আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ৪১
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০৫ এপ্রিল, ২০১৭, ০৪:২১:০২ রাত
সব ইতিহাসবিদরা এটা স্বীকার করেছেন যে, আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ এবং তার ছেলে নাসিরদ্দিন নসরৎ শাহ্ বাংলা সাহিত্যের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তারা মঙ্গল কাব্যেরের মাধ্যমে সমাজের অভ্যন্তরে নীরব বিপ্লব ঘটানোর ক্ষেত্রে বিশ্যষ সাফল্য লাভ করেছিলেন। বাংলা সাহিত্যে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ এবং নাসিরদ্দিন নসরৎ শাহ্র অবদান সম্পর্কে, Islam in Bangladesh Through Ages গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৫১ পৃষ্ঠায় ডঃ আব্দুল করিম “Bangladesh during the Muslim rule” শিরোনামে এক নিবন্ধে বলেন, “--- They were liberal in religious outlook. Tolerant to the non-Muslims and appointed many Hindus in high government position. They were patrons of learning and patronised Bengali Literature.”
সম্ভবত সুলতান হোসেন শাহ্ কোন রহস্যজনক কারনে হিন্দুদের মুসলিম নাম রাখাকে পছন্দ করতেন! উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, শ্রী চৈতন্যের শিস্য দুই ভাই রুপা এবং সানাতন যারা জাতিতে ক্রান্তিক ব্রাহ্মণ ছিলেন তাদের নামকে সুলতান হোসেন শাহ্ পরিবর্তন করে রেখেছিলেন যথাক্রমে দবির খাঁ এবং সরকার মালিক। এ সম্পর্কে বিন্দাবন দাস তার শ্রী চৈতন্যের জীবন চরিতে লিখেন, “ ---------------There He picked up two greater personages named Rupa and Sanatan. Though descended from the lines of the Karnatik Brahmins, these two brothers turned out demi Musalmans by their continual contact with Hussain Shah, the then Emperor of Gaud. Their names had been changed by the Emperor into Dabir Khas and Sakar Mallik and their master loved them heartily, as they were both learned in Persian, Arabic and Sanskrit and were loyal servants of the state. The two gentlemen had found no way to come back as regular Hindus, and had written to Mahaprabhu. While He was at Puri for spiritual help. Mahaprabhu had written in reply that He would come to them and extricate them out of their spiritual difficulties. Now that He had come to Gaud, both the brothers appeared before Him with their long standing prayer. Mahaprabhu ordered them to go to Vrindavan and meet Him there.”
এই ঘটনা এটাও প্রমান করে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্র সাথে মহাপ্রভু চৈতন্যর কত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। একই ব্যাক্তির হিন্দু ও মুসলিম উভয় নাম (অর্থাৎ অর্ধেক-অর্ধেক নাম) রাখার ছাড়াছড়ি পাওয়া যায় তার সময়ে। এমন কী তার উজির ও প্রধান কর্মকর্তার নাম ছিল গোপীনাথ বসু ওরফে পুরন্দর খান! কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হ’ল আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ নিজের নামের সাথে কোন হিন্দু নাম যুক্ত করাতো দূরের কথা বরং নিজেকে একজন শরীফ বংশের মুসলিম বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন। নিজের পরিচয় দিতেন আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ মক্কী বলে। মুসলিম নাম নিয়ে তার এই গর্ববোধ সম্পর্কে, Islam in Bangladesh Through Ages গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৫১ পৃষ্ঠায় ডঃ আব্দুল করিম “Bangladesh during the Muslim rule” শিরোনামে এক নিবন্ধে বলেন, “Hussain Shah belonged to a noble family. He took pride in calling himself a ‘Sayyid’, his father name was Sayyid Ashraful Husaini.” আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্র প্রকৃত পরিচয় কি ছিল এই বিষয়ে আমরা পরে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ এবং নাসিরদ্দিন নসরৎ শাহর পৃষ্ঠপোষকতায় কী ধরনের বাংলা সাহিত্য রচিত হয়ে ছিল তার একটি নাতিদীঘ বর্ণনা নিন্মে দেওয়া হলঃ------
(ক) মালাধর বসু ভাগবতের দশম এবং একাদশ স্কন্ধ বাংলায় অনুবাদ করেন তাছাড়াও তিনি শ্রীকৃষ্ণের প্রণয়লীলা বিষয়ক ‘শ্রীকৃষ্ণ বিজয়’ নামে একটি মহাকাব্য রচনা করেন বাংলায়। হোসেন শাহ্ তার কাজে মুগ্ধ হয়ে, উৎসাহিত করার জন্য তাকে ‘গুণরাজ খান’ উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু কেন হোসেন শাহ্ মালাধর বসুকে ‘গুণরাজ বসু’ উপাধি না দিয়ে ‘গুণরাজ খান’ উপাধি দিয়েছিলেন আজও তা রহস্যাবৃত। অপর দিকে মালাধর বসু সুলতানের গুনকিত্তন করে বলেন---
“ নির্গুণ অধম মুঞি নাহি কোন ধাম
গৌড়েশ্বর দিল নাম গুণরাজ খান।”
বস্তুত মধ্য যুগে কবি সাহিত্যিকদের নাম এবং পরিচয় নিয়ে যে বিভ্রান্তি দেখা যায় তাও মনে হয় এই মহামান্য সুলতান হোসেন শাহ্র অবদান। বৈষ্ণব সাহিত্যে গা ভাসান এই ধরনের মুসলিম নামধারী কবি সাহিত্যকদের পরিচয় সম্পর্কে আব্দুল মান্নান তার আমাদের জাতি সত্বার বিকাশ ধারা গ্রন্থের ৩৬ পৃষ্ঠায় যতীন্দ্রমহন ভট্টাচাযের রেফারেন্স টেনে বলেন, “বৈষ্ণব সাহিত্যেদের বিরাট মিছিলে এক শ্রেনীর মুসলমান কবিও গা ভাসিয়ে ছিলেন। যতীন্দ্রমহন ভট্টাচাযের ভাষায় এরা ছিলেন ‘বাংলার বৈষ্ণব ভাবাপন্ন মুসলিম কবি’।
চলবে---------
বিষয়: বিবিধ
৮৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন