আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ২৩
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ০২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৭:২৭:০০ সন্ধ্যা
এখন যদি প্রশ্ন উঠে, ব্রাহ্মবাদীরা নায়েবে রসূল, ইসলাম প্রচারক নুরে কুতুবুল আলমের ন্যায় যত প্রভাশালী ইসলাম প্রচারক ছিল তাদের শিক্ষা, আদর্শ ও কুরবানীকে মুছে/ বিকৃত করার ক্ষেত্রে কতটা সফল। আমি বলব তাদের সাফল্য ২০০% উপরে!! আপনি হয়ত বলবেন, ২০০% সফল, তা কীভেবে সম্ভব! আমি বলব তারা ২০০% সফল কারন, তারা তদের পরিচয়কে পরিবর্তন করে দিয়েছে(Identity),দায়ী ইল্লেল্ললা বা নায়েবে রসুলের থকে সুফীতে। যে শিরক মুক্ত সমাজ গঠনের জন্য তারা সারা জীবন সংগ্রাম করেছে, নিজেদের জান মালকে কুরবানী করেছে, তাদের সেই আদর্শকে পরিবর্তন করে দিয়ে উল্টো তাদেরকেই পরিণত করা হয়েছে শিরকের উৎস রূপে! বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা এই দায়ী ইল্লেলল্লা বা নায়েবে রসুলদের রেখে যাওয়া ইসলাম প্রচার কেন্দ্রগুল ঘুরে আসুন (যা আজকে মাজার/ খানকা নামে পরিচিত) তবেই আপনি আমার কথার সত্যতা খুজে পাবেন।
(খ) আমাদের পূর্ব পুরুষদের দলে দলে ইসলাম গ্রহণের অন্যতম মুল কারন বর্নভেদ প্রেথার বিকল্প ব্যাবস্থা বা পথ সৃষ্টি করা।
বর্নভেদ প্রেথার বিকল্প ব্যাবস্থা বা পথ সৃষ্টি করা কোন মানুষের পক্ষে অসম্ভব কাজ, তার জন্য দরকার একজন আবতারের । সেন রাজাদের সভাকবি জয়দেব যেমন বিশ্যেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবতক সিদ্ধাত গৌতমাকে মানুষের আসন থেকে আবতারের বসিয়ে ছিল; তদ্রূপ বর্নভেদ প্রেথার বিকল্প ব্যাবস্থা বা পথ সৃষ্টি করার জন্য তৎকালে, সনাতন ধর্মের অনুসারীদের মধ্য থেকে কাজ উদ্ধার হয় সেরূপ কোন ব্যাক্তি/চরিত্রকে খুঁজে পেতে ব্যার্থ হয় ব্রাহ্মবাদীরা । কেননা তৎকালে সনাতন ধর্মের সমর্থকদের সকলেই ঐ দোষে দুষ্ট ছিল। এই শুন্যস্থান পুরনের জন্য আবির্ভাব ঘটানো হয় মহাপ্রভু শ্রী শ্রী চৈতন্য দেবের (পরে আমরা এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করব)। সে সময়ের অসাম্যান্য প্রতিভাশালী ব্যাক্তিত্ব নিমাই পণ্ডিতকে মানুষের আসন থেকে তুলে বসানো হয় আবতারের আসনে; বলা হল তিনি হলেন কলিযুগের** আবতার স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণরূপী মহাপ্রভু শ্রী শ্রী চৈতন্য দেব। বৈষ্ণব সমাজ শ্রী শ্রী চৈতন্যকে মনে করে স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণরূপী আবতার । চৈতন্য দেবের জীবন-চরিতকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট করা হয় মঙ্গল কাব্যের। ফলাফল হিসাবে এক আল্লাহবাদী মুসলিম সমাজের ভিতরে শিরককে প্রবেশ করিয়ে দিতে সমর্থ হলেও, হিন্দু সমাজ থেকে বর্নভেদ প্রথা বিলুপ্ত করতে সম্পুন রূপে ব্যার্থ হয়। শুধু কী তাই, এর ফলে মুসলিম সমাজের ভিতরে ঐ একই রোগ ঢুকে পরে, সৃষ্টি হয়, বংশ গৌরব, নিন্ম বংশ মুসলিম(!), সভ্রান্ত মুসলিম, মিয়া বাড়ী, শেখ, সৈয়দ-----, ভাষার গৌরব অমুক ভাষা তমুক ভাষা থেকে শ্রেষ্ঠ---- । সুতরাং আমরা দেখছি যে এক্ষেত্রে তারা উদ্দেশ্য সাধনে সম্পুন রূপে ব্যার্থ হয় শুধু তাই নয় বরং বর্নভেদ মুক্ত মুসলিম সমাজের ভিতরে ঘৃন বর্নভেদ প্রথা দ্রত প্রসার লাভ করে বংশ গৌরব, ভাষার গৌরব---- ইত্যাদিকে অবলম্বন করে; যার বিষাক্ত ফলাফল আজও আমরা ভোগ করছি। এ প্রসঙ্গে আমি আমার একটি ব্যাক্তিগত ঘটনা শেয়ার করতে চাই। প্রায় এক যুগ আগে আমি অস্ট্রেলিয়া থেকে যখন বাংলাদেশে বিয়ে করতে আসি তখন আমাদের গ্রামের একটি মেয়েকে আমার পছন্দ হয়। কিন্ত বিপত্তি বাধে বংশ গৌরব। আমার পরিবারের এই বিয়েতে প্রবল আপত্তি ছিল কারন তারা ছিল জোলা বাড়ির(সম্ভবত তাতী) লোক এবং আমরা মিয়া বাড়ির লোক! অনেক বড় ঘটনাকে ছোট করে বললে, মুল ঘটনা হল, অবশেষে বংশ গৌরবের কাছে পরাজিত হয়ে ঐ মেয়েকে বিয়ে করার চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলি। এখনও মাঝে মাঝে ভাবলে অবাক হই, আমাদের মত একটি উচ্চ শিক্ষিত পরিবার এবং যাদের সাথে গ্রামের তেমন যাতায়াত নেই বললেই চলে এবং মেয়ে পক্ষও ঢাকাতে বসবাসকারী বিরাট ধনী একটি পরিবার। কিন্তু তা সত্বও যদি আজকে এসে গ্রামের লোকেরা কী বলবে ভেবে, বংশ গৌরবের মুলে কুঠারাঘাত করতে ব্যার্থ হয় আমার পরিবারের লোকেরা, তবে তৎকালের লোকদের যে কী করুন দশা ছিল তা সহজেই অনুনেয়।
চলবে----
------------------------------------------------------
** সনাতন ধর্ম অনুসারে মহাকালকে চারটি যুগে ভাগ করা হয়েছে এবং বল হয়েছে প্রত্যেক যুগের ধর্ম ভিন্ন ভিন্ন। (১) সত্য যুগ- যুগ ধর্ম ধ্যান (২) ট্রেটা যুগ—যুগ ধর্ম ইয়োগা (Yoga) (৩) দোয়াপর যুগ – যুগ ধর্ম দেব দেবীর পূজা অর্চনা (৪) কালি যুগ – যুগ ধর্ম সংকীত্তন
বিষয়: বিবিধ
১০৫৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন