রম্য রচনা সংবাদিক আক্কেল আলী বিষয় মুক্তি যুদ্ধ -১
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১৭ জানুয়ারি, ২০২০, ০৫:৩০:৫৪ সকাল
এক দুই নয় ষাট কোটী টাকার রাজাকারের তালিকা! রাজাকারের তালিকাটা পড়ার আগে আক্কেল আলীর মনের দৃশ্য পটে ভেষে উঠল অনেক আগের একটি ঘটনার কথা । তখন সে পুলিশে চাকরী করে। সে দিন সে এবং একজন ডাক্তার পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষা নিচ্ছিল। পরীক্ষা চলাকালে হঠাৎ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থকে একটি ফোন আসে এবং তাকে নির্দেশ দেওয়া হয় ঝন্টু মোল্লা নামের একজন ক্যান্ডিডেডকে পরীক্ষায় পাশ করিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যেন নিয়োগ দেওয়া হয়। তাকে আরও জানানো হয় ঐ ক্যান্ডিডেটের নানা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ঝন্টু মোল্লা ভাইবা দিতে আসলে আক্কলে তার নাম জিজ্ঞাসা করলে সে বলল তার নাম ঝন্টু মোল্লা। আক্কলে আলী বলল ঝন্টু মোল্লা আপনার বাবার নাম কী? ঝন্টু মোল্লা বলল তার নানার নাম মুক্তিযোদ্ধা কদু খান! আক্কল বলল, আমি জিজ্ঞাসা করেছি বাপের নাম আর আপনি, বাপকে ডিঙ্গিয়ে দাদার নামও বললেন না, বললেন একেবারে নানার নাম! ঝন্টু মোল্লা বলল, স্যার যে কী বলেন, আমি কি উল্টা পাল্টা নাম বইলা আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করতে পারি, আমি তো আর আপনাদের মত সধারন পাবলিক না, মুক্তিযোদ্ধার নাতী বলে কথা! উত্তরটা শুনে আক্কেল আনেক কষ্টে রাগ দমন করে বলল, চমৎকার চমৎকার। আক্কেল বলল আপনি কী আপনার নাম লিখবেন দয়া করে? ঝন্টু মোল্লা বলল, স্যার নাম কী হিন্দি না বাংলায় লিখব? আক্কেল বলল আমি যে ভাষার কথা বলতেছি সে ভাষাতে লিখুন। নাম লেখা শেষ হলে তা দেখে আক্কেলের চোখ ছানা বড়া! নিজের নাম লিখতে চার জায়গায় ভুল! আক্কেল ঝন্টুর চাকরীর জন্য করা আবেদন পত্রটি বের করে তাকে দেখিয়ে বলল দেখেন এক নামে চার জায়গায় ভুল। ঝন্টু মোল্লা বলল, স্যার আপনি, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতীর ভুল ধরে নিজের নাম কী রাজাকারের তালিকায় যোগ করতে চান? রাগে আক্কেলের মনে হল এই বেয়াদপটাকে এক চর মেরে সবগুল দাত ফেলে দিতে পারলে তার উচিত শিক্ষা হত, কিন্ত অনেক কষ্টে করে রাগ দমন করে বলল, আমার কথায় আপনি মনে কিছু নিয়েন না মোল্লা সাহেব! উপরের নির্দেশ থাকায় আক্কেল অনিচ্ছা সত্বেও তাকে পাশ মার্ক দিয়ে পাশের টেবিলে বাসা ডাক্তারের কাছে যেতে বলল কাগজ পত্র নিয়ে।
ডাক্তার ঝন্টু মোল্লাকে বলল আসুন প্রথমে আপনার চোখের টেস্ট নেই। ডাক্তার ঝন্টুকে বলল, ঝন্টু সাহেব ঐ বোডের লেখাটা পরুন তো। ঝন্টু অনেক ক্ষণ এদিক অদিক তাকিয়ে, মাথা দুলিয়ে বলল, ডাক্তার সাহেব, অক্ষর গুল বিকট ছোট, আরেকটু বড় দেন। ডাক্তার বলল ঠিক আছে, তার পর অক্ষর গুলর সাইজ একটু বড় করে বলল, পড়ুন। ঝন্টু বলল, ডক্তার সাহেব আরকে সাইজ বড়,---। অতঃপর ডাক্তার হতাশ হয়ে বলল, ঝণ্টূ সাহেব শেষ পর্যন্ত কুলে এসে তরী ডুবলেন, মেডিকেল টেস্টে আপনি ফেল হতে যাচ্ছেন। ঝন্টু উত্তেজিত স্বরে বলল, এই গুল আপনি আবল তাবল রাজাকারের মত কী কথা বলতাছেন, আপনি জানেন না আমার নানা ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দূর থেকে আক্কেল অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে, ভাইবাকে সময়িক স্থাগিত রেখে, ডাক্তারের কানে কানে কিছু বলে চলে যায়।
আক্কেলের কথা শুনে ডাক্তার মনে মনে বলল নাতীর ঘরে পুতি আর কতকাল খাবলাইয়া খাবি, এমন দিন আসবে যেদিন পাবলিক তোর খাল তুলে—ডাক্তার ভাবনার রাস টেনে বলল, ঝন্টু সাহেব আপনি যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতী তা আগে বলবেন না! এ কথা শুনে ঝন্টু বিদুৎসাহী হয়ে বলল ডাক্তার সাহেব ভুল-ভ্রান্তী তো মানুষেরই হয়, তা ছাড়া আপনি একজন চিকিৎসক, আপনাকে মাফ না করলে কাকে মাফ করব! একথা শুনে রাগে ডাক্তারের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেল, উত্তেজিত কণ্ঠে উচ্চ স্বরে বলল, হারামজাদা বজ্জাত কোহান কার। ঝন্টু কাঁদ কাঁদ কন্ঠে বলল, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতী, আর আপনি আমাকে, মুক্তিযোদ্ধার নাতীকে হারামজাদা বজ্জাত বললেন। একথা শুনে ডাক্তার ঝটপট জবাব দিল, ঝন্টু সাহেব আপনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতী, আমি আপনাকে কী এই কথা বলতে পারি না পারা যায়। আমি এই কথা বলেছি তাদের উদ্দেশ্যে যারা আপনার মত নাতীকে সম্মান করতে যানে না সেই সকল স্বাধীনতা বিরোধী গাদ্দারদেরকে! খুশীতে বাগ বাগ হয়ে ঝন্টু ডাক্তারকে বলল, দেহেন দেহি কি কারবার আপনি বললেন কী আর আমি বুঝলাম কী! মনে কিছু নিয়েন না। ডাক্তার সাহেব ঝন্টুকে বলল, আপনাকে এক্ষণই আমি পাশ করিয়ে দিচ্ছি শুধু, ঝন্টু ঝট পট বলল, আবার শুধু কেন? ডাক্তার বলল বুঝনই তো চোর পুলিশের খেলা, একটু দৌড়া দৌড়ি না জানলে কিছু হয়। ঝন্টূ বলল, ডাক্তার সাহেব আপনি জানেন না, মুক্তিযোদ্ধের সময় আমার নানা বাম পায়ে গুলী খেয়ে ছিল, ডাক্তার তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, তাতে আপনার কী? ঝন্টু বলল, ডাক্তার সাহেব আমার ও বাম পায়ে—ডাক্তার আবারও তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ঝন্টু সাহেব আপনার পুলিশে চাকরী তো পাকা। এখন কি আপনি চোর ধরতে দৌড় দিবেন না, ঝন্টু খুশীতে বাগ বাগ হয়ে বলল, বুঝছি ডাক্তার এবার বুঝছি, আপনি খালি বলে দিন দৌড় কোথা থেকে শুরু করবো এবং কোথায় শেষ করব। ডাক্তার ঝন্টুকে মাঠ দেখিয়ে বলল, বৃষ্টির জন্য যদিও মাঠ ভিজা কিন্তু সেদিকে আপনি নজর না দিয়ে মাঠের পূর্ব কোনা থেকে দৌড় শুরু করে দূরের ঐ পুকুরের পারের কাছে যেয়ে থামবেন।
ঝন্টু বলল অতিব সোজা কাজ আমি এক্ষণি দৌড় শুরু করে চোর ধরার প্যাক্টিস শুরু করতাছি। ঝন্টুর বাম পায়ে সমস্যা হেতু দৌড়াতে যেয়ে বার কয়ে পরে যেয়ে পরনের জামা কাপর সব কাঁদা মাটিতে একাকার হয়ে গেল। ঝন্টু রাগে দুঃখে ডাক্তারকে মনে মনে গালী গালাজ করতে থাকল কিন্ত দৌড় থামাল না। পুকুরের পারের কাছে যেয়ে ছিলিপ কেটে ব্যাল্যান্স হাড়িয়ে ঝপাট করে পুকুরে যেয়ে পড়ল, একই সাথে বাবা গো বাঁচাও বলে চিৎকার করে উঠল। আক্কেল ও ডাক্তার দুজনেই পুকুরের দিকে দৌড় দিল। দৌড়াতে দৌড়াতে আক্কেল ডাক্তারকে বলল, আমার কাছে মনে হল ঝন্টু বলছে বাবাগো বাঁচাও, আমি কী ঠিক শুনেছি! ডাক্তার বলল, জী আপনি ঠিকই শুনেছেন বিপদে পরে আমাদের ঝন্টূ নানার নাম ভুলে গেছে।
বিষয়: বিবিধ
৮৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন