আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ৪০

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০১ এপ্রিল, ২০১৭, ০৭:০৯:৩৩ সকাল

এই অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করব আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্‌ কীভাবে বাংলা সাহিত্য ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়ে কী ভাবে মুসলমানদের আচার আচরণ ও ধর্ম বিশ্বাসের ক্ষেত্রে তাওহিদকে হাঁটিয়ে পৌত্তলিকতার বিষবাষ্প ঢুকিয়ে দিয়ে ছিল।

আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্‌ বংশ পয়তাল্লিশ বছর (১৪৯৩—১৫৩৮) বাংলা শাসন করে ছিল। এই সময়ের মধ্যে মোট চার জন সুলতান বাংলা শাসন করেছিলেন। আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্‌ (১৪৯৩--১৫১৯), আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্‌র মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠ ছেলে নাসিরুদ্দীন নসরৎ শাহ্‌ (১৫১৯--১৫৩৩) বাংলার সিংহাসনে বসেন। নাসিরুদ্দীন নসরৎ শাহ্ আতাতীর হস্তে নিহত হলে তার ছেলে আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ্‌ বাংলার সিংহাসনে বসেন। আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ্কে তার আপন চাচা, আলাউদ্দিন হোসেন শাহ আঠারো তম সন্তান গিয়াসউদ্দীন মাহমুদ শাহ্, হত্যা করে বাংলার সিংহাসনে বসেন। এর মাঝে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ একাই শাসন করে ছিলেন ছাব্বিশ বছর এবং অন্য তিন জন সুলতান মিলে শাসন করে ছিলেন ১৯ বছর।

আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্‌ বাংলা সাহিত্যে যে বিপ্লব আনয়ন করেন, যাকে ‘হিন্দু রেনেসাঁ আন্দোলন’ নামেও কেউ কেউ অভিহিত করেছেন; তা তার মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠ ছেলে নাসিরুদ্দীন নসরৎ শাহ্‌ এবং তার ছেলে আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ্ পৃষ্ঠপোষকতা করে ছিলেন। এমন কী ফিরোজ শাহ্ রাজ সিংহাসনে বসার পূর্বেই তার আদেশে দুরজা শ্রীধর লিখেছিলেন ‘বিদ্যা সুন্দরী’। কিন্তু আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ্‌কে তার আপন চাচা, গিয়াসউদ্দীন মাহমুদ শাহ্, হত্যা করে বাংলার সালতানাতে বসলে রাজকীয় মদদে সাহিত্যের মাধ্যমে, মুসলিম সমাজের আভ্যন্তরে পৌত্তলিক ভাবধারা প্রবেশ সম্পর্কিত সাহিত্যর পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ হয়ে যায়। উল্লেখ্য, আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ্কে তার আপন চাচা, গিয়াসউদ্দীন মাহমুদ শাহ্, হত্যা করে বাংলার সালতানাতে বসলে শুধু যে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ কতৃক প্রবতিত রাষ্ট্রীয় মদদে পৌত্তলিক ভাবধারার সাহিত্যর পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ হয়ে যায় তাই নয়, এই সময়েই রহস্যজনক ভাবে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্‌র কতৃক সর্ব প্রকারের সুযোগ সুভিদা প্রাপ্ত ব্যাক্তি গৌডীয়া বৈষ্ণব ধর্মের প্রবতক ও বৈষ্ণব সাহিত্যের গুরু শ্রী চৈতন্য মৃত্যবরন করেন(কোন কোন বর্ণনা অনুসারে)/ মন্দির থেকে অদৃশ্য হয়ে যান! মাত্র ৪৮ বছর বয়সে তার পানিতে ডুবে মৃত্যু বা সকলের কাছ থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পিছনে কোন পরিকল্পন বা ষড়যন্ত্র ছিল নাকি কী তা কোন কাঁকতলিয় ব্যাপার ছিল তা আজও রহস্যই রয়ে গেছে। আমার ধারনা যদি ভুল না হয়ে থাকে তবে, যদিও আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ হাজার হাজার মুসলিম আমীর ওমরাকে হত্যা করে সেই স্থানে হিন্দুদের নিয়োগ দিয়ে তার সিংহাসনকে শত্রু মুক্ত করতে চেয়ে ছিলেন কিন্ত তা সত্বেও তার শাসন বিরোধী একটি গ্রুপ পর্দার অন্তরালে সর্বদা সক্রিয় ছিল। সম্ভবত আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্র জ্যেষ্ঠ ছেলে নাসিরুদ্দীন নসরৎ শাহ্ আতাতীর হস্তে নিহত হওয়ার পিছনে তাদের হাত ছিল এবং গিয়াসউদ্দীন মাহমুদ শাহ্, কতৃক তার আপন ভাতিজা আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ্‌কে হত্যা এবং বাংলার সিংহাসন দখল করার পিছনেও তাদের হাত ছিল! আমার রিসোর্স অত্যন্ত সীমিত হওয়ায় এ সম্পকিত বিস্তারিত কোন তথ্য খুঁজে পাইনি। গিয়াসউদ্দীন মাহমুদ শাহ্ কতৃক বাংলার মসনদে দখল করা সম্পর্কে ‘Islam in Bangladesh Through Ages’ গ্রন্থের লেখক ডঃ আব্দুল করিম তার বইয়ের ৫৪ পৃষ্ঠায় বলেন, “ --- He (Mahmud shah) hatched a conspiracy and ultimately killed his newphew. Thus from the very beginning of his reign, he created many enemies, the chief among whom was Makdhum Alam, one of his near relatives” । এর থেকে ধারনা করা যায় যে, আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্‌ পন্থী এবং আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ বিরোধী যে দুইটি গ্রুপ কাজ করতে ছিল, উভয়েরই নেতৃত্বে ছিল আলাউদ্দিন হোসেন শাহর ঘনিষ্ঠ জনেরা। যেহেতু গিয়াসউদ্দীন মাহমুদ শাহ্ পৌত্তলিক ভাবধারার সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করে দিয়ে ছিল তাই ধরনা করা যায় যে তারা এর বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিল। আবার তার সময়েই শ্রী চৈতন্য মন্দির থেকে অদৃশ্য/ পনিতে ডুবে মৃত্যবরন করে, তাই শ্রী চৈতন্যর অদৃশ্য/ পনিতে ডুবে মৃত্যর পিছনে তার হাত থাকাটা সন্দেহ মুক্ত নয়!

আমরা যদি রাজা গণেশের বাংলার মসনদে বাসার কারন অনুসন্ধান করি তবে সেখানে খুঁজে পাব এমন অনেক তথ্য, যা প্রমান করে যে রাজা গণেশ বিশ্বাসঘাতকতা, ষড়যন্ত্র, রাজনৈতিক হত্যাকান্ড এবং প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে শাসন ক্ষমতা দখল করে ছিল এবং এই বিষয়ে পূর্বেই আমরা বিস্তারিত বলেছি। একই ভাবে আমরা যদি আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্র বাংলার মসনদে বাসার কারন অনুসন্ধান করি তবে সেখানেও খুঁজে পাব এমন অনেক তথ্য যা প্রমান করে যে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ বিশ্বাসঘাতকতা, দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র, রাজনৈতিক হত্যাকান্ড এবং প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল; তিনি হাজার হাজার মুসলিম আমীর ওমরা, সৈন্য ও অফিসারকে হত্যার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমাতা কুক্ষিগত করেন। Islam in Bangladesh Through Ages গ্রন্থের লেখক ডঃ আব্দুল করিম তার বইয়ের ৫১ পৃষ্ঠায় বাংলার শেষ হাফশী শাসক মোজাফর শাহ্‌ বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং তার থেকে ক্ষমতা কেরে নেওয়া সম্পর্কে বলেন, “ Ultimately a conspiracy was hatched against him; the army and the people under the leadership of Hussain Shah, wizar of the sultan, rose against him and killed him in the battle----- and the Hussain shah ascended the throne with the title of Sultan Alau’d-Din Hussain shah”.

চলবে-------

বিষয়: বিবিধ

৮৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File