নির্বাচন ২০১৮, রম্য রচনা পর্ব ৪
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১৯ আগস্ট, ২০১৮, ০৭:৪২:৪০ সকাল
রাজশাহী দুপর ১৫ঃ ৩০
শুকুর খান মজিদকে দায়িত্ব বুঝিয়ে বারে চলে যাওয়ার পর মজিদ অনেকগুল ছিল মারা ব্যালট ব্যাগ তার গাড়ীতে উঠিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা দিল। গন্তব্য পথে একটি কেন্দ্র থেমে আরিফের সাথে কথা বলতে যেয়ে বিপদ ডেকে আনল। এই কেন্দ্রে প্রথম কালোর সংবাদিক তেরাউদ্দিন তেরা ঢুকে ভিডিও করা শুরু করে দিয়েছে। মজিদ মনে মনে প্রমোদ গুনল বলল খাইছে, শালায় তো ডুবাইবো । মজিদ এবার রাগান্বিত ভাবে আরিফকে বলল, এই তেরা শালা--- ভোট কেন্দ্র ঢুকে কেমনে। আরিফ বলল মজিদ ভাই শালায় মতিলালের শিস্য না তক্কে তক্কে চালাক। সাজ সকালে ভোট কেন্দ্র খুলতে না খুলতে তেরাউদ্দিন তেরা হাযির। আমাদের ফর্মুলা অনুসরণ করে বললাম, সংবাদিকদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকার নিয়ম সকাল ৯টার পর। আপনি মাত্র ১ ঘণ্টা আগে এসেছেন। তেরা বলল ঠিক আছে এক ঘণ্টা পর আসতেছি। মজিদ বলল, তারপর। সে যখন ৯টার সময়ে আসল তখন বললাম, স্যরি তেরাউদ্দিন তেরা ভাই ভোট কেন্দ্রে সংবাদিকদের ঢুকার নিয়ম সকাল ৮ঃ০০ মিঃ থেকে ৮ঃ ৫৫ মিঃ এর মাঝে কিন্তু আপনি পাঁচ মিনিট দেরী করে ফেলেছেন। সে তেরাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তারপর বলল, তেরার ঘরের তেরা এর পর কী করছে জানেন, তখন ভোট কেন্দ্রে লোকজনে ভরপুর এর মাঝে সে আগের রেকর্ডকৃত আমাদের কথা তার মোবাইল থেকে উচ্চ স্বঃরে বাজানো শুরু করে। আর অমনেই লোকজন ধর ধর করে তেরে আসে আমার দিকে, ভাগ্য গুনে আমার বিরোধী দল করা খালাত ভাই কেন্দ্রে উপস্থিত থাকায় সে যাত্রা বেচে যাই।
মজিদ বলল, কিন্তু সে ভিডিও করা বন্ধ না করলে এই ব্যাগের মাল ব্যালট বাক্সের মাঝে চালান দিব কেমন করে। এই সময়ে মজিদের মাথায় একটা নতুন বুদ্ধি খেলে গেল। সে কেন্দ্রের পাহারায় নিয়োজিত পুলিশটাকে কাছে ডেকে বলল, আমাকে চিনতে পেরেছ। পুলিশটা বলল, স্যার আপনাকে না চিনলে আর কাকে চিনব। আপনি হাম্বা লীগের খাম্বা মজিদ না। এই কথা বলে পুলিশটা বুঝতে পারল ভুল হয়ে গেছে কিন্ত ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে। মজিদ ভয়ানক ভাবে রেগে গেলেও নিজের কাজ উদ্ধারের জন্য অনেক কষ্টে রাগ দমন করে বলল, ঠিক আছে ঠিক আছে। তারপর ভিডিও করাতে ব্যাস্ত তেরাউদ্দিনের দিকে ঈশারা করে বলল, মাল চালান দিতে হবে যে, ঐ হ-- পুত্রের একটা ব্যাবস্থা কর। পুলিশটা বলল স্যার আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমার জন্য অতীব সহজ কাজ, আমি ব্যাবস্থা করতাছি। মজিদ কাজ উদ্ধারের জন্য বিনীত ভাবে বলল পুলিশ ভাই সময় কম তাড়াতাড়ি করেন বুঝন তো টাকা পয়সা কোন বিষয় না। পুলিশটা বলল স্যার সংবাদিক মানুষ তো তাই বলছিলাম কী তাড়াতাড়ি ফল পেতে হলে যদি অনুমতি দেন তো শালারে একটু দাওয়া দেওয়া দরকার। মজিদ বলল, সংবাদিক ফংবাদিক, এটা কোন বিষয়নি, ডলা লাগলে দিবা। পুলিশটা আস্কারা পেয়ে দ্বিগুন উৎসাহিত হয়ে বলল ভাই বলছিলাম কী শালায় যে তেরার তেরা --, মজিদ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল আবার কী? পুলিশ বলল না মানি বলছিলাম কী শালায় যে তেরার তেরা একটা কড়া ডলা না দিলে কাম হইব নানে । মজিদ বলল, কড়া ডলা লাগলে দিবা, সবই কী আমি বলে দিব। কথা বুঝ নাই।
মুহূর্তের মধ্যে কেন্দ্রের মাঝে বিরাট ধরণের গোলমাল বেধে গেল। যেই পুলিশটা তেরার দিকে তেরে আসল, তেরা কী ঘটতে যাচ্ছে তা ঠিক বুঝতে পেরে কৌশলে পুলিশটাকে ধাক্কা মরে একজন ভদ্র মহিলার গায়ের উপরে ফেলে দিয়ে দ্রুত সরে পরল। ভদ্র মহিলা বাচাউ বাচাউ বলে চিৎকার দিলে ভোট দিতে আসা কয়েকজন যুবক ছেলে দ্রুত মহিলার দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করল, আপা কী হয়েছে। এই সময়ে পাশ থেকে একজন মুরুব্বী মন্তব্য করল, আহারে দেশটা গেল, রক্ষক যদি ভক্ষক হয়, এই দেশের আর কী হবে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তেরা পুলিশটার কালার চেপে ধরে তার গালের উপর জোরে একটা থাপ্পড় মেরে বলল, বদমাইশি করার আর জায়গা পাওনা, ফাজিল কোথাকার। আর যায় কোথায় পুলিশটা পাবলিকের মারের চোটে অচিরেই জ্ঞান হাড়াল। ফলে তেরা সহ সকলেই কেন্দ্র ছেড়ে পালাল। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছিলকৃত ব্যালট গুল ব্যালট বাক্সে চালান দিয়ে দেওয়া হল ঠিকই কিন্তু তা এই কেন্দ্রের জন্য আনায়ন করা ব্যালট ভর্তি ব্যাগ থেকে নয় বরং অন্য কেন্দ্রের জন্য নিরধারিত ব্যাগ থেকে। বস্তত এই গোলেমালে সবার অলখ্যে ব্যাগ বন্টনে চরম ধরণের ভুল হল এবং এক কেন্দ্রের জন্য আনায়ন কৃত ব্যাগ আরেক কেন্দ্রে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর পুলিশটার জ্ঞান ফিরলে, মজিদ তাকে বলল, সহজ কাজ, কড়া ডলা দিমু, মিয়া তেরার তো চুলটা পর্যন্ত স্পশ করতে পারলা না। পার না -----একে তো ব্যাথায় মারা যাচ্ছে তার উপর মজিদের এই কথা শুনে পূলিশটা হিতাহিত জ্ঞান হাড়িয়ে রাগে গড় গড় করতে করতে বলল, ---- তেরার ঘরে তেরা তোরে একবার মওকা মত পাইয়া নেই, তোর থোতা ভাঙ্গিয়া হাতে না ধারাইছি তো আমার নাম হাফিজ না, খাম্বা মজিদ ভাই এ আমি আপনাকে বলে রাখলাম। মজিদ এবার রেগে গিয়ে পুলিশটাকে জোরে একটা থাপ্পড় মরে বলল, আমারে খাম্বা মজিদ বলা হচ্ছে, আমার সাথে বেয়াদপী...। ওজনদার থাপ্পড়ের প্রতিক্রিয়ায় পূলিশটা আবার জ্ঞান হাড়াল।
সংবিধিবদ্ধ সতরকরনঃ এই রম্য রচনার চরিত্রগুল কাল্পনিক, তাই কারো সাথে মিলের কোন প্রশ্নই উঠে না।
বিষয়: বিবিধ
৭১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন