আক্কেল আলী (রম্য রচনা)- বিষয় অতি বুঝবান, ছাগলা পাগলা আলুপুরি হুজুর – পর্ব ১
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৭:৩৮:৪৪ সকাল
গভীর মনোযোগের সাথে আক্কেল আলী ও খেজুর আলী ডা জাকির নায়েকের সিডি দেখছে। সিডির বিষয় ‘ইসলাম এবং বিজ্ঞান’। ডা জাকির নায়েক, তাসলিমা নাসরিন বলেছে, কুরআনে আছে এই তথ্য যে, সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। যা প্রচলিত বিজ্ঞান বিরোধী, তাই আমরা কী করে কুরআন মানি। ডা. জাকির নায়েক, কিন্তু কুরআনে এই ধরনের কোন কথা নেই, ----- কুরআনের ঐ আয়াত আমাদের বলেছে সূর্য ও পৃথিবী নিজ নিজ অক্ষের চারিদিকে পরিভ্রমণ করে----। আক্কেল আলী, জাকির নায়েকের কথার মাথা মুন্ড কিছু বুঝতে না পেরে বলল। খেজুররে উস্তাদ ছাড়া শুধু সিডি দেখে বা বই পড়ে যদি জ্ঞান অর্জন করা যাইত তবে আর স্কুল কলেজের দরকার পড়ত নানে। খেজুরও আক্কেলের সাথে একমত প্রশন করে বলল, সিডি দেখে, বই পড়ে বেকার সময় নষ্ট না করে চল যাই বাংলাদেশের অলীকূল শিরোমনি, অতি বুঝবান, ছাগলা পাগলা ইসলাম আলুপুরি ওরফে ছাগু-পাগু আলুপুরির কাছে।
আতি সংক্ষিপ্তাকারে এই আলুপুরির মিলাত হল। আলুপুরির বাবা আলুপুরের একজন বিখ্যাত আলেমে দীন ছিলেন। তিনি ছেলে হওয়ার সু-সংবাদ শুনে খুশীতে আটখানা হয়ে ছেলের নাম রেখে ছিলেন নূর ইসলাম। ভেবে ছিলেন তার ছেলে ইসলামের নূরকে সমগ্র বিশ্বে বিকশিত করবে। কিন্ত মানুষ ভাবে এক ঘটে আরেক। এই নূর ইসলাম ছোট বেলাতে ছাগলের সাথে খেলতে পছন্দ করত এবং ছাগলের দুধ খেত। অতুটুকু বয়েস হলে কী হবে, আমাদের নূর ইসলাম সেই বয়সেই ছিল বুদ্ধির ঢেঁকি। সে যুক্তি দিত নবী করিম () আরবে জন্ম গ্রহণ করে ছিলেন বলে মেষ চরাতেন ও মেষের দুধ খেতেন। কিন্ত আমি যেহেতু বাংলাদেশে আছি এবং এখানে অত মেষ নাই কিন্তু ছাগলের তো কমতি নেই তাই ছাগলের সাথে খেলি ও ছাগলের দুধ খাই! সে তার স্কুলের ভূগোলের শিক্ষককে এই বলে জ্ঞান দান করত যে, স্যার এই মহাবিশ্বের ‘উপর’ (আসমান) এবং ‘নীচ’ (জমিন) বলতে কিছু নেই। কেননা আমাদের জন্য যেটা ‘আকাশ’ আমেরিকার জন্য সেটা আর আমেরিকার জন্য যেটা ‘জমিন’ আমাদের জন্য সেটা ‘আকাশ’! পদার্থ বিদ্যার শিক্ষককে এই বলে জ্ঞান দান করত যে, স্যার আপনি যে চেয়ারে বসে আছেন, কেউ যদি নীচের দিক থেকে গর্ত করে আপনার চিয়ারের পা ধরে টান দেয় তবে যে অবস্থা হবে সেই অবস্থাটা স্থান শূন্য(স্পেসলেস) বুঝার আদর্শ উদাহরণ! তার এই ধরনের পাগলা যুক্তি ও ছাগল প্রেমের জন্য ক্রমে ক্রমে তার নাম থেকে বাপের দেওয়া ‘নূর’ শব্দটি হারিয়ে যেয়ে তার স্থান দখল করে ছাগলা পাগলা ইসলাম। পরে এই নামটি আরও ছোট হয়ে হয়ে যায় ছাগু-পাগু ইসলাম। সে যাই হোক আমরা আসল কাহীনিতে ফিরে আসি।
ছাগু-পাগু ইসলাম আলুপুরির দরবারে খেজুর এবং আক্কেল হাযির হয়ে চারিদিকে পানের পিগ ছড়ানো ছিটানো দেখতে পেয়ে কৌতুহল বশত হুজুরের সারগেদকে জিজ্ঞাসা করল, হুজুর কী পান খায়, সারগেদ বলল, ভাইজান কন কী, পান তো পান পানের সাথে ‘হেইডাও’ খায়। খেজুর বিস্ময়ের সাথে সারগেদকে জিজ্ঞাসা করল, ভাইরে এর মুর্তজা যদি একটু খোলসা কইরা বুঝাইয়া বলতেন তবে আমরাও হুজুরকে অনুসরণ করতে পারতাম। সারগেদ করুন কণ্ঠে বলল, ভাইরে সেই চেষ্টা কী আর কম করছি, কিন্ত হুজুরের সাফ কথা, মিয়া তুমি কুরআন হেফজ করে খালি হাফেজ না বনছ কিন্তু কুরআনের শানে নুজুল, মাক্কী আয়াত মাদানী আয়াত, মনছুক ----- এই তান কী বুঝ? কয় লক্ষ হাদীস জান? কয়টা হাদীসের রাবীর মিলাদ জান---। সারগেদের কথা শুনে আক্কেল খেজুরকে বলল, দেখছ দেখছ অতি বুঝদার হুজুরের কী কিছিমের এলেমদার কথা, এই তান আমাদের মাথায় ঢুকবোনানে; হুজুরের আজানত কাম কাইজ বুইঝা আমাদের কোন লাভ নাই। তার চেয়ে আমরা জাকির নায়েকের সিডি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। ঠিক সেই সময়ে ছাগু পাগু ইসলাম আলুপুরির সারগেদ চা আর ডালপুরী নিয়ে হাযির হয়ে বলল, আপনারা বসে বসে ডালপুরি খান হুজুর ‘ইল্লেললাহ’ জিকির শেষ করে আসতাছে। আক্কেল আলী হুজুরের সারগেদকে উদ্দেশ্য করে বলল, হুজুরের মহান নামের সাথে আলুপুরি যুক্ত আছে কিন্ত আপনি আমাদের আলুপুরী না দিয়ে ডালপুড়ী দিচ্ছেন কেন? সারগেদ বলল, অপেক্ষা করুন অপেক্ষা করুন ডালপুড়ী থ্রুরি আলুপুরী হুজুর এসে এর মুর্তজা বলবেনে।
তসবী হাতে আলুপুরী হুজুর আসার পর আক্কলে আলী ও খেজুর আলীর সাথে সালাম-কালাম বিনিময়ের পর্ব শেষ হওয়ার পর, আক্কেল আলী বলল হুজুর আমার একটা প্রশ্ন ছিল, সেটা হল আপনার মহান নামের সাথে যুক্ত আছে আলুপুরী কিন্তু আপনার সারগেদ আমাদের খেতে দিল ডালপুরি। অতি বুঝদার আলুপুরী হুজুর বলল, তোমার প্রশ্ন আর বলতে হবে নানে আমি বুঝতাম পারছি, আসলে হয়েছে কী, অনেকেই আমার সাথে দেখা করতে এসে আমাকে আলুপুরী হুজুর না বলে বলে ফেলে ডালপুরি হুজুর। সেই জন্য আমি তাদের ভুলকে বুঝাবার জন্য এই ব্যাবস্থা করেছি, অর্থাৎ যে মাল তোমরা এখানে এসে খাইছ তা হল ডালপুরি আর যে মালের সাথে দেখা করতে এসেছ তা হল আলুপুরী। বিষয়টা তোমাদের না জানা থাকার কারনে তোমরা আমাকে এই প্রশ্নটা করেছ। কৌতূহল বশত খেজুর বলল হুজুর আপনি আসার সময়ে তসবী হাতে ‘বিল্লেললাহ’ ‘বিল্লেললাহ’ বলতে বলতে আসছিলেন এর মুর্তজা কী? আলুপুরী হুজুর তিন বার আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আওরে তারপর ধমকের স্বরে বলল, মিয়া এই বয়সে কানে কম শুন, আমি বিল্লেললাহ বলি নাই বরং ইল্লেলল্লাহ ইল্লেল্লালহ যিকির করতাছিলাম । আক্কেল আলুপুরীকে বলল, হুজুর ‘লাইলাহা ইল্লেললাহ মুহাম্মাদ রাসুল্লুলাহ’ এই যিকিরের কথা শুনেছি কিন্তু ‘ইল্লেললাহ’ এই যিকিরের কথা তো কখনও শুনি নাই। আলুপুরী হুজুর বলল, আরে মিয়া শুনবা কেমতে এই যিকিরতো আল্লাহর নবী কখনও করে নাই , না করছে তার অনুসারী সাহাবা আকরাম আর না করছে তা’বেই, এমন কী তাবে’তা’বিইরাও করে নাই। কথা বুঝে আইছে। আক্কেল বলল তাতো বুঝলাম কিন্ত এই যিকির আসলো কেমনে?
আলুপুরী হুজুর বলল, সবই কী আল্লাহর নবী খোলসা করে বইলা যাইবো, আমাদের মাথায় কী ঘিলু কম দিছে। বাংলাদেশের মাদ্রাসা পড়া হুজুররা তাদের মাথার এই আল্লাহ্ প্রদত্ত মূল্যবান ঘিলুকে কাজে লাগাইয়া আল্লাহর নবীর সহি হাদিস, --- ইসকীর ঘাস ছাড়া---- উপর ভিত্তি করে এবং আরবী ব্যাকারনের সাহায্য নিয়ে এই যিকির আবিস্কার করেছি। আজকে যেখানে সারা বিশ্বের শেখরা এই যিকির আবিস্কার করতে ব্যার্থ সেখানে বাংলার কাঠ মোল্লরা এটা আবিস্কার করেছে। এ বার কী বিষয়টা বুঝে আসছে? আক্কেল ও খেজুর যদিও আলুপুরি হুজুরের কথার মাথা মুন্ড কিছুই বুঝল না, তা সত্বেও বলল হুজুর বিষয়টা অতিব সহজ এবং পরিষ্কার, না বুঝার তো কোন কারন দেখছি না। এর প্রতি উত্তরে আলুপুরী হুজুর বলল, বিষয়টা যদি তোমরা বুঝে থাক তবে বলত, এই দুনীয়াতে কাদের মর্তবা বেশী, বাংলাদেশের মাদ্রাসা পাস করা আলেমদের না সারা মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন ইউনি যেমন মদিনা বা আল আযহার--- থেকে পাস করা শেখদের? এই বার আক্কেল ও খেজুর আলী এক সাথে উচ্চ স্বরে বলে উঠল বাংলাদেশের মাদ্রাসা থেকে পাশ কারা কাঠ মোল্লাদের মুর্তজা বেশী!
বিষয়: বিবিধ
৭৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন