নির্বাচন ২০১৮, রম্য রচনা পর্ব ৩

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১২ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:৩২:০৪ সন্ধ্যা

রাজশাহী, সকাল ১১ঃ ৩০

আক্কেল চপার থেকে নেমে দেখে মাত্র সকাল ১১:৩০। জীবনের এই প্রথম তার চপারে উঠা এবং প্রথম বারই মুগ্ধ। বিশেষ ভাবে বরিশাল থেকে এত দ্রুত রাজশাহী এসে পৌছেছে মনে হতেই মনটা খুশীতে নেচে উঠল। মনে মনে চিন্তা করছে নিশ্চয় এখানে বরিশালের মত অবস্থা দেখতে হবে না। তার মাথার মাঝে কেবলই ঘুড়ে ফিরে তার তালত ভাই কুতুবউদ্দিনের একটি কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে, শেখ শরাবের জয়ী হওয়ার মত আমরা যথেষ্ট পরিমাণ মেয়রের ব্যালট পেপার রেখে দিয়ে ছিলাম তা সত্বেও......। এই কথার কী যে অর্থ তা তার মাথায় আসছে না। আবার তাড়াহুড়ার জন্য তালত ভাইকেও জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গেছে। এরূপ সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কক্ষণ যে একটি ভোট কেন্দ্রে ঢুকে পরেছে খেয়াল করল না। কেন্দ্রে মাঝে বিরাট শোরগোলে তার চিন্তার ব্যাঘাত ঘটাল । কয়েক জন যুবক ভোটার একজন অতীব নিরীহ পোলিং অফিসারকে বলছে , মেয়রের ব্যালট পেপার নেই মানে, ফাইজলামি পাইছেন, আমাদের সাথে তামশা করতাছেন। আরেজন বলল, বেত ছাড়া কাজ হবে না। পোলিং অফিসার বলল, ভাই বেত, বেত কেন? আরেক জন যুবক বলল, আবার জিগায়(জিজ্ঞাসা করে) বেত কেন? যে যুবক বেতের কথা বলছিল, সে বলল, ভায়েরা আমার বোনেরা আমার, এই শালায় নাম্বার ওয়ান আম্বা শাহীর লোক, ব্যালট দিব ক্যামতে (কীভাবে), চাচায় আগেই তো ছিল মেরে বাক্সে ভরে রেখেছে। পোলিং অফিসার বলল, বাবারা আমি একটি ইস্কুলের হেড মাষ্টার, তোমরা আমার ছাত্রের মত। যে ছেলেটা বেত আনতে বলেছিল সে বলল, ওরে আমার হেড মাষ্টারের ঘরে হেড মাষ্টার, আহারে ইস্কুলে পড়ার সময়ে আমার টিচার আমাকে খামখা গরু ছাগলের মত বেতাইয়া গায়ের খাল বাকলা কিছু ঠিক রাখে নাই। বেত দিয়া কাম হইব নানে, এই শালারে বাঁশ ডলা দিতে হইব, এই যা বড় দেইখা আইকাওয়ালা বাঁশ নিয়া আয়। পোলিং অফিসার সাহায্যের আসায় আম্বা শাহী লোকদের দুই চোখ দিয়ে খুঁজতে থাকল কিন্ত ব্যালট পেপ্যারের ন্যায় তারাও যেন কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছে। প্রচণ্ড চাপের মুখে নিরীহ পোলিং অফিসার জ্ঞান হাড়িয়ে মাটিতে লুটীয়ে পড়ল। আক্কেল এক দৌরে যুবকদের কাছে যেয়ে বলল, আপনারা বেচারাকে মেরে ফেললেন। যুবেকেরা আক্কেলের কথায় যেন সম্বিত ফিরে পেল, কি ঘটছে তা বুঝতে পেরে এক দৌরে সেখান থেকে পালাল। ডাক্তার এসে পোলিং অফিসারকে মৃত ঘোষণা করল। আক্কেলের মনটা খারাপ হয়ে গেল। মনে মনে ঠিক করল আজ আর কোন ভোট কেন্দ্রে যাবে না।

আক্কেল বিষণ্ণ মনে হাটতে ছিল হঠাৎ ব্যালট চাই, ব্যালট চাই শব্দ কনে গেল কিন্তু সামনে তাকিয়ে কিছু দেখতে পেল না। এই বার আক্কেল সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেল। ব্যালট ব্যালট ব্যালট, আমার মাথা কী খারাপ হয়ে গেল, আমি কী পাগল হয়ে যাচ্ছি। আরেক বার শব্দটা হতেই আক্কেল বুঝল শব্দটা আসছে তার সমনের দিক থেকে নয় বরং পিছনের দিক থেকে। আক্কেল দ্রুত পিছনের দিকে ঘুরে লোকটাকে দেখে আবাক হয়ে গেল। আরে তিনিইত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বিরোধী দলের মেয়র প্রার্থী, সাদ্দাম হোসেন চুলবুল। আক্কেল বলল, চুলবুল ভাই যে, এখানে বসে ব্যালট ব্যালট জিকির করছেন কেন? চুলবুল বলল, ‘প্রতিবাদ’ করতেছি? আক্কেল বলল, কিসের প্রতিবাদ। চুলবুল বলল, এই শহরের মেয়র নির্বাচনের জন্য আজকে ভোট হচ্ছে কিন্ত কোন ব্যালট পেপারের হাদীস পাচ্ছি না! আমি পোলিং অফিসারকে বললাম ভোট দিব, ব্যালট পেপার দিন কিন্ত পোলিং অফিসার বলল তার কাছে কোন ব্যালট পেপার নেই! আক্কেল বলল আজানত কারবার ভোট কেন্দ্র আছে কিন্ত ব্যালট নাই! চুলবুল ভাই ব্যালট গায়েব হইল কোনখানে। চুলবুল একটু রেগে গিয়ে বলল, ভাই ব্যালট কোথায় গায়েব হইছে তা নিয়ে খামাখা মাথা না ঘামিয়ে নিজের ভাল চান তো বাসায় চলে যান নয়ত ব্যালটের মত আপনিও গায়েব হয়ে যাবেন।

আক্কেল মনে মনে ঠিক করল, আর রাজশাহী থেকে কাজ নাই। দিন থাকতে থাকতে সিলেটে চলে যাবে। তাই সে সেখান থেকে সোজা ট্রেন স্টেশনের উদ্দেশে হাটা ধরল। আক্কেল ভাই আক্কেল ভাই, ডাক শুনে আক্কেল পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখে শুকুর খান। আক্কেল বলল, শুকুর ভাই যে, রাজশাহীতে কবে আসলেন। শুকুর বলল, তুমিত জান যে জায়গায় নির্বাচন সে জায়গাতেই আমি। আক্কেল বলল শুকুর ভাই আপনার সাথে দেখা হয়ে ভাল হয়েছ। আপনিতো নির্বাচনের উস্তাদ, ব্যালট পেপার সম্পর্কে আমার একখান প্রশ্ন ছিল? শুকুর বলল, বলে ফেলেন কোন সমস্যা নেই। আক্কেল বলল শুকুর ভাই সারা রাজশাহী চেষেও মেয়র ব্যালটের দেখা মিলছে না? এই ব্যালট কোথায়? শুকুর খান বলল আমার সাথে চল তোমাকে দেখাচ্ছি!

আক্কেলের এবার চুলবুলের কথা মনে পড়ল। মনে মনে ভয় পেয়ে ঘাবরে গেল, হায় হায় কোন বিপদের মধ্যেই না আইসা পড়ছি। খামখা নিজের বিপদ নিজেই ডাইকা আনছি। সে ব্যালট গায়েবের ঘটনা মুখে বললেই তো পারত। সাথে করে নিয়ে যাওয়ার মানে কী? হায় হায় মরছি রে, এবার ব্যালটের সাথে সাথে আমিই না গায়েব হয়ে যাই। আক্কেল বলল, শুকুর ভাই আমার একটু তাড়া আছে যে, সিলেটে যেতে হবে যে, দেরী হ’লে ট্রেন মিস করব। শুকুর বলল, আক্কেল ভাই ট্রেন ফ্রেনের গুলী মারেন। আমাদের একটি চপার আজকে সিলেট যাবে। তার সাথে আপনাকে ফ্রী পাঠিয়ে দিবনে। আক্কেল চিন্তা করল আল্লাহ্‌ মালুম কোথায় ফ্রী পাঠাবে, কায়মন বাক্যে আল্লহর কাছে দোয়া করল হে আল্লাহ্‌ গাফুরুর রাহীম এই গুনাগার বান্দার সকল গুনা খাতা মাফ করে দিও, তারপর অনিচ্ছা সত্বেও শুকুরের সাথে পা বাড়াল।

আক্কেল বিরাট বড় একটি হল রুমে ঢুকে অবাক হয়ে গেল। চারিদিকে শুধু ব্যালট আর ব্যালট। আক্কেল বলল শুকুর ভাই খমখা ব্যালট পেপার কেন্দ্রে না রেখে এখানে এনে ছিল মেরে লাভ কী? শুকুর বলল, কেন্দ্রে ছিল মারা আর এখানে শান্তিপূর্ণ ভাবে ছিল মারা কী এক হল। যাকগিয়ে অত বুঝে কাজ নেই। তোমার সিলেটে যাওয়ার চপার আসতে এখনও তিন ঘণ্টা বাকী। চল বারে যাই। এই সময়ে শুকুরের ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠল। শুকুর ফোনটা রিসিভ করে বলল, জী কোন ভুল ভ্রান্তি নাই। --- জী জী---, করিম নিছে ১০০০, রহিম ২০০০ , মজিদ ৩০০০---। --- হ্যাঁ হ্যাঁ --- ফোন রেখে দিল। আক্কেল বলল, শুকুর ভাই ফোনটা বন্ধ করেন তার পর চলেন বারে যাই। শুকুর বলল, আক্কেল এতক্ষণে একটা কথার মত কথা বলছ। এর আগের নির্বাচনে বারে যেয়ে আমার একটা ফোন খোয়া গেছে। এই ফোনটা আমার অনেক প্রিয়, একে হারাতে চাই না। ফোন বন্ধ করে বারের উদ্দেশ্য দুজনে বের হয়ে পরল।

সংবিধিবদ্ধ সতরকরনঃ এই রম্য রচনার চরিত্রগুল কাল্পনিক, তাই কারো সাথে মিলের কোন প্রশ্নই উঠে না।

বিষয়: বিবিধ

৭৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File