সংবাদিক আক্কেল আলী (কালী চাদনী )-রম্য রচনা

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ০৭:০৪:১৭ সকাল

আক্কেল আলী খুবই মনোযোগের সাথে শেষবারের মত কালী চাদনী এবং ছোট ওসমানের মধ্যকার ক্ষমতার দন্দ বিষয়ক তার রিপোর্টির উপর চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। কখন যে খেজুর আলী এসে হাজির হয়েছে তা লক্ষ্য করেনি। খেজুরের দিকে দৃষ্ট পরতেই আক্কেল বলে উঠল, আরে খেজুর যে কখন এেসেছ। খেজুর রেগে গিয়ে বলল, মিয়া সংবাদিক হওয়ার পর তো দেখছি রাত দিন কলম নিয়া গুতাগুতি আর মাথা ঘামাতে ঘামাতে কানা বয়রা হয়ে গেছ। আক্কেল বলল, খেজুররে কালী চাদনী এবং ছোট ওসমানের চক্করে পইরা আমার মাথা গেছে, এখনও মনে হচ্ছে চোখও বুঝি গেছে। বুঝতে পারতাছি দেশের ক্ষমতায় একটা বিরাট পরিবর্তন ঘটতে যাছে---। খেজুর আলী আক্কেলকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ক্ষমতায় কোন কুতুব আসল কোন কুতুব গেল এই সব সংবাদিক মার্কা কথা বার্তা শুনতে আসি নাই। মনটা বহুত খারাপ।

আক্কেল বলল, কেন? কেন? কী হইছে।

খেজুর বলল, কেন শুন নাই আমার ছোট ভাই সজীব যে আমেরিকায় আই টি বিষয়ের উপর চার বছরের ব্যাচেলার ডিগ্রি---- । আক্কেল তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, সে কথাতো জানি, আর মাত্র এক সিমিস্টার শেষ করলেই সে তার ডিগ্রি পেয়ে যাবে, সমস্যা কোথায়? খেজুর বলল সমস্যা অনেক, মা অসুস্থ হলে তাকে দেখতে বাংলাদেশ এ এলে তাকে আর আমেরিকায় ঢুকতে দিচ্ছে না। আক্কেল বলল বুঝছি বুঝছি, ঐ পাগলা ট্রাম্পের আমেরিকা ফাস্ট---। ঠিক এই সময়ে তার মোবাইল ফোনটি বেজে উঠে। সে ফোনটি রিসিফ করার পর খেজুরকে বলল, স্যরি খেজুর বসের ফোন, বলছিলাম না কালী চাদনী এবং ছোট ওসমানের ভেজাইলা রিপোর্টের কথা, সেই বজ্জাত রিপোর্ট নিয়ে এখনেই যেতে হচ্ছে।

আক্কেল আলীর রিক্সা দৈনিক উল্টা পাল্টা অফিসের মাইল খানিক দূরে বিরাট জ্যামে আটকা পড়ে। আগত্যা বসের অনুরোধে পায়ে হেটে যখন অফিসে পৌঁছে তখন ঘামে গায়ের জামা কাপর ভিজে একাকার। বসের রুমে ঢুকেতো আক্কেল আলী আবাক, সেখানে সে নাস্তিকদের গুরু মারা চেল্যা সংবাদিক মতিলাল, শিক্ষা মন্ত্রী বোবা ডাকাইত ঝনঝাটওয়ালা এবং আরেক ব্যাক্তিকে বসা দেখতে পায় যাকে সে চিনে না। বস আক্কেলকে জামাই আদর করে বলল আক্কেল বস বস, চেয়ারে বসা লোকদের দিকে আংগুলী নির্দেশ করে বলল, এদের সবাইকে তুমিত চিন এবং তিতৃীয় ব্যাক্তির দিকে আংগুলি নির্দেশ করে বলল, ইনি আমেরিকায় থাকে আর সম্পর্কে আমাদের মতিলাল ভাইয়ের শালার শালা হন, নাম খন্দকার মোস্তাকউদ্দিন। তোমার কালী চাদনীর উপর লিখিত রিপোর্টটা মতিলাল ভাইয়ের শালার শালারে দেখাও। রিপোর্টটা এক নজর দেখেই খন্দকার মোস্তাকউদ্দিন বলল, এই কিছিমের বেক্কেইলা রিপোর্ট দিয়ে কাজ হবে না। মতিলাল বলল, কেন কেন কী লিখছে। মতিলালের শালার শালা বলল, সে লিখেছে কালা চাদনী গ্রুপ এবং হকারদের মাঝে দন্দ ও সংঘর্ষ। এ কথা শুনে সবাই সমস্বরে বলে উঠল, এই বেক্কেইলার জন্য আমাদের ক্ষমতা যাওয়ার প্লানতো যাবেই, সাথে বিপদও টেনে নিয়ে আসবে।

শিক্ষা মন্ত্রী বোবা ডাকাইত ঝনঝাটওয়ালা সবাইকে থামিয়ে দিয়ে আক্কেলকে বলল, আক্কেল সাহেব এই যে আপনি ঘামে ভিজে দেরী করে অফিসে আসলেন এর জন্য দায়ী কে? আক্কেল আলীর ঝটপট জবাব ট্রাফিক জ্যাম। শিক্ষা মন্ত্রী বলল, আমার কথা শুন ভাল কইরা, ট্র্যাফিক জ্যাম এক দিন দুই দিন হতেই পারে কিন্তু মাসের তিরিশ দিন কী বিশ্বের কোন শহরে ট্র্যাফিক জ্যাম হয়, না হতে পারে। আক্কেল বলল স্যার আপনার কথা একেবারে ঠিক। এবার তুমিই কও তোমার জামা কাপর ঘামে ভিজা কোন উস্তাদের কাজ। আক্কেল বলল, বুঝছি স্যার বুঝছি, বুঝছি আমাদের রাস্তা ঘাট মন্ত্রী নোয়াখালী বাদুর। শিক্ষা মন্ত্রী বলল, বুঝলা তো এইডা নোয়াখাইলা বাঁদুরের কাজ। এতক্ষণ তো মিয়া খালি ট্র্যাফিক জ্যাম, ট্র্যাফিক জ্যাম করতা লাগতাছিলা। আক্কেল বলল, ছড়ি স্যার, ছড়ি স্যার। মন্ত্রী বলল সবই বুঝ মিয়া তয় দেরী কইরা। এই ভাবে চলতনি।

চতুর মোস্তাকউদ্দিন বলল, বুঝছ না এই সকল, নারায়ণগঞ্জ, নয়াখাইলাদের সাথে গাদ্দারী করে লাথি দিয়ে সরাইয়া আমরা না আসলে এই পরিস্থিতির থেকে কোন বাচন আছে। আক্কেল সস্মোহিত ব্যাক্তির ন্যায় বলল, না ভাই। কিন্ত --- । মোস্তাকউদ্দিন আক্কেলকে থামিয়ে দিয়ে বলল আবার কিন্তু কেন? আক্কেল বলল, না মানি আপনি তো থাকেন আমেরিকাতে তাদের সরিয়ে আপনি বসবেন কেমনে। মোস্তাকউদ্দিন বলল, আরে পাগল, টাকা পয়সা আর ক্ষমতার লাঠি ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া পেলে, খমখা আমেরিকাতে বসে থাকব কেন? মিয়া হ্যারিকেন নিয়া সারা দুনিয়া ঘুইরাতো এই কিছিমের বলদ পাবা না। ক্ষমতা পরিবর্তন হইতেই যা দেরী কিন্তু আমার আসতেতো দেরী হইবোনানে। কথা বুঝে আসছে।

মোস্তাকউদ্দিন মতিলালের দিকে তাকিয়ে বলল, দুলাভাই আপনি কী বলেন। মতিলাল বলল, আমি আর কী কইবাম, তয় ইচ্ছা একটাই, যে একবার ক্ষমতার লাঠি হাতে পাইছিতো, শালা ছোট উসমানের হাতে হ্যারিকেন এবং বাঁশ দিয়া খাড়া কড়াইয়া না দিছিতো আমার নাম মতিলাল না। শিক্ষা মন্ত্রী বলল, খালী বাঁশ দিলে হইব, ছোট উসমান বলে কথা, আমাদের প্লান বাস্তবায়নের পথে নাম্বার ওয়ান বাধা, হারামজাদা বজ্জাত আমাদের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে, তাই যেন তেন বাঁশ হলে হবে নানে। বাঁশ হতে হবে আইক্কাওইয়ালা তৈল যুক্ত বাঁশ। তার কথা শুনে সবাই এক সাথে হেসে উঠে। হাসির রেশ থেমে গেলে, শিক্ষা মন্ত্রী বলল, মতিলাল খালি স্বপ্ন দেখলে হবে নানে। আমাদের অনেক কাজ বাকী। আমাদের হতে সময় কম। কেননা একবার নির্বাচন হলে আর তাতে বিরোধী আইলে খেল খতম। আমরা একের পর এক ভুল করেই যাইতেলাগতাছি। কেন হকারদের সাথে মারামারির পরের দিন কালা চাদনীকে হাসপাতালে পাঠাও নাই। মোস্তাউদ্দিন বলল, স্যার মনে হয় এই ধরনের মিটিং দেশের বাহিরে হলে ভাল হয়। সেফটি বলে কথা! আমার কাছে এই প্লানের ইলেক্ট্রনিক কপি আছে, সেখানে কখন কোথায় কী করতে হবে তার বিস্তারিত বর্ণনা আছে। আমি আমেরিকা যাওয়ার প্লেনে উঠার আগে তা দিয়ে যাবো নানে। মতিলাল বলল, কেন কেন প্লেনে উঠার আগে কেন? মোস্তাকউদ্দিন বলল, আগে দিয়া বিপদ বাড়াই আর কী? পরে গদীতো গদী পুলিশের লাথি গুতা খেয়ে জীবনটা দেই আরকী। খামখাই তার এই ভয় দেখে সেখানে বসা সকলই উচ্চস্বরে হেসে উঠে।

সংবিধিবদ্ধ সতরকরন এই রম্য রচনার চরিত্রগুল কাল্পনিক, তাই কারো সাথে মিলের কোন প্রশ্নই উঠে না।

বিষয়: বিবিধ

৮০৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384711
২০ জানুয়ারি ২০১৮ দুপুর ০২:০৩
আবু জারীর লিখেছেন : ভালো লাগলো
ধন্যবাদ
২০ জানুয়ারি ২০১৮ বিকাল ০৫:৪৭
317302
আনিসুর রহমান লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার লেখা পড়া ও মন্তব্য করার জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File