আল্লাহ্ সম্পর্কে ভুল আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৬:৫০:৫৪ সকাল
আমরা দেখি যে কোন কোন সুফী পীর সালাত কায়েম করে না বা রোজা রাখে না, জিজ্ঞাসা করলে বলে তাদের উপর শরীয়া ফরজ নয়!! এবার এমনও দেখি যে কোন কোন মুরিদ তার পীরের মাজার কবরকে পূজা করে! এখানে আমরা দেখতে চেস্ট করব ইসলামের নামে এই ধরনের কুফরী কাজের প্রচলনের মূল উৎশকে নিয়ে।
সুফীবাদে পীরপূজা, পীরের মাজার, কবর পুজা ইত্যাদিকে অনুপ্রবেশের পিছনে যে দুই ব্যাক্তি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে তারা হ’ল সুফী ইবন আল আরাবী আন্দালুসির ‘ওয়াহাতুল ওজুদ’ মতবাদ এবং সুফী হোসেন বিন মনসুর হাল্লাজের ‘হুলুল’ মতবাদ।
ইবন আরাবীর মারফতী তত্বকে বলা হয় ‘ওয়াহাতুল ওজুদ’। আমরা জানি যে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ () এক নাম হ’ল ‘আল হক (সত্য)। ইবন আল আরাবী তার বইতে লিখেছে, আদমকে ‘ইনসান’ বলা হয় কারন আদম হল আল হকের চক্ষের তারা (আযুজুবিল্লাহ)। সে আরও লিখেছে সমস্ত সৃষ্টি হল আল হকের অংশ। এমন কী সে তার বইতে লিখেছে নুহ () কওম যদি মূর্তি পূজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত তবে তারা আল হক থেকে দূরে সরে যেত। এমন কী সে যাহান্নমের আজাব/শাস্তিকে অস্বীকার করেছে। সে দাবী করে, তার এই কুরআন সুন্নাহ বিরোধী মারফতি তত্ব পেয়েছে নবী করিম () থেকে, স্বপ্নের মাধ্যমে! স্বপ্ন যোগে প্রাপ্ত এই মারফতী তত্ব অনুসারে আল্লাহ্ সব স্থানে বিরাজমান। অর্থাৎ আল্লাহ্ যেমন মানুষের মাঝে বিরাজমান তেমনি ভাবে জীব জন্তু পশু পাখীতেও বিরাজমান, এমনকি মাটিতে, বালু কনায় বিদ্যমান! তার অর্থ দাঁড়ায় মূর্তি পূজা করা আর আল্লাহ্র ইবাদত করা একই! (আযুজুবিল্লাহ)
(‘Aqeedah Ibn ‘Arabi wa Hayaatuhu by Taqiy al-Deen al-Faasi, p. 15, 16)
উল্লেখ্য তার এই ভ্রান্ত স্বপ্ন সম্পর্কে প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার আল কাদী বদর আল দীন ইবন জামাহ বলেন, নবী করিম কখনও স্বপ্ন যোগে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী নির্দেশ দিতে পারে না। বরং তা এসেছে শয়তানের ওয়াছ ওয়াছা থেকে। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া বলে, এমন কী খ্রিষ্টান ইহুদীরাও বলে না যে সৃষ্টি হ’ল সৃস্টার অংশ।
সুফী হোসেন বিন মনসুর হাল্লাজ। তার মারফতী তত্বকে বলা হয় ‘হুলুল’। হুলুল আরবী শব্দ যার অর্থ হ’ল মিশে যাওয়া। এই মিশ্রন বলতে বূঝায় সেই রূপ মিশ্রনকে যেমন এক গ্লাস পানিতে চিনি ঢেলে নাড়তে থাকলে এক সময়ে এই আবস্থা হয় যখন শুধু পানিকেই দেখা যায় কিন্ত চিনিকে দেখা যায় না। সেই রূপ হোসেন বিন মনসুর হাল্লাজের মারফতী তত্ব অনুসারে আল্লাহ্র অলিও(!) আল্লাহতে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় সুফী ধর্মের পরিভাষায় যাকে ফানা বিল্লাহ বলা হয়। মনসুর হাল্লাজের মারফতী তত্ব অনুসারে আল্লাহর কোন অলি এই স্তরে (ফানা বিল্লাহ) পৌঁছলে তার জন্য ইসলামী শরীয়া আর বাধ্যতামুলক থাকে না অর্থাৎ তার জন্য সালাত পড়া, রোজা রাখা ইত্যাদি শরীয়া সম্পর্কিত বিষয় গুল জরুরী নয়। হোসেন বিন মনসুর হাল্লাজের মারফতী তত্ব, আল আরাবীর মারফতী তত্বের ন্যায় আল্লাহ্ সব জায়গায় বিরাজমান নয় বরং শুধু মানুষের অন্তরে বা আত্নায় বিরাজমান। মনসুর হাল্লাজ জনতার সস্মুখে ঘোষনা করত, আল্লাহকে খোজ তোমরা তামাদের নিজেদের অন্তরের মাঝে। অর্থাৎ আল্লাহ সব জায়গায় বিরাজমান নয় বরং মানুষের অন্তরে বিরাজমান। সে সর্বদা ‘আনাল হক’ ‘আনাল হক’ (আমিই সত্য, আমিই ইসলাম, আমিই আল্লাহ্ ---) বলে যিকির করত। ইবন আরাবীর ‘ওয়াহাতুল ওজুদ’ মারফতী তত্ত্বের সাথে মনসুর হাল্লাজের ‘হুলুল’ মারফতী তত্বের প্রার্থক্য সূস্পষ্ট ও পরিষ্কার। মনসুর হাল্লাজ সব কিছুতে আল্লাহ্ বিরাজমানকে অস্বীকার করে ফলে তার অনুসারীদের পক্ষে পীর পূজা সম্ভব হলেও পীরের ঘোড়া, মাজার, পাগড়ী ইত্যাদির পূজা সম্ভব নয়। অপরদিকে আল আরাবীর মারফতী তত্ব অনুসারে পীরের মূর্তির পুজাও সম্ভব কেননা তার মারফতী তত্বে অনুসারে আল্লাহ্ সব কিছুতে বিদ্যমান এমনকী মাটির মূর্তিতেও!
চলবে---
বিষয়: বিবিধ
৮৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন