নির্বাচন ২০১৮, রম্য রচনা পর্ব ২
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১০ আগস্ট, ২০১৮, ০৭:১৭:৩৪ সন্ধ্যা
আক্কেল বরিশাল সিটি মেয়র নির্বাচনের আগের দিন তার জন্য আগে থেকে বুক করা একটা হোটেলে এসে উঠেছে। বরিশালে আসার পর থেকে একটা নতুন শব্দ বেশী করে শুনতে পাচ্ছে, “পাখাওয়ালা ইসলাম”, ‘পাখাওয়ালা ইসলাম এই’, ‘পাখাওয়ালা ইসলাম সেই’। পাখাওয়ালা ইসলামই বরিশাল সিটি মেয়র হচ্ছে। আক্কেল কৌতুহল দমন করতে না পেরে হোটেলের দাড়ওয়ানকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারল, স্থানীয় পীরানে পীর হক্কানী পীর গাউসুল আজম হযরত বব্জলুল করিমের দল হুকুমতে ইসলামী আন্দোলন যার নির্বাচনী প্রতিক হল হাত পাখা। স্থানীয় লোকজন তার নাম দিয়েছে পাখাওয়ালা ইসলাম।
ভোটের দিন সকাল; আক্কেল আলী ভোটের জন্য কেন্দ্র খুলে দেওয়া মাত্র কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে কোন কারচুপী বা অনিয়ম দেখতে না পেয়ে তার তালত ভাইকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করল, ভাই আপনি যে বললেন আগেই নির্বাচনের ফলাফল হয়ে গেছে, আমি তো তার কোন আলামত দেখছি না। কুতুবউদ্দিন বলল, দেখবা দেখবা সময় হলেই দেখতে পাবা। আক্কেল বলল, ভাই এর মুর্তজা তো কিছু বুঝতাম পারতাছি না। সময় মত এর মুর্তজা বুঝতে পারবা, চুপচাপ দেখে যাও। আক্কেল একটি কেন্দ্র থেকে বের হয়ে একটু দূরে একটি বড় জটলা দেখতে পেয়ে সেখানে যেয়ে দেখল, আম্বা শাহী দলের মেয়র প্রার্থী শেখ শরাবকে ঘিরে তার জামচারা ভোট কেন্দ্র সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানান দিচ্ছে। এক চামচা বলল, শেখ শরাব ভাই, মনে হচ্ছে এবার আমাদের প্রতীক পেট্টল বোমার জিতার কোন চান্স নেই,পাখাওয়ালা ইসলামই এইবার জিতবে। এই কথা শুনা মাত্র বিদ্যুৎ গতিতে শেখ শরাব ঐ চামচার পাছায় জোরে কষে একটা লাত্তি মেরে রাগে গড় গড় করতে করতে বলল, হারামজাদা গাদ্দার কোহানকার আমারটা খেয়ে “পাখাওয়ালা ইসলামের” গুণগান। ঐ চামচা বাবাগো বাবাগো গেলাম রে গেলাম রে বলে এক দৌড়ে সেখান থেকে পলায়ন করল। কিন্তু শেখ শরাবের লোকজন এত সহজে “পাখাওয়ালা ইসলামের” কাছে হাড় মানতে রাজী নয়। তারা জানে হাড়ল তো মরল। তাদের সব সুযোগ সুভিধা সীমিত হয়ে পড়বে। তাই আরেকজন চামচা একটু সাহস সঞ্জয় করে বলল, হুজুর ঐ হারামজাদা পীর বলেছে তারে ছাড়া অন্য কাউকে ভোট দেওয়া মুসলমানদের জন্য হারাম। অন্য আরেক জন চামচা আর একটু আগ বাড়িয়ে বলল, আমি শুনিছি ঐ হাক্কানী পীর তার মুরিদদের বলেছ তোমরা শুধু কেন্দ্রে যেয়ে বসে থাক, তবেই কেল্লাহ ফাতেহ, কেউ আমাকে ভোট না দিলেও জিনরা এসে আমার মার্কায় ছিল মেরে বাক্স পূর্ণ করবে। এই কথা শুনা মাত্র শেখ শরাব রাগে দুঃখে বলল, না শান্তি নাই কেয়ামতে ইসলামকে বরিশাল ছাড়া করতে না করতে “পাখাওয়ালা ইসলাম” হাযির হয়ে গেছে। ভাইরা সময় নষ্ট করার মত সময় এখন আমাদের হাতে নাই। জিন ভুত আসার আগেই তাড়াতারি ভোট কেন্দ্র দখন করেন আর পীরের মুরিদদের আজকের জন্য পাছায় লাত্তি গুতা মেরে এলাকা ছাড়া করেন।
মুহুতের মধ্যে বরিশালের সব কেন্দ্র শেখ শরাবের লোকদের দখলে চলে গেল। পীরের মুরিদরা হাক্কানী পীর গাউছুল আজম বজলুল করিমকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করল হুজুর আমরা এখন কী করব। পীর বলল তোমাদের এতদিন কী জ্ঞান দান করলাম? তোমাদের আক্কল বুদ্ধি নাই? হুজুরের মুরিদরা তখন কথা ঘুড়িয়ে বলল, হুজুর আমরা তো জানি জিতার আর কোন সম্ভবনাই নাই, তাই আমরা প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করতে আপনার অনুমতির জন্য ফোন করেছি। হুজুর বলল, মাশাআল্লাহ্ কিন্ত কেন প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করে নিচ্ছ তা জনগণকে জানাবা কী করে। মুরিদ বলল, কেন কেন সংবাদিকদের মাধ্যমে। হুজুর বলল, আমার কাছে এতদিন কী শিখলা! কোন সংবাদিক তোমার এই খবর ছাপবে! হতাশ হয়ে মুরিদ বলল, তা হলে এখন উপায়। হুজুর বলল, সমস্যা যেমন আছে তেমন উপায়ও আছে। যাও ইন্টারনেটের সাহায্য নেও।
শেখ শরাবের বাসায় তার লোকজন বিজয় মালা নিয়ে হাজির। শেখ শরাব বলল, এত আগে বিজয় মালা, ভোট শেষ হতেতো অনেক সময় বাকী। চামচারা বলল হুজুর আপনার হুকুম দিতে যা দেরী হইছে, আমরা তো বেবাকতেরে (সকলকে) বাঁশ ঢলা দিয়া কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছি। তাই প্রধান বিরোধী দল ও“পাখাওয়ালা ইসলামের” সহ অন্য সকল প্রার্থী পরাজিত হওয়ার আগেই প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আপনিই এখন ভেন্না বনে খাটাস বাঘ। শেখ শরাব বলল, সাবাস সাবাস এবং সেই ব্যাক্তিকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি আমার বাপের কাজ করেছ। তোমারে যদি এই কাজের জন্য পুরস্কৃত না করি তো পুরস্কৃত করব কাকে।
এই সময়ে শেখ শরাবের ফোনটা বেজে উঠে, শেখ ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে অপর পাশ থেকে রাগান্বিত কণ্ঠে একজন বলল, আরে পাঠার ঘরে পাঠা তোমারে জয়ী করার জন্য যেখানে আমরা পর্যাপ্ত মেয়রের ব্যালট পেপার অন্যত্র সরিয়ে রেখে ছিলাম, সেখানে তুমি এই ধরনের উল্টা পাল্টা কাজ করে দলের বারটা বাজালা কেন? শেখ শরাব চিন্তত মনে ফোনটা রেখে দিল। তার সমস্ত খোপ দিয়ে পড়লে এতক্ষণ যাকে সাবাস সাবাস বলছিল তার উপর। সে তাকে কাছে ডাকল, লোকটা খুশীতে বাক বাক হয়ে যেই শেখের সামনে এসে দাড়াল অমনিই শেখ কষে একটা চড় তার গালে মেরে বলল, হারামজাদা তোরে এত তাড়াহুরা করতে কে বলেছে? জানস না তাড়াহুরা শয়তানের কাজ!
আক্কেল আলীর ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজেই চলছে। আক্কেল ফোন ধরার সাথে সাথে ঐ পাশ থেকে তার তলত ভাই বলল, কী আমি যা বলছি তার সততা পাইছ। আক্কেল বলল মনে হয় তার থেকেও বেশী পেয়ে গেছি। তখন তার তালত ভাই বলল, ভাইরে ঠিকই বলেছ, প্লান করি একটা ঘটে আরেকটা। এই সকল লোকজন নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। ফলাফল তো দেখতেই পাড়ছ।
সংবিধিবদ্ধ সতরকরনঃ এই রম্য রচনার চরিত্রগুল কাল্পনিক, তাই কারো সাথে মিলের কোন প্রশ্নই উঠে না।
বিষয়: বিবিধ
৮০৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন