আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ৪৭
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ৩০ এপ্রিল, ২০১৭, ১১:০৫:৩৫ সকাল
এই পর্বে আমরা খুঁজে পেতে চেষ্টা করব বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ শরীফ মক্কী পরে যিনি ‘খলিফাতুল্লাহ’ উপাধীও ধারন করেছিলেন; কিন্তু কার্য ক্ষেত্রে যনি ইসলামী খেলাফতের অনুসরণ অনুকরণ তো দূরের কথা বরং ‘হিন্দু রেনেসাঁ অন্দোলনকে বেগবান করে ছিলেন;তিনি প্রকৃত পক্ষে কে ছিলেন? ইতিহাসের বিস্ময় এই আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্র জীবন চরিতও বিস্ময়কর ভাবে পরস্পর বিপরীত তথ্যের সমাহার, এক গোলকধাঁধা; এর মধ্য থেকে প্রকৃত পক্ষে তিনি কে ছিলেন তা খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব কাজ।
হোসেন শাহ্ পরস্পর বিপরীত তথ্যের গোলকধাঁধা – এক
আমরা যেমন বাংলার প্রথম মুসলিম সুলতান ইখতার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজীর জীবন চরিত সম্পর্কে জানি, তিনি একজন তুর্কি বীর ছিলেন, পড়ে আফগানস্থানে এসে ছিলেন, ---। এমন কী তার পূর্ববর্তী শাসক সেন রাজাদের সম্পকে পরিষ্কার তথ্য পাই। কিন্ত আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ এর ব্যাতিক্রম, তার সম্পর্কে খুঁজে পাই পরস্পর বৈপরীত তথ্যের সমাহার। নিন্মে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ নিজে থেকে যে উপাধী গ্রহণ করে ছিলেন সেগুল হলঃ-
(ক) সুলতান আলাউদ্দীন হুসাইন শাহ ‘খালীফাতুল্লাহ’
(খ) সুলতান আলাউদ্দীন হুসাইন শাহ ‘আলমুজাহিদু ফূ সাবীলির রাহমান’
(গ) সুলতান আলাউদ্দীন হুসাইন শাহ ‘গাউসুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন’
অপর দিকে যাদেরকে তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করে ছিলেন সেই ব্যাক্তিবর্গ খুশী করার জন্য তাকে যে উপাধী দিয়ে ছিলেন সেগুল হলঃ-
(ক) কবিন্দ্র পরমেশ্বর সুলতান আলাউদ্দীন হুসাইন শাহকে উপাধী দিয়ে ছিলেন হিন্দু ভগবান শ্রী কৃষ্ণের অবতার বলে
(খ) মনসামঙ্গল কাব্যের লেখক বিজয় গুপ্তা সুলতান আলাউদ্দীন হুসাইন শাহকে উল্লেখ করেছেন ‘নরপতি তিলক’ (তিলক চিহ্ন ধারী রাজা বলে, সম্ভবত মুসলিম সুলতান আলাউদ্দীন হুসাইন শাহ হিন্দু রাজাদের ন্যায় কপালে তিলক চিহ্ন ধারন করতেন) এবং তাকে উপাধী দিয়ে ছিলেন ‘জগতভূষণ’ (দুনীয়ার শোভা) বলে।
(গ) মালাধর বসু যিনি ভাগবতের দশম এবং একাদশ স্কন্ধ বাংলায় অনুবাদ করেন তিনি সলতান হসেন শাহকে উপাধী দিয়ে ছিলেন ‘গৌড়েশ্বর’ (গৌড়েশ্বর দিল নাম গুণরাজ খান)।
হোসেন শাহ্ পরস্পর বিপরীত তথ্যের গোলক ধাঁধা – দুই
সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্র ইসলাম প্রেমের পরিচয় বহনকারী তথ্য যেমনঃ----
(ক) সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্র জারিকৃত কোন কোন মুদ্রায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’- কালেমা অংকিত ছিলো
(খ) সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্র জারিকৃত কিছু কিছু মুদ্রায় ছিলো ইসলামের সোনালী যুগের চার খলীফার নাম অংকিত ছিলো।
(গ) সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্র জারিকৃত কিছু কিছু মুদ্রায় আবার তার মসজিদ প্রেমের পরিচয় বহন করে। তাঁর জারিকৃত এমন ত্রিশ মুদ্রা পাওয়া গেছে যেইগুলো মাসজিদ নির্মাণের সাথে সম্পর্কিত।
অপর দিকে ইসলামকে বিতাড়িত করার জন্য তার বিভিন্ন কাজ সম্পকে যে তথ্য পাই তা হলঃ –
(ক) তিনি গৌডিয়া বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রী চৈতন্যের শুধু প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন না বরং তার উথানের পিছনে ছিল তার গোপন হাত। উল্লেখ্য শ্রী চৈতন্যদের আবির্ভাবের কারন সম্পর্কে চৈতন্য চরিত্রামৃত আদী লীলা, ১২০ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, পাষন্ডী (মুসলমানদের) সংহার করার জন্য আমি অবতার রূপে আবির্ভূত হয়েছি, আমি ভক্তি প্রচার করব পাষন্ডী (মুসলমানদের) সংহার করে।
(খ) দীনেশ চন্দ্র সেন তার ‘ বঙ্গভাষা ও সাহিত্যে’ বাংলার শাসক আলাউদ্দীন হোসেন শাহ্ সম্পর্কে বলেন, চৈতন্য চরিত্রামৃত ও চৈতন্য ভাগবতে দৃষ্ট হয়, তিনি চৈতন্য মহাপ্রভুকে ঈশ্বরের আবতার বলিয়া স্বীকার করিয়া ছিলেন।
(গ) তিনি ইসলাম প্রচারক বা দায়ী ইল্লেললাদের প্রভাবকে খর্ব করার জন্য তাদের ইমেজকে ইসলাম প্রচারক থেকে পরিবর্তন করে সুফি/সাধু তে পরিবর্তন করেন এবং তাদের ইসলাম প্রচার কেন্দ্রকে পরিণত করেন মাজারে।
(ঘ) তার পৃষ্ঠপোষকতায় সাহিত্যের মাধ্যমে হিন্দু দেবতাদের ন্যায় আলৌকিক ক্ষমতা ধারী মুসলিম চরিত্র যথা সুফী, পীর,সাধু সৃষ্ট করা হয়। পরবর্তিতে এই কল্পিত পীরের হাত ধরে হিন্দু পৌরাণিক দেবতারা মুসলিম সমাজে প্রতিষ্ঠা পায় এবং এই সৃষ্ট পীরদের কবর মাজার পূজা মুসলিম সমাজে ক্যান্সার ভাইরাসের মত মুসলিম সমাজে ছিড়িয়ে পড়ে।
চলবে --------
বিষয়: বিবিধ
৮৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন