আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ২৪
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৮:৪৪:৫১ সকাল
(গ) ব্যাপক হারে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হয়ে যাওয়া হিন্দুদের, বুদ্ধার অনুসারীদের ন্যায় পুনরায় সনাতন ধর্মে ফরিয়ে আনার জন্য প্রাথমিক অবস্থায়, না হিন্দু না মুসলিম (অর্ধেক- অর্ধেক) জন গোষ্ঠি তৈরি করা।
ব্রহ্মবাদীরা বর্নভেদ প্রথা বিলুপ্ত করতে সম্পুনরূপে ব্যার্থ হলেও, এর মধ্য দিয়ে ব্যাপক হারে হিন্দুদের ধর্ম ত্যাগ বন্ধ করা এবং বুদ্ধার অনুসারীদের ন্যায় ধর্মান্তরিত হিন্দুদের পুনরায় সনাতন ধর্মে ফরিয়ে আনার জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে, না হিন্দু না মুসলিম (অর্ধেক- অর্ধেক) জন গোষ্ঠি তৈরি করার ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য লাভ করে। নিম্নের তথ্যগুল এর স্বপক্ষে প্রমান দেয়।
এই অর্ধেক- অর্ধেক জন গোষ্ঠি সম্পকে, ১৯১১ সানের ভারতীয় আদমশুমারী রিপোটে বলা হয়েছে যে, লোক গননার সময় এমন কিছু সম্প্রদায়ের দেখা পাওয়া গেছে, যারা নিজেরা স্বীকারক্তি করেছে যে,তারা হিন্দুও নয় এবং মুসলমানও নয়। বরং উভয় ধর্মের অনুসারী। (Census of India report, 1911)
এই অর্ধেক- অর্ধেক জন গোষ্ঠি সম্পকে, এ আর মল্লিক তার ব্রিটিশ পলিসি ও বাংলার মুসলমান গ্রন্থে বলেন, “ভারতীয় মুসলমানগণ, বিশেষ্য করে বাংলা ও বিহারের মুসলমানগণ তাদের ধর্ম বিশ্বাসের সাথে (ইসলামী আকীদা) এমন সব কুফরী আচার-আচরণ অবলম্বন করেছে, তা ছিল অন্যান্য দেশের মুসলমানদের মধ্যে বিরল। বাংলা ও বিহারের মুসলমানদের সংখ্যা ছিল যেমন বিরাট, তাদের রীতিনীতি ও আচার-আচরণ ছিল তেমনি ধর্মহীন ও নীতি বিগর্হিত।”
এই অর্ধেক- অর্ধেক জন গোষ্ঠি সম্পকে, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রয়াত আমীর আব্বাস আলী খান তার বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস গ্রন্থে বলেন, “--- ইসলাম ও মুসলমানদের এহেন পতনের যুগে পীর পূজা ও কবর পূজার ব্যাধি মুসলমান সমাজে ছড়িয়ে পরে। ঐতিহাসিক এম টি টিটাসের মতে, এই কুসংস্কার আফগানিস্থান, পারস্য ও ইরাগ থেকে আমদানী করা হয়। হিন্দুদের প্রাচীন গুরু-চেলা পদ্ধতি এবং স্থানীয় বহু দেবদেবীর পূজায় তাদের আদম্য বিশ্বাস মুসলিম সমাজকে এ কুসংস্কারে লিপ্ত হতে প্রেরনা যোগায় ( উল্লেখ্য আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, এই “আদম্য বিশ্বাস” তৈরির পিছনে মুল চালিকা শক্তি ছিল মঙ্গল কাব্য)। তিনি বলেন, ইসলামের বাধ্যতামূলক ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান অপেক্ষা বহুগুণ উৎসাহ উদ্যম সহকারে তারা পীরপুজা করে। অতীতে যারা ইসলামের মহান বানী প্রচার করে গেছেন, পরবর্তীকালে অজ্ঞ মুসলমান তাদেরই কবরকে পূজার কেন্দ্র বানিয়েছে। ----- মুসলমানগণ তাদের মনস্কামনা পুরনের জন্য ফুল শিরনি ও নজর-নিয়াজ দিত, তার সংখ্যা ডাঃ জেমস ওয়াইজ নিন্মরূপ বলেনঃ
সিলেটে শাহ জালাল, পাচ পীর----- এবং বিক্রমপুরের আদম শহীদ। ---- বাংলা বিহারে এ ধরনের বহু দরগার উল্লেখ ব্লকম্যানের গ্রন্থে আছে।
সোনার গায়ের হিন্দু মুসলিম উভয়ে পূজাপার্বণ করতো বলে কথিত আছে। কৃষক ভালো ধান্য – ফসল লাভ করলে কয়েক আটি ধান (পীরের)দরগায় দিয়ে আসত। সকল প্রকার ব্যাধি ও বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য (পীরের)দরগায় চাউল ও বাতাসা দেয়া হতো।
ঢাকা শহরের পূর্বে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে একটি দরগায় কালো রংগের একটি প্রস্তর রাখা ছিল যাকে বলা হতো “কদম রসূল”** (নবী করিমের পদচিহ্ন)। ---- ডাঃ জেমস ওয়াইজ বলেন, গয়ার ব্রাহ্মনগণ তীর্থ-যাতীদেরকে ‘বিষ্ণুপদ’ (বিষ্ণুর পদচিহ্ন) দেখিয়ে প্রচুর অর্থ রোজগার করে। অনুরূপ ভাবে দরগার মুতাওয়াল্লী গ্রামের অজ্ঞ ও বিশ্বাসপ্রবন লোকদেরকে ‘কদম রসূল’ দেখিয়া প্রচুর অর্থ উপার্জন করে।
আজমীরে খাজা মুঈনদ্দীন চিশতী () মাজারের গিলাফ সরিয়ে বেহেস্তের দরজা(?) দেখিয়ে মাজারের দালালগণ জিয়ারতকারীদের নিকট থেকে প্রচুর অর্থ রোজগার করে।
এ ধরনের অগণিত করব ও দরগা বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্থানে বিদ্যমান আছে, যেখানে আজও এক শ্রেনীর মুসলমান পূজা-পার্বণ তথা শিরক বিদআত করে থাকে।”
বস্তুত আমরা যদি ভারতীয় মুসলমানদের পতনের কারন খুজি তবে দেখব যে, এর জন্য দায়ী মুলত এই অর্ধেক- অর্ধেক জন গোষ্ঠির, স্বার্থপরতা, অনৈতিক জীবন যাপন প্রনালী, অজ্ঞতার জন্য যে কোন ইসলামী মুভমেন্টের বিরুদ্ধে জোরাল অবস্থান, মুনাফিকী এবং বিশ্বাসঘাতকতা। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর ছিল এই অর্ধেক- অর্ধেক শ্রনীভুক্ত মুসলমান। যার স্বার্থপরতা, মুনাফীকী ও বিশ্বাসঘাতকতার ফলে মুসলমানদের হাত থেকে শাসন ক্ষমতা ইংরেজদের হাতে চলে যায়। নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি বিশ্বাসঘাতকত মীর জাফর সম্পকে এ আর মল্লিক এবং মাওলান আকরাম খাঁ বলেন, অস্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে নবাব আলীবর্দি খানের ভাইয়ের ছেলে শাহামত জং এবং সাওতাল জং মতিঝিল রাজপ্রাসাদে সাতদিন ধরে হোলী পূজার অনুষ্ঠান পালন করে। বিশ্বাসঘাতকত মীর জাফর এই অনুষ্ঠানে উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে যোগদান করে। কথিত আছে যে, মৃত্যু সজ্জায় মীর জাফর কীরিটেশ্বরী দেবীর পদোদক (মূর্তি ধোয়া পানি) পান করে দুনীয়া থেকে বিদায় নেন। (এ আর মল্লিক, ব্রাটিশ পলিসি ও বাংলার মুসলমান; এবং মাওলান আকরাম খাঁ, মুসলেম বাঙ্গের সামাজিক ইতিহাস )।
আজকে এক বিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা দেখছি যে ইসলাম বিরোধীরা এই এই অর্ধেক- অর্ধেক শ্রনীভুক্ত মুসলমানদের দাবার খুটীর মত ব্যাবহার করে, যে কোন ধরনের ইসলামী মুভমেন্ট, (যা তাদের স্বার্থের অনুকূলে নয়) নির্মম ভাবে রুখে দিচ্ছে। ব্রাহ্মবাদীদের পথ অনুসরণ করে ইসলাম পন্থী বা নায়েবে রসূলদের উপর চালাছে নিপীড়ন নির্যাতন, হত্যা, খুন গুম এমনকি বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের (যেমন স্কাইপ) মাধ্যমে নায়েবে রসূলদের ঝুলিয়ে দিচ্ছে ফাঁসির দড়িতে। আর এই অর্ধেক- অর্ধেক শ্রনীভুক্ত মুসলমানরা অজ্ঞতা হেতু ব্রাহ্মবাদীদের পথ অনুসরনকারীদের উল্টো বাহবা দিচ্ছে!! সব চেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হল অর্ধেক- অর্ধেক শ্রনীভুক্ত মুসলমানরা অজ্ঞতা হেতু দিন শেষে তাদের কাজকে মূল্যায়ন করছে এই ভাবে যে, আমরাই সঠিক ইসলামকে অনুসরণ করছি, নায়েবে রসুলরা নয়!! আপর দিকে ব্রাহ্মবাদীরা এই অর্ধেক- অর্ধেক শ্রনীভুক্ত মুসলমানদেরকে সনাতন ধর্মে ফিরিয়ে নেওয়ার ধান্দা বাস্তবতার আলোকে তাদের প্ল্যান থেকে মুছে দিয়েছে কেননা তারা জানে এখন আর ঝুলি ভরা কেরামত এবং বিভিন্ন তরী্কতের সাহায্য নিয়ে মানুষকে বোকা বানান সম্ভব। তাই তারা এখন তাদেরকে নাস্তিক বানানোর জন্য চেষ্টায় রত এবং এতে তারা সাফল্যও পাচ্ছে। তার বড় প্রমান ঢাকার শাহবাগে নাস্তিকের উথান।
কিন্তু প্রশ্ন হল এর জন্য দায়ী কে/কারা? অর্ধেক- অর্ধেক শ্রনীভুক্ত মুসলমানরা? না আমাদের নায়েবে রসূলদের ব্যার্থতা? বস্তুত ভবিষৎ সাফ্যলের জন্য অবশ্যই আমাদের এর উত্তর খুজে পেতে হবে এবং প্রতিকারের পথ খুজে পেতে হবে।
চলবে---
---------------------------------
** কদম রসূল ঃ আমি যখন অনেক ছোট ছিলাম তখন আমার আম্মার সাথে এই কদম রসূলে একবার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়ে ছিল (আওজুবিল্লাহ--)। তাই আমার মনে ঐ খানে শুধু ঐ এলাকার লোকেরাই যেতনা অন্যান্য অঞ্চল থেকেও অজ্ঞ লোকেরা যেত।
বিষয়: বিবিধ
১২০০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন