আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ৩৩

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৩:৩৬:১৭ রাত

ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসকে দেখলে আমরা দেখব যে এই অঞ্চলে মুসলমানরা এসেছে তুরস্ক, আরব, ইরান ও আফগানস্থান থেকে এবং শাসন করেছে কিন্ত কখনই জোর করে ইসলাম প্রচার করেনি বরং কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া এই অঞ্চলের মুসলিম শাসকদের মাঝে ইসলাম ধর্ম প্রচারে ছিল অনীহা। বস্তত এই অঞ্চলে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে প্রধান ভুমিকা পালন করেছে ইসলাম প্রচারক, নায়েবে রসূল বা দায়ী ইল্লেলল্লাহগণ যারা আজকে আমাদের কাছে সুফী, পীর ফকীর নামে পরিচিত। এই উপমহাদেশে রাষ্ট্রীয় মদদে যে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেনি তার বড় প্রমান হল আজও মুসলমানরা ভারতে সংখ্যা লঘু, এমন কী যে দিল্লী শত শত বছর ধরে মুসলমানদের রাজধানী ছিল সেখানে আজও মুসলমানরা সংখ্যা লঘু! এই ইসলাম প্রচারক বা দায়ী ইল্লেলল্লাহগণ শুধু যে ইসলাম প্রচার করেছে ব্যাপারটা আসলে সেরকম নয় বরং তারা এই অঞ্চলের মানুষের কল্যাণেও ব্যাপক ভুমিকা রেখেছে। তারা মুসলিম শাসকদের শাসন কর্যে সহায়তা দিত, এমন কী ইসলামী রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধিতেও মুসলিম শাসকদের সহায়তা করে ছিল যা আমি পূর্বেই বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তারা গরীব মিসকিনদের জন্য লঙ্গড়খানা প্রতিষ্ঠা করেছে, নির্যাতিতের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সকলের কল্যাণের জন্য নীরবে নিরলস ভাবে কাজ করেছে। তাদের এই গুণাবলীর জন্য তারা ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে শুধু আমজনতার কাছে’ই ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল তাই নয় বরং এই অঞ্চলের মুসলিম শাসকদের উপরও ছিল তাদের যথেষ্ট প্রভাব। মুসলিম কাজীর ন্যায় সস্মানিত ব্যাক্তি তো দুরের কথা একজন সাধারন মুসলমানের উপর নিপীড়ন নির্যাতন হলে তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলত। এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ কতটা শক্তিধর তা তারা বিবেচনায় নিত না, এমন কী যুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে যেয়ে তাদের জীবনকে হকের পথে দান করতেও পিছপা হত না। উদাহরণ স্বরূপ বলা চলে হযরত বাবা আদমের () কথা। যার সম্পর্কে আমরা পূর্বেই বিস্তারিত বলেছি।

প্রকৃত পক্ষে এই নায়েবে রসুলরা নীরবে এই অঞ্চলে মুসলিম সমাজ নির্মাণ ও তার রক্ষনা-বেক্ষনে অভিবাবকের ভুমিকা পালন করে গেছেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় রাজা গণেশের কথা। প্রাথমিক জীবনে রাজা গণেশ একজন সাধারন জমিদার (ভুস্বামী) ছিলেন। তৎকালে বাংলার সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ্‌ রাজ্যের উচ্চপদে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে উদারনীতি গ্রহণ করেন। বিশেষ ভাবে হিন্দুদেরকে তিনি অনেক উচ্চপদে নিয়োগ করেন। চতুর রাজা গণেশ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সুলতানের আধীনে একজন অফিসার হিসাবে যোগদান করেন। সম্ভবত তিনি সামরিক বিভাগে যোগ দেন। পরবতিতে তিনি চতুরতা, বিশ্বাসঘাতকতা, হত্যা ও প্রাসাদ সড়যন্ত্রের মাধ্যমে কোন ধরনের যুদ্ধ-বিগর্হ ছাড়াই নিজে রাজ সিংহাসনের মালিক বনে যায়। রিয়া-উজ সালাতিন অনুসারে, রাজা গণেশ চতুরতা, বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রাসাদ সড়যন্ত্রের মাধ্যমে তার মালিক সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ্‌কে হত্যা করে প্রথমে নিজে না বসে রাজ সিংহাসনে বসায় গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ্‌র ছেলে সাইফুদ্দিন হামজা শাহ্‌কে। এই ষড়যন্ত্রের দ্বিতীয় ধাপে সাইফুদ্দিন হামজা শাহ্‌কে ক্ষমতা চ্যুত করে তার স্থানে বসায় তার দাশ সাইফুদ্দিন বাওজীদ শাহ্‌কে; অর্থাৎ চতুর গণেশ এখানে শাসন ক্ষমতা ইলিয়াস শাহ্‌ী বংশের হাত থেকে নিয়ে গিয়ে একজন দাশের হাতে ন্যাস্ত করে এর প্রতিক্রিয়া কী হয় তা দেখতে চেয়ে ছিলেন। সম্ভবত এর মাধ্যমে তিনি একটি ধারনা নিতে চেয়ে ছিলেন যে, ভবিৎষতে তিনি অর্থাৎ একজন ননমুসলিম শাসন ক্ষমতা দখল করলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। রিয়া উজ সালাতিন অনুসারে, অতঃপর বছর ঘুরতে না ঘুরতে সে সাইফুদ্দিন বাওজীদ শাহ্‌কে হত্যা করে রাজ সিংহাসনে বসায় তার ছেলে আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ্‌কে। তার পর তাকে ক্ষমতা চ্যুত করে নিজেই রাজ সিংহাসনে মালিক বনে যায়। বস্তুত রাজা গণেশের সাফ্যলের পিছনে প্রধান শক্তি হিসাবে কাজ করেছে রাজ সিংহাসনের প্রতি ইলিয়াস শাহী বংশের লোকদের সীমাহীন লোভ। এই সমস্যা শুধু মাত্র ইলিয়াস শাহী বংশের লোকদের মাঝে বর্তমান ছিল বললে ভুল হবে। কেননা আজকে এসেও আমরা দেখছি যে, মুসলমানদের মাঝে ভ্রাতৃীতের বন্ধনের জায়গাগুল দখল করে নিয়েছে মতবিরোধ, মরামারি কাটাকাটি যার পিছনে কাজ করছে সীমাহীন লোভ লালসা ও রাজা গণেশের ন্যায় মুসলিম বিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্র। ফলে মুসলমানরা সস্মিলিত শক্তি হিসাবে কাজ না করে করছে বিচ্ছিন্ন ভাবে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম বিরোধীরা মুসলমানদের ঘাড়ে চরে বসেছে। এর অবস্যম্ভাবী ফলাফল স্বরূপ দিনের পর দিন মুসলমানদের দুঃখ দুর্দশা ও দুর্ভগ বেড়েই চলছে।

চলবে -------------

বিষয়: বিবিধ

১০১৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381907
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সন্ধ্যা ০৭:৪৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ। ‍দুইজন মুসলিম সুফি মুজাফফর শামস বলখী ও নূর কুতুবুল আলম সুলতান আযম শাহ কে গনেশ এর বিষয়ে সতর্ক করা সত্বেয় তিনি ব্যবস্থা নেননি। তার ফলাফল ইতিহাস।
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ রাত ০৪:৩১
315727
আনিসুর রহমান লিখেছেন : Thanks a lot for your valuable information as a comment. Would you kindly send me the reference of this information if possible. Thanks again.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File