আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র শেষ পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ২১ মে, ২০১৭, ০৫:৫২:০৭ বিকাল
এটা বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, হোসেন সম্পর্কে অনেক কল্প-কাহীনিও ইতিহাসে স্থান পেয়েছে, যেমন তার সম্পর্কে একটি কল্পকাহীনি বিখ্যাত ইতিহাসবিদ, রিয়াজ উজ সালাতিনের লেখক সেলিম লিপিবদ্ধ করেন একটি বেনামি পুস্তকের রেফারেন্স টেনে, কাহীনিটি হল, “তার পিতা সৈয়দ আশরাফ তার দুই পুত্রসহ গৌড় যাবার কালে চাদপাড়া নামে একটি রাঢ় গ্রামে স্থানীয় মুসলমান কাজীর গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করেন। কাজী অতিথির বংশ পরিচয় জানতে পেরে তার কনিষ্ঠ পুত্র হোসেনের সাথে আপন কন্যার বিয়ে দেন। অতঃপর বিদ্যাশিক্ষা করার পর হোসেন মুজাফফর শাহ্র আধীনে একটি সামান্য চাকুরী গ্রহণ করেন। এ ধরনের কাহীনি সেলিম লিপিবদ্ধ করেন একটি বেনামি পুস্তকের বরাত দিয়ে। (বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস, আব্বাস আলী খান, পৃষ্ঠা ৩৭)”।
উপরে উল্লেখিত তথ্যের আলোকে আমরা দেখছি যে, এক, প্রতারক হোসেন কতৃক সৃষ্ট প্রমানের উপরে ভিত্তি করে হোসেনের বংশ পরিচয় হল সৈয়দ, ফাতেমি, মক্কী, মক্কার শরীফের পুত্র এবং যিনি আবার ইসলামের ধারক বাহক---। দুই, শিলালিপি ও জনশ্রুতি উপর ভিত্তি করে, হোসেন হলেন একজন অজ্ঞাত ব্রাহ্মানের ছেলে যিনি একজন দক্ষ ব্রাহ্মানের অধীনে কঠোর ট্রেনিং নিয়েছিলেন, বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে। তিন, বেনামী পুস্তক, কল্পকাহীনির উপর ভিত্তি করে বর্ণিত বিভিন্ন কাহীনি যেমন জনৈক কাজী হোসেনের বংশ পরিচয় জানতে পেরে তার হাতে তার কন্যাকে বিবাহ দেন। স্পষ্টতই আমরা দেখছি যে, ইতিহাস রূপে হোসেন সম্পকে আমরা যা পাই তার সংক্ষিপ্তসার হল, কিছু উদ্দেশ্যমূলক ভাবে হোসেন কতৃক সৃষ্ট প্রমানের উপর ভিত্তিকরে ইতিহাস যা বিখ্যাত গবেষক আকরাম খাঁ সহ অনেকেই প্রত্যাখান করেছেন, কিছু শিলালিপি ও জনশ্রুতি উপর ভিত্তি করে ইতিহাস এবং কিছু অলীক কল্প কাহিনীর উপর ভিত্তি করে ইতিহাসের এক জগাখিচুড়ী।
আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্র বাংলার সিংহাসন দখল
হোসেন হাবসী সুলতান সামসুদ্দিন মজাফফর শাহ্ আধীনে প্রথমে সামান্য বেতনে চাকুরী নেন। এই হাবসীরা ছিলেন ক্রীতদাস। তাদের রুকনদ্দীন বারবাক শাহ্ আমদানী করেন এবং রাজপ্রাসাদ রক্ষীর কাজে নিয়োজিত করেন। পরবর্তীতে এই হাবশী ক্রীতদাসের একজন, বারবাক শাহজাদাহ, ফাতহ শাহ্কে হত্যা করে বাংলার সিংহাসন দখল করে এবং পরবর্তী সাত বছর এই হাবশীরা বাংলা শাসন করে। এই হাবশীরা বাংলার কৃষ্টি কালচারের সাথে পরিচিত ছিল না অন্য দিকে তাদের আচার ব্যাবহার, গঠন এই অঞ্চলের লোকদের থেকে ছিল এলিয়ান স্বরূপ। হাবশীরা কতটা অস্থির ছিল তা বুঝা যায়, মাত্র সাত বছর চারজন শাসকের বাংলার সিংহাসনে বসার মধ্য দিয়ে। এই হাবশী সর্বশেষ সুলতান সামসুদ্দীণ মজাফফর শাহ্র আধীনে হোসেন শাহ্ চাকুরী নেন। এই মজাফফর শাহ্ ছিলেন অস্থির ও মাথা গরম শাসক। এক কথায় হোসেনের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এই পরিস্থিতি ছিল মেঘ চাওয়ার আগে বৃষ্টি পাওয়ার মত। চতুর হোসেন পরিষ্কার ভাবেই পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ছিলেন, তার পরিকল্পনাকে কাজে পরিণত কররা জন্য এটাই সুবর্ণ সুযোগ। ফলে সে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে লেগে যায় অর্থাৎ তার প্রভুকে হত্যা করে স্বয়ং ক্ষমতা গ্রহণের ষড়যন্ত্র শুরু করে দেয়।
হোসেন পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিল যে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে রাজদরবারে তার পজিশন সাধারন কর্মচারী থেকে অন্তত উজীরের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। তাই সে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে নিজেকে সুলতান সামসুদ্দিন মজাফফর শাহ্র সামান্য একজন কর্মচারী থেকে তার প্রধান উজীরের পদ দখল করতে সমর্থ হয়। হোসেন হাবশী ছিলেন না তা সত্বেও সে উজীরের পদ দখল করতে সমর্থ হয়ে ছিল! কিন্ত কিভাবে? ইতিহাস থেকে আমরা এ সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য পাই না। এই প্রশ্নের একটা সম্ভাব্য জবাব হতে পারে, হোসেন যে ভাবেই হোক মজাফফর শাহ্র নেক দৃষ্টি কারতে সমর্থ হয়ে ছিল, তবে একজন সামান্য রাজ কর্মচারী হওয়ায় এটা তার জন্য ছিল অসম্ভব কাজ তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই এ কথা বলা কোন বিচারেই ভুল হবে না যে, তাকে উপরে টেনে তুলার জন্য একটি গুষ্ঠি বা ছোট প্রভাবশালী দল ভিতরে ভিতরে কাজ করছিল,যারা সুলতানের কাছে তার গুন কিত্তন করত। সম্ভবত এই ছোট দলটি হোসেন মজাফফর শাহ্র অধীনে চাকুরীতে যোগদান করার পূর্বে থেকেই তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছিল। আমরা ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখি যে, হাবশীদের মাত্র সাত বছরের শাসনের সময়ে চারজন শাসকের পরিবর্তন ঘটে এবং এই পরিবর্তন কোন স্বাভাবিক ঘটনা ছিল না বরং একজন শাসককে হত্যা করে আরেকজন শাসক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে; এর সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায় রাজা গণেশের একের পর আরেক হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলার মসনদ দখলের সাথে। এ ক্ষেত্রেও এই এই শাসক পরিবর্তনের সাথে কোন প্রভাবশালী গ্রুপের হাত থাকার সম্ভবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ কথাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে, হোসেনের জনৈক ব্রাহ্মানের অধীনে চাদপাড়া গ্রামে ট্রেনিং এবং ট্রেনিং শেষে হাবসী সুলতানের আধীনে সামান্য বেতনে কাজে যোগদানের পিছনেও ঐ একই প্রভাবশালী গ্রুপর হাত ছিল, যারা হোসেনকে সুলতানের উজিরের পদ পাওয়ার ব্যাপারে সর্বতভাবে সহযোগিতা করেছিল।
হোসেন হাবশী সুলতানের প্রধান উজিরের পদ পাওয়ার সাথে সাথে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রথমিক পদক্ষেপ হিসাবে তার প্রভুকে সেনাবাহিনীর বিরাগভাজন করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে দেয়। এ সম্পর্কে রাখানদাশ বন্দোপাধ্যায় তার বাংলার ইতিহাস গ্রন্থে বলেন, “ সৈয়দ হোসেন শরীফ মক্কী মজাফফর শাহ্র উজির ও প্রধান কর্মচারী নিযুক্ত হইয়া ছিলেন। তাহার পরামর্শ অনুসারে মজাফফর শাহ্ সৈনিকদের বেতন হ্রাস করিয়া অর্থ সঞ্চয়ের মনঃসংযোগ করিয়াছিলেন।” (বাংলার ইতিহাস, ২য় খন্ড পৃষ্ঠা ১৭৮, রাখানদাশ বন্দোপাধ্যায়)
হোসেন তার প্রধান উজীরের পদকে কাজে লাগিয়ে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তার প্রভুকে শুধু তার সেনাবাহিনীর বিরাগভাজন করে ক্ষান্ত হননি বরং সে তার প্রভুকে আমীর ওমরাসহ আপামর আমজনতার কাছে একজন ভিলেন হিসাবে তুলে ধরার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক কাজ শুরু করে দেয়। হোসেনের তার প্রভুর বিরুদ্ধে এই হিনিয়াস কাজের একটি পরিষ্কার চিত্র পাই আব্বাস আলী খানের বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস গ্রন্থের ৪০পৃষ্ঠায়, সেখানে তিনি রিয়াদুস সালাতিন ও তারিখে ফেরেশতার রেফারেন্স দিয়ে বলেন,“রিয়াদুস সালাতিন ও তারিখে ফেরেশতায় বলা হয়েছে যে, হোসেন উজির হওয়ার পর জনসাধারনের সাথে সদ্বব্যাবহার করতে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে একথাও বলতে থাকেন যে, মজাফফর শাহ্ অত্যান্ত নীচ প্রকৃতির লোক এবং বাদশা হওয়ার সম্পুর্ণ অনুপযুক্ত। হোসেন শাহ্র পরামর্শে মজাফফর শাহ্ অবাঞ্ছিত কাজ করতেন। ফলে হোসেন তাকে জনসাধারনের কাছে দোষী ও হেয় প্রতিপন্ন করার সুযোগ পেতেন। এভাবে তিনি সেনাবাহিনী, আমীর- ওমরা ও জনগণকে মজাফফর শাহ্র বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত করে তুলেন।” মজাফফর শাহ্র বিরুদ্ধে হোসেনের এই ষড়যন্ত্রমূলক কুপ্রচারনা এতটাই সফল ছিল যে, যখন সে তার প্রভুকে হত্যা করে সিংহাসনে বসে তখন সকলেই হোসেনকে বাহবা দেয়ে ছিল এবং একজন উপযুক্ত ব্যাক্তিরূপে গ্রহণ করে নেয়। এ সম্পর্কে মাওলানা আকরাম খাঁ মুসলিম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস গ্রন্থে বলেন, “ সকল শ্রেনীর মুসলমান সামন্ত এবং হিন্দুরাজাগণ তাহাকেই(হোসেন শাহ্কে) রাজ সিংহাসনের উপযুক্ত পাত্র বিবেচনা করিয়া রাজপদে অভিষিক্ত করেন।”()
উল্লেখ্য হোসেনের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার বিষয়েও দুই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। বিখ্যাত ‘তাবাকাতি আকবরির’ লেখক মোহাম্মদ মুকিম হারাইর ছেলে খাজা নাজিমদ্দিন আহমদের তথ্য অনুসারে হোসেন তার প্রভু মজাফফর শাহ্কে প্রাসাদ রক্ষীদের সহায়তায় গোপনে হত্যা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। অপর তথ্য অনুসারে হোসেনের সাথে সুলতানের এক বিরাট যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং এই যুদ্ধে মজাফফর শাহ্ পরাজিত ও শাহ্দাতবরন করেন। এই যুদ্ধে উভয় পক্ষে এক লক্ষ বিশ হাজার সৈন্য নিহত হয়! যা অত্যান্ত বিস্ময়কর কেননা সেকালে পৃথিবির কোথাও এত বড় রক্তক্ষয়ি যুদ্ধ হয়েছে বলে কোন রেকর্ড পাওয়া যায় না।
উপরে উল্লেখিত তথ্য প্রমানের আলোকে আমরা যদি ‘এক জন প্রতারকের দেও তথ্য প্রমানও তার মত জাল() হবে’ এর ভিত্তিতে অন্যন্যদের ন্যায় হোসেন শাহ্ কতৃক সৃষ্ট তথ্যকে, প্রমান হিসাবে নিতে প্রত্যাখ্যান করি, তবে দিন শেষ আমরা দেখব যে, জনশ্রুতি ও শিলালিপির থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হোসেন হলেন একজন নাম না জানা ব্রাহ্মানের ছেলে যার গুরু ছিল জনৈক ব্রাহ্মান যে তাকে ট্রেনিং দিয়ে ছিলেন ভবিৎষতের বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। যাকে হাবশী সুলতানের একজন সামান্য বেতনের কর্মচারী থেকে সুলতানের প্রধান উজীরের পদ পাইয়ে দিতে সর্বতো ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে ছিল একটি প্রভাবশালী গ্রুপ কিন্ত ইতিহাস থেকে এই আমরা এই প্রভাবশালী গ্রুপটীর সদস্য কারা কারা ছিল তার কোন পরিষ্কার চিত্র পাই না।
তাই আমাদের কাছে থাকা তথ্যের উপর ভিত্তি করে যুক্তি দিয়ে এই এই প্রভাবশালী গ্রুপটীর সদস্যদের একটি সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করতে চেষ্টা করব। এটা অত্যান্ত স্বাভাবিক যে, যে কোন ধরনের গোপন বিপ্লবের ক্ষেত্রে আমরা দেখি যে, যারা গোপনে বসে কলকাঠি নাড়ে, বিপ্লব সফল হওয়ার পর তার শুধু প্রকাশ্যেই আসে না বরং গুরুত্বপূর্ণ পজিশনও দখল করে নায়। বস্তত যে কোন বিপ্লবকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে এটা ভিন্ন দ্বিতীয় আর কোন পদ নেই। মধ্যযুগে হোসেন শাহ্ ও ঐ প্রভাবশালী গ্রুপটী বাংলাতে দায়ী ইল্লেলল্লাহ তথা মুসলমানদের প্রভাবকে খর্ব করে হিন্দু রেনেসাঁ আন্দোলনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে নীরব বিপ্লব ঘটীয়ে ছিলেন তা হোসেনের বাংলার মসনদ দখলের মধ্য দিয়ে সাফ্যল লাভ করে ছিল। তাই এ কথা বলা কোন বিচারেই ভুল হবে না যে, হোসেনের রাজদরবারে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করেছিল বস্তুত তারাই ছিল ঐ গোপন প্রভাবশালী গ্রুপটীর সদস্য। নিন্মে আমরা একটি নাতি দীঘ তালিকা দিব যে কারা হোসেনের দরবারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করেছিল।
১। রূপ – দবির-ই-খাস বা ব্যাক্তিগত সচিব
২। রূপের ভাই সানাতন – সাকীর মালিক বা প্রধান সচিব
৩। রাঘু নন্দন(রূপ ও সানাতনের ভাই)—উচ্চপদস্ত রাজ কর্মকর্তা
৪। বল্লাবান (রূপ ও সানাতনের ভাই) —উচ্চপদস্ত রাজ কর্মকর্তা
৫। শ্রীকান্ত (রূপ ও সানাতনের বোনের স্বামী) —উচ্চপদস্ত রাজ কর্মকর্তা
৬। গোপীনাথ বসু ওরফে পুরন্দর খান- উজির ও প্রধান কর্মকর্তা
৭। কেশব ছত্রী—প্রধান দেহরক্ষী
৮। টাকশাল প্রধান – অনুপ
৯। শুবুদ্ধি রায় --- গৌড়ের প্রধান কোতওয়াল
১০ রাজ চিকিৎসক – মুকুন্দ দাস
এছাড়া আরও অনেক হিন্দু ধর্মের লোক হোসেনের দরবারর উচ্চপদ পেয়েছিলেন তারা হলেন তার হলেনঃ –
কবীন্দ্র পরমেশ্বের, বিজয় গুপ্তা, যশোরাজ খান, রামচন্দ্রা খান, সঞ্জীব সেন, ধর্মেন্দ্র কবি রঞ্জন, গবিন্দা দাস, গোপাল চক্রবর্তী এবং হিরন্য দাস। যশোরাজ খান এবং ধর্মেন্দ্র কবি রঞ্জন ছিলেন হোসেনের সভাকবি যারা হোসেন শাহ্র ২৬ বৎসর শাসনের পুরা সময় জুরে অবিচ্ছিন্ন ভাবে গুন কিত্তন করে ছিলেন।
এই সকল ব্যাক্তিবর্গ হোসেনকে বাংলার সিংহাসনে বসানোর বিষয়ে কাজ করেছে বলে প্রতিয়মান হয়। অর্থাৎ তার মধ্যযুগে যে প্রভাবশালী গ্রুপটী বাংলাতে দায়ী ইল্লেলল্লাহ তথা মুসলমানদের প্রভাবকে খর্ব করে হিন্দু রেনেসাঁ আন্দোলনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে নীরবে বিপ্লব ঘটীয়ে ছিলেন তাদের সদস্য ছিল। উদাহরণ স্বরূপ বলা চলে হোসেন যে হাবশী রাজপ্রাসাদ রক্ষীদের সহায়তায় তার প্রভুকে হত্যা করে মসনদ দখল করেছিলে। অথচ সেই হোসেনই সকল হাবশী রক্ষীদের শুধু চাকরী থেকে বরখাস্তই করেননি বরং তাদেরকে বাংলা থেকে বিতাড়িত করেন। তাদের স্থানে রাজপ্রাসাদ রক্ষীদের প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেন কেশব ছত্রীকে। কিংবা হোসেনের টাকশাল প্রধান অনুপের কথাই ধরা যাক, সে একজন হিন্দু হওয়া সত্বেও তার তৈরি করা মদ্রার মধ্য দিয়ে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্কে একজন ইসলাম প্রেমি খলীফা/ শাসক হিসাবে পরিচয় তুলে ধরে ব্যাপক প্রপাগণ্ডা চালান। উল্লেখ্য সে সময়ে আজকের মত ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া ছিল না। সেক্ষেত্রেপ্র পাগণ্ডা চালানোর জন্য মুদ্রাকে নির্বাচন করা নিঃসন্দেহে ছিল বিজ্ঞচিত কাজ।
বস্তুত আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ বা তাকে সামনে রেখে যারা দায়ী ইল্লেলল্লাহ তথা মুসলমানদের প্রভাবকে খর্ব করে হিন্দু রেনেসাঁ আন্দোলনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে নীরবে বিপ্লব ঘটীয়ে ছিলেন তার ফলাফল ছিল সুদূর প্রসারী। এর ফলে ভারতীয় মুসলিম সমাজ কুরআন ও সুন্নাহ থেকে ক্রমেই দূরে সরে যেতে থাকে এবং তার স্থান দখল করে নেয় শিরক বেদাত। মুসলিম সংস্কৃতি স্থান দখল করে নেয় হিন্দু সংস্কৃতি। এমন কী অজকেও আমরা দেখি যে মুসলিম সংস্কৃতির কথা বলা মানে হল মৌলবাদী আর হিন্দু সংস্কৃতির কথা বললে হবে দেশ প্রেমি বাঙলা সংস্কৃতি। বস্তুত মুসলমানদের পরাজিত হওয়াটা ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র এবং ১৭৫৭ সালে ইংরেজ কাছে কাছে মুসলমানদের পরাজিত হওয়াটা পিছনে মুল কারনই ছিল হোসেন শাহ্ মক্কীর হিন্দু রেনেসাঁ আন্দোলন। বস্তুত ইংরেজদের নিকটে মুসলমানদের পরাজিত হওয়াটা ছিল মন্দের ভাল, কেননা তৎকালীন প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের পরাজিত হওয়াটা ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। মুসলমানরা যদি ইংরেজদের নিকটে পরাজিত না হয়ে হিন্দুদের নিকটে পরাজিত হত তবে বুদ্ধার অনুসারীদের ন্যায় ভারত উপমহাদেশ থেকে নেই হয়ে যাওয়ার ছিল বিরাট সম্ভাবনা।
আমার এই দীঘ পোস্ট পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। এই পোস্ট লেখার আগে মানি খুবই সংকিত ছিলম যে এই ধরনের একটি জটিল আথচ দীঘ পোস্ট কেউ পড়বে কিনা। আমার আশার অতিরিক্ত ব্লগার আমার পর্ব (১-৫০) গুল পড়ার ফলে আমি আমার বইয়ের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। সবাইকে জানাই রমদানুল করীম।
বিষয়: বিবিধ
৯৫৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এক্সচেললেনট
মন্তব্য করতে লগইন করুন