আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ২৯
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৯:২৭:৪৫ সকাল
শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারঃ
শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু গয়াতে তার গুরুর কাছে মন্ত্র দীক্ষা করার পর নবদ্বীপে পৌঁছে রাতারাতি ধর্ম প্রচারক বনে যায়। প্রচারের কৌশল হিসাবে প্রথম ধাপে ব্যয়বহুল কিত্তনের নৈশ স্কুল খুলে চৈতন্য মহাপ্রভুকে মানবিক সত্তার উদ্ধে তুলে দৈবিক সত্ত হিসাবে প্রচারনা চালনা হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা চলে পণ্ডিত শ্রীব্যাসের বাড়ীতে কিত্তনের নৈশ স্কুলে চৈতন্য মহাপ্রভুর দৈবিক নর্তন কুর্তন চলা কালে, শ্রীব্যাসের পুত্র গোপাল মৃত্য বরন করলে বাড়িতে শোকের মাতম উঠে। নর্তন কুর্তন শেষে চৈতন্য মহাপ্রভু ঘটনা অবগত হয়ে শ্রীব্যাসের মৃত পুত্র গোপালের কাছে গিয়ে ডাক দিলে আশ্চর্যজনক ভাবে শ্রীব্যাসের পুত্র গোপাল কথা বলে উঠে। চৈতন্য মহাপ্রভু তার দুনিয়া ছেড়ে যাওয়ার কারন জিজ্ঞাসা করলে, গোপাল জানায় প্রভু আমি আপনার ইচ্ছায় আপনার সাথে যুগে যুগে ছিলাম, যখন আপনি গোঁকুলে ছিলেন তখনও আমি আপনার সাথে ছিলাম, এখন আবার প্রভু আমি আপনার ইচ্ছাতেই চলে যাচ্ছি। তখন চৈতন্য মহাপ্রভু তাকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুমতি দেয় এবং সকলকে তার জন্য শোক করতে নিষেধ করে এবং এরপর পুঃনরায় গোপাল মৃত্য বরন করে!
প্রচারনার দ্বিতীয় ধাপে, প্রচারনার এই কৌশল সম্পকে শ্রীল ভক্তিবিন্দা ঠাকুর চৈতন্যের বায়োগ্রাফিতে লিখেন, “The first mandate that He issued to Prabhu Nityananda and Haridas was this: "Go friends, go preaching and through the streets of the town, meet every man at his door and ask him to sing the Name of Hari with a holy life and you then come and report to Me every evening the result of your preaching.” অর্থাৎ তার এই প্রচারনা ছিল আগ্রাসিফ। তার এই প্রচারনা শুধু হটে বাজারে বা রাস্তা ঘাটে সিমাবদ্ধ ছিল না বরং নগরের প্রতিটি লোকের বাড়িতে গিয়ে উচ্চ স্বরে গান গাইত ও নর্তন কূর্তন করত এবং তাদেরকেও অংশ নেওয়ার জন্য বলত। এই প্রচারনার প্রতিক্রিয়া সম্পকে প্রতি দিন সন্ধ্যাবেলা চৈতন্যের কাছে রিপোট করতে হত। মানবতার ইতিহাসে কোন ধর্মীয় প্রচারককেই এরূপ আগ্রাসীভাবে প্রচারনা চালাতে দেখা যায়নি। এমন কী প্রবল প্ররাক্রান্ত মোঘল সম্রাট আকবরকেও তার প্রচারিত ধর্ম দীন এ এলাহির জন্য এরূপ প্রচারনা চালাতে দেখা যায়নি। এই প্রচারনার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট ছিল, নিমাই স্বয়ং হাজির না থেকে তার শিস্যদের দ্বার প্রচারনা শুরু করা। সাধারণত ধর্মীয় প্রচারকরা তাদের মতবাদ মানবতার কল্যাণের কথা বিবেচনা করে প্রচার করে থাকে। এক্ষেত্রে কে তাদের কথা শুনল/ মানল, আর কে শুনল না/ মানল না তা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা থাকে না। কেননা তাদের মুল লক্ষ্য থাকে বিশ্ব মানবতার মুক্তি ও কল্যাণ। কিন্ত এখানে আমরা বিস্ময়কর ভাবে দেখি যে, প্রতিদিন প্রচারনা শেষে, সন্ধ্যাবেলা লোকদের মাঝে এই প্রচারনার প্রতিক্রিয়া সম্পকে রিপোট পেশ করা হত, মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যের কাছে। এক্ষেত্রে আমার অনুমান যদি ভুল না হয়, তবে এই রিপোট করা হত চৈতন্যের জন্য নয় বরং যারা পিছনে বসে কলকাঠি নাড়ছিল তাদের জন্য। সম্ভবত লোকদের মাঝে এই প্রচারনার প্রতিক্রিয়া সম্পকে রিপোট করা ও পাঠানো ছিল ব্যাধ্যতামুলক।
এই প্রচারনার আরেকটি উল্লেখ্যযোগ্য বৈশিষ্ট হল, মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যের নির্দেশ পেয়ে নিতাই নন্দ ও হরি দাশ এই দুই প্রচারক জনৈক জগাই ও মাধাই নামক দুই ব্যাক্তিকে তাদের ধর্মের দিকে আহব্বান করলে, তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং নিতাই নন্দকে শারীরিক ভাবে নাজেহাল করে ও এই দুই প্রচারককে প্রত্যাখান করে। কিন্ত অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই তারা শ্রী চৈতন্যের অনুসারী হয়ে যায় এবং তারা জানায় মহাপ্রভুকে প্রত্যাখান করার ফলে তাদের কাছে শাস্তি স্বরূপ দৈবিক বিপদ আপদ হাজীর হয়ে ছিল! মানুষের মাঝে যে কোন সময়ে পরিবর্তন আসতে পারে কিন্ত আশ্চর্যের বিষয় হল, মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যের শিস্যদের প্রত্যাখান করার ফলে সাথে সাথে শাস্তি স্বরূপ দৈবিক বিপদ আপদ হাজীর হওয়াটা। এক্ষেত্রে আমার অনুমান যদি ভুল না হয় তবে জগাই ও মাধাই নামক দুই ব্যাক্তির উপর শাস্তি স্বরূপ যে বিপদ এসেছিল তা দৈবিক ছিল না বরং তা ছিল শ্রী চৈতন্য যার নির্দেশে কাজ করছিল তাদের কাছ থেকে। এই ঘটনার ফলাফলও ছিল সুদূরপ্রসারী, এই ফলাফল সম্পকে শ্রীল ভক্তিবিন্দা ঠাকুর চৈতন্যের বায়োগ্রাফিতে লিখেন, “ The people of Nadia were now surprised. They said, Nimai Pandit is not only a gigantic genius but He is certainly a Missionary from God Almighty.”
চলবে ---
বিষয়: বিবিধ
৯৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন