আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ২৫
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৯:২১:০১ সকাল
ইসলাম প্রচারক- সুফী- পীর সম্পিকত আমাদের আলোচনা একেবারের শেষের দিকে চলে এসেছি। আমরা আলোচনা করছিলাম অর্ধেক – অর্ধেক জনগোষ্ঠী সম্পকে। তৎকালে টেকনলজী ভিত্তিক মিডিয়ার অনুপস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে; মঙ্গল কাব্যের সহায়তা নিয়ে, ব্রাহ্মবাদীরা চানক্য নীতি অবলম্বন করে, সুফীবাদকে অস্ত্র হিসাবে ব্যাবহার করে, ইসলামের যে বিকৃত রূপকে প্রতিষ্ঠা করে তা থেকে আজও আমরা বের হয়ে আসতে পারিনি। তাদের এই প্রচেষ্টার ফলে ভারত উপমহাদেশের ইসলাম এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ইসলামের মাঝে প্রার্থক্য ছিল এতটাই পরিষ্কার যে, একজন অমুসলিমের পক্ষেও অতি সহজেই তা বুঝা সম্ভব ছিল যদি সে ইসলাম সম্পকে নুন্যতম ধারনা রাখত। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ইলিয়ট ও ডাইসন তাদের “ভারতের ইতিহাস” গ্রন্থে এ সম্পকে লিখেন, “ ভারতীয় ইসলামের মাঝে অইসলামিক রীতি পদ্ধতি অনুপ্রবেশের কারন হচ্ছে এই যে, অমুসলিমদের ইসলামে দাখিল হওয়া পরিপূরণ ছিল না।”
বস্তত ভারতীয় আলেম ওলেমারাও ভারতীয় ইসলামের এই দশা সম্পকে ওয়াকিবহাল ছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা চলে, ভারত উপমহাদেশের বিখ্যত ইসলামী চিন্তাবিদ এবং দাঈী শেখ সৈয়দ আবুল আ’লা মওদুদী বলেন,” --এখানে (ভারত উপমহাদেশ) মুসলিম কৃষ্টি ইসলাম, অনারব সংস্কৃতি এবং হিন্দু সংস্কৃতির এক জগা খিচুরীতে পরিণত হয়।” (উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুসলিম, মাওলানা সৈয়দ আবুল আ’লা মওদুদী) । এই উপমহাদেশের ওলেমারা এর থেকে বের হয়ে আসার জন্য দীঘ সংগ্রাম করেছেন এবং এখনও নিয়োজিত রয়েছেন ফলাফল স্বরূপ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যাক্তি ব্রাহ্মবাদীদের তৈরী করা এই ফাঁদ থেকে বের হয়ে আসতে পারলেও , সংখ্যাগুরু জনতা সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।
এখানে আমরা সিস্টেমিটিক আলোচনার মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে খুঁজে বের করতে চেষ্টা করব কারা বা কোন শক্তি নেপথ্যে থেকে কল কাঠী নেড়েছে মুসলীম সমাজের রন্ধে রন্ধে শিরককে প্রবেশ করিয়ে দিতে। অনুসন্ধানের প্রথম ধাপ হিসাবে আমরা ঐ সকল মুসলিম মঙ্গল কাব্য লেখেকদের জীবন চরিত্র নিয়ে আলোচনা করব যারা মুসলিম হয়েও হিন্দু দেব দেবীর প্রসংশা করেছে, বন্দনা করে স্ত্রোস্তি মূলক কবিতা, পদাবলী ও সাহিত্য রচনা করেছেন।
১। মুসলিম লেখক শেখ ফয়যুল্লাহ নাথ সম্প্রদায়ের কীত্তন করে “গোরক্ষ বিজয়” নামে একটি মহাবাব্য রচনা করেন। এই কাব্যের মাধ্যমে তিনি কোলকাতা কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা গোরক্ষ নাথ ও তার নাথ মতবাদের স্তুতি করেন।
২। মুসলিম লেখক আলাওল সনাতন ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে রচনা করেন, দিন্দু দেবতা শিবের স্তোস্ত্র।
৩। মুসলিম লেখক মীর্জা হাফেজ সনাতন ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে রচনা করেন, হিন্দু দেবী কালীর স্তোস্ত্র।
৪। মুসলিম লেখক জাফর খান (দরাফ খান) সনাতন ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সংস্কৃত ভাষায় রচনা করেন, গঙ্গাস্তোস্ত্র।
৫। মুসলিম লেখক সৈয়দ সুলতান তার রচিত নবীবংশ গ্রন্থে নবীদের তালীকায় হিন্দু ভগবান ব্রহ্ম, বিষ্ণু, শিব এবং কৃষ্ণকে যুক্ত করেন।
সব চেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হল এদের সম্পকে তাদের নাম ছাড়া আর কোন উল্লেখ্যযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না! তাই অনেক আশা নিয়ে বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ ইসলামী দলের আমীর ও দাঈী মরহুম আব্বাস আলী খানের বই “ বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস” সাহায্য নিলাম যদি কোন তথ্য পাওয়া যায় ঐ সকল লেখকদের ব্যাপারে। কিন্তু না সেখানেও কোন তথ্য নেই, তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান শেষে তিনি লিখেন,“------ উপরোক্ত কবি সাহিত্যিকগনের ধর্ম মত ও জীবন বৃতান্ত সম্পকে জানার কোন উপায় নেই। সাহিত্য ক্ষেত্রে শুধু তাদের নাম পাওয়া যায়।” তার অর্থ দাড়ায় পণ্ড শ্রম, অনুসন্ধান করে কোন লাভ হবে না কেননা যারা তাদের তৈরি করেছে তারাই তাদের সম্পকিত সকল তথ্য মুছে দিয়েছে। তাই অনুসন্ধানের দ্বিতীয় ধাপ হিসাবে আমরা এবার দেখবো যাকে ঘিরে এই মঙ্গল কাব্য শুরু হয়েছে সেই ব্যাক্তির জীবন চরিত।
চলবে---
বিষয়: বিবিধ
৯৩৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখানেও সমস্যাটা অনেকটা তদ্রপ। এখানে আমরা দেখছি নাম মুসলমান কিন্তু করছে হিন্দু দেব-দেবীর প্রশংসা!! কিন্তু কেন? এর উত্তর খুঁজে পেতে যে যে তথ্যগুল দরকার তা নেই। মনে হচ্ছে গায়েব হয়ে গেছে। যেমন ()
Syed Sultan (1550–1648) was a well-known Bengali writer and poet during the 16th and 17th centuries. His birthplace is not known(জন্ম, বংশ বা ধর্ম সম্পকে কোন তথ্য নেই). He was a resident of Patiya village under Chakrashala Chakla in Chittagong. He lived in Laskarpur (Paragalpur), Chittagong for several years.
আলাওলের ক্ষেত্রেও একই সম্যস্যা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন