রম্য রচনা সংবাদিক আক্কেল আলীর নির্বাচনী খোয়াব

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৭:০৯:৪৫ সন্ধ্যা

সংবাদীক আক্কেল আলী অসুস্থ হাতে তার মোবাইল ফোনটা রিসিভ করল। ঐ পাশ থেকে কোন ধরনের ভূমিকা ছাড়া উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, আক্কেল ভাই আমি লিয়াকত আলীর মেয়ে ছেলছাবিল বলছি। কালকে আমার নির্বাচনী মিটিং এ আপনাকে আসতেই হবে! আক্কলে বলল কেন কেন? লিয়াকত চাচা নির্বাচন করছে না কেন? সে না ১০১টা কেসে জামিন পেয়ে গেছে। লিয়াকতের মেয়ে ছেলছাবিল বলল, আক্কেল ভাই আপনার চাচা নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার সাথে সাথে আরেকটা নতুন কেছে ফাইসা গেছে। আক্কেল বলল, বুঝছি ১০২ নম্বরি কেসে ফাইসা গেছে। আক্কেল বলল আপনি চিন্তা করবেন না, আমি বেচে থাকলে অবশ্যই আপনার মিটিং এ আসবো।

বীরোধী জোটের মিটীং। বক্তব্য দিচ্ছে লিয়াকত আলীর মেয়ে ছেলছাবিল। ছেলছাবিল বলছে, আজকের বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদের জগাদল পাথরের হাত থেকে মুক্ত করে বহু দলীয় গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থ্যায় ফিরিয়ে আনার জন্য আমার এই চেষ্টা। সংবাদীক ভাইদের লেখার স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নিজের জনবাজী রেখে আমার এই চেষ্টা। হত্যা খুন গুম—তার কথা শেষ করার আগেই একদল লোক অস্ত্র লাঠি সোটা সহকারে মিটিং এ হামলা করে বসে। আক্কেল কিছু বুঝে উঠার আগেই তিন জন লোক তাকে ঘিরে এলো পাথারি রড ও লাঠির সাহায্য পিটানো শুরু করে এবং বলতে থাকে হারামজাদা সংবাদিক দেশের কল্যাণ করবা, বুঝাইতে লাগতাছি। সংবাদীকের ঘরে সংবাদীক আজকে তোর খাল না তুলছি তো আমার নাম খারাবী না। এই সময়ে একজন পুলিশ অফিসার সেখানে এসে খারাবীকে বলে উস্তাদ কী করতাছেন, মারা যাবে তো, সময় খারাব, নির্বাচনের পর যা করার কইরেন। এখন আমাদের হাতে ছেড়ে দিন। আপনার হয়ে আইনগত ভাবে যা সাইজ করার আমরা করব নে খন। সাইজের পরও আইনগত ভাবে এই শালার বাচন নাই, কোটে হাযির করে লাল ঘরে পাঠানোর ব্যাবস্থা করতাম লাগছি! আক্কেলের কপাল ভাল থানায় পৌঁছে পুলিসের পিটুনি খাওয়ার আগেই সেই থানার ইনচার্চ তার বন্ধু তাকে দেখে ফেলে ফলে সে মুজলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়ে যায়।

আক্কেল মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে দেশ গোল্লায় যাক সে আর কোন ভাবেই এই নির্বাচনের সাথে নিজেকে জড়িত করবে না। ই-মেলের সাহায্যে তার অসুস্থতার কথা জানিয়ে ছুটির দরখাস্ত করে বাড়ীতে চলে যায়। বাডীতে যেয়ে টেলিভিশন চালিয়ে দেয়। যে চ্যেনেল ঘুরায় সেখানেই দেখে বর্তমান রেজীমের জয় জয়কার। চেনেল ঘুরাতে ঘুরাতে এক জায়গায় এসে তার চোখ আটকে যায়। এই চ্যানেলটি দেখাচ্ছে কী ভাবে তুর্কি নেতা এরদোগান শুধু মাত্র আম জনতাকে সাথে নিয়ে বিশ্বের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর একটি সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে। তার দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করে। দেখতে দেখতে আক্কেল ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল ১১টা আক্কেল তার দুর্বল শরীর নিয়ে বিছনায় গড়াগড়ী দিচ্ছে। হঠাৎ বিরাট শোরগোল শুনে আক্কেল দ্রত বিছনা ছেড়ে বাহিরে বের হয়। আক্কেল দেখতে পায় লোকজন দলে দলে লাঠি সোটা হাতে ধর ধর ভোট ডাকাত, ধর ধর ভোট ডাকাইত বলে ভোট কেন্দ্রর দিকে দৌড়াছে। আক্কেল কালকে করা তার প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে যায়। দুর্বল শরীরে কোথা থেকে যেন বল ফিরে পায়। সে হাতের কাছে কিছু না পেয়ে একটি কলা গাছকে উপড়ে ফলে তা নিয়ে সবার সাথে যোগ দেয়।

এক ধাক্কায় আক্কেলের ঘুম ভেঙ্গে যায়। তার বন্ধু বলল এমন দিনে কী তুমি ঘুমিয়ে থাকবে! আক্কেল বলল কেন কেন? তার বন্ধু কোন কথা না বলে তখনও চলতে থাকা টেলিভিশ্নের দিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেখানে আক্কেল দেখতে পায় বাংলাদেশ আবার গণতন্ত্রের বিজয় ঘটেছে, জনতার বিজয় ঘটেছে। আক্কেল পাগলের মত একটার পর একটা চ্যানের ঘুরাতে থাকে কিন্ত সব চ্যানেলের একটাই নিউজ। এবার আক্কেলের মুখে বিরাট একটা হাসি দেখা দেয়।

বিষয়: বিবিধ

৫৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File