রম্য রচনা সংবাদিক আক্কেল আলী, বিষয়ঃ লাঠির মাথায় গণতন্ত্র পর্ব ৩
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ০৪:৪২:১৯ বিকাল
আক্কেল ঘুম থেকে জেগে দেখে তার হাতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় আছে। তাই তাড়াতাড়ি সকালের নাস্তা না সেরেই বেরিয়ে পরল ইন্টারর্ভিউ নেওয়ার উদ্দেশ্য। নির্বাচন কমিশনের অফিসে পৌঁছে জানতে পাড়ল সি ই সি নির্বাচন উত্তর পিঠা উৎসবে যোগ দিয়েছে এবং তার জন্য সুসংবাদ হল সি ই সি তাকে সেই উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। আক্কেল নির্বাচন উত্তর পিঠা উৎসবে এসে সি ই সিকে তার পরিচয় দেওয়ার পর তাকে সি ই সি বলল চলুন বসে বসে পিঠা খাই আর কথা বলি। আক্কেল মনমুগ্ধকর বিভিন্ন ধরনের পিঠা, মিষ্টি মণ্ডার এক ইলাহী কারবার দেখে মনে মনে আফসোস করল আহারে যদি সংবাদিক না হয়ে নির্বাচন কমিশনে কাজ করতাম তবে আজকে ডাণ্ডার বারির পরিবর্তে মণ্ডা মিঠাই খেতে পারতাম। আক্কেল রুচিকর খাবার হাতের কাছে পেয়ে খমখা সময় নষ্ট না করে একটার পর আরেকটার স্বাদ নিতে গিয়ে তার নির্বাচন কমিশনে আসার উদ্দেশ্য প্রায় ভুলতে বসল। মনে মনে সে চিন্তা করতে থাকল কোন খাবারের স্বাদ আগে নিবে!
মজাদার খাবার খেতে খেতে আক্কেল সি ই সিকে কথায় কথায় নিজের অজান্তেই একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসল, বলল, স্যার নির্বাচনে সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীর ভুমিকাও তো কম ছল না। জয়ী পক্ষ কী শুধু আপনাদের জন্যই খাবার দাবারের এই ব্যাবস্থা করেছে না কী তাদের জন্যও করেছে? সি ই সি বলল বলেন কী, বিভিন্ন ধরনের লাঠিয়াল বাহিনীর সাহায্য ছাড়া কী এই বিজয় সম্ভব ছিল? তাদের জন্য যদি খাবার দাবারের ব্যাবস্থা না করে তো কাদের জন্য করবে। আর তাদেরকে জামাই আদর করবেনাইবা কেন, এই খাবার দাবারের পয়সা তো তাদের পকেট থেকে আসছে না, আসছে তো আম জনতার পকেট থেকে। আপনি কী লাঠি মার্কার লোকদের এতটাই বেইনসাফ মনে করেছেন। তাদের জন্য সারা বাংলাদেশব্যাপী খাবার দাবারের ইলাহী ব্যাবস্থা করা হয়েছ। মোরগ পোলাউ, কোরমা, রেজালা, রোস্ট, কপ্তা কাবাব আরও কতকী? আক্কেল বলল স্যার বুঝতে পেরেছি বাংলাদেশে লাঠি মার্কা বিজয়ী হওয়ার পর দান্ডাধারীদের আবার সুদিন শুরু হয়ে গিয়েছে।
স্যার আমার একগাদা প্রশ্ন ছিল যদি আপনি আপনার মুল্যবান সময় নষ্ট করে তার উত্তর দিতেন। সি ই সি বলল আমি জানি আপনি কী প্রশ্ন করবেন? এই নির্বাচন কতটুকু ফেয়ার হয়েছ? লাঠিয়াল বাহিনীর দৌরাত্বে লেভেল প্লেইং ফিল্ড ছিল কী না? গণহারে ভোটের আগের রাত্রে লাঠি মার্কায় ছিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়েছে কী না?---- আক্কেল সি ই সিকে থামিয়ে দিয়ে বলল, জী স্যার আপনি ঠিকই ধরেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে বিভিন্ন সোর্স থেকে আপনার যে বক্তব্য পেয়েছি তা এবং বাস্তব অবস্থার মাঝে কোন মিল নেই। সি ই সি আক্কেলকে বলল, যদি দুই একটা উদাহরণ দিতেন। আক্কেল বলল যেমন ধরেন নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে আপনি বলেছেন, “ আমি গর্বের সাথে বলতে পারি গত ৪৭ বৎসরে বাংলাদেশের ইতিহাশে এই ধরনের নির্বাচনী পরিবেশ কখনও বর্তমান ছিল না।” এ কথা শুনে সি ই সি আক্কেলকে বলল, আমি কোথায় ভুল বললাম। আপনার কথা অনুসারে আমি যদি ভুল বলে থাকি তাহলে আপনি আমাকে তথ্য দিন বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে কোন নির্বাচনের আগে এই ধরনের পরিবেশ ছিল? আক্কেল চিন্তা করে দেখল কথা ঠিক। বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে কোন নির্বাচনের আগে এই ধরনের হয়রানীমূলক খারাপ পরিবেশ বর্তমান ছিল না। ফলে আক্কেল ব্যাধ্য হয়ে বলল, জী স্যার আমার বুঝতে ভুল হয়েছে আপনার কথার মাঝে কোন ভুল নাই। তারপর সে বলল, স্যার দুট বিষয়, এক লেভেল প্লেইং ফিল্ড এবং গণহারে ভোটের আগের রাত্রে লাঠি মার্কায় ছিল মেরে বাক্স ভর্তি- এই দুই বিষয়ে যদি আপনার বক্তব্য একটু ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলতেন তাহলে অনেক বিষয় আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যেত।
লেভেল প্লেইং ফিল্ড সম্পর্কে আমার বক্তব্য পরিষ্কার। একজন এম পি কিংবা মন্ত্রী কিংবা ক্ষমতাশীল দলের নেতার যে সুযোগ সুভিদা পাওয়ার কথা তা কী একজন উপজেলা চেয়ারম্যান কিংবা বিরোধী দলের নেতা দাবী করতে পারে। না পাবে, না পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। যেভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যে সুযোগ সুভিদা পাবে তা কী বাংলাদেশের একজন ফকীর দাবী করতে পারে! এম পি বা মন্ত্রী বা ক্ষমতাশীল দলের নেতারা সব লাভজনক পজিশনের শীর্ষ পজিশনে আছে তাতে তো কোন সন্দেহ নেই। আপনি হয়ত বলতে পারেন উপজেলা চেয়ারম্যানও তো লাভজনক পজিশন, এই ক্ষেত্রে আপনাকে মনে রাখতে হবে এক, উপজেলা চেয়ারম্যান পজিশন ঐ সকল শীর্ষ লাভজনক পজিশনের তুলনা হ’ল মাটির প্রদীপের তুলনায় সূর্যর মত। দুই, উপজেলা চেয়ারম্যানদেরকে আইন করে কান ধরে পদত্যাগ করার পরই না আমরা তাদের নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছি! পদত্যাগ করার পর কোন ব্যাক্তি তার জন্য সুযোগ সুভিদা দাবী করেই কী ভাবে, এটা লজ্জার ব্যাপার। --- আক্কেল সি ই সিকে থামিয়ে দিয়ে বলল, স্যার এই বিষয়টা আমার কাছে এবার আতিব পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। আপনি বরং মাঝ রাত্রে ভোট ডাকাতী সম্পর্কে--- সি ই সি আক্কেলকে থামিয়ে দিয়ে বলল, আপনি ভোট ডাকাতী বলছেন কেন? লাঠিয়াল বাহীনী কী ভোটের বাক্স নিয়ে গিয়ে ছিল না কেন্দ্রে রেখে গিয়ে ছিল। আক্কেল বলল সরি স্যার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমার মনে হয় এটাকে আমরা পরোপকার বলতে পারি। সি ই সি বলল এইতো সঠিক লাইনে এসেছেন। আসলে হয়েছে কী বাঙালীর ভাল করতে নাই। আমাদের লাঠিয়াল ভায়েরা দেখল এই শীতের দিনে মানুষ কষ্ট করে ভোট কেন্দ্রে যাবে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াবে, আংগুলে কালি লাগাবে আরও কত কী। তাই তারা দয়া করে নিজেদের ঘুমকে হারাম করে লক্ষ লক্ষ ব্যালটে ছিল মেরেছে। এই সবইতো করেছে আম জনতার ভালর জন্য। এত ভাল করে কী লাভ হইল! তারা এখন উঠে পরে লেগেছে লাঠিয়াল ভাইদের ভুল ধরার জন্য। খুলনার এক কেন্দ্রে সর্বমোট ভোটারের যে সংখ্যা তার চেয়ে মাত্র ২০০০ ব্যালট পেপারে বেশী ছিল মেরেছে তারা বিদ্যুৎসাহিত হয়ে কিংবা বোতল খেয়ে। খুবই ছোট ভুল!! তাতেই হৈ হৈ শুরু করে দিয়েছে। আরে গাধার ঘরে গাধা তোরা কী দেখছ না বেচারারা নিজেদের ঘুমকে হারাম করে রাত জেগে সারা দেশের হাজার হাজার কেন্দ্রে লক্ষ লক্ষ ছিল মেরেছে। সেখানে এই সামান্য ভুল কী কোন ভুল হতে পারে! আক্কেল সি ই সির পাগলা ব্যাখ্যা শুনে বলল, স্যার আপনার কথা শুনার পর সব বিষয় এখন আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। আপনার কাছে সর্বশেষে যে বিষয়টি জানতে চাচ্ছি তা হল, তাদের এই ছোট খাট ভুলের মাসুল দিবে কে? সি ই সি বলল, এই ভুল তো আমরা করি নাই করেছে লাঠিয়াল ভাইয়েরা। তারা বোতল খেয়ে ২০০০ বেশী ব্যালটে ছিল মেরেছে যা আমাদের নির্ভুল গণনায় ধরা পরেছে। কিন্ত মিডিয়া তা প্রকাশ করেছ। এখন সমস্যা হল কোন ভাবেই ভুল যে লাঠিয়াল ভাইয়েরা করেছে তা আমরা প্রকাশ করতে পারি না। বুঝতেই তো পারছেন ভুল যে তারা করেছে তা প্রকাশ করলে এই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করতে হবে যা অসম্ভব। এই জন্য যারা এই সংবাদ প্রকাশ করেছে তাদেরকেই আমরা ফাঁসাচ্ছি যদিও তাদের কোন দোষ নেই! আক্কেল বলল তার মানে সাংবাদিক ভাইদের এর মাসুল দিতে হবে। সি ই সি বলল, জী হ্যাঁ। আবার আক্কেল বলল কেমনে ফাঁসাবেন? কোন আইনে? সি ই সি বলল, আইন কানুনের কী অভাব পরছে? আমাদের কী এত অনাড়ী মনে করেছেন। তবে এ ক্ষত্রে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নতুন আইনে ফাসাবো। আক্কলে বলল, তার মানে ডিজিটাল মিডীয়া ল। সি ই সি মাথা ঝুকিয়ে তা সমর্থ জানাল।
বিষয়: বিবিধ
৫৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন