রুদ্ধ গণতন্ত্র : ধেয়ে আসছে বাকশাল
লিখেছেন লিখেছেন স্বাধীন কন্ঠ ২১ মে, ২০১৩, ০৪:০৪:৫৫ বিকাল
গণতন্ত্র শব্দটির অর্থ "জনগণের শাসন", কোন রাষ্ট্রের এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের নীতিনির্ধারণ বা প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমান ভোট বা অধিকার আছে।
বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের ভাষায়, সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি, যে ব্যবস্থায় প্রত্যেকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়নি তা কুলীনতন্ত্র এবং যেখানে প্রত্যেকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে তা গণতন্ত্র। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম রাষ্ট্রপতি এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রথম রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন তার দুমিনিটকাল স্থায়ী ১৮৬৩ সালের ১৯ নভেম্বরে প্রদত্ত গেটিসবার্গ বক্তৃতায় বলেন, জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা পরিচালিত সরকার এবং জনগণের স্বার্থে পরিচালিত সরকার পৃথিবী থেকে মুছে যাবে না।
আর গণতান্ত্রিক সরকার হল জনগনের দ্ধারা পরিচালিত সরকার। যেখানে প্রত্যেক মানুষের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার স্বীকৃত।
কিন্তু বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্রের সংজ্ঞা পাল্টে গেছে । গণতান্ত্রিক দেশে সভা-সমাবেশ নিষেধ করার ক্ষমতা না থাকলেও বর্তমান সরকারের গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় সেই অধিকার আজ বিলুপ্ত। স্বাধিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাত্কারে এবং চট্টগ্রামে অপর এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য এবং সারাদেশে এক মাসের জন্য সব ধরনের সভা-সমবেশ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় একই ঘোষণা দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে বলে জানা গেছে। গত ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থানকারী হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সরিয়ে দেয়ার পর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দল সমাবেশের জন্য তিন দফা আবেদন করেও অনুমতি পায়নি। তা ছাড়া কয়েক দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কোনো সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রেস ক্লাবের সামনে সাধারণ নাগরিক ও বিভিন্ন সংগঠনের সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধনের রেওয়াজ থাকলেও সেখানে অস্থায়ী নিশেধাজ্ঞা জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
জরুরি অবস্থার অন্যতম অনুষঙ্গ সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ। জরুরি অবস্থায় গণমাধ্যমে সেন্সরশিপও আরোপ করা হয়। সেই ব্যবস্থাও দেশে বহাল আছে। এ কারণে শাপলা চত্বরের গণহত্যার মতো স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গণহত্যার খবরও প্রচার করেনি দেশের গণমাধ্যমগুলো। সম্প্রতি প্রভাবশালী মার্কিন টিভি স্টেশন সিএনএন সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই জানিয়েছে, সিএনএনসহ বিদেশি গণমাধ্যমকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। তারা ভিসা চাইলে ভিসা অফিসার জানায়, প্রতিবেদন প্রচারের আগে তা বাংলাদেশ সরকারকে দেখাতে হবে এবং সরকারের মনঃপূত না হলে সেই রিপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা যাবে। মধ্যপ্রাচ্যের আরেক প্রভাবশালী টিভি স্টেশন আলজাজিরাও একই পরিস্থিতি মাথায় নিয়ে বাংলাদেশের খবর প্রচার করছে। সোশ্যাল মিডিয়াকেও নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রের পরিপন্থী। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মিটিং-মিছিল করার অধিকার সবারই আছে। এটা সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার কেড়ে নেয়ার এখতিয়ার কারও নেই।
বিশিষ্ট কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেক সৈয়দ আবুল মকসুদ রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘কোনো গণতান্ত্রিক দেশে একদিনের জন্য সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ হতে পারে না। এটা গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ। দেশে এমন ঘটনা ঘটেনি যাতে একদিনের জন্যও সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকতে পারে। সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তাতে ক্রমাগত গণতান্ত্রিক অধিকার সংকুচিত হচ্ছে; যা গণতান্ত্রিক চেতনা, রীতিনীতি ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্রের পরিপন্থী।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হাফিজউদ্দিন খান রেডিও তেহরানকে বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলন হতে পারে; কিন্তু সে সুযোগ সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। সংবাদপত্রে এর বিরুদ্ধে লেখালেখি করা যায় এবং টেলিভিশন টকশোতে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে সেসবও বন্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। উদাহরণ হিসেবে দুটি টেলিভিশন ও একটি সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
সরকারের হঠাৎ এইরুপ সিদ্ধান্তের কারন হিসেবে অনেকেই মনে করেন ক্রমবর্ধমান জনরোষ, হেফাজতে ইসলামের যেকোণ সময় ঘুরে দড়ানোর আশঙ্কা ও জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের ব্যাপারে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আসন্ন রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশের অন্যতম প্রধান ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসেনের টানা ৫৩ দিনের রিমান্ড শেষ হয় গতকাল পুলিশ পাঁজাকোলা করে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করেন তখন তার চোখে মুখে আর সারা শরীরে ভয়ঙ্কর নির্যাতনের চিহ্ন। চলৎশক্তিহীন। হাত পা ফোলা। ছোপ ছোপ রক্তজমা সারা দেহে। শরীরে এতটুকু শক্তিও নেই। উঠে দাঁড়ানো দূরের কথা। বসার মতো শক্তিও নেই তার। হাত পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা। দুই চোখ মুদিত। বছর ত্রিশের টগবগে যুবক। মুখভর্তি চাপদাড়ি। হাতে পায়ে কোমরে ডাণ্ডাবেড়ি। সে ডাণ্ডাবেড়ি আবার ধরে রেখেছেন দুইজন পুলিশ। চ্যাংদোলা করে কয়েকজন পুলিশ তাকে উঠালেন ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। বসতে পারছেন না। মুখে কোনো কথাও নেই। তাকে আদালতেই পেছনে ঠেক দিয়ে ধরে রেখেছেন পুলিশ সদস্যরা।
। এর পর আরো একটি নতুন মামলায় তাকে আবারো ১৭ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে পুলিশ। তার আইনজীবী তার অসুস্থতার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিকিৎসার আবেদন করলে আদালত আগামী ২৮ মে রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।
এ কোণ বরবর রাষ্ট্রে বাস করছি আমরা ? বাংলাদেশের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল সর্ববৃহৎ ইসলামী ছাত্রসংগঠের কেন্দ্রীয় সভাপতির উপর শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনে দিনের পর দিন রিমান্ডে নিয়ে পৈশাচিক নির্যাতনের চিত্র দেখে গুটা জাতি আজ স্তম্ভিত।
দেশের মানুষ গত দু-তিন যুগের ভিতর সবচেয়ে আতঙ্কে আছে। কি ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশে ?
দেশে যে অবস্থা বর্তমানে বিরাজমান তাতো বাকশালের সাথে হুবহু মিলে যায়। যে দেশের মানুষ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে স্বাধীণ হল তারা কি বাকশাল মেনে নেবে ? মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আবারও বাকশালের থাবায় ভুলন্ঠিত হবে আর চেয়ে চেয়ে দেখবে দেশের জনগণ তা আর হবে না। অতীতেও বাকশাল করে কেউ ক্ষমতায় ঠিকে থাকতে পারেনি, বর্তমানেও যে বাকশালী নীলনকশা আমদের দিকে দেয়ে আসছে জনতার জোয়ারে তা ভেস্তে যাবে। ইতিহাস বলে ফ্যাসিবাদী বাকশালীদের পরিনতি ভাল হয়নি। শেষ কথা একটাই, " ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ফ্যাসিবাদীদের বোধোদয় হোক। সু-গণতন্ত্রের উদয় হোক। আর গুটা জাতির প্রত্যাশা - "শান্তি আসুক দেশে।"
বিষয়: রাজনীতি
৯৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন