নির্বাচন ২০১৮, রম্য রচনা শেষ পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৩:২০:২৭ দুপুর
রাজশাহী দুপর ১৫ঃ ৩০
ভোট শেষ। ভোট গণনার পূর্ব মুহুতে মজিদ বুঝতে পারল ব্যাগ বন্টনে বড় ধরণের গড় বড় হয়ে গেছে। সে সাথে সাথে শুকুর খানকে ফোন করল কিন্ত ফোনের সুইজ অফ থাকায় তাকে না পেয়ে শুকুরের ভাই মুকুর খানকে ফোন করল। মুকুরকে বলল, বড় ধরণের ভুল হয়ে গেছে তুমি যেখান থেকে পার তাড়াতাড়ি শুকুর ভাইকে সাথে করে নিয়ে সোজা আমাদের কেন্দ্রে চলে আস।
শুকুর আর আক্কেল আলী মদের প্রভাব জনিত কারনে খামখা বকেই চলছে। শুকুরের পাশে বসা জনৈক একজনের মোবাইল ফোনটা ক্রমাগত বেজেই চলছে সম্ভবত একই কারনে সেই ব্যাক্তি ফোনটা রিসিভ করছে না। কিন্তু একই টেবিলের অপর প্রান্তে বসা আক্কেল মদের প্রভাব জনিত কারনে মনে করল বাজছে শুকুর খানের ফোন, আক্কেল বলল শুকুর ভাই, দেখছেন দেখছেন, আপনার মোবাইলটা কী কিছিমের বেয়াদপ সুইজ বন্ধ করে রেখেছেন তবুও বেজেই চলছে। আমাদের কথার মাঝে ডীস্টব, কেমনডা লাগে। এইডারে হালান, তাড়াতারি হালান। আপদ বিদায় করেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপদ বিদায় করার মত করে শুকুর ফোনটা পকেট থেকে বের করে ছুরে ফেলে দিল। ঠিক সেই মুহুতে শুকুরের ভাই মুকুর বারে পৌঁছে শুকুরের পেছেন থেকে শুকুর ভাই শুকুর ভাই বলে ডাক দিল। শুকুর বলল আরে কোন বিপদে পরলাম, বেয়াদপ ফোনটা ফেলে দেওয়ার পরও আবার এখানে আসল কী ভাবে। মুকুর বলল ফোন না ভাইয়া আমি, তারপর সবকিছু বুঝিয়ে বলে আক্কেল সহ কেন্দ্রের দিকে রওয়ানা দিল।
শুকুর খান কেন্দ্রে পৌঁছে মজিদের সাথে কথা বলে বুঝল জরুরী ভিত্তিতে আকাশ পাতাল স্কুল কেন্দ্রে যেয়ে চারটি ব্যালট ভর্তি বাক্সকে গায়েব করে দিতে হবে। কেননা সেই কেন্দ্রে ভোটার লিস্ট অনুসারে সর্বমোট যত ভোটার আছে তার চেয়েও মাত্র ৫০০ ‘ছিল যুক্ত ব্যালট’ বেশী ব্যালট বক্সে আছে! তার চেয়েও বড় সমস্যা হল আমেরিকা ভিত্তিক সংস্থা Stand for Democracy (SFD) এর প্রধান ডঃ ফিলিপ স্মিত ঐ কেন্দ্রে ভোট গণনার সময়ে উপস্থিত থাকবে নির্বাচন কমিশনের প্রধান মিস্টার বেহুদার সাথে। শুকুরের সাথে শলা পরামর্শ শেষ করে মজিদ শুকুরের ভাই মুকুরকে বলল, আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চারটা ব্যালট ভর্তি বাক্স গায়েব করে দিতে হবে। মুকুর বলল মজিদ ভাই এটা কোন ব্যাপার না আমি এখুনি ব্যাবস্থা করছি। ঠিক সেই সময়ে শুকুরের ডাক শুনে মজিদ পাশের রুমে যেয়ে শুকুরের কাছ থেকে গাড়ীর চাবি নিয়ে আগের স্থানে এসে দেখে মুকুর নাই। নাই তো নাই। ১৫-১৬ মিনিট পরে মুকুর এসে বলে ভাইজান কাজ খতম। মজিদ বলল তুমি তো দেরী করে দিছ। কাজ খতম মানে কী। মুকুর বলল, মানে চারটা বাক্স আমি চিরদিনের মত গায়েব করে ফেলিছি। মজিদ স্প্রং এর মত লাফ দিয়ে বলল, এ সব আবল তাবল কী বলতাছ তুমি, তোমারে আমি এই কেন্দ্রের কথা বলেছি। এই কেন্দ্রে তো সমস্যা নেই, সমস্যা তো আকাশ পাতাল স্কুল কেন্দ্রে। কথা না শুনে, না বুঝে পাগলা কুত্তার মত তড়পাইতে কইছে কে তোমারে। মিয়া এমনেতেই বিপদের মাঝে আছি, আর তুমি আইসা বিপদটা কমাবা তো দূরের কথা আরও বাড়াইয়া দিলা। মুকুর বলল স্যরি ভাই, স্যরি ভাই। যা হওয়ার তো হয়ে গেছে, এখন কী করব? মজিদ বলল, স্যরি ফরি বলে আর কী হইব, এই কেন্দ্রে অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় অস্বাভাবিক কম ভোট কাস্ট হবে; এটা ঠেকানোর কোন পথ খোলা নাই। তবে একটা কাজ করতে পার নিজের জুতা খুলে নিজের কপালে নিজে বারি মারতে পার। না জানি কোন সমস্যায় না পরতে যাচ্ছি এই কথা মনে করে।
শুকুর খান মজিদকে বলল, সময় কম আকাশ পাতাল কেন্দ্রে যাওয়ার কথা ভুলে যাও। ঐ কেন্দ্রে বোতল নিমাই আছে। ওকে ফোন করে চারটী বাক্স গায়েব করে দিতে বল। মজিদ বলল বোতল নিমায়ের ওপর কী ভাবে ভরসা করি। এর আগের বার তো আমরা তার জন্য ভোট বাতিলের রেকর্ড গরে ছিলাম। তার উপর কোন ভরসা কারা যায় না। শুকুর বলল, ওর উপরে ভরসা করা ছাড়া আমাদের কাছে আর কোন পথ খোলা নেই। সময় কম তাড়াতাড়ি ফোন লাগাও।
আকাশ পাতাল স্কুল কেন্দ্র, ফোন মজিদের সাথে কথা বলার পর বোতল নিমাই আম্বা শাহী দলের মেয়র প্রার্থী শামছুজ্জামান ক্লিনটনের ফোন পেল। ক্লিনটনের সাথে কথা বলার পর পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারল। কিন্ত দুই জনের সাথে ফোন কথা বলার ফলে বোতল নিমাই বোতলের প্রভাব জনিত কারনে তাল হাড়িয়ে ৪ টার পরিবর্তে মাত্র দুইটা ব্যালট ভর্তি বাক্স গায়েব করল। সংবাদিক সহ Stand for Democracy (SFD)এর প্রধান ডঃ ফিলিপ স্মিত এর উপস্থিতে সুশৃংখল ভাবে ভোট গণনা শেষ হল। গণনার ফলাফল থেকে দেখা গেল মোট ভোট পড়েছে ৯৭.৯৯% । Stand for Democracy (SFD)এর প্রধান ডঃ ফিলিপ স্মিত নির্বাচন কমিশনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাকে বলল, আপনারা তো অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন, আমি নিজের চোখে না দেখল তো বিশ্বাস করা তো কষ্টকর ছিল, কেননা যে সকল দেশে ভোট দেওয়া নাগরিকদের জন্য বাধ্যতা মূলক সেখানেও এত বেশী ভোট পড়ে না বিভিন্ন কারনে যেমন ভোটারের মৃত্যু, ভোটারের অসুস্থতা, ভোটারের আরেক দেশে শহরে হিজরত--- । প্রতি উত্তরে নির্বাচন কমিশনের প্রধান মিস্টার বেহুদা তাকে বলল, জী এর সবই আমাদের দেশ নেত্রীর কারনে সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, কে আমাদের ভোট দিল আর না দিল সে দিকে আমরা তাকাই না। আমরা শুধু চাই জনগণ যেন তাদের ভোট অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় এবং নির্ভয়ে তাদের ভোট অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। ভোট গ্রহণ যেন হয় অবাধ ও নিরপেক্ষ।
তেরাউদ্দিন তেরা তার বস মতিলালকে ফোন করে আজকের ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করল। মতিলাল তেরাকে বলল, তুমি যে কেন্দ্রে ভোট কারচুপির কথা বলতেছ সেই কেন্দ্রেই তো সব চেয়ে কম ভোট পড়েছে, মাত্র ১৯%। অথচ আকাশ পাতাল স্কুল কেন্দ্রে একটা ছোট ঘটনার কথা বাদ দিলে কোন বিশৃংখলা ছাড়া বিপুল উৎশাহ্ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ভোট কাস্ট হয়েছে অবাধ ও নিরপেক্ষ ভাবে অথচ সেখানে অস্বাভাবিক, ৯৭.৯৯% ভোট পরেছে! মতিলালা বলল, এই ঘাফলার পিছনে কী কারন আছে যদি না ধরতে পার সংবাদিক হয়ে লাভ কী?
বিষয়: বিবিধ
৭১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন