রম্য রচনা যম’তা শেষ পর্ব

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১৭ জুলাই, ২০১৯, ০৩:৫৯:৫৮ দুপুর

মোয়াযযিনের আযান শুনে পুকুর পারের রাস্তা ধরে ইমাম সাহেব তাড়াতারি সালাতের ইমামতি করার জন্য যাচ্ছিল। কিন্ত পথের মাঝে সত্য রামকে কাঁদতে দেখে সে হাটা থামিয়ে তার কাছে এসে তার কাঁদার কারন জানতে চাইল। ইমাম সাহেব সত্য রামের কাছ থেকে কাঁদার কারন জানার পর বলল, আপনি যদি সালাতের পর আমার বাসায় আসেন, তবে আশা করি আমি হয়ত আপনাকে সাহায্য করতে পারব। একজন ডুবন্ত ব্যাক্তি যেমন ভাবে খর কুটকে আঁকরে ধরে বাঁচতে চায় মরিয়া সত্য রাম অনেকটা সেভাবে সাথে সাথে ইমাম সাহেবের কথায় রাজী হয়ে গেল।

ইমাম সাহেবের উপদেশ অনুসারে সত্য রাম দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিতে যেয়ে ঘুমিয়ে পরল। গুরু শিবাজী স্বপ্নে এসে তাকে শাসিয়ে বলতে থাকল ভাগ এখান থেকে ভাগ, বাঁচতে চাছ তো ভাগ। সত্য রাম ঘুম থেকে জেগে কাঁপতে থাকল। বাসার কেউ একজন যেয়ে ইমাম সাহেবকে খবর দিলে ইমাম সাহেব এসে সত্য রামকে এক গ্লাস পানি দিয়ে বলল, তাকিয়ে দেখুন তো কিছু দেখেন কী না। পানির দিকে তাকিয়ে সত্য রাম ভয়ে কুঁকড়ে গেল, আরে এযে স্বয়ং গুরু শিবাজীকে পানির মাঝে দেখা যাচ্ছে! ঘটনার আকস্মিকতায় সে পুনরায় কাঁপতে থাকল। অতঃপর ইমাম সাহেব পানিতে দোয়া কালাম পরে ফুঁ দিয়ে বলল, আবার তাকান কিছু দেখেন কী না? এবার সত্য রাম বলল না গুরুজী অদৃশ হয়ে গিয়েছে। সত্য রাম ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করল, এই শীবাজী রূপী গুরু আসলে কে? ইমাম সাহেব সংক্ষিপ্তাকারে বলল, আপনার এই গুরু স্বয়ং আজাজিল খান্নাস যার কাজই হল মিথ্যা বলে, প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া। ইমাম সাহেব সত্য রামকে জিজ্ঞাসা করল আপনি কী সম্প্রতি নেপালে গিয়ে ছিলেন? এই মিথ্যাবাদী দুষ্ট জিনটা নেপাল থেকে আপনার সঙ্গী হয়েছে। এই বার সত্য রামের কাছে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে গেল; নেপাল, কৈলাশ পর্বত, গুরু শিবাজী এবং মনের অশান্তি রোগ। সত্য রামের ইমাম সাহেবের কাছ থেকে অনেক কিছু জানার ছিল। কিন্তু ইমাম সাহেব সত্য রামকে প্রশ্ন করতে নিষেধ করে বলল, এখন আপনার যে অবস্থা তাতে অনেক কিছুই আপনি বুঝবেন না। আপনি বরং ধৈয ধরুন ধীরে ধীরে সব কিছুই জানতে ও বুঝতে পারবেন।

এই ঘটনার পর সত্য রাম তার হারিয়ে যাওয়া মনোবল ও আত্নবিশ্বাসকে ফিরে পায় এবং বেশ প্রফুল্ল বোধ করছে। এখন তার কাছে মনে হচ্ছে পৃথীবিটা অনেক সুন্দর স্থান। অথচ কিছুক্ষণ পূর্বে এই মনোরম সুন্দর স্থান ছেড়ে সে চলে যেতে চেয়েছিল! এ কথা চিন্তা করে অবাক হল। সে মনে মনে ভাবছে মসজিদের ইমাম সাহেব নিশ্চয় অনেক অনেক ক্ষমতাবান লোক হবে! তাই সে চিন্তা করল ইমাম সাহেবের বাসাতেই থেকে যাবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অন্তরে পরিপূর্ণ শান্তি ফিরে আসে।

হঠাৎ মধ্য রাত্রে সত্য রামের ঘুম ভেঙ্গে যায়। সত্য রামের মনে হল কেউ যেন কাঁদছে, কিন্ত কে? তার মনে হল কান্নার শব্দটা পাশের রুম থেকে আসছে। সে স্বপ্নে দেখা গুরু শিবাজীর ইমাম সাহেবের বাসা থেকে চলে যাওয়া সংক্রান্ত সতর্ক বর্তার কথা চিন্তা করে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেল। ভয় পাওয়া সত্বেও সে পা টীপে টীপে পাশের রুমে যেয়ে দেখে ইমাম সাহেব জায়নামাজে বসে তার প্রভুর কাছে দোয়া করছে আর অত্যান্ত অসহায় ভাবে কাদছে। সে ইমাম সাহেবে কাছে যেয়ে বলল, ইমাম সাহেব আপনার এত ক্ষমতা তার পরও কেন এরূপ অসহায় ভাবে কাঁদছেন। ইমাম সাহেব বলল, আমার কোন ক্ষমতা নেই, সকল ক্ষমতার অধীকারী এই মহাবিশ্ব সৃস্টা এবং এর মধ্যস্থ সকল কিছুর রক্ষা কর্তা ও পালন কর্তা একমাত্র রব আল্লাহর। ইমাম সাহেবের উত্তর শুনে বিস্ময়ে হতবাক সত্য রাম বলল, তাহলে যে এত নবী রসূল, অলী, পীরের কথা শুনি তারা কারা? ইমাম সাহেব ছোট্ট করে জবাব দেন, তারা সকলেই আল্লাহর দাস! সত্য রাম বলল, তারা যদি সকলেই একমাত্র প্রভু আল্লাহর দাস হয় তবে তো আপনি ও আমার মঝে কোন প্রার্থক্য নেই! ইমাম সাহেব এই প্রশ্নের কোন সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলল, একই ক্লাসের সবাই ছাত্র বটে কিন্তু আপনি কী মনে করেন ফাস্ট বয় এবং লাস্ট বয়ের মাঝে কী কোন প্রর্থক্য নেই! সেরূপ আমরা সবাই মানুষ বটে কিন্ত ---

দুই মাস পরের ঘটনা সত্য রাম এক আল্লাত কতৃক মনোনীত দীনকে মেনে নিয়েছে। একদিন হঠাৎ ডাক্তার শক্তির সাথে দেখা। ডাক্তার সাহেব সত্য রামের সাথে কুশল বিনিময়ের পর কথা প্রসঙ্গে বলল, আপনি যে বলেছিলেন গুরু শিবাজী বলেছে একশন মোদীর পার্টি নির্বাচনে হেরে যাবে? কিন্ত বাস্তবে তো টা ঘটেনি। সত্য রাম বলল, ডাক্তার সাহেব, আমি আর এখন সেই সত্য রাম নই। আমি এখন আব্দুর রহমান। আমার যত অশান্তির কারন আমি খুঁজে পেয়েছি। একশন মোদী ও গুরু শিবাজী এখন আমার অতীত। আমার সমস্ত মন জুরে এখন শান্তি বিরাজ করছে। তারা যেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল তার কাছেই ছিল কয়েক টনি ভারী একটি বড় পাথরের মূর্তি। ডাক্তার সাহেব বলল, সত্য রাম স্যরি, আব্দুর রহমান সাহেব আপনি কী আপনি কী এই মূর্তি্টা একটু উপরে তোলার চষ্টা করে দেখবেন! রহমান সাহেব হাসতে হাসতে মূর্তিটাকে উপরে তোলার চেষ্টা করে বলল, না হচ্ছে না ডাক্তার সাহেব। এক প্রভুতে বিশ্বাসীদের সাথে মিথ্যাবাদী খান্নাস কখনও জয়ী হতে পারে না। সে ডাক্তার অনুরোধ করে বলল, ডাক্তার সাহেব আপনি কী একবার চেষ্টা করে দেখবেন? ডাক্তার সাহেব বলল, জী আমি, ঠিক আছে, আপনি যখন বলছেন তখন না হয় চেষ্টা করেই দেখি! ডাক্তার সাহেব আতি সহজেই মূর্তিটা মাথার উপরে তুলে ফেলল!

ঘটনার আকস্মিকতায় সত্য রাম ওরফে আব্দুর রহমানের মাথায় অনেক গুল ভাবনা বয়ে গেল। সে স্পষ্টতই বুঝতে পারল অন্যন্যদের মত ডাক্তার শক্তিক খামখা মমতা জিন্দাবাদ করতে করতে কক্ষণ যে শীবাজী রূপী যমতার খপ্পরে পরে গেছে তা বুঝতেই পারেনি। আব্দুর রহমান মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল যে ভাবেই হোক ডাক্তার শক্তিকে ঐ খান্নাসের কবল থেকে রক্ষা করতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

৯৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File