আক্কেল আলী (রম্য রচনা)- বিষয় অতি বুঝবান, ছাগলা পাগলা আলুপুরি হুজুর – পর্ব ৩
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০১ অক্টোবর, ২০১৮, ০৬:৫৪:৪৯ সকাল
আক্কেল আলী জাবেদকে দেখিয়ে আলুপুরী হুজুরকে বলল হুজুর আমার এই বন্ধু সুদূর আমেরিকা থেকে এসেছে আপনার কাছ থেকে কিছু এলেম হাসিল করার জন্য। আলুপুরী হুজুর খুশীতে বাগ বাগ হয়ে বলল মাশআল্লাহ আল্লাহ তোমার জ্ঞান অর্জনের কঠিন পথকে সহজ করে দিক। কোন প্রশ্ন থাকলে আমাকে বলতে পার। জাবেদ বলল হুজুর আমার জানা মতে পিলার অফ ইসলাম (ইসলামের ভিত্তি বা বুনিয়াদ) পাঁচটি। আলুপুরী হুজুর বলল তোমার জানার মধ্যে কোন ভুল নাই। জাবেদ বলল এই বুনিয়াদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব পূর্ণ খুঁটি হল আস শাহাদা। কিন্তু বাংলাদেশে এসে দেখি এই শাহাদাতে গোলমাল এর জিকির ‘ইল্লেললা’ শব্দে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। এর কারন কী? আলুপুরী হুজুর বলল, এই সম্পর্কে আমি আগেই বলেছি তোমার বন্ধুদের। তাদের কাছে থেকে জেনে নিও। বরং তোমরা চোরমনা পীরের কাছ থেকে এই বিষয়ে তার ব্যাখ্যা জেনে নেও।
চোরমনা পীর বলল, ইল্লেলল্লা জিকির আমাদের বাপ দাদারা করেছে। নবী করিম () এবং সাহাবা আকরামরা এই জিকির করেনি ঠিক কিন্তু আমাদের মুরুব্বি আকরামরা বছরের পর বছর ধরে এই জিকির করেছে। তারা কী ভাবে ভুল করে! তারা কী বুঝে কম বুঝত! অথচ এই গাধার দল লা’মাযাহাবীরা বলছে তারা ভুল ছিল। তাদের এই উস্তাদী কথা কি আমরা মানব, না মানতে পারি, না মানা যায়! শুধু মাত্র নবী করিম () এবং তার সাহাবারা; তা’বেই এবং তাবে’তবিইরা এই জিকির করেনি বলে জিকির তুলে আমাদের মাঝে অনেক উল্লুকা পাঠা এই জিকিরের বিরোধীতা করছে। অতীতে যারা এই জিকিরের বিরোধিতা করত তাদেরকে আমাদের মুরুব্বি আকরামরা বলত জাহেল! আর বলবে নাইবা কেন, তাদের ভুল ধরবে আর তারা বসে বসে আঙ্গুর খাব এবং আংগুল চুছবে তা কী হয়।
জাবেদ বলল পীর হুজুর কিছু সময়ের জন্য যদি এই জিকিরকে কেউ মেনেও নেয়, তারপর তো এই প্রশ্ন এসে যাবে, যেহেতু এই জিকির আল্লহর রসূল করে নাই তাই এই যিকির করলে যে ছওয়াব হবে তা বুঝব কী ভাবে? চোরমনা হুজুর এই বার রাগান্বিত স্বরে বলল, যারা বলে ইল্লেললা জিকির করলে ছওয়াব হবে না, সেই সকল বেকুব লা মাযাহাবি গাধাকে বলি, গাধা ইল্লেললা জিকির কী শুধু কালেমার অংশ, এটা তো কুরআনেরও অংশ। কোন এবারতের অর্থ যদি তাইউম থাকে সেটা যদি কুরআনের আয়াত হয় তবে ছওয়াব হবে। আর মাফুন(অর্থ) যদি নিদৃস্ট না হয় তবেও ছওয়াব হবে। যেমন সুরা বাকারাতে আছে আলিফ, লাম, মিম যালিকা কিতাব----। আলিফ, লাম, মিম এর অর্থ জানে এই ধরনের কুতুব দুনিয়াতে কে আছে আথচ এটা কুরআনের অংশ হওয়ায় প্রতিটা অক্ষর পড়ার জন্য দশটি করে নেকি হবে। সেই ভাবে ইল্লেললাতে যত গুল অক্ষর আছে তা বলার জন্যও দশগুন করে ছওয়াব হবে। লা মাযহাবিদের নাহুর এলেম নাই, ছরফর এলেম নাই, এমন কী বাংলার জ্ঞানও নাই তাই তারা ইল্লেললা জিকিরের বিরোধিতা করছে।
জাবেদ বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে বুঝার জন্য জিজ্ঞাসা করল, হুজুর কোরআন তিলাওয়াত করার জন্য কী কোন নিয়ম কানুন আছে? পীর হুজুর বলল, বলল কুরআন আল্লাহর কালাম এটা তিলাওয়াতের অনেক নিয়ম কানুন আছে, যেমন উজু ছাড়া এটা ধরা যাবে না। তিলাওয়াতের আগে আউজু বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ্--- পরতে হবে----- আবার শুধু তাজবী মেনে রুল মেনে তিলাওয়াত করলেই হবে না, তিলাওয়াত করতে হবে তারতীলের সাথে।
জাবেদ বলল হুজুর আপনার কথা অনুসারে কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে তারতীলের সাথে কন্তু ইল্লেললা জিকির তো তারতিলের সাথে কেউ করে না। এটা তো কুরআনের সানে বেয়াদপি ছাড়া আর কিছুই নয়। পীর হুজুর বলল, এটারও সমাধান আছে। যখন জিকির করবা তখন এটাকে কালেমার অংশ মনে করে দেওয়ানা মস্তানা হয়ে চিল্লাবাল্লা করে পড়বা কিন্তু যখন ছওয়াবের চিন্তা মাথায় আনবা তখন ভাববা এটা কুরআনের আংশ! আশা করি এই বার বুঝতে পেরেছ। জাবেদ বলল বুঝে যে এসেছে এমনও না আবার বুঝি যে নাই এমনও না। আপনার কথা শুনে মনের মাঝে আরেকটা প্রশ্ন উদয় হয়েছে। হুজুর বলল বলে ফেল কোন সমস্যা নেই। এই প্রশ্নের যে ভাবে সমাধান দিয়েছি আন্যটা তো একই ভাবে দিব।
জাবেদ বলল, হুজুর কুরআনে তো সব কিছুর বর্ণনা এসেছে। ইবলিশ, শায়াতিন, ফেরাউন, হামান, হাতী, মধু মক্ষিকা, মাকড়, পিপড়া এমন কী মশরেকদের দেব দেবীদের নাম। তবে কী কেউ ইবলিশ, শায়াতিন, ফেরাউন--- জিকির করলে কুরআনের আয়াত হওয়ায় এর জন্য ছওয়াব পাবে। পীর হুজুর বলল, দেখ বাবা এই গুল জিকির করলে যে ছওয়াব হবে এমনও নয় আবার হবে না যে তেমনও নয়। আক্কেল মানের জন্য ঈশারা কাফি। তোমাকে এর থেকে যা বুঝার বুঝে নিতে হবে। প্রতি উত্তরে জাবেদ বলল, যা বুঝার তা আমি ঠিকই বুঝে নিয়েছি।
বিষয়: বিবিধ
৭১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন