশাসনে ব্রাদারহুড সমথ্রকদের নিয়োগ না দিলে মোবারকের প্রশাসন মুরসিকে এক মাসও ক্ষমতায় থকতে দিত না।অনেক সমালোচক বলেছেন মুরসি ঠিকমত চালাতে পারেনি ইরান ও তুরুস্কে সমমনা দল ক্ষমতায় টিকে আছে দক্ষতার কারনে।এটাও ভুল বিশ্লেশন।কারন তুরুস্কে টানা ৩ বার নিব্রাচনে জয় লাভ করেও একে পাটি ক্ষমতায় যেতে পারেনি।আর ইরানে খোমেনি সরকার প্রশাসন ও সামরিক বাহীনির ৩-৪ হাজার শাহ এর লোককে ফাঁসি দেয়।এজন্য তারা টিকে যায়।আসলে ব্রাদারহুড এর মূল সমস্যা সিদ্ধান্ত গ্রহনে।প্রালামেন্ট ও প্রেসিডেন্ট নিব্রাচনের ব্যাপারে তারা প্রথমে বলেছিল অংশ নিবে পরে তা পাল্টায়।ব্রাদারহুড সবচেয়ে বড় দুব্রলতে হল প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও সামরিক বাহীনিতে তাদের প্রভাব হীনতা।আর আন্তজাতিক ষড়যন্ত তাদের পতনের মূল কারন।প্রথমেই সরকারে না গিয়ে প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও সামরিক বাহীনিতে একটি অব্যস্তান তৈরি করে তার পর সরকার এ গেলে ইতিহাস হয়তো অন্যরকম হতে পারতো। অনেক সমালোচক ও বিশ্লেশক ব্রাদারহুড নিয়ে শঙ্কিত। অনকে আবার শেষও দেখে ফেলেছেন।যেমনটা অনেকে দেখেছিলেন ৫০ এর দশকে সাইয়েদ কুতুব, আবদল কাদের আওদাহ সহ ৫-৭ জন প্রথম সারির নেতাকে ফাঁসি দেওয়ার পর।তবে বাস্তবতা হল রাবিয়া স্কায়ার ট্রজেডির পর ব্রাদারহুড এর জনপ্রিয়তা কয়েকগুন বেড়ে গেছে।আন্তজাতিক ভাবে ব্রাদারহুডকে যে সন্তাসবাদী দল হিসেবে দেখানোর চেস্টা করা হত তাও কমে গেছে।শান্তিকামী সংগঠন হিসেবে ব্রাদারহুড এর সুনাম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।পৃথীবির ৬০টিরও বেশি দেশে ব্রাদারহুড এর সমথ্রনে শান্তিকামী মানুষ, সংগঠন র্যালি,সমাবেশ, দোয়া দিবস সহ নানা কম্রসূচি পালন করেছে।পরিশেষে বলা যায়।ক্ষমতা হারালেও মুরসি ও ব্রাদারহুড মানুষের বুকের আরও গভীরে জায়গা পয়েছে।তাদের বিজয় অনিবায্র।



বিষয়: বিবিধ

৩৫৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File