রম্য রচনা যম’তা পর্ব ৬
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১৬ জুলাই, ২০১৯, ১০:৫০:২২ সকাল
ভারতের নির্বাচনে সত্য রামের ভালবাসার দল মোদির দল ক্ষমতায় এসেছে। অথচ তার অন্তরের অশান্তি দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। ধর্মীয় গুরুদের প্রতি সত্য রামের কোন ধরনের শ্রদ্ধা না থাকা সত্বেও নিরুপায় হয়ে শান্তির আশায় ভগবান জগ্যদিশের দরবারে গেল। ভগবান জ্যগদিশ অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যাক্তি। তার দরবারে পৌঁছে দেখে বিচিত্র অবস্থা। কেউ কেউ ভগবান জগ্যদিশের পায়ে সিজদা করে আশীর্বাদ নিচ্ছে। কেউ টাকা দিচ্ছে আর বিপদ আপদ থেকে বাচার জন্য মাদুর নিচ্ছে। কেউ কেউ ভগবান জগ্যদিশের নামে পাঠা মানত করে তা বলিদান করছে। নিঃসন্তান সুন্দরী নারীরা ভগবান জগ্যদিশের সাথে অনেক সময় ধরে একাকী থেকে তার আশীর্বাদ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে, সন্তান লাভের আশা নিয়ে। সত্য রাম অনেক কষ্টে ভিড়কে অতিক্রম করে ভগবান জগ্যদিশের এক চেলার কাছে যেয়ে বলল, দয়া করে আপনি কী আমাকে আপনার গুরুর সাথে সাক্ষ্যাতের ব্যাবস্থা করে দিবেন। গুরুর চতুর চ্যেলা বলল, ভগবান জগ্যদিশের দয়ায় আপনি ঠিক যায়গাতে এসেছেন। কেননা এই গুরু সকল সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। তার দরবার থেকে কেউ কখনও খালি হাতে ফেরে না। এই গুরু যেইতেই গুরু না সে তার শিস্যদের পৃথিবী থেকে প্রস্থানের পর স্বর্গে নিয়ে যাবে; অতপর ভূমিকা শেষ করে গুরুর ধান্দাবাজ চ্যেলা বলল, আপনি আপনার সমস্যার সমাধানের জন্য কত টাকা এনেছেন! এ কথা শুনে বিস্মিত সত্য রাম বলল, টাকা কেন? তার প্রশ্ন শুনে অত্যন্ত ব্যাস্ত গুরুর চ্যেলা বলল, গুরু সবার সাথে সাক্ষাৎ দেন না। আপনে এখন আসতে পারেন। সত্য রাম স্পস্টতই বুঝতে পারল এই গুরু দিয়ে তার কাজ হবে না।
সত্য রামকে তার এক বন্ধু উপদেশ দিল মুসলমানদের এক জন বিখ্যাত পীর আছে, তার নাম পীরানে পীর দস্তগীর হাকিকতে মারফৎ জালাল পীর। তার সম্পর্কে প্রচলিত আছে, সে সকল সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। তার দরবার থেকে কেউ কখনও খালী হাতে ফিরে না।
পীরানে পীর দস্তগীর হাকিকতে মারফৎ জালাল পীরের দরবারে সত্য রাম পৌছে দেখে এক এলাহি কারবার। কেউ কেউ পীরানে পীর দস্তগীর হাকিকতে মারফৎ জালাল পীরের পায়ে সিজদা করে দোয়া নিচ্ছে আর কেউ কেউ কবর/মাজারকে সিজদা করছে আর নিজের পকেট খালী করে টাকা দিচ্ছে। আবার কেউ টাকা দিচ্ছে বিপদ আপদ থেকে বাচার জন্য, তাবিজ নিচ্ছে। কেউ কেউ পীরানে পীর দস্তগীর হাকিকতে মারফৎ জালাল পীরের নামে গরু ছাগল মানত করে তা কুরবানী করছে। নিঃসন্তান সুন্দরী নারীরা পীরানে পীর দস্তগীর হাকিকতে মারফৎ জালাল পীরের সাথে অনেক সময় ধরে একাকী থেকে দোয়া নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে। সত্য রাম পীরানে পীর দস্তগীর হাকিকতে মারফৎ জালাল পীর এবং ভগবান জগ্যদিশের মাঝে কোন পার্থক্যই খুঁজে পেল না। সে স্পস্টতই বুঝতে পারল, যে কারনে ভগবান জগ্যদিশের কাছে যাওয়া মানেই প্রতারিত হওয়া ঠিক একই কারনে পীরানে পীর দস্তগীর হাকিকতে মারফৎ জালাল পীরের কাছে যাওয়া মানেই জেনে শুনে ফাঁদে পা দেওয়া। যত ভাবতে থাকল ততই সে হতাশ হয়ে পরল, সে একটা পুকুরের পারে বসে মনে মনে চিন্তা করতে থাকল হয়ত এই পুকুরে শান্ত জলে ডুবে মারা গেলেই বুঝি শান্তি পাওয়া যাবে! কিন্ত পরক্ষনে ভাবল আন্তহত্যা করলেই যে তার মন শান্তি পাবে তারেই বা নিশ্চয়তা কী? কোন সিদ্ধানে পৌঁছতে না পেরে বসে বসে কাঁদতে লাগল।
চলবে----
বিষয়: বিবিধ
৮৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন