আক্কেল আলী (রম্য রচনা)- বিষয় অতি বুঝবান, ছাগলা পাগলা আলুপুরি হুজুর – পর্ব ৫
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ০৫:৩৮:১৯ বিকাল
জাবেদ আলুপুরী হুজুরকে বলল, হযরত ইব্রাহিম () প্রচারিত তাওহীদবাদী (ইসলাম) ধর্মের অনুসরণ যে ব্যাক্তি করে, তাকে ‘মুসলীম’ বলে এবং ঐ ‘মুসলীম’ নামটি আল্লাহের নির্দেশে ইব্রাহিম () দিয়ে ছিলেন। আমার এই জানার মাঝে কী কোন ভুল আছে হুজুর? আলুপুরী হুজুর বলল, না তোমার জানার মাঝে আমি কোন ভুল পাই নাই। জাবেদ আলুপুরী হুজুরকে বলল, আপনি মতামত দিলেন ইব্রাহিম () প্রচারিতব্য তাওহীদবাদী (ইসলাম) ধর্মের অনুসারীদেরকে অর্থাৎ তার উম্মাকে মুসলিম বলা হত; আমার প্রশ্ন হ’ল আমাদেরকে অর্থাৎ নবী মহাম্মদ ()প্রচারিত তাওহীদবাদী (ইসলাম) ধর্মের অনুসরণকারীদেরকেও কেন মুসলিম বলা হয়? আলুপুরী হুজুর বলল, আমাদের নবীও ইব্রাহিম () প্রচারিত তাওহীদবাদী (ইসলাম) ধর্মের প্রচার করে ছিলেন। তবে এক্ষেত্রে বুঝার বিষয় হ’ল সময়ের প্রার্থক্য হেতু তাদের আনিত শরিয়া ভিন্ন ভিন্ন ছিল।
জাবেদ বলল, আলুপুরি হুজুর ‘মাযহাব’ কী সাহাবাদের যুগে ছিল। আলুপুরী হুজুর বলল, ‘মাযহাব’ সহজ বিষয় নয় যার তার পক্ষে এটা বুঝা সম্ভব নয়! যে এ দিকে ফুঁ দিতাম যাইবে তার মুখ পুইরা কুক হইয়া যাইবে। আলুপুরীর এই কথা শুনে জাবেদ বলল, বাপরে বাব, মাযহাব তো বিরাট কঠিন বিষয়। এই কারনেই মনে হচ্ছে মাযহাব নিয়ে এত টানা টানি, তর্ক বিতর্ক চলছ? আলুপুরী হুজুর এই কথায় কান না দিয়ে বলল, তবে মাযহাব নিয়ে তোমার এই প্রশ্নের কারন আমি বুইঝা গেছি। জাবেদ বলল, হুজুর আপনি যখন বুইঝাই গেছেন তখন আমাদেরকে কী এই সম্পর্কে কিছু বলবেন না? আলুপুরী হুজুর বলল, তুমি চিন্তা কইর না, আমি যখন একবার বুইঝা গেছি তোমাকে আমি না বুঝাইয়া আমি বাড়ী ফিরতাম না। তবে ভালা কইরা শুইনা নাও, মাযহাব নিয়ে এই বিভ্রান্তের মূল হোতা হল কুরআন সুন্নার জ্ঞান শূন্য অজ্ঞ পণ্ডিত জাকির নায়েক। আক্কেল আলুপুরীর এই কথা শুনে বলল, হজুর আমি জাকির নায়েকের অনেক লেকচার শুনেছি, সে তো কুরআন হাদিস জানে? প্রতি উত্তরে আলুপুরী হুজুর বলল, কুরআন হাদিস শুধু জানলেই হল তা বুঝতে হইব না। আর তা বুঝতে হইলে মাথায় ঘিলু থাহন লাগব না। এই পণ্ডিতের তো এই গুলর কিছুই নাই!!! এই পণ্ডিত যা বুঝে, তা হ’ল বড় একটা ঘোড়ার ডিম!
এই অজ্ঞ পণ্ডিত তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের নবী না হানাফী (হানাফি মাযহাবের অনুসারী) ছিলেন, না শাফেয়ী (শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী) ছিলেন, না মালেকী ছিলেন, না হাম্বলী ছিলেন। তিনি তো শুধু মাত্র একজন মুসলমান(আল্লাহর নির্দেশে ইব্রাহিম প্রচারিত তাওহীদবাদী ধর্মের অনুসরনকারী) ছিলেন। নবী যে ভাবে একজন মুসলমান ছিলেন নবীর সমস্ত উম্মদকে তেমনি মুসলমান (আল্লাহর নির্দেশে ইব্রাহিম প্রচারিত তাওহীদবাদী ধর্মের অনুসরনকারী) হতে হবে। নবী যে ভাবে একজন হানিফী ছিলেন না, যে ভাবে একজন শাফিয়ী ছিলেন না, যে ভাবে একজন মালিকী ছিলেন না, যে ভাবে একজন হাম্বল ছিলেন না। সে ভাবে তার উম্মদকে (মুসলমানদেরকে) হানিফী, সাফিয়ী, মালেকী এবং হাম্বলী হওয়া যাবে না (অর্থৎ অন্ধভাবে এদের পথকে অনুসরণ না করে অন্ধভাবে নবীর পথকে অনুসরণ করতে হবে ) তিনি তো শুধু মাত্র একজন মুসলমান(আল্লাহর নির্দেশে শুধু মাত্র ইব্রাহিম প্রচারিত তাওহীদবাদী ধর্মের অনুসরনকারী) ছিলেন। তেমনি ভাবে নবী () সমস্ত উম্মদকে মুসলমান(আল্লাহর নির্দেশে শুধু মাত্র ইব্রাহিম প্রচারিত তাওহীদবাদী ধর্মের অনুসরনকারী) হতে হবে। তার এই চটকদার কথাই বিভ্রান্তের মূল কারন। কেননা লোকজন তার এই কথা শুনে ভাবে বাপরে বাপ না জানি কত বড় পণ্ডিত।
জাকির নায়েকের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে আমাদের বুঝতে হবে মাযহাব শব্দটির অর্থ কী। মাযহাব শব্দটির দুইটি অর্থ আছে। একটি অর্থ হ’ল মতামত, রায়, ব্যাখ্যা এবং অপর অর্থটি হল পথ। মাযহাবের অর্থ যদি মতামত ধরা হয় তবে তোমার যে প্রশ্ন ছিল সাহাবাদের সময়ে কী মাযহাব ছিল; তার উত্তর হবে হ্যাঁ সাহাবাদের সময়ে মাযহাব ছিল। বিষয়টি যদি বুঝে থাক তবে বলত সাহাবাদের সময়ে মাযহাব বর্তমান ছিল কোন অর্থে, ‘মতামত’ না ‘পথ’ অর্থে। জাবেদ বলল, হুজুর এখন আমার কাছে বিষয়টি অতিব পরিষ্কার হয়েছে, সাহাবাদের সময়ে অবশ্যই মাযহাব ছিল তবে তা ‘পথ’ নয় ‘মতামত’ অর্থে; এর সাথে জাবেদ যোগ করে বলল, হুজুর হানিফী, শাফিয়ী, হাম্বলী এবং মালিকী () দের মাযহাব বা মতামত নিয়ে এতো টানা টানি, তর্ক বিতর্কের তো কোন কারন আমি দেখছি না? কী হুজুর ঠিক বলি নাই? আলূপুরী হুজুর বলল, না ঠিক বল নাই। তুমিও তো অজ্ঞ পণ্ডিত জাকির নায়েকের ন্যায় বেশী বুঝলা! একমাত্র এই চার ইমামের ক্ষেত্রে মাযহাব শব্দটির অর্থ হবে পথ, কোন ভাবেই মতামত নয়। এই জ্ঞান তুমি মক্কা মদিনা থেকেও পাবা না! এই জ্ঞান পাইতে হইলে তোমাকে আসতে হবে দেওবন্দিদের কাছে!!! এই জন্যই আমি বলে ছিলাম মাযহাব কঠিন বিষয়। যে এ দিকে ফুঁ দিতাম যাইবে তার মুখ পুইরা কুক হইয়া যাইবে।
অজ্ঞ পণ্ডিত জাকির নায়েক যে প্রশ্ন করলেন, আমাদের নবী না হানাফী (হানাফি মাযহাবের অনুসারী) ছিলেন, না শাফেয়ী (শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী) ছিলেন, না মালেকী ছিলেন, না হাম্বলী ছিলেন। তিনি তো শুধু মাত্র একজন মুসলমান (আল্লাহর নির্দেশে ইব্রাহিম প্রচারিত তাওহীদবাদী ধর্মের অনুসরনকারী) ছিলেন। তার এই মূর্খতা সুলভ প্রশ্নের জবাব হল। আমাদের নবী কী সাহাবা ছিলেন, নাকি তা’বেয়ী (সাহাবাদের অনুসারী) ছিলেন!! আমার এই প্রশ্নের যেই জবাব জাকির নায়েকের প্রশ্নের সেই জবাব! জাবেদের বন্ধূ আক্কেল বলল, হুজুর আমরা জাকির নায়েকের চেয়েও অনেক গুন বেশী গণ্ডমূর্খ মানুষ। সাহাবা, তা’বেয়ী, বুঝি না। দয়া করে যদি একটু সহজ করে বুঝাইয়া বলতেন তবে একটু উপকার হত। আলুপুরী হুজুর বলল, আমি সহজ করে বিষয়টি বুঝাইতে চেষ্টা করতাম লাগছি আশা করি বুঝতে পারবা। ছোট করে বললে সাহাবা বলতে বুঝায় যারা নবী করিম () অনুসরণ করত অর্থাৎ তার সঙ্গী/সাথী। আর সাহাবাদের যারা অনুসরণ করত তাদেরকে বলে তা’বেয়ী । এখন আমি সহজ করে জাকির নায়েকের প্রশ্নের উত্তরটা আবার বলে দিচ্ছি। উত্তরটা হল, আমাদের নবী কী তার সঙ্গী/ সাথী (সাহাবা) ছিলেন। না কী সাহাবাদের সঙ্গী/সাথী (তা’বেয়ী) ছিলেন, না কী ইমাম ছিলেন, নাকি তার পিতা ছিলেন, নাকি তার ভাই ছিলেন !!! এই প্রশ্নের উত্তর যা, জাকির নায়েকের প্রশ্নেরও সেই উত্তর।
অতি বুঝদার আলুপুরী হুজুরের এই কথা শুনে জাবেদের বন্ধু আক্কেল বলল, দোস্ত হুনছ হুজুরের কথা। জাবেদ বলল, আক্কেল রে আগে তো আমি জানতাম আলুপুরী হুজুর পাগলা যুক্তি দেয় কিন্তু এখন তো দেখছি এই চিজের বুদ্ধিও ছাগলা।
বিষয়: বিবিধ
৭৪৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন