আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ২৬
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০২:০৬:৪৯ দুপুর
শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুঃ শ্রী শ্রী চৈতন্য যে শুধু বৈষ্ণব ধর্মের প্রবতক তাই নয় বরং বাংলাতে অর্ধেক অর্ধেক গুষ্ঠিগুল সৃষ্টির পিছনে (যেমন লালন ফকীরের বাউল*)তার রয়েছে বিশাল প্রভাব। তার প্রবতিত বৈষ্ণব ধর্মের মূলমন্ত্র হ’ল ভক্তিবাদ। হিন্দু ধর্মে “ভক্তি” বলতে বুঝায় ব্যাক্তি বিশেষের তার পূজনীয় দেব দেবীর প্রতি পূজা অর্চনা ও ভালবাসার প্রকাশ। এই “ভক্তি” বলতে, পৌতিলিকতা বিরোধী ইসলাম ধর্মের অবিরভাবের পর তার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ভারতবর্ষে, সপ্তম শতাব্দীতে শুরু হয়ে দশম শতাব্দী পর্যন্ত হিন্দুদের প্রধান দেবতা শিবা ও বিষ্ণু কেন্দ্রিক, যে মুভমেন্টের সৃষ্টি হয়ে ছিল, তাকেও বুঝিয়ে থাকে।(Bhakti, Encyclopedia Britannica (2009); Karen Pechelis (2011), Bhakti Traditions, in The Continuum Companion to Hindu Studies (Editors: Jessica Frazier, Gavin Flood), Bloomsbury, ISBN 978-0826499660, pages 107-121)। যদিও এই ভক্তি মুভমেন্টের উপর লেখালেখি কম হওয়ার ফলে অনেকেই এই মুভমেন্ট সম্পকে ওয়াকিবহাল নন; কিন্ত তৎকালে ভারতবর্ষের সর্বত্র এই মুভমেন্টের ছিল প্রবল প্রভাব। এমন কী দিল্লীর মোঘল সম্রাট এবং তার অন্দর মহল এর প্রভাব মুক্ত ছিল না। যেমন সম্রাট আকবর কতৃীক প্রবতিত ধর্ম, ‘দীনে এলাহির’ উৎপত্তির পিছনে এই ভক্তি মুভমেন্টের ছিল বিশাল আবদান।
১৫০০ খ্রীঃ থেকে ১৭০০খ্রাঃ পর্যন্ত সময়কে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বলা হয় ‘চৈতন্য যুগ’। শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর অন্যতম কৃতিত্ব হ’ল এক দল শক্তিশালী জীবনিকারকে তৈরি করা যারা প্ররবতিতে তার জীবনি লিখে তার প্রচারিত মতবাদ প্রসারে ভুমিকা রাখে; তার জীবন চরিত বহু সংখ্যক লেখক কতৃীক লিখার ফলে তাতে অনেক পরস্পর বিরোধী তথ্য পাওয়া যায়। বাংলা সাহিত্যের চৈতন্য যুগে বৈষ্ণব সাহিত্যের পাশাপাশি, মঙ্গল কাব্য তথা পীর সাহিত্যের সুচনা ঘটে এবং এই সময়েই প্রথম বারের মত আলাওল, সৈয়দ সুলতান সহ এক ঝাক মুসলিম নাম ধারী লেখকদের দেখা পাওয়া যায় বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে। বাংলাতে লিখিত তার আদি জীবন চরিতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, লোচন দাশের, চৈতন্য মঙ্গল, কৃষ্ণা দাশের, চৈতন্য চরিত্রমূর্তি, বিন্দাবন দাশের চৈতন্য ভগবতা। এই কাব্যগুল বাংলা ভাষাতে লিখিত হলেও বর্তমানে অন্যান্য ভাষাতেও পাওয়া যায়। এখানে আমরা তার জীবন চরিত আলোচনা করার সাথে সাথে সত্যকে আবিষ্কারের চেষ্টা করব, চেষ্টা করব মুসলিম সমাজের মধ্যে শিরক অনুপ্রবেশের ক্লু খুঁজে পেতে যুক্তির আলোকে। আমার এই চেষ্টা কোন ব্যাক্তি বা ধর্ম বা মতবাদকে হেয় করার উদ্দেশ নয় বরং সত্যকে আবিস্কারের চেষ্টা মাত্র । যে কোন ধরনের মত ভিন্নতা সদরে গ্রহণ করা হবে।
-----------------------------------------------------------------
লালন ফকীরের বাউল** এই অর্ধেক অর্ধেক গুষ্ঠির প্রতিনিধিতকারী শব্দ “বাউল” কোথা থেকে এসেছে সে সম্পকে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। বাংলা সাহিত্যে বাউল শব্দটি প্রথম ব্যাবহিত হয় ১৫০০ শতকে। কৃষ্ণা দাশের, চৈতন্য চরিত্রমূর্তি, বিন্দাবন দাশ ঠাকুরের চৈতন্য ভগবতাতে “বাউল” শব্দটির ব্যাবহার দেখা যায়। বাউল মুভমেন্টের একেবারে শুরুতে যে ব্যক্তির নামকে যুক্ত দেখা যায়, তিনি হলেন শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর অন্যতম প্রধান শিস্য এবং বাংলাতে বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারের জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যাক্তি মহাপ্রভু নিতাই নন্দের ছেলে ব্রীভহাদ্রা, কিন্ত ব্রাহ্মবাদীরা বিভিন্ন কারনে তার নাম প্রচার না করার ফলে, বর্তমান সময়ে আমরা বউল বলতে লালন ফকীরকেই বুঝে থাকি। বর্তমানে এই অর্ধেক অর্ধেক গুষ্ঠিকে(বাউল) বাচিয়ে রাখার জন্য ব্রাহ্মবাদীরা যে দুইটি ইস্যুকে সামনে রেখে প্রচারনা চালাচ্ছে, তা হল, (১) বাউলরা গ্রাম বাংলার কৃষ্টি কালচারের অবিছেদ্দ অংশ যদিও সংখ্যায় তারা 0.১% পারসেন্টও না। (২) লালন ফকীরের কথিত কেরামতি গান, যদিও লালন ফকীর লিখিত আকারে কোন গান লিখে যায়নি, এই অর্ধেক অর্ধেক গুষ্ঠিকে আজও টিকিয়া রেখেয়ে। বাংলাদেশের আরেক অর্ধেক অর্ধেক গুষ্ঠি, নাস্তিককরা, (নাস্তিক বলতে অয়েস্টান বিশ্বে যা বুঝায়, বাংলাদেশে সে ধরনের ব্যাক্তি খুঁজে পাওয়া দুর্লভ।) এই লালন ফকীরের এক নিষ্ঠ সমর্থক কেননা লোক মূখে মুখে পাওয়া লালন ফকীরের কিছু কিছু গান নাস্তিক্যবাদকে সমর্থন করে। যেমন
Everyone asks: "Lalan, what's your religion in this world?"
Lalan answers: "How does religion look?"
I've never laid eyes on it.
Some wear malas [Hindu rosaries] around their necks,
some tasbis [Muslim rosaries], and so people say
they've got different religions.
But do you bear the sign of your religion
when you come or when you go?
আবার আমরা লালন ফকীরের শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু (গৌর) ও তার শিস্য মহাপ্রভু নিতাই নন্দের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদিত ভক্তি মূলক গানও দেখতে পাই। যেমন
কৃষ্ণ প্রেম করব বলে, ঘুরে বেড়াই জনম ভরে
সে প্রেম করব বলে ষোল আনা
এক রতির সাধ মিটল নারে।
রাধা রাণীর ঋণের দায়
গৌর এসেছে নদীয়ায়
বৃন্দাবনের কানাই আর বালাই
নৈদে এসে নাম ধরেছে গৌর আর নিতাই
ফলে যে প্রশ্নটি এখানে চলে আসে তা হল, এই গুল যদি লালন ফকীরের গান হয়, তবে এই লালন ফকীর কোন দর্শনে বিশ্বাস করত?
চলবে------
বিষয়: বিবিধ
১১২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন